আমার যত আঁধার

অন্ধকার (জুন ২০১৩)

রঞ্জন আহমেদ
  • ৩৬
অতঃপর রাত্রিবেলা ধানক্ষেতটা ফাঁকা হয়ে যেতেই ইঁদুরেরা ছোটাছুটি করে দিল। মওকা বুঝে ঝিলের জলের নিঃসঙ্গ মাছটাও গর্ত হতে বের হয়ে আসে, তিরতিরিয়ে সাঁতার কাটে।
মৃত বউটার হাহাকার বাতাসে মিলিয়ে গেছে বহুদিন হল, তবে রক্ত এখনো ইতস্তত লেগে আছে পাঠখড়ির বেড়াটায়।
বুড়ি শাশুড়িটা বিনা কারনেই পাটের সুতোগুলো পাকাতে থাকে। চোখদুটো ঘুমে ঢুলুঢুলু তবু হাতদুটোর বিশ্রাম নেই। পরতের পর পরত পড়তে থাকে আর আনমনেতেই তাতে মিশে যায় দুঃখগুলো, দীর্ঘশ্বাস আর কিছু অনুতাপ।
বখাটের দল তাস খেলছিল কুপীর আলোয়। রাত ভারী হলে দল ও ভারী হবে। তরল আঁধারে তখন যোগ হবে লোভ, রক্ত আর পাপের সমন্বিত ক্বাথ। তেলতেলে কুপীটা সে ক্বাথ শুষতে শুষতে একসময় নেতিয়ে যায়।
নারকেল গাছটা দীঘির পার হতে এক চুমুক পানি উপরের দিকে পার করতেই জবা ফুলের ঝাড়টা নড়ে উঠলো। হিংসুটে ঝাড়টা দীঘির জলের দিকে শেকড় বাড়াতেই তা মৃতা বউটার তর্জনীতে ঠেকে যায়, অনেকটা খেলাচ্ছলেই সেটি এরপর সেই জীর্ণ তর্জনীকে কেন্দ্র করে পাক খেতে থাকে। বহুকাল আগের সে কঠোর পর্দানশীল রমণীটি তাতে অবশ্য বাঁধা দিলনা।
রাত আরেকটু বাড়তেই হায়েনার দল এসে হাজির হল। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ওরা কিছুটা ক্লান্ত- ক্ষুধার্ত।
কবরখানার শেষপ্রান্তে এক ভাগ্যহীনা কন্যাশিশুকে গোপনে মাটিচাপা দিয়ে গিয়েছিল তার বাপ। ধূর্ত হায়েনার দল বাতাসে নাক ডুবিয়েই তা টের পেয়ে গেল।
বুনো শুয়োরের মত ঘোঁত শব্দ তুলে ওরা সেদিকেই ছুটলো। বিদ্যুৎ গতিতে ঝোড়ঝাপ ভেঙ্গে ওরা যখন সেদিকে ছুটছিল, কাচারি ঘরে তখন পাগলা মুন্সীটা তখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল। ধ্বস্তাধস্তির শব্দ কানে আসতেই লোকটা বিরক্তভাবে পাশ ফিরে শুল।
মাত্র আড়াই হাত মাটির নিচে শুয়ে থাকা সে কন্যাশিশুটির মুখখানা তখনে নীল বর্ণ ধারন করেছে। উপরে ধারালো নখের আঁচড়ের শব্দ পাওয়ামাত্রই মেয়েটি করুনস্বরে কেঁদে উঠলো।
---
বাড়িতে অতিথিদের রেখে আমরা শুয়েছিলাম উঠোনে, পাটি বিছিয়ে। মশা টের পাইনি, তবে কুয়াশা পড়েছে হালকা।
পাশে শুয়ে থাকা জ্যাঠাতো ভাইটা ঘুমে একেবারে কাদা। কপালের পাশটা দপদপ করছে, হাত বুলিয়ে দেখি পিঠের কাছটা ভিজে আছে।
চারপাশ একেবারে শুনশান। কেন যেন মনে হচ্ছে একটু আগেই ধারে কাছে কোথাও ভীষণ হুটোপুটি হচ্ছিল, আমি জেগে ওঠায় থেমে গেছে।
দক্ষিণের বাগানটা পেরলেই গোরস্থান, গোলমালটা যেন সেদিকেই হচ্ছিল, আমি ঝট করে উঠে দাড়াই।
কাচারি ঘরটা পার হবার সময় শুনলাম পাগলা মুন্সীটা নাক ডাকছে। খালি পায়েই এসেছি, অন্ধকারে কাঁটা দেখার উপায় নেই।
মায়ের কবরের সামনে আসতেই মনে হল গোরস্থানের শেষ মাথায় কারা যেন ঘাপটি মেরে বসে আছে। আমি অবশ্য তাতে ভ্রূক্ষেপ করলামনা।
উবু হয়ে মায়ের কবরটার সামনে বসি। জবার ঝাড়টা নিপাট ভদ্রলোকের মত দাড়িয়ে আছে।
দূর আকাশের নিঃসঙ্গ তারাটি হয়তো ভেবেছিল এতো রাতে তাকে খেয়াল করার মত আর কেউ জেগে নেই। নিতান্ত খেলাচ্ছলেই বরফরঙ্গা ছিমছাম তারাটি নির্মেঘ আকাশের গায়ে কিছুক্ষণ লুটোপুটি খেয়ে নিল। জারুল গাছের ফাক দিয়ে আমি সেদিকে নির্নিমেষে চেয়ে থাকি।
মার নাকি অনেক লম্বা চুল ছিল। আমি সেটা ভেবেই কবরের উপর আলতোভাবে হাত বুলাই। গভীর ঘুমে মগ্ন মা যেন ছোট একটা শ্বাস ফেললেন। আমি অকারণেই গলা নামিয়ে আলতোস্বরে বলি- ঘুমাও মা ... ঘুমাও!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # ভিন্ন ধারার অনেক সুন্দর একটি লেখা ।।
সূর্য গল্পের ভেতর ঘরটা হয়তো স্পর্শ করতে পারিনি পোশাকি অর্থটাই ভালো লাগলো। ভাষা, উপমা সব মিলিয়ে দারুন একটা গল্প।
তাপসকিরণ রায় এক ধরনের কাব্যিক গল্প মনে হোল--এ ধরনের লেখা সৃষ্টি পত্রিকাতে আনেকবার পড়ার সুযোগ ঘটেছে।আপনার লেখাটিও বেশ লেগেছে কিন্তু।অনেক ধন্যবাদ রইল।
মোঃ আক্তারুজ্জামান সকাল বেলা একেবারে মুন্সীর ঘাড়ে পড়ব ভাবিনি! আপনি সার্থক এবং শক্তিমান লেখক। অনেক অনেক ভাল লাগা এবং শুভ কামনা জানালাম।
জাকিয়া জেসমিন যূথী দারুন লিখেছেন। আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। লেখার আরেকটা ধরন আবিষ্কার করলাম।
ইবনে ইউসুফ দারুণ লিখেছেন ভাই। মুগ্ধ হলাম।
এশরার লতিফ ভাষার কারুকার্য মন ভরিয়ে দিলো।
মামুন ম. আজিজ আপনি দারুণ ভাষা শৈলীর উপস্থাপন করেন। .....কাল রাতে দুবার মোবাইলে পড়েছি। এখন পিসিতে বসে কমেন্ট করছি। ...মুগ্ধতা এখনও আছে। আছৈ করুন বিষাদ..ঐ যে কন্যা শিশুর জীবন্ত কবর ..কি করুণ কি ঘুনে ধরা দেয়ালে আক্রমন.....মায়ের কবর , লাশ কিছূ দৃশ্য....এক নারী যাতনার সিম্বলিক শট.......আপনাকে নিয়মিত লেখার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪