ঘর

অসহায়ত্ব (আগষ্ট ২০১৪)

মিছবাহ উদ্দিন রাজন
  • ১০
  • ২৭
মরিচা পড়া স্টিলের জানালায় শিরীষ কাগজ ঘষতে ঘষতে হঠাত্ই। হাবিবের মনে হলো - ভুল করে সে তারপিনের বোতলটা দোকানে ফেলে রেখে এসেছে । আজ সন্ধ্যায়ই আবার গিয়ে আনতে হবে । জৈষ্ঠের দিনের ঝড়-বৃষ্টির উপর কোন বিশ্বাস নেই । যদিও এই সপ্তার কাঠফাটা রোদে হাওরের পানিও মাঝরাত পর্যন্ত গরম থাকে , তবু যখন-তখন আকাশ কালো করে ভারি বর্ষণ শুরু হওয়া মোটেও অপ্রত্যাশিত কোন ব্যাপার হওয়া উচিত না । তাই , যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানালায় রঙ করার কাজটা শেষ করে ফেলতে হবে । কিন্তু সন্ধ্যার আগে সবগুলো জানালা ঘষার কাজই শেষ করা যাবে কিনা কে জানে । এর চেয়ে যদি এখনো বাজারে আছে এমন কাউকে ফোন করে বলে দিয়ে তারপিনটা আনিয়ে নেওয়া যেতো !

কোমরের পেছন দিকে লুঙ্গির প্যাঁচে গুঁজে রাখা চায়নিজ ব্র্যান্ডের মোবাইলটা বের করে হাবিব । এরপর কনটাক্ট লিস্ট থেকে পরপর দুইবার ইংরেজি অক্ষর 'আই' দিয়ে সেভ করে রাখা নিজেদের গ্রামের ইজাজের নাম্বারটা বের করে একটা ফোন করে ইজাজকে । ইজাজ একটু আগে বাজার থেকে ফিরে গেছে জানিয়ে সাইফকে ফোন করতে বলে ।
সাইফের নাম্বারটা সাইফ নিজেই হাবিবের মোবাইলে সেভ করে দিয়েছিল , তাই ওর নাম্বারটা ঠিকঠাক বানানেই সেভ করা আছে । সাইফ বাজারেই আছে । তাই , বিকালবেলা তারপিনের বোতলটা এনে দিয়ে যাবে বলে জানায় ।
কথা বলা শেষ করে মোবাইলটা আবার কোমরে গুঁজে রেখে জানালা ঘষতে শুরু করে হাবিব ।

এই শিরীষ কাগজটা দিয়ে বেশ কয়েকবার ঘষা হয়ে গেছে - ধার একেবারেই কমে গেছে এখন । নতুন আরেকটা কাগজ বের করতে হবে । কি আশ্চর্য ! ছোট ছোট রঙের ডিব্বাগুলোর সাথে একই পলিথিনের প্যাকেটে বেশ কিছু শিরীষ কাগজ একটু আগেও তো এখানে রাখা ছিল ! না তো , আশেপাশে তো এই প্যাকেটের কোন চিহ্নও দেখা যাচ্ছে না । আজগুবি ব্যাপার !

" কিতা তুকাও ? " ভেতর থেকে দুই হাতে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়ানো একটা মেয়ের একজোড়া টকটকে ঠোঁট হাবিবকে প্রশ্নটা করার জন্য দ্রুত সংকুচিত-প্রসারিত হয় । এই শব্দ দুইটা উচ্চারণের সময় মেয়েটার ঠোঁট দুইটা যতটুকু নড়াচড়া করেছে , এর চেয়ে বহুগুণে নড়েছে ওর চোখ দুইটা । এবং একজন অপরিচিতের প্রতি প্রথম জিজ্ঞাসার সময়ের স্বাভাবিক সংকোচের ছাপ একটুও ওই চোখ দুইটাতে পড়ে নি । প্রথমবারই কোন কিশোরীর এতটুকু স্বাভাবিকতা যেকোন সময় বিপজ্জনক পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে - এটুকু ভেবে হাবিব সংকুচিত জবাব দেয় ,
“ এখটা থলি । রংগের ডিব্বা আর শিষ খাগজ আছিল -"
" কুনডা দরখার অখন ? "
" হু ? "
" রঙ না শিষ খাগজ ? কুনডা দরখার ? "

ভেতরে ভেতরে কিছুটা বিরক্ত হয় হাবিব । কোনটা দরকার , না-দরকার এই মেয়ে এসব জিজ্ঞেস করছে কেন ? মুক্তার ভাইয়ের সাথে চুক্তি হয়েছে । ভালোমতো রঙ করার জন্য যা যা লাগে , মুক্তার ভাই বাজারের একটা দোকানে বলে গেছে , ওদের ওইখান দেখে সবকিছুই আনা যাবে । ছয় দিন- সাত দিন যা-ই লাগে , হাবিব কাজ শেষ করে তার পারিশ্রমিক নিয়ে চলে যাবে । এর মাঝে যদি মুক্তার ভাই বাড়িতে চলে আসে তাহলে তো ভালোই হয় । না আসলেও সমস্যা নেই , ফেরি নৌকায় করে সোজাসুজি নিজেদের গ্রামে ফিরে না গিয়ে কষ্ট করে একটু বাজারটা ঘুরে যেতে হবে আরকি । যে দোকানে রঙ করার জিনিসপত্র আনার ব্যাপারে কথা বলা হয়েছে , সেই দোকান থেকেই পারিশ্রমিকের টাকাটা নিয়ে যেতে পারবে হাবিব । এরকমই তো চুক্তি ছিল । কিন্তু এই মেয়েটা রঙ করার জিনিসপত্র নিয়ে এরকম রহস্য করে কথা বলছে কেন ? কোন সময় কোন জিনিস কাজে লাগবে এটা হাবিবই ভালো বুঝবে । এটা তার কাজ , তার স্বাধীনতা । এই মেয়ে এসবের কী বুঝবে ? ন্যাকামি !
বিরক্তি চেপে রেখে হাবিব জবাব দেয় ,
" শিষ খাগজের দরখার । ইডির ধার এখবারে শেষ অইগেছে ।"
জানালার বাইরের দিক থেকে হাবিব দেখে , মেয়েটা জানালার নিচের দিকে নুয়ে পড়ে কিছু একটা খুঁজে । এরপর কয়েক সেকেন্ড পরই গ্রিলের ভেতর দিয়ে হাত বের করে হাবিবের দিকে এগিয়ে দিয়ে চোখের ইশারায় ওইগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য ইঙ্গিত করে । শিরীষ কাগজগুলো নেওয়ার সময় হাবিব স্থির গলায় জিজ্ঞেস করে ,
" রঙ ? "
" যে সময় দরখার ,ওই সময় আইয়া ঘর তাইক্যা লইয়া যাইয়ো । আমি ঘরোই আছি । "

হাবিব আবার জানালা ঘষায় মন দেয় । কয়েক মুহূর্ত পরে ভেতর দিকে জানালার পাশে আবার সেই মেয়েটা এসে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে । স্বাভাবিকতই হাবিবের মনে প্রশ্ন আসে । কিন্তু সে প্রশ্নটা করে না । কিছুসময় পরে মূর্তিটা নিজে থেকেই স্থিরতা ভাঙ্গে ।
" আজকে আর বাজারো যাইবায় নি ? এখটু দরখার আছিল ।"
" না । আজকে আর যাইতাম না । হাইনজার আগে আগে জানালা গষা শ্যাষ খইরা বাড়িত যাইতো অইবো । আবার খালকে সখালে আইমু ।"
বারবার কাজে বিঘ্ন ঘটায় খানিকটা বিরক্তির সুর এনেই কথাগুলো বলে হাবিব ।

" রংগের ডিব্বা খালি আছে , তারপিন তো নাই ! রঙ খরতে তারপিন লাগে না নি ? " চোখে-মুখে মৃদু হাসি মিশিয়ে প্রশ্নটা করে মেয়েটা ।
" রঙ খরতে যে তারপিন লাগে তুমি খ্যামনে জানো ? " প্রশ্নটা করার সময় অতিমাত্রায় জিজ্ঞাসু হওয়ার কারণে হাবিবের চোখ দুইটা বেশ খানিকটা ছোট হয় ।
প্রশ্নটা শোনে মেয়েটা এমনভাবে সশব্দ হাসিতে ফেটে পড়ে , যেন এইমাত্র সে জীবনের সবচেয়ে সেরা কৌতুকটা শুনেছে । মেয়েটার ফর্সা মুখটা লাল হয়ে উঠে এবং হাসতে হাসতে ক্লান্ত হয়ে দুই হাতে জানালার গ্রিল ধরে জানালায় বুকের হালকা ঠেস দিয়ে দাঁড়ায় । ঘন নিঃশ্বাসের ফলে বুকের দ্রুত উঠানামা খুব কাছ থেকে দেখে জানালার বাইরের দিকে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাবিবের কাছে মেয়েটাকে এই মুহূর্তে যতেষ্ট যৌবনা বলে মনে হয় । হয়তো বাইরের বেশি আলোয় দাঁড়িয়ে ঘরের ভেতরের অপেক্ষাকৃত কম আলোতে এই রমনীকে দেখেছিল বলেই এতক্ষণ একটা ভুল হয়েছিল । যদিও রমনীর চোখে-মুখে কৌশরের লাবণ্য বেশ প্রাচুর্য নিয়েই মিশে আছে , তবু রমনীটা যে মোটেও কিশোরী মেয়ে না এ সম্পর্কে হাবিব মোটামুটি নিশ্চিত এখন । হাবিবের প্রথমবারের সংকোচ এখন হালকা ভয়ের রূপ নিল ।
রমনী কোনরকমে হাসি চাপা দিয়ে জবাব দেয় ,
" একটু আগে না একজনরে ফোন খইরা খইলায় , তারপিনডা দোকানো ফালাইয়া আইছো , তারপিন ছাড়া অত ভারি রঙ জানালায় দেওয়া সম্ভব না ।"
রমনীর চোখের হালকা ভেজা জায়গাটুকু ঝিলিক দিয়ে উঠে । এতে এখনো রয়ে যাওয়া হাসির রেশ প্রমাণিত হয় । হাবিব খানিকটা লজ্জাবোধ করে । কত বেখেয়ালিভাবেই না সে ফোনে কথা বলে ! আশেপাশের লোকজন প্রত্যেকটা কথাই ইচ্ছা করলে জানতে পারে । ভাগ্যিস , কোন গোপন কথা ছিল না আজকে ফোনে বলার মতো , তাহলে তো এই রমনী প্রত্যেকটা কথাই মুখস্থ করে ফেলতে পারতো । এরপর থেকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে ।
" তোমার কুনো দরখার ? বাজার তাইক্যা কিচ্ছু আনাইতে অইবো ? তারপিন লইয়া এখজন আইবো বিকালে । তারে ফোন খইর্যা খইলে আনতে ফারবো ।" সহজ হওয়ার চেষ্টা করে হাবিব বলে ।
" না , না । ফোন খইর্যা খওয়া লাগতো না । তুমি গেলে খইতাম । অন্য খেউ দরখারটা ঠিক বুঝতো না ।"
" আমি গেলে খইবায় - অন্য খেউ বুঝতো না - এমন কিতা দরখার ? " হাবিব কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে ।
" ঘরের বিতরে আও , দেখাইতাছি ।" মুখের সাথে সাথে চোখের কাজেও হাবিবকে ভেতরে আসার জন্য ডাকে রমনী ।

দ্বিধা জড়ানো পায়ে ঘরের ভেতরে ঢোকে হাবিব । পুরো বাড়িতে কোন সাড়াশব্দ নেই । বাড়ির পশ্চিমের ঝোঁপের দিক থেকে কিছুক্ষণ থেমে থেমে একটা কোকিলের ডাক ভেসে আসে । গ্রীস্মের প্রায় শেষের দিকে কড়া রোদের দিনে এরকম কোকিলের ডাক একরকম নেশাময় আবহের সৃষ্টি করে । একেবারে সামনের ঘরটাতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে হাবিব । ঘরের চারপাশে চোখ বুলানোর সময় চুনকরা দেয়ালের একদিকে টাঙিয়ে রাখা মুক্তার ভাইয়ের সাথে মুক্তার ভাইয়ের স্ত্রীর যুগল ছবিটাতে চোখ আটকা পড়ে তার । বোঝাই যায় , দাম্পত্য জীবনের একেবারে প্রথমদিকের ছবি এটা - কমপক্ষে সাত-আট বছর আগে তোলা । ছবিতে মুক্তার ভাই বেশ যুবক - সরু গোঁফ এবং বেশ লম্বা চুল দেখেই তার প্রমাণ পাওয়া যায় । মুক্তার ভাইয়ের পাশের ছবিটাকে নিতান্তই একটা বালিকা বধূর ছবি বলে মনে হয় । আরেকটু কাছ থেকে ছবিটা দেখে আর বুঝতে বাকি থাকে না যে , জানালার পাশের সেই রমনীই মুক্তার ভাইয়ের বউ , এখনো যার চোখে-মুখে কৌশর লেগে আছে ।

" এই জিনিসটা এখটু লাগবো ।" ভেতর থেকে একটা কিছুর প্যাকেট নিয়ে এসে হাবিবের সামনে মেলে ধরে স্থির চোখে হাবিবের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে মুক্তার ভাইয়ের বউ ।
হাবিব চোখ নামিয়ে প্যাকেটটার দিকে হাত বাড়ায় । একটা জন্মনিয়ন্ত্রণের পিলের প্যাকেট । এর আগে অনেকবারই এটা কিনতে হয়েছে তাকে । তাই এই জিনিসটা মোটেও তার কাছে অপরিচিত না । কিন্তু মুক্তার ভাইয়ের বউয়ের জন্য এই জিনিসটা আনতে হবে ভেবে ভেতরে ভেতরে খুবই লজ্জা লাগে তার । এদেশের মানুষের মাঝে এখনো কিছু অদ্ভুত অস্বস্তি কাজ করে । নিজের স্বার্থে আঘাত লাগলে রাস্তা-ঘাটে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে তারা মোটেও কুন্ঠাবোধ করে না । কিন্তু , জন্মনিয়ন্ত্রণ , যৌনস্বাস্থ্য এসব অতি জরুরী বিষয়গুলো ঘটনাক্রমে অন্যলোকের সামনে চলে আসলে বেশিরভাগ মানুষেরই অপ্রয়োজনীয় অস্বস্তির কারণে মাটির সাথে মিশে যাওয়ার উপক্রম হয় । লজ্জায় রক্তবর্ণ হয়ে প্যাকেটটা ফিরিয়ে দিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ায় হাবিব ।
" আমি যাইতাছি বাজারো ।" চৌকাঠটা পার হওয়ার সময় পেছনে ঘুরে না তাকিয়েই কাঁপা গলায় কথাটা বলে হাবিব ।
" ট্যাখা ?" দ্রুত পায়ে চৌকাঠ এর কাছে এসে টাকাটা বাড়িয়ে দিয়ে বলে মুক্তার ভাইয়ের বউ ।

প্রায় ছোঁ মেরে কেড়ে নেওয়ার মতো পেছন ফিরে টাকাটা নেয় হাবিব । অস্বস্তি ঘিরে ফেলে তার পুরো শরীর ।এই অস্বস্তিই ফেরিঘাট পর্যন্ত হাঁটতে থাকা তার পা দুইটাতে অনেক বেশি দ্রুততা আনে ।
গ্রামের শেষ মাথায় ফেরিঘাট । আগাম বন্যায় হাওর ডুবে গেছে বৈশাখের শুরুতেই । আলম মিয়ায় উঠানের শেষ প্রান্তেই নৌকা ভিড়ানো যেত এতদিন । এই কয়দিনের খরায় হাওরের পানি অনেক নেমে যাওয়ায় আলম মিয়ার বাড়ি থেকে আরো চার-পাঁচ উঠান সমান দূরত্ব নিচে ঘাট এখন । মাঝারি আকারের জারুল গাছটাতে বাঁধা একটা ডিঙ্গি নৌকা বাজারে যাবে । ঢালু জায়গাটা দিয়ে নেমে এসে নৌকায় উঠতে গিয়ে শরীরের গতি সামলে নেওয়ার জন্য মাথার উপর নুয়ে পড়া একটা ডাল শক্ত করে আঁকড়ে ধরে হাবিব । হাওর এলাকায় গ্রীস্মের শেষের দিকেও কিছু জারুল গাছ ফুল ধারণ করার গর্বে ঝাঁকড়া হয়ে থাকে । এরকমই একটা গাছ এটা । হাবিবের হাতের শক্ত ঝাঁকুনিতে জারুল ফুলের একরাশ পাপড়ি সগর্বে ছড়িয়ে পড়ে নৌকা জুড়ে । হাবিবের নাসারন্ধ্র সুগন্ধ নেওয়ার জন্য আপনা থেকেই উদার হয়ে উঠে ।এর মাঝে সেই অস্বস্তিটা কখন কেটে যায় , হাবিব তা টেরই পায় না ।

নৌকায় সাত-আটজন যাত্রী । এই পড়ন্ত বিকাল বেলায়ও আকাশ আর পানির দুই সূর্য সমানতালে প্রতিযোগিতা করে উত্তাপ ছড়িয়ে যাচ্ছে । এর মাঝেও খন্ড-খন্ডভাবে কিছু লোক নৌকা করে , কিছু লোক কলাগাছের ভেলায় করে এসে প্রায় ফুটন্ত পানিতে নেমে ডুব দিয়ে দিয়ে ধান 'ছাবা'র কাজ করে চলেছে।
ঈশ্বর আগাম বন্যা দিয়ে এদের মুখের খাবার কেড়ে নিয়েছেন । এখন পানির নিচে পচে-গলে যা উচ্ছিষ্ট আছে সেগুলো উদ্ধার করতেই এই ছাবার কাজ । এরা ঈশ্বরের খেয়ালে বন্দি । চলন্ত নৌকায় মৃদু বাতাসের ধাক্কা লাগে । নৌকার সামনের গলুইয়ে বসে থাকা হাবিবের মুখে সবার আগে বাতাসটা ছোঁয়া দিয়ে যায় । এতক্ষণের জমে উঠা ঘামের উপর একটু বাতাসের ছোঁয়া লাগায় শরীরে একটা শিরশিরে অনুভূতি হয় । শরীরটা ঠান্ডা হয়ে আসে । এরইমাঝে সে নিজেই বাজারে যাচ্ছে বলে সাইফকে একটা ফোন করে তারপিন নিয়ে আসতে হবে না বলে জানায় হাবিব । এর মাঝেই হাবিবের মাথায় একটা প্রশ্ন খেলা করে । সাত-আট বছর হলো মুক্তার ভাই বিয়ে করেছে । এখনো নিঃসন্তান । এটা তো সবাই জানে । তবু মুক্তার ভাইয়ের বউয়ের জন্য কেন জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল ? তাছাড়া মুক্তার ভাইয়ের এতো সচ্ছল অবস্থা থাকার পরও কেন নিজের স্টিলবডি নৌকার দেখাশোনা করার জন্য প্রত্যেক মৌসুমেই তাকে নৌকায় থাকতে হয় ? এলাকার আরো দুই-চারজনেরওতো স্টিলবডি নৌকা আছে । কোথায় , তারা তো ঘরে বসেই সব হিসাব-নিকাশ বুঝে নেয় ! এই মুহূর্তে হাবিবের প্রশ্নটা প্রশ্নই থেকে যায় । উত্তরের একটা শিরা-উপশিরাও খুঁজে বের করা সম্ভব হয় না ।

বাজার থেকে ফেরার সময় পুরোপুরি সন্ধ্যা নেমে আসে । বিকালের মৃদু বাতাস এখন ঝড়ো হাওয়ার রূপ নিয়েছে । ডিঙ্গিটা জারুল গাছ ঘেঁষা ঘাটটাতে ভিড়তে না ভিড়তেই ভারি বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় । তারপিনের বোতল আর পিলের প্যাকেটের সাথে নিজের মোবাইলটা ভরে থলেটাকে শার্টের ভেতর ঢুকিয়ে মুক্তার ভাইয়ের বাড়ির দিকে দৌড়তে থাকে হাবিব । ঘন ঘন বিদ্যুত্‍ চমকানোর ফলে পথ দেখতে কোন সমস্যা হয় না । শুধু ভাটির পিচ্ছিল পথে দৌড়ানোর সময় পা টিপে টিপে দৌড়তে হয় ।
দরজায় ক্রমাগত করাঘাতের পরও ভেতর থেকে কোন সাড়া আসে না । পেছনের দরজায় করাঘাতের জন্য পেছনের দরজার দিকে যায় হাবিব । ঠিক দরজার কাছে যেতেই হন্তদন্ত করে একটা লোক দরজা খুলে বেরিয়ে আসে । আকাশে ঘন ঘন বিদ্যুতের চমক । সাইফকে চিনতে একটুও কষ্ট হয় না হাবিবের ।
" তারপিন তো তর আনা লাগতো না খইছলাম !" অবাক হয়ে সাইফকে বলে হাবিব ।
সাইফ আমতা আমতা করে । এর এক মুহূর্ত পরে দ্রুত পায়ে সে অন্ধকারে মিলিয়ে যায় । দরজায় তখন একটা নারী মূর্তি তার রুদ্র রূপ নিয়ে এসে দাঁড়ায় । মূর্তিটার টকটকে লাল ওড়নাটা ধমকা বাতাসের টানে স্পর্ধা হারাতে চায় । হাবিবের একেবারে কাছাকাছি এগিয়ে আসাতে মূর্তিটার শ্বাস-প্রশ্বাস হাবিবের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে । এবং এই মুহূর্তে মুক্তার ভাইয়ের বউকে আর মূর্তি বলে মনে হয় না , যদিও ওর দৃষ্টি হাবিবের দিকে মূর্তির মতোই স্থির থাকে । বাতাসের গতি কমে আসে । একটা চোখ ধাঁধানো আলো পুরো পৃথিবীটাকে চমকে দিয়ে মুহূর্তেই হারিয়ে যায় । আসন্ন বাজ পড়ার শব্দটার তীব্রতা এড়ানোর জন্য দুই হাতে কান চাপা দিতে দিতে বুকের ভেতরে একটা মোচড় টের পায় হাবিব । ঘরে তার পোয়াতি বউ । কে জানে এতদিন কোন রকমে টিকে থাকা তার কাঁচা ঘরটার কী অবস্থা ! এখনিই ঘরে ফিরে যেতে হবে তাকে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আখতারুজ্জামান সোহাগ গল্পে কাহিনীবিন্যাস ভালো লেগেছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ঘটনা এবং প্রেক্ষাপটের নিখুঁত বর্ণনা। গল্পকারের জন্য শুভকামনা।
সাদিয়া সুলতানা নবীন লেখকের কলম থেকে বেশ পরিণত লেখা পাওয়া গেল। চারপাশের ছোট্ট ছোট্ট বিবরণ ঘটনার বিস্তারকে এগিয়ে নিয়েছে। আবার অন্ধকার বিষয়টি সুন্দর শব্দের মোড়কে উপস্থাপন ভাষাকে সুন্দর করেছে। আরমান ভাই ঠিক বলেছেন, অসাবধানতাবশতঃ কিছু বানান ভুল আছে, পরবর্তীতে ঠিক করে নিলেই হবে।
সহিদুল হক দারুন লিখেছেন গল্পটি, অনেক শুভকামনা
Salma Siddika তুমি ভাই খুব সুন্দর লিখেছ। তোমার লেখা আগেও পরেছি, আমার মনে হয় বেশ পাকা লেখক তুমি, সুন্দর বর্ণনায় পাঠকের সামনে পুরো দৃশ্য তুলে ধরো। অনেক শুভ কামনা থাকলো।
এশরার লতিফ এক কথায় চমৎকার গল্প। অনেক শুভেচ্ছা।
অসংখ্য ধন্যবাদ , ভাই ।
মাইদুল আলম সিদ্দিকী দারুণ!! শুভকামনা রইল ভ্রাতা।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ।
শামীম খান চমৎকার একটি গল্প । এ একটি ভিন্নতর অসহায়তার কথামালা । বাইরে থেকে যা দেখা যাবে না , কাউকে বলা ও নিষিদ্ধ , কিন্তু সয়ে যাওয়ার কষ্ট কল্পনাতীত । অসাধারন বর্ণনা শৈলী । গল্প লেখার স্টাইলটা যথেষ্ট ম্যাচুয়র মনে হয়েছে , অন্তত আমার কাছে। মাঝে মাঝে দেখেছি পর্যবেক্ষণের সুতীব্র ছোঁয়া । ভাল লাগা আর ভোট রেখে গেলাম । শুভ কামনা ।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ।
আফরান মোল্লা ভাল লাগল অনেক।শুভকামনা রইল।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ।
মিছবাহ উদ্দিন রাজন মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ । অসাবধানতাবশত , এক জায়গায় ছেদ চিহ্নেরও অপব্যবহার করেছি । লেখা পাঠানোর পরে ঠিক করার মতো কোন পথ পাই নি বলে যেরকম ভুল ছিল , সেরকমই রয়ে গেছে ।
আরমান হায়দার আঞ্চলিক ভাষার চমৎকার ব্যবহার দেখলাম। ভালো লাগলো।///// অসাবধানতাবশতঃ কিছু বানান ভুল আছে, পরবর্তীতে ঠিক করে নিলেই হবে। ///// শুভকামনা।

০৬ এপ্রিল - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪