ক্লাস থ্রী তে পড়াকালীন সময় একবার আম্মার কাছে কৌতূহল বশত জানতে চেয়েছিলাম,আমার বাবা কে?ক্লাসে স্যার যখন প্রশ্ন করেন,তোমার বাবা কে!তখন সবাই তাদের বাবার কথা বলে কিন্তু আমি বলতে পারিনা।চুপ করে থাকি!স্যাররা আমাকে খোঁচা দিয়ে কি সব যাতা কথা বলেন।সহপাঠীরা হাসাহাসি করে।আমার খুব কষ্ট হয় মা!মা আমার কথা শুনে কান্না শুরু করে দিলেন।একেবারে বাচ্চাদের মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে।আমার খুব খারাপ লাগলো।তাই মায়ের চোখ হাত দিয়ে মুছে বললাম,আমার বাবা কে বলতে হবেনা মা!তুমি আর কেঁদো না।কিন্তু মা কাঁদা বন্ধ করেন না।আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেন,খোকা,কে কি বলল ঐ সবে কান দিবিনা।আর শুন,আমিই তোর মা,আমিই তোর বাবা।তুই কি পারবিনা শুধু আমার পরিচয়ে বেঁচে থাকতে!আমি মাকে কথা দিলাম,পারবো!কারণ আমি আমার মা কে খুব ভালবাসি।অবশ্য যদিও তখন জানতামনা বাবার পরিচয় ছাড়া বেঁচে থাকা কি লজ্জার আর অপমানের ব্যাপার!
আস্তে আস্তে যখন বড় হতে লাগলাম তখন ভয়াবহ কিছু সত্যের মুখোমুখি হলাম।লেখা পড়ায় ভালা ছিলাম বলে এলাকায় আমার আলাদা একটা শুনাম ছিল।আমি কিছু বললে অনেকে খুব গুরুত্ব দিয়ে শুনতো।অনেকে আমার কাছ থেকে বিভিন্ন আইডিয়া নিত।আমি নিঃস্বার্থ ভাবে চেষ্টা করতাম মানুষের উপকার হয় এমন কিছু করেতে।অবশ্য আমার এই সব কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়ে নিজের কোন অহংবোধ কিংবা গর্ববোধ না থাকলেও আমার মায়ের ছিল তাঁর উল্টো।অর্থাৎ তিনি আমাকে নিয়ে গর্ব বোধ করতেন।ভালো লাগত আমাকে নিয়ে মায়ের আহ্লাদ দেখে।আমি যখন বারান্দায় মাধুর বিছিয়ে ভাত খেতে বসতাম তখন মা আমার পাশে বসে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে গল্প করতো।আমি বুঁদ হয়ে শুনতাম আর মনে মনে স্বপ্ন দেখতাম,বড় হয়ে যদি কোনদিন লেখক হই তাহলে মায়ের এসব গল্প কলমের খোঁচা দিয়ে কাগজের পাতায় আনব।সবাই আমার মায়ের জীবনের গল্প পড়বে।অবশ্য তখনও জানতাম না আমার মায়ের অন্ধকার জীবনের গল্পের কথা!
তখন ক্লাস এইটে পড়ি।প্রতিদিনকার মতো ক্রিকেট খেলতে গেছি গ্রামের মাঠে ।যেয়ে সেখানে আবিস্কার করলাম আমার সাথে মাঠে থাকা কোন ছেলেই কথা বলছে না।অনেক কষ্টে একটা ছেলে কে ম্যানেজ করে জানতে চাইলাম ব্যাপার কি?
ছেলেটা কোন প্রকার রাখ ঢাক না রেখেই বলল,তুই একটা জারঝ।
-জারঝ মানে কি রে?
-জানিনা,তয় আমার মা কইছে তুই অবৈধ সন্তান।তোর কোন বাবার পরিচয় নাই।আর যা গো বাবার পরিচয় নাই তাগো জারঝ কইবার নিয়ম!আর তুই এতদিন আমাগো মিথ্যা কইছিস যে,তোর বাবা মারা গেছে!হারামজাদা ভাগ,তোর লগে আমরা কেউ আর মিশুম না।
ছেলেটির কথা শুনার পর আবিস্কার করলাম আমার চোখ বেয়ে জল পড়ছে।আমি তাঁর সাথে আর কথা বাড়ালাম না।সোজা বাসায় চলে আসলাম।সেদিন রাতে আমার খুব জ্বর হল।খেয়াল করলাম মাঘ মাসের প্রচণ্ড শীতে মা রাত জেগে জেগে আমার কপালে একটু পর পর জল পটি দিচ্ছে।আশ্চর্যের ব্যাপার হল,আমি লক্ষ করলাম মায়ের প্রতি আগের মতো আমার আর কোন ভালোবাসা কিংবা অনুভূতি নেই।যা আছে তা শুধু ঘৃণা।একবার তো ইচ্ছে হয়েছিলো মা কে বলি,আপনি আমার কপালে জল পটি দিবেন না।আপনি খারাপ মহিলা।কিন্তু বলতে পারিনি!মায়ের মুখ টা দেখে কেন যেন খুব মায়া হল!
জ্বর সারার দুইদিন পর খবর পেলাম,আমি ক্লাস ফাইভের মতো ক্লাস এইটেও বৃত্তি পেয়েছি।আমার সাফল্যের সংবাদ শুনে মায়ের সে কি খুশি।হাব ভাব দেখে মনে হল,বৃত্তি আমি পাইনি!তিনি পেয়েছেন।
যাই হোক,মা সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি আমাকে আর গ্রামে পড়াবেন না।ভালো পড়া লেখার জন্য শহেরে পাঠাবেন।সেজন্য তিনি তার কাপড় সেলাই করে জমানো অর্থ গুলা মাঠির ব্যাংক থেকে বের করলেন।আমার সে কি খুশি!
আমাদের স্কুলের বাংলা স্যারের সাথে যেদিন ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম সেদিন মায়ের কি কান্না!মায়ের প্রতি প্রবল ঘৃনা থাকা সত্ত্বেও সেদিন কেন যেন আমার মনে হয়েছিলো,খারাপ মহিলা হলেও মা বোধয় আমাকে একটু বেশী ভালবাসেন।যদিও তখন মনে মনে বেশ খুশি হয়েছি এই ভেবে যে,এই খারাপ মহিলার সাথে আমার আর থাকতে হবে না।
২
নতুন স্কুলে ক্লাস নাইনে ভর্তি হবার তিনদিন পরেই একটা সারপ্রাইজ পেলাম।আমার অতীতের এবং বর্তমান সময়কার রেজাল্ট দেখে স্কুল কৃতপক্ষ আমাকে একটা স্কলারশিপ দিয়েছে।যার ফলে S.S.C পর্যন্ত পড়ালেখা করতে আমার কোন টাকা লাগবে না আর সেই সাথে খাওয়া দাওয়া এবং আবাসিক ব্যাবস্তা পুরোপুরি ফ্রী!আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।আর সঙ্গে সঙ্গে জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে মা কে একটা চিঠি লিখলাম,
প্রিয় আম্মা,
আপনাকে আমার জীবনে আর কোন দরকার নাই।আপনি একটা খারাপ মহিলা।আপনার জন্য আমি জিবনে অনেক অপমানিত হয়েছি।লোকে আমাকে জারঝ সন্তান বলেছে।আমি চাই,আপনি আমার সাথে কখনো দেখা করবেন না।যদি করেন,তাহলে আপনি আমার মরা মুখ দেবখবেন।আর হ্যাঁ,আমার পড়া লেখার খরচ নিয়ে আপনাকে কোন চিন্তা করতে হবে না।এটা একান্ত আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।ভালো থাকবেন।আর কখনো কষ্ট দিয়ে থাকলে মাফ করবেন।
ইতি
শ্যামল
চিঠিটা লিখেই মায়ের ঠিকানায় পোষ্ট করলাম।মা চিঠিটা পড়ছেন কি না জানিনা তবে তিনি আমার সাথে আর কোনদিন যোগাযোগ করেন নি।আমিও তার সাথে আর যোগাযোগ রাখিনি।পড়ালেখা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।যার ফলাফলও পেলাম হাতেনাতে ...... এসএসসি এবং এইচএসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেলাম।তার পর প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স এবং মাস্টার্স কমপ্লিট করে জীবনের অনেক চড়াই উতরাই পাড়ী দিয়ে আজ আমি দেশের অনেক বড় একটা কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ পদে আছি। পাশাপাশি ভিবিন্ন চ্যানেলের জন্য নাটক লিখি।গত বইমেলায় আমার প্রকাশিত একটা উপান্যাসের কাটতি ছিল অনেকটা ঈর্ষা করার মতো।অবশ্য আজকাল একজন সফল মানুষ হিশেবে বিভিন্ন টকশোতে ডাক পড়ে আমার।সব মিলিয়ে বলা যায় আমি একজন সফল মানুষ।কি নেই আমার?অর্থ,আভিজাত্য,খ্যাতি সব কিছুই আমার আছে!তবে এতো কিছুর পরেও মা কে আমি একদম ভুলতে পারিনি।এই তো সেদিন রাতে মা কে নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখার পর মা মা বলে চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উটলাম।আমার এই অবস্থা দেখে আমার স্ত্রী জানতে চাইলো আমি মা কে মিস করছি কি না!আমি তার প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে গেলাম,যেমন ভাবে এড়িয়ে যাই মা কে নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করলে।
একটা কথা বলে রাখা ভালো,মা কে আমার মাঝে মধ্যে মনে পড়লেও তাকে নিয়ে আসলেই আমার কোন অনুভূতি নেই।তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই,আজ কাল শত ব্যস্ততার মধ্যেও মা কে নিয়ে কাটানো অতীতের সুন্দর মুহূর্তের গুলো আমার খুব মনে পড়ে!তবে হটাত করে আজকাল মা কে মনে পড়ার পেছনে একটা কারণ আছে!আর সেই কারণ টা হল আমার একমাত্র মেয়ে নিরি।আমি যখন আমার প্রাইভেট কার নিয়ে ওকে স্কুলে দিয়ে আসার জন্য বের হই তখন ও কারে বসে আমাকে একটা প্রশ্ন করবেই!
-বাবা,ও বাবা আমার দাদীমা কোথায়?
প্রশ্নটা শুনে আমি যতেষ্ট বিব্রত হয়ে ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলি...
-দাদীমা দিয়ে কি করবা?
-ওমা, আমার বুঝি দাদীমার সাথে গল্প করতে ইচ্ছে হয়না?আমার ফ্রেন্ড্ররা বলে তাদের দাদীমা তাদের সাথে মজার মজার গল্প করে!
আমি আমার মেয়ের কথার জবাব দেই না। প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলি।সেও দিব্যি ভুলে যায় ব্যাপারটা।কিন্তু আমি ভুলতে পারিনা।অফিসে বাসায় যেখানেই যাই মায়ের কথা হুট করে মনে পড়ে যায়।কোন কাজে মন বসাতে পারিনা।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম মায়ের সাথে আবার দেখা করবো।ভাল খারাপ যাই হোক মা মাই।বিশ বছর হয়ে গেলো মা কে দেখি না!
৩
অফিস থেকে কাউকে কিছু না বলেই আমার প্রাইভেট কার টা নিয়ে গ্রামের বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। মা বেঁচে আছে কি মরে গেছে সেটা জানিনা আর বেঁচে থাকলে আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরবেন কি না সেটাও বুঝতে পারছি না।এই সব ভাবতে ভাবতে কখন যে গ্রামের বাড়ী আসলাম টের পাইনি।
আমাদের বাড়ীর উঠানের উপর পা দিয়েই হকচকিয়ে গেলাম।কারণ আমাদের ঘরের বাম পাশের কোনায় একটা নতুন কবর।যেখানে ছোট বেলায় বসে আমি খেলতাম আর মা মুগ্ধ নয়নে তা দেখত।আচ্ছা,এই কবর টা কার হতে পারে?এই কথা ভাবতে ভাবতেই আমাদের ঘরের ভীতর ঢুকলাম।আমাকে ঘরের ভীতর ঢুকতে দেখে একটা কুকুর বাইরে বের হল!ব্যাপার কি? ঘরের ভীতর কুকুর কি করে !মা কোথায়!
ঘরের ভীতর ঢুকে দেখি সব কিছু প্রায় আগের মতই আছে।মায়ের সেলাই মেশিন,আমার ছোট্ট পড়ার টেবিলটা আর খাট।কিন্তু মা কোথায়!আমি মৃধ স্বরে মা মা বলে ঘর থেকে বের হতেই দেখি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন বৃদ্ধ মহিলা।তিনি আমাকে বললেন,তুমি শ্যামল ?
হ্যাঁ আমিই শ্যামল।আচ্ছা আমার মা কোথায় বলতে পারেন?
বৃদ্ধ মহিলা আমার কথার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ মনে করলেন না।খামে ডাকা একটা প্যাকেট শুধু আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,এইটা তোমার মা দিছে।হে কইছে তুমি বাড়িতে আইলে এইটা যেন তোমার হাতে দেই!
বৃদ্ধ মহিলা চলে গেলেন।আমি খাম খুলে বেশ ভড়কে গেলাম।কারণ খামের ভীতর চিঠির পাশাপাশি আমার একটা বই। যাই হোক,আমি সাত পাঁচ না ভেবেই অজানা আশংকায় চিঠি পড়তে শুরু করলাম...
প্রিয় আদরের বাবা শ্যমু,
কেমন আছো তুমি? অনেক বড় হয়ে গেছো নিশ্চয়।কতোদিন হল তোমাকে দেখিনা।প্রথম পনেরো বছর তোমার খুঁজ খবর নিয়মিত রাখলেও এর পরে আর পারিনি।বয়স হয়ে গেছে তো তাই।সেজন্য আমাকে ক্ষমা করো।মা হিশেবে আমার দায়িত্ব টুকু আমি পালন করতে পারিনি।
বাবা,তুমি একবার আমার কাছে জানতে চেয়েছিলে,তোমার বাবা কে?আমি তোমাকে সঠিক উত্তর টা দিতে পারিনি লজ্জায়।তবে আজ দিবো।কারণ এই চিঠিটা তুমি যখন পড়ছো তখন আমি পরপারে।শুনেছি মৃত্যুর পর পরপারে মানুষের আবেগ অনুভূতি বলে কিছু থাকেনা।
বাবা,
ঘটনাটা মহান একাত্তরের।তখন দেশকে পাকহানাদার বাহীনির হাত থেকে রক্ষার করার জন্য এদেশের মানুষরা প্রান পণে লড়ছিল।সবার একটাই লক্ষ দেশকে শত্রু মুক্ত করা।আমার বয়স তখন ছিল মাত্র ১৫ বছর।১৫ বছরের একটা কিশোরী যেমন থাকা দরকার আমি তেমনটা ছিলাম নারে। অর্থাৎ একটু বেশীই দুরুন্ত ছিলাম। সারাদিন এখানে সেখানে হই হই করে ঘুরে বেড়াতাম।কারো কথা শোনতাম না।আমাকে নিয়ে পরিবারের সবার সে কি চিন্তা!তো মহান একাত্তরের একদিন এই ভাবে ঘুরতে ঘুরতে হটাত চলে গেলাম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনির ক্যাম্পের সামনে!গাছের আড়ালের ফাঁক দিয়ে তাদের ক্যাম্পের দৃশ্য গুলো দেখছিলাম যে এরা কি করে।কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় ছিলোনা।তারা আমাকে দেখে ফেলে।এর পর তিনজন পাক সেনা আমাকে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়।এবং টানা তিন দিন আমার উপর তারা অমানুষিক নির্যাতন করে।এক পর্যায়ে তাদের নির্যাতনে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।তবে যখন জ্ঞান ফেরে তখন বুঝতে পারলাম আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।নারীর কাছে সবচে বড় সম্মানের বিষয় যে "ইজ্জত"সেটা আমার আর নেই।
প্রথম প্রথম আমার পরিবারের সদস্যরা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপারটা প্রায় মেনেই নিয়েছিল।কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর তোর অস্তিত্ব যখন আমার পেটে টের পেলাম এবং সেটা পরিবারের সদস্যদের কাছে জানালাম তখন দৃশ্য পট পুরো পাল্টে গেলো।আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম আমাকে পরিবারের কেউ সহ্য করতে পারে না।বাবা মা আমাকে নিয়ে সারাক্ষণ ঝগড়া করে।একদিন তো মা এক প্রকার কেঁদেই এসে বললেন,তোর কারণে আমরা কারো কাছে মুখ দেখাতে পারিনা।তুই আত্মহত্যা কর!
আমি মায়ের সিদ্ধান্তটা মেনে নিয়ে নদির পাড়ে গেলাম আত্মহত্যা করতে।কিন্তু যখনি ঠিক করলাম নদীতে ঝাপ দিবো ঠিক তখনি তুই আমার পেটে গুঁতা দিলি।আমি সঙ্গে সঙ্গে আমার সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেললাম।ঠিক করলাম তোকে স্বাধীন দেশের আলো দেখাব।কারণ তোর তো কোন দোষ নেই।দোষটা আমার ভাগ্যের।
বাবা,
সেদিন আমি নিজেকে দেওয়া নিজের কথা রেখেছি।তোকে স্বাধীন দেশের আলো দেখালাম ।যদিও পরিবারের কোন সদস্যকে আমি আমার এই দুঃসময়ে কাছে পাইনি।অবশ্য তাতে কিছু যায় আসেনি।কারণ মহান একাত্তরে ছেলে হারা এক মা আমার দায়িত্ব নিয়েছেলেন।
বাবা,
আমি যখন তোর মুখ প্রথম দেখেছিলাম তখনি মনে মনে ঠিক করলাম যেই করে হোক এই ছেলেকে দেশের দশ জনের একজন করবো। এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম আমি যেন তোর সাফল্য দেখে মরি।আমার দোয়া আল্লাহ পাক কবুল করেছেরে।সেজন্য শহর থেকে দেওয়া তোর চিঠিটা পড়ে অপমানে আমি আত্মহত্যা করতে যেয়েও করিনি।কারণ,আমার কেন যেন মনে হলো আমি আত্মহত্যা করে মরে গেলে আমার ছেলের জন্য দোয়া করবে কে?আমি ছাড়া যে ওর আর কেউ নেই! তাছাড়া আমার ছেলের সাফল্যটাও আমাকে দেখে যেতে হবে।না হলে মরে গিয়েও আমি শান্তি পাব না।
বাবা,আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।আজ আমার বিজয় হয়েছে।তুই মানুষের মতো মানুষ হইয়েছিস।শুনেছি তোকে নাকি টিভিতে দেখা যায়।আমাদের তো টিভি নেই তাই তোকে দেখতে পারিনি।তবে অনেক কষ্টে তোর লেখা একটা বই যোগাড় করেছি।চোঁখে দেখতে পারিনি বলে পড়তে পারিনি বাবা,তাতে কি?আমি আমার ছেলের বই ছুঁয়ে দেখেছি!এখন বাবা তুই আমার কবরের সামনে বসে তোর বইটা পড়ে শোনা।
ইতি
তোর মা
৪
আজকাল যেখানেই সুযোগ পাই সেখানেই আমার বীরাঙ্গনা মায়ের ব্যক্তিগত বিজয়ের গল্প বলি।প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করে জিতে যাওয়া এক নারীর গল্প বলি।যে কি না স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখেছিলো,নিজের অনাগত সন্তান কে স্বাধীন দেশের আলো দেখানোর।
অবশ্য সবাইকে আমার বীরাঙ্গনা মায়ের গল্প বলতে লজ্জা করে না,বরং অহংবোধ হয়।কেননা,এমন মায়ের গর্বে জন্ম নেয়া যে ভাগ্যের ব্যাপার।
০৭ জানুয়ারী - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪