ঈগল ভেবেছিল একবার হানা দেবে আর খুজে নেবে শিকার । আকাশজুড়ে শিকার নিয়ে করবে বিজয়ভ্রমন । ভীতি ছড়িয়ে শাসনের অধিকারটা পাক্কা করে নেবে । কিন্তু আফসোস ! ক্ষত হয়ে আছে ডানায় । শিকার করা জার জাতধর্ম সেই-ই আহত শিকারীর গুলিতে ।
শিকারী তাকে হারিয়ে ফেলেছে । আধার হয়ে যাওয়া বনে , এখন ভাবনার সময়ের অন্ত নেই তার । কিন্তু কেন জানি না , এক ভাবনায় দিন কাটালে মনে মরচে ধরে । আহত ঈগল তাই প্রতিনিয়ত পাগল হয়ে অপেক্ষায় আছে সুস্থ হবার । বন্যতার সুখ আবার যেদিন হেসে উঠবে সেদিনের ইশারা পেতে চাইছে । ভয় একটাই । তার এই দুর্বল মুহূর্ত তার প্রিয় শত্রুরা যাতে বুঝতে না পায় । ঐ যে বলে না , হাতি বিপদে পড়লে কি কি হয় ।
ঈগল তার ডেরায় ফিরতে পারছে না ।শিকারীর ভয়ে নয় । উড়তে পারবে না বলে । নির্বোধ বলো বা নির্ভীক , বিপদের মুহূর্তে এগিয়ে যাওয়াটা এই ঈগলের আরেকটা জাতধর্ম । শিকারীরা হয়ত এখন অন্ধকারে আর খুঁজবে না । তাই ওদের নিয়ে আর ভয় নেই । এসব ছাই-পাশ ভয় হয়ত অন্য সময় জায়গাই পেত না । কিন্তু ঈগলের নতুন গৃহে তার সঙ্গিনী যে নতুন ভবিষ্যতের আলো লুকিয়ে রেখেছে দেহে । সত্যিই ! দায়িত্ব মানুষকে বাঁধনে বেধে ফেলে । না ! আসলে কয়েদ করে ফেলে । আর এর সাথে ভেতরের বন্যতাকে জবাই করে বিলি করে দেয় শত্রুদের মাঝে ।
সকালের আলোটা চোখে পড়ায় ঘুম ভাঙল তার । পাতায় জমা শিশির পান করে পেট নয় মন ভরাবার প্রবোধ দিল । এরপর যেন আবার সেই পুরনো ভয় জেঁকে বসলো । উড়তে চেষ্টা করল ঈগল । নাহ ! ডানাটা একটুও সঙ্গ দিচ্ছে না । এমন সময় প্রিয়শত্রু সাপের চলাচলের আওয়াজ পাওয়া গেল । চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে ব্যপারটা বুঝবার চেষ্টা করল ঈগল । শুধু চোখের চাহনি দিয়ে চারপাশটা দেখে নিলো একবার । যাক ! সাপ সাহেব চলে গেছেন ।
হাটা শুরু করল ঈগল । যদিও বিপদ তার কম নয় । কিন্তু ঘরে তার ফেরা চাই-ই । কিছুটা পথ হাটার পর দূরে একদল হায়েনার হাসির শব্দ শোনা গেল যেন । কিছুটা সময়ের জন্য ঈগল থেমে গেল আবার । হায়েনারা নির্ঘাত শিকারে ব্যস্ত । কাল পুরোটা রাত রক্ত ঝরে এখন একেবারেই ক্লান্ত ঈগল । কিন্তু নীড়ে তার যে ফেরা চাই । নিজেকে সামলে নিয়ে , ভয় আর ক্লান্তিকে কর্পূর বানিয়ে ঈগল আবারও চলতে শুরু করল । আরও কিছুটা পথ হাটার পর আবারও ক্লান্তি প্রিয়বন্ধুর মতো অসময়ে হাসিমুখ নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেল । অগত্যা আবারও বিরাম ।
চারপাশে বাঁদরদের শব্দ হঠাত করে সচকিত করলো তাকে । হায় আল্লাহ ! এ তো বাঘ আসছে । কিন্তু কোথায় বাঘ ? “ প্রিয়তমা ! ক্ষমা করো । যদি অনাহারের দিনগুলো কাটিয়ে , ভবিষ্যতের আলোগুলিকে জ্বেলে কিংবা হয়তোবা না জ্বেলেই , যদি চলে আসো আমার কাছে , তবে কথা দিচ্ছি , আমার অক্ষমতার জন্য উপযুক্ত ব্যাখ্যা এ বেলা নিশ্চয়ই দেব । যদি না পারি , তবুও আমি নিশ্চিত , তুমি আমায় ঠিকই ক্ষমা করবে । কারণ , এটাই যে তোমার সেই গুণ যার জন্য প্রভুর কাছে আমি সর্বদা কৃতজ্ঞ ।“ চারপাশ থেকে ছুটোছুটির আওয়াজ আসতে লাগল । সাম্নের মাঠে চড়ে বেড়ানো হরিণগুলোর সাথে বাঘটা যেন এক মরণ খেলায় লিপ্ত । বাঘটা যদি কোন হরিণকে ধরতে পারে তবেই রক্ষে । নতুবা হয়ত ক্লান্ত বাঘের সহজ শিকার হতে হবে তাকে । বেশ কয়েকটা উত্তেজনাকর মুহূর্ত শেষে বাঘটা একটা হরিণকে নিয়ে তার ভোজনালয়ে রওয়ানা হল । যাতে অন্য কারো অহেতুক ঔদ্ধত্যের মুখোমুখি না হতে হয় ।
বাঘ চলে যাবার পর আবারও হাঁটতে শুরু করলো ঈগল । শরীর তার এবার মনের রাজ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে অপরাধী । এমন সময় হঠাত দিগন্তে যেন ত্রাসের আগমন । হ্যাঁ ! এ তার ঈগল-রানী । দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে । আর কতবেলাই বা সে ঘরে বসে উপোসে মরবে । তাই হয়ত কয়েকশত বছরের ভেতর প্রথম কোন অন্তঃসত্ত্বা ঈগল পারবার আগেই শিকারে বেরুলো । নিজেকে খুব অপরাধী মনে হল ঈগলের । তার বাবা , তার দাদা , তার পূর্বপুরুষ সবাই তাদের প্রিয়তমার এহেন মুহূর্তে খাদ্যজোগানের কাজটা দায়িত্ব নিয়ে পালন করেছেন । ছি ! কতটা নিষ্কর্মা সে ।
আকাশের পানে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে স্বীয় পত্নীর উড়াউড়ি দেখতে লাগল ঈগল । হঠাত খুব কাছেই পাতার ঘর্ষণের শব্দে সচেতন হয়ে উঠল ঈগল । বাহ ! কি চমৎকার সময়জ্ঞান , প্রিয়শত্রু সাপ সাহেবজাদার । ফণা তুলে যেন জানিয়ে দিচ্ছে , বহুদিনের হিসেব চুকানো বাকি বন্ধু । আমাদের বহুজনকে নিজের পেটে পুড়ে অমন শক্তপোক্ত দেহটা বানিয়েছো তুমি । এবার দেখব ঐ দেহের জোর কতটা । ক্লান্ত ঈগল হঠাত করেই যেন নিজের শরীরে অকল্পনীয় শক্তি অনুভব করলো । শুরু হয়ে গেল ছোবল আর আঁচড়ের প্রতিযোগিতা । বেশ কয়েক জায়গায় আঁচড় বসানোর পর হঠাত করে মনে হলো চোখ ঝাপসা হতে শুরু করেছে । সাপের দুয়েকটা ছোবল যে তার গায়ে কিছুটা হলেও আঘাত করেছে তাতো বলাই বাহুল্য । কিন্তু একি ! সাপ সাহেবজাদা বিদায় নিচ্ছেন ? চারপাশে যেন বেশ কিছু পায়ের আওয়াজ পাওয়া গেল ।
এরপর ঈগলের আর কিছু দেখবার মতো বাকিও ছিল না । বন্য মানুষগুলো ঈগলের মাংস বেশ আয়েশ করেই খেয়েছে । সেই রাতেই ভবিষ্যতের আলোগুলিকে পৃথিবীতে এনেছেন ঈগল-পত্নি । আর দূরবর্তী পাহাড়গুলি থেকে গাছের মগডালে বাধা বাসাটায় প্রতিধ্বনি এসেছে ঈগল-পত্নীর প্রতিটি হাঁকডাকের ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এশরার লতিফ
শিকারীরও শিকারী থাকে, কিন্তু এটা কোন শিকারীরই মনে থাকে না। ভালো লাগলো রূপক গল্পটি।
তাপসকিরণ রায়
নেহাত কল্প কাহিনী,গল্প কাহিনীর মত মনে হোল--বিশেষ কিছু পাবো বলে পড়তে পড়তে গল্প শেষ হোয়ে গেল।যাই হোক,লেখকের সব লেখাই যে সবার কাছে ভালো হবে তা নয়--আগামীর অপেক্ষায় থাকবো।
সূর্য
প্রতীকি গল্পে বেশ সাবধানি থাকতে হয়। শুধু উপমায় বুঝাতে হয় বলে কিছু বিচ্যুতি থেকে যাবার সম্ভাবনা থাকেই। "দায়িত্ব মানুষকে বাঁধনে বেধে ফেলে" এখানে মানুষ শব্দটা গল্পের সাথে একটু গুলিয়ে গেছে আর ঈগল পেটে ডিম নিয়েও দিব্যি উড়তে পারে। একটু ঘষামাজা করে সংশোধন করে নিও। গল্পটা পড়তে পড়তে মনে হলো জিওগ্রাফী চ্যানেলে "ঈগলের সংসার" মুভি দেখছি। শক্তিমানেরও যে পতন হয় এটা বেশ ভালো উপলব্ধী করা যায় গল্পে। বেশ সুন্দর লিখেছো।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি
প্রতিকী গল্প..... বেশ শিক্ষনীয় বলে মনে হয় সমাজের শ্রেষ্ট জীবদের জন্য.....ভীষণ ভাল লেগেছে ....দিপুকে অনেক ধন্যবাদ...........
সুমন
গল্প হিসাবে গল্পটা ভাল লাগল, সারা জীবন যে শিকারী আজ সেই নিজেই শিকারে পরিণত হল। (অ:ট: ঈগলতো জানি ডিম পারে এখানে অন্তস্বত্ত্বা ঈগল একটু অসংগতি মনে হল।)
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।