ভয় দর্শন

ভয় (এপ্রিল ২০১৫)

রাজু
মোট ভোট ২৭ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.৪১
  • ১৭
জামিল খুব ভালো স্টুডেন্ট । বিশেষ করে গণিত বিষয়টা তার খুব পছন্দের । সবসময় মনে মনে গণিতের লজিক চিন্তা করতে থাকে । কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে এখন চাকরী খুঁজছে আর দশ জনের মত । বছর খানেক হয়ে গেছে । যদিও তার চাকরী করার ইচ্ছে নেই ।

আজকে একটা ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছে জামিল । বাসে বসে বসে ভাবছে , চাকরীটা হয়ে যেতে পারে । সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের পদ । কিন্তু ভাল্ লাগছে না চিন্তা করতে । অন্যমনস্ক হয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে । গরমে ঘামে ভিজে গেছে শার্টটা । তার ওপর জ্যামে থমকে আছে সব যানবাহন । যদিও লোকাল বাস । তবুও এর মধ্যে একটু স্বস্তি , বাসের ভেতরটা ভিড় কম । ড্রাইভারের বাম পাশের সিটগুলো ফাঁকা । মহিলা সিট উল্লেখ করা থাকে ইদানীং জায়গাটায় । তাই কোনো সচেতন পুরুষ যাত্রী বসে না সেখানে । এখন অবশ্য বাসটাতে মহিলা যাত্রী তেমন একটা নেই । দুজন মাঝবয়সী পুরুষ যাত্রী উঠে এদিক ওদিক তাকিয়ে ঐ মহিলা সিটে গিয়ে বসলো । কোনো মহিলা যাত্রী উঠলে হয়তো তারা সিট ছেড়ে দেবেন ভেবে বাসের হেল্পারও কিছু বললো না । জামিল খেয়াল করলো মহিলা সিটে বসা পুরুষ যাত্রী দুজন সম্ভবত বন্ধু । কথা বার্তায় বোঝা গেলো বাসায় ফিরছেন একসাথে । কিছুক্ষণ বাদে দুজন মহিলা যাত্রী উঠলো । কিন্তু পুরুষ দুজন তাদের জায়গা থেকে নড়লো না । হেল্পার তাদের উঠে যেতে বললো । তবুও তারা কথায় কর্ণপাত না করে উল্টো বলে দিলো ‘এখানে কোনো মহিলা সিট লেখা আছে ?’ মহিলা দুজন নেমে গেলো কোনো বাকবিতণ্ডায় না জড়িয়ে । জামিল খেয়াল করলো । বিষয়টা তার ভালো লাগেনি । কী মনে করে জামিল তার সিট থেকে উঠে এসে বাসের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে রইলো আর পুরুষ দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো । তারাও খেয়াল করলো ব্যাপারটা । হেল্পার ভাড়া তুলতে এসে জামিলের কাছে ভাড়া চাইলো । জামিল পুরুষ দুজনকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো , “খালাম্মারা কই নামবে ? ” বাসের কিছু যাত্রী কথাটা শুনে হেসে উঠলো হেল্পার সহ । জামিল হেল্পারকে আবার বললো , “খালাম্মারা যেখানে নামবে সেখানের ভাড়া রাখো । খালাম্মাদের বাসায় যাবো” । এবার পুরুষ যাত্রী দুজনের একজন বলে উঠলো , “এই ছেলে কি বলতে চাও তুমি ? রসিকতার জায়গা পাও না ?”
-ছিঃ ছিঃ খালাম্মা ! কী বলেন ! রসিকতা করবো কেন ? আপনারা যেখানে বসেছেন ঐখানে মহিলারা বসে । আর আমি মহিলাদের খুব সম্মান করি । আপনারা একা একা বাসায় যাবেন কীভাবে ? আমি আপনাদের বাসায় পৌঁছে দেবো । আজকাল রাস্তা ঘাটের যা অবস্থা !! কখন যে কী বিপদ হয় বলা যায় না ।

বাসের অন্যান্য যাত্রীরা খুব মজা পাচ্ছে । বিশেষ করে হেল্পারটার মুখে মুচকি হাঁসি লেগেই আছে ।
ঐ পুরুষ দুজনের একজন বললো , “মানে ?” আরেকজন বললো , “আমাদেরকে চেনো তুমি ? আমরা কারা ?”
-জ্বি না খালাম্মা ।

এবার জোরে হেসে উঠলো বেশ কয়েকজন যাত্রী । জামিল পুরুষ দুজনকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আবার বললো , “ খালাম্মা ! ভয় পাইয়েন না । আমার এক বন্ধু এবার এএসপি হয়েছে । পুলিশ প্রোটেকশনে বাসায় দিয়ে আসবো আপনাদের । সচেতন নাগরিক বলে দায়িত্ব আছে না আমার !! ”
পুরুষদের একজন বললো , “ফাজলামোর একটা সীমা থাকা দরকার !”
-আমিও তাই বলি খালাম্মা । ফাজলামোর একটা সীমা থাকা দরকার । আপনারা শার্ট প্যান্ট পড়ে বের হয়েছেন । বোরখা পড়েন নাই । আপনাদেরতো পাথর মারা উচিৎ মাটিতে পুঁতে ।

একজন রেগে গিয়ে বললো , “মানে কী এসবের !”

জামিল বললো , “খুব সহজ মানে । মহিলা সিটে বসছেন । আপনারাতো এখন মহিলা । দুজন মহিলা যাত্রী উঠে বসতে না পেরে নেমে গেলো । আমাদের সাথে ছেলেদের মতো করে ধাক্কাধাক্কি করে ভিড়ের মধ্যেতো আর দাঁড়িয়ে যাবে না । তবুও আপনারা উঠে এসে তাদের বসতে দিলেন না । ভাবলাম আপনারা পোয়াতি । তাই বাসায় পৌঁছে দেবো আপনাদের । আর বলে আসবো এভাবে একা একা যেন বাইরে বের না হয় । নয়তো ফতোয়া দিয়ে বাইরে বের হওয়া বন্ধ করার ব্যাবস্থা করে দেবো ।”

এবার ভালো মতো ভয় পেয়েছেন পুরুষ দুজন । বাসের যাত্রীরা খুব হাসছিল । তারাও চুপ হয়ে গেলেন । পুরুষ দুজন সিট থেকে উঠে এসে দাঁড়িয়ে রইলেন । একজন জামিলকে বললো , “বাবা , খুব লজ্জা পেয়েছি , তার চেয়ে বেশী ভয় পেয়েছি । এর পর থেকে মহিলাদের বসার জন্য সিট ছেড়ে দেবো ।”
জামিল বাস থেকে নেমে গেলো । হাঁসি হাঁসি চেহারায় হেল্পার বললো, “মামা , চরম শিক্ষা দিয়া গেলেন !”

বাসার কাছাকাছি চলে এসেছে জামিল এতক্ষণে । হেঁটে যেতে আর পনের মিনিট লাগবে । এই এলাকাটা পার হলেই ওদের এলাকা । হাঁটছে একমনে । মেজাজটা আবার খারাপ হয়ে গেলো । রাস্তার পাশেই কিছু কলেজ পড়ুয়া ছেলেরা মেয়েদের দেখে শিষ দিচ্ছে । একটা মেয়ের চোখ ছলছল দেখলো জামিল । জামিল একটা ফোনকল সেরে ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে গেলো ।

যে ছেলেটা শিষ দিয়ে বাজে বাজে কমেন্ট করছে বন্ধুদের সাথে , তাকে গিয়ে জামিল বললো , “আমার একটা বোন আছে । খুব সেক্সি আর হট । ও খুব শিষ শুনতে পছন্দ করে । তার নাম্বারটা দেই । কথা বলেন তার সাথে । শিষ বাজিয়ে শোনাবেন । খুশী হবে । আপনাদের সাথে ডেটিংও দিবে । রাস্তাঘাটে এভাবে অন্য মেয়েদের কাছে চেয়ে নাম্বার পাবেন না ।”

ছেলেগুলোর কেউই জামিল কে চেনে না । জামিলের কথায় খুব মজা পেলো তারা । তাদের একজন জামিলকে বললো , “মাগীর দালাল নাকি ? রেট কত ?”
জামিল হাঁসি হাঁসি মুখে বললো , “ছিঃ ! এসব কি বলেন ভাইয়া ? দালাল হবো কেন ? আমাদের ফ্যামিলি খুব ভদ্র ফ্যামিলি । আমার বোনও খুব ভদ্র । আর দেখতেও খুব সুন্দর ।”
ছেলেগুলোর আরেকজন বললো , “হালায় নির্ঘাত পাগল ।”

ততোক্ষণে তিন চার মিনিটের মধ্যে জামিলের এএসপি বন্ধুটি চলে এসেছে । তার আজকে অফ ডিউটি । বাসা এই এলাকাতে । তাই আসতে বেশী সময় লাগেনি । ছেলেগুলো এএসপি বন্ধুটিকে চিনে । তারা ভড়কে গেলো ।

জামিলের সাথে হ্যান্ডশেক করার মুহূর্তেই একজন এসে জামিলের পা ধরে বসলো , যে ছেলেটা জামিলকে দালাল বলেছিল । বাকিরা কেমন যেন থম মেরে গেছে ।
জামিল ছেলেটিকে উঠিয়ে জিজ্ঞেস করলো , “ভয় পেয়েছো ?” ছেলেটার মুখে কথা নাই । “এর পর থেকে ভয় পাওয়ার মতো কাজ কোরো না , কেমন ? তোমরা বাসায় চলে যাও । আমি কাউকে কিছু বলবো না । তোমরা শুধু পড়ালেখা করবা এসব কাজ বাদ দিয়ে , ঠিক আছে ?”

ছেলেগুলো ভাবেনি এমন ঘটনা ঘটবে । তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো । এএসপি বন্ধুটি ভালো করেই জানে ছেলেগুলো একটু বখাটে । বদ বাতাসের স্পর্শ । স্পর্শটুকু না থাকলে কেউই এমন হয়না ।

জামিল আর তার এএসপি বন্ধুটি মিলে টং দোকানের চা খেতে খেতে বাসের গপ্পটা করছিলো । দিন ফুরিয়ে এসেছে প্রায় । একটু পরে সূর্য ডুবে যাবে । যদি এরকম বদ বাতাসটা ডুবে যেতো... মানুষগুলো যদি নির্ভয়ে বদ বাতাসটাকে তাড়িয়ে দিতে পারতো বিবেকের ভয়ে... যদি ভয় দর্শনের প্রয়োজন না পরতো... যদি...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
jobmatching bd সরকারি-বেসরকারি, ব্যাংক, এনজিও, সেলস-মার্কেটিং, ডিফেন্স সহ ২৪ ক্যাটেগরির বিভিন্ন চাকুরির লেটেস্ট বিজ্ঞপ্তি সবার আগে পেতে ভিজিট করুন-
jobmatching bd সরকারি-বেসরকারি, ব্যাংক, এনজিও, সেলস-মার্কেটিং, ডিফেন্স সহ ২৪ ক্যাটেগরির বিভিন্ন চাকুরির লেটেস্ট বিজ্ঞপ্তি সবার আগে পেতে ভিজিট করুন-
Yousof Jamil সুন্দর লেখনী। শুভ কামনা সতত।
ক্যায়স অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ।
Fahmida Bari Bipu অভিনন্দন।
নাসরিন চৌধুরী অনেক ভাল লিখেছেন । ম্যাসেজও আছে । শুভকামনা জানবেন
ধন্যবাদ আপু । শুভেচ্ছা জানবেন । আপনার জন্যও শুভকামনা ।
আখতারুজ্জামান সোহাগ উচিৎ শিক্ষা দিল জামিল। এ রকম হওয়া দরকার। তাহলেই এক সময় ইভ টিজিং এর মতো ব্যাপারগুলো আর থাকবে না। শুবকামনা গল্পকার।
ধন্যবাদ ভাই । শুভেচ্ছা নিরন্তর ।

০২ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪২ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.৪১

বিচারক স্কোরঃ ৩.৩৮ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.০৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪