সাহিদা অতটুকুন একটা মেয়ে কতই বা বয়স হয়েছে ! তের কি চৌদ্দ এই বয়সটা কি খুব বেশি বয়স হয়ে গেছে ? কিন্তু সাহিদার বাবা অসুস্থতার দরুন ঠিকমত কাজ করতে পারে না। ৭ম শ্রণিতে বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হয়নি সাহিদার। ছাত্রী ভাল থাকা সত্বেও শুধু বাবার দিকে চেয়ে ঢাকায় পাড়ি জমাতে হয়েছিল। মেয়ে তো! তাই বাবাকে একটু বেশিই ভালবাসত। ভোর পাঁচটার প্রথম বাসটা না ধরতে পারলে সকাল সকাল ঢাকা পৌছা যাবে না। বাবারও মন খারাপ এত আদরের মেয়েকে বিদায় দিতে ঘর থেকে বের হয়নি।আমার এই অবস্থা না হলে তো মেয়েটাকে দূরে পাঠাতে হত না। সাহিদাও ঢাকায় এসেছে তার খালাত বোনের সাথে । তিন্নি একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে কাজ করে। তাই সাহিদাকে নিজের সাথে কাজের ব্যবস্থা করল। প্রথম প্রথম খুব ভাল না লাগলেও এখন খুব খারাপও লাগে না।অফিস আর কাজ শেষে বাসায় এসে আবার রান্না করে খাওয়া জীবনটা এভাবেই চলছিল। প্রায় ছয় মাস হতে চলল বাড়িতে যাওয়া হয় না। প্রত্যেক দিন কথা হয় বাড়িতে ছোট ভাই আর বোন আছে বাড়িতে।বাবার সাথে কথা বললেই যত ঝামেলা ! শুধু কান্না করবে আর বলবে মা রে তুই চলে আয়। তোকে কতদিন দেখি না। এইত বাবা আগামী মাসেই আসব তুমি ভাল মত খাওয়া-দাওয়া করো, আর আমার জন্য চিন্তা কর না। সাহিদা আজ খুব ভোরে উঠেছে নামাজও পড়েছে। মাকে ফোন করে বলছে 'মা আমি কালকে বাড়ি আসব আমাদের গার্মেন্টস ছুটি দিব আজকে বেতন দিব আর কালকে বাড়ি চলে আসব।' আসার পর এই প্রথম বাবার হাসি উপলব্ধি করল সাহিদা। ছোট বোনের লাল চুড়ি আর ছোট ভাইয়ের নতুন একটি শার্টের আবেদন মনে রেখেছে সাহিদা। সাহিদা রাস্তা হাটছে আর ভাবছে আজকের পথ এত দূর মনে হচ্ছে কেন ? দশ মিনিটের পথ; আধা ঘন্টা হেটেও মনে হয় পথ শেষ হচ্ছে না। অফিসের সামনে আসতেই বুকটা ধুকধুক করছে এই বুঝি ভেঙ্গে যাবে বিল্ডিং। কিন্তু মালিক কতৃপক্ষ ঘোষণা করেছে আজকে ভিতরে না আসলে বেতন দেওয়া হবে না। সবার সাথে সাহিদাও প্রবেশ করে, সাহিদা কাজ করত চতুর্থ তলায়, প্রথম প্রথম সিঁড়ি বেয়ে উঠতে সাহিদার অনেক ভয় লাগত এই বুঝি সিঁড়ি ভেঙ্গে পড়ে! এখন আর ভয় নেই বরং ভালই লাগে। সাহিদা ও সহকর্মিদের মাঝে অজানা আতঙ্ক কাজ করছে, আবার একটু আশার আলোও জেগে উঠেছে হৃদয়ের ঈশান কোনে। বেতন পেয়ে ছোট ভাই-বোনের আবদার পূরণ, বাবা-মার জন্য নতুন কাপড়। এ সব ভাবতেই খুব ভাল লাগছিল সাহিদার ! আর একটি সুখ বার্তা ছিল খালাত বোনের বিয়েতে স্বপ্নের মত করে সাজাবে বোনকে আর নিজেও সাজবে মনের মত করে। মেহেদী রাঙানো হাতে বোনের বাড়িতে যাবে। স্বপ্নগুলো চাপা পড়ে গেল মালিক নামক দানবদের অর্থ লিপ্সার কাছে। ভয়ঙ্কর এক দিনের সাথে কেটে গেল রাতটিও ভোরে সাহিদা ফোন করে বাড়িতে, মা ফোন পেয়ে কত আনন্দ নিয়ে রিসিভ করে, এই বুঝি মা আমার চলে এসেছে। 'মা আমাকে বাঁচাও! আমি বাঁচতে চাই! আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না। আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, পানি দাও!' তারপর আর কিছু বলার আগেই লাইনটা কেটে যায়। মা কিছু বুঝে ওঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সাহিদা কিন্তু মেহেদী রঙে ঠিকই সেজেছিল। তবে তা ছিল রক্তে রঞ্জিত নিথর দেহ। পৃথিবীতে আজ মানুষের মূল্য এত কম কেন ? বলতে পারেন কেউ ? আর কত সাহিদা ক্ষমতা আর অর্থ লিপ্সার বলি হবে এ সমাজে ? অপরাধিরা অপরাধ করে পার পেয়ে যায় বলেই নতুন অপরাধি সৃষ্টি হয় এ সমাজে। একদিকে মানবতা আর্তনাদ করে কাঁদে অন্য দিকে ক্ষমতার শপথ! কত বিচিত্র আমাদের মানবতা ! মানবতা না জাগলে কখনও একটি সুন্দর ভোর কোন জাতির আঙিনায় আসে না। এ গল্পগুলো কখনও সুন্দর হয় না। শেষটা থাকে অন্তরালে দূর অজানায়....
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।