রাতে একদম ঘুম হল না , রাত বেরেই যাচ্ছে কিন্তু আমার সিগারেট এর নেশা ততই কমছে । এক সময় এটা অসহ্য লাগছে । সিগারেট তো আমি এক রাতে দুই তিন প্যাকেট খেয়েই থাকি , এটা নতুন কিছু না তবে আজ যেন তার বিপরীত । রাতের আধারটা কেমন জেনো ক্ষুধারতো মনে হচ্ছে । মনে হচ্ছে এই আধার একাই বয়ে চলেছে অবিরাম বিরোতিহীন ভাবে । কেমন জেন হয়ে যাচ্ছে আমার মন , পরিবরতন এর ছোয়া মনের আশেপাশে উকি মারছে । হাতের অরধেক খাওয়া সিগারেট টা ফেলতে বারান্দায় গেলাম , গিয়ে ই একটু অবাক হলাম । পুরো শহরটাই যেন কেমন কান্নার আবেশ বুকে নিয়ে কস্টো চাপা দিয়ে রয়েছে । বাহিরের পরিবেশ দেখে মনটা আর মানাতে পারলাম না । মনের অযান্তেই চোখের কোনে পানি চলে আশলো ।মনকে বালি চাপা দিয়ে বারান্দা থেকে রুমে ধুকলাম ,আর পরোনের জামা টা বদলে নিয়ে বের হয়ে গেলাম ।
রাত তখন একটা কি দুটা , রাত যত বেশি শহড়ের লোকদের চলাফেরা ঠিক ততটাই কম । এই রাতে আমার মত পাগল ছারা আর কেউ বের হয় নাকি কে যানে । বের হয়ে জামান ভাই এর রঙ চা খেলাম । লোকটা খুবি ভালো ,আর ব্যবহার দেখার মত । জামান ভাই তার ১৪ টি বছর কাটিযেছে এই রঙ চা বিক্রি করে । যুদ্ধের আবেশ চারদিকে , কিন্তু তিনি এখন ও তার দোকান ছেরে যায় নি কোথাও । তাকে জিজ্ঞেশ করলে বলে দোকান ই নাকি তার সব । এই দোকান ছেরে নাকি সে যেতে পারবে না । তার সাথে কতখন গল্প সেরে আবার ও ফিরে গেলাম আমার ছোট কুঠির এ ।ছোট কুঠির বলতে ওই আমার মেসটা এই আর কি ।
শরির টা খুব ক্লান্ত অনুভব করলাম তাই ঘুমতে আর দেরি করলাম না ।
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো , কি একটা সপ্নই না দেখলাম । সপ্ন এত ভয়ংকর হতে পারে তা আজ জানলাম । সপ্নের ব্যখ্যা হয়তো অনেকেই দিয়ে থাকেন , তবে এই সপ্নের কারন আমি বুঝলাম না কিছুই , কেনই বা দেখলাম তাও বুঝলাম না । সপ্নের কথা ভুলে গিয়ে শরির টাকে মেলে ধরলাম সূরযের আলোতে । ৩০ মিনিট সময় নিলাম গোসল করতে আর নাস্তা খেতে । শহরের অবস্থা বেশি ভাল না বলে সকাল সকালই রওনা দিলাম গ্রামের উদ্দেশ্যে । পালিয়ে যাচ্ছি বল্লে ভুল হবে । নিজের জন্ম স্থানে যাচ্ছি ,বাবা মা এর কাসে যাচ্ছি । আমার সব বন্ধুরাই একেক দিকে চলে গেছে । আমার মেস এ আমার যে রুমমেট টা ছিলো সেও নেই গত ২ দিন ধরে । আমি পুরো একা তাই হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিতে হল গ্রাম এ যাওয়ার । শহরের অবস্থা সময় এর সাথে সাথে খারাপ থেকে আরও অধিক খারাপ হচ্ছে । ও দিকে মুজিবকেও নাকি ধরে নিয়ে গেছে ওই পাকিস্তানি কুত্তারা । কুকুরের সাথে ওদের সমালচনাও ঠিক না । কেননা , কুকুরও ওদের চেয়ে অনেক ভাল ।
ঝলমলে আকাশ , এমন আকাশ কবে যে বাংলার সাধিন পতাকার সাথে মাথা উচু করে দারাবে তাই ই ভাবছি । হেটে হেটে আসার সময় ঠিক জা ভেবেছিলাম তা ই হল । বাস তো দূরে থাক কোন রিকশা ও নেই আশে পাশে । গতকাল কিয়াশ বলেছিলো যে ডেমরা ঘাটের ঐ পারে নাকি কিছু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে । ভেবে চিন্তে সেই দিকেই রওনা দিলাম । রাস্তা দিয়ে হাটছি আর নানান কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । দেশ কি সাধীন হবে ??আমি কি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করতে পারব ?? আরও অনেক কিছু । হাটতে হাটতে ডেমরা ঘাটে এসে গেলাম । কিছু মানুষ দেখলাম এদিকেই আসছে । তাদের কে জিজ্ঞাসা করার আগেই আমাকে বলে দেয় আশ্রয় ঘাটীর কথা । টানা মিনিট দশেক হাটার পরে পৌছে গেলাম সেখানে । জায়গা টা যেমন ভেবে ছিলাম ঠিক তেমন না ।ছোট ছোট কতগুলো ঘর রয়েছে । ঘর গুলো পুরাতন টিন দারা তৈরি এবং জায়গার তুলোনায় অনেক মানুষ বসবাস করছে সেখানে ।ঐ দিকে যুদ্ধের খবর ছরিয়ে গেছে দেশের সব প্রান্তে । এই খানেও তার ব্যাতিক্রম নয় । রেডিও তে খবর সুনছে অনেক বৃ্দ্ধ একসাথে জর হয়ে ।
অনেকক্ষন ধরে বসে আছি , একাকিত্ত যেন দূর হয় না । মনটা মরেই গেছে মনে হচ্ছে । আমার চিন্তা একটাই যে ঢাকার সব জায়গায়ই প্রায় মেলিটারিরা ঢূকে গেছে । এই জায়গায় যে কখন আশে তার কোন থিক নাই । এই অঞ্চলটা ঢাকার ভেতরে ই কিন্তু ঢাকার শেষ প্রান্তে । গ্রামের ছোয়া লাগানো একটা ছোট শহর ।
আমার আর এই যায়গায় মন বসছে না । আশ্র্য় কেন্দ্র বরতমানে এক লোক চালাচ্ছে । লোকটির নাম সালাম হোসেন । ঐ লোকটা একজন বিত্তবান লোক । দুপুরে একবেলা খেয়েছিলাম , তাই পেটে আর তেমন খিদে নেই । সালাম ভাই এর কাছ থেকে বিদায় নেয়ে রওনা দিলাম ।
হাটতে হাটতে অনেকখানি পথ চলে এসেছি । আমি বাশা থেকে নিজের সাথে একটা জিনিস ই নিয়ে এসেছিলাম তা হল একটি বেগ , বেগটা কাধে নিয়ে হাটছি । বেগটি তেমন ভারি নয় ।তাই হাটতে অতটা কস্ট হচ্ছে না । নারায়নগঞ্জ পেরিএ আরো সামনে চলে এসেছি । রাত ও প্রায় হয়ে এসেছে , কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না । এই অঞ্চল গুলো দেখি ঢাকার থেকেও বেশি নিরব । লোকজন কে কোথায় গেছে কোন ঠিক নাই । হাটতে হাটতে সামনে একটি মসজিদ দেখলাম । দেখতে মসজিদের আকার খুব বেশি বর নয় । তবে দেরি না করে হাত মুখ ধুতে ঢুকে গেলাম মসজদের ভিতরে । পানির ব্যবস্থা ছিলো কূয়াতে । কূয়া থেকে পানি উঠিয়ে মুখ , হাত , পা ধুলাম । শরির টা পুর ছেরে দিয়েছে মসজিদের ফ্লোর এ শুয়ে চোখ বন্দ করলাম ।
হঠাৎ করে কে যেন জোরে জরে ডাকছে । ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে দেখি এক দাড়ি ওয়ালা পাঞ্জাবী পরা মধ্য বয়স্ক লোক আমাকে ডাকছে আর বলছে তারা তারি উঠতে । মেলিটারি রা এসে গেছে , লোক টি সম্ভবত মসজিদের ইমাম । মেলিটারির কথা শুনে মশ্তিশকের স্নায়ু গুলো যেন কাজ করা বন্ধ করে দিলো । ইমাম সাহেব আমাকে বল্ল মসজিদের পিছনের গেট দিয়ে চলে যেতে । তাকে জিজ্ঞাস করলাম আপনি যাবেন না !! তিনি নিঃশব্দে আমাকে এক্টাই জবাব দিল …না…।।আমি দেরি না করে মাথার নিচের বেগ টা নিয়ে দ্রুত বাহিরের দিকে ছুটতে লাগ্লাম …।দৌরাতে দৌরাতেই আমার কানে ছুটে আশ্লো বুলেটের শব্দ । হয়ত আর বেচে নেই ইমাম সাহেব …, মেরে ফেলেছেল তাকে । এরকম ই কিছু হবে ।।নিজের কাছে তখন খুবি অবাক লাগছে কি রকম ম্ন হতে পারে মানুষের । বিবেক কেমন হতে পারে?? আমাকে লোকটি ডাক দিয়ে তুলে দিলেন ঘুম থেকে । আর আমি প্রানের ভয় এ দৌ্রে চলছি । এরকমটাই কি আমি চেয়েছিলাম !! নিজের কাছে প্রশ্ন । হয়তো এতক্ষনে সেই আশ্রয় কেন্দ্রের লোক গুলো ও আর বেচে নেই । বেচে নেই সেই বিত্তবান লোক্টিও যে এতগুলো মানুশের দায়িত্তে ছিলো । ভাবতে ভাবতে ই নেজের ক্লান্তি অনুভব করলাম । প্র্ায় অনেক্ষন যাবত দৌ্রে চলায় হাপিয়ে গেছি । সামনে একটি গাছের নিচে বসে পরলাম হাত পা ছেরে দিলাম । ভয় এর রেশ কেটে গেছে অনেক আগে ই কিন্তু মন কে আর সান্তনা দিতে পারছি না । মন ভাবছে নিজের অস্থিত্তের কথা । নিজেকে হিন মনে হচ্ছে । জীবনের সুখমও দিনগুলো হারিএ যাওযার শোকে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছি না ।
এরকমি লিখা ছিলো ডাইরিটিতে ।ডাইরিটি পরে বন্ধ করার থিক আগে মনে পরলো পাতার কথা । প্রথম পাতাটা খুলতে ই একটু অবাক হলাম । পাতাটা ছিলো এই রকম …………
“ আমি সাংবাদিক মাহমুদুল হক । ডাক নাম পিয়াশ । কাজের ফাকে ফাকে গল্প কবিতা লিখা আমার নেশা । নিজেকে প্রকাশ করার কোন ইচ্ছা ই আমার নেই । কষ্ট , দুঃখ , সুখ সবি আমার নেজের জন্ন্যে তোলা থাকে । আমার কবিতা আমি কখনই প্রকাশ করতে চাই না । আমি নিজেকে রাডার এর সিমানায় আটকে রাখতে চাই “।
“ মাতার নাম নুরজাহান বেগ্ম , পিতা মৃত আশফাক হোসেন । দেশের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জিলা , গ্রাম বানিয়াল পুরব বাঘের চড় । “
এই দুই খন্ডে তার ডাইরির প্রথম পাতাটা ছিল । তার ডাইরির কথাগুলো পরে আমার কৌতুহল আরো বেরে গেল । তার বেগটা আমার চখে পরল ডাইরির পাশে ই পরে ছিল । বেগটার ভিতরে তাকিয়ে দেখলাম বেগটায় আছে ১ বক্স কলম আর একটা সেলাই করা নিউজ প্রিন্টের দিছতা খাতা । কয়েকটা সিগারেট এর প্যাকেট আর একজন মহিলার ছবি । মুখটা খোলা এবং বোরকা পরা । দেখতে দেখতে হঠাৎ আমাকে ডাক দিল আমার সহ যোদ্ধা রা । আমি এই খানে এশেছিলাম আমাদের অপারেশনে । ৩ নং সেক্টর এ আমরা যুদ্ধো করছি । আমি যশর এর এই মেলিটারের ঘাটিতে আজ মিশণ এ এশে ছিলাম । মিশ্ন শেস যুদ্ধো ও সেশ । হানাদার বাহিনিরা পরাজিত হয়েছে । পুর ঘাটিটা আমরা দখল করে নেয়েছি …। লোক্টার বেগ ও ডাইরিটা নারাচারা করছিলাম , লোকটার খাতায় অনেক কবিতা লিখা দেখলাম ।। লোকটার হাতের লিখাটা পেচানো হওয়ায় আমার বুঝতে একটু কস্টঈ হচ্ছিল । লোক্টার খাতায় লিখা একটি কবিতা চোখে পরলো । কবিতাটি খাতার এক কোনায় অগোছালো ভাবে লিখা ছিল । কবিতাটা হল ………………
“যুদ্ধো আমি করেছি বটে , যুদ্ধো আমি করেছি
শ্ত্রু সেনার মনের পাজর কল্ম দিয়ে গুরেছি
পরেছি আমি নিঃস লোকের চোখের পাতা পরেছি
মনের ভিতর ক্ষিপত বেদনায় অগ্নি শপথ করেছি
সহ্য আমি করেছি দেহে সহ্য আমি করেছি
আঘাত আমি শরিরে নাকো লিপ্ত খাতায় নেয়েছি”
আবারো ডাক পরল কমান্ডারের । সবাই খুব মনযোগ দিয়ে তার কথা শুনছে । আজ রাতে একটি অপারেশন আছে , সবাই তা নিয়ে আলোচনায় বসেছি ।সিকদার ভাই এর কঠিন পরিচালনায় আমরা এই মিশন এও সফল হই । মুক্তো করি দেশের মাটি ।রাত পেরিয়ে ভোর হয়ে গেলো রেডীও তে শোনা গেলো বিজয় এর ধবনি । বাংলাদেশ এখন সাধীন । ৯ মাস যুদ্ধো শেষে সব মানুষের বুকে আনন্দের জোয়ার ………………।
দেশ সাধীন হল আজ ২ই বছর । যাদের সাথে ৯ মাস যুদ্ধো করলাম তাদের কারো সাথেই আর তেমন ্যোগাযোগ নেই , সবাই নিজের জীবন নিয়ে ব্যাস্ত । আমি খুব ভোরেই বের হয়েছি বাসা থেকে মুন্সিগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে , যাব বানিয়াল পুরব বাঘের চড় এ । বাস এর জানালার পাশের সিটটাতে বসেছি …।। মাথাটা জানালার সাথে লাগিয়ে দিগন্তের পানে চেয়ে রয়েছি আর খুব বাতাসে উরে যাচ্ছে আমার চুল । সাধীন বাংলার বুকে আমি ছুটে চলেছি আমি ।শুধু একটাই কারনে……………………………।।
০৫ ফেব্রুয়ারী - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪