নৌকায় করে বেড়াতে গিয়েছো কখনও ? যদি না গিয়ে থাকো তবে বলতেই হয় তুমি এখনো অনেক কিছুই দেখোনি আসলে| আমাদের দেশ নদীমাতৃক, মানে সারা দেশ জুড়ে নদী আর নদী এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল| বর্ষাকালে এই সব নদ-নদী, খাল-বিল হাওর-বাওড় গুলো হয়ে যায় কানায় কানায় ভর্তি আর এই সময়টাতে যদি একটি ছইওয়ালা নৌকাতে মোটামুটি দিন তিনেক কোনোভাবে পানিতে পানিতে ভেসে কাটিয়ে দিতে পারো তাহলে তো আর কথাই নেই| কি যে সেই মজা! যে না গিয়েছে সে কখনোই বুঝবে না|
যদি যেতেই চাও সেই নৌভ্রমণে তবে মানিকগঞ্জ এই বর্ষায় সবচে ভালো জলপথ| কিভাবে যাবে? প্রথমে ঢাকা থেকে একটি বাসে চড়ে চলে যেতে হবে মানিকগঞ্জ | তবে মানিকগঞ্জ যাওয়ার রাস্তাটি কিন্তু কোথাও কোথাও বেশ খারাপই বলা চলে| ঢাকা থেকেই এই পথ পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত তুমি যখন মানিকগঞ্জ পৌঁছুলে যখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল| সেখান থকে একটি নৌকা ভাড়া করে যখন হাওরের দিকে যাত্রা শুরু করবে তখন ক্লান্তি যতোই জেকে ধরুক না কেনো, ঘুমিয়ে পড়া যাবে না কোনোভাবেই| বিকেলের আলোয় পৃথিবীটা তখন সবসময়ের চেয়ে একটু বেশিই সুন্দর লাগে| তবে তখনও তুমি হাওড় থেকে অনেক দুরে| কখনও গলুইয়ে আবার কখনও ছইয়ের নিচে বস দেখতে পাবে নানান রকম পাখি বক, হাড়ি চাচা, আর মাছরাঙ্গা দেখতে পাবে সবচে বেশি| তবে নৌকা যদি তীর ঘেসে যায় তাহলে হয়তো চোখে পড়তেই পারে কোনো গাছে ছোট্ট কাঠঠোকরা ঠুক ঠুক করে বাড়ি বানাচ্ছে এমন কোনো দৃশ্য| সন্ধ্যার পর থেকে শুধু শব্দ শুনেই কাটিয়ে দিতে পারো পুরোটা রাত| দূরে কোথাও কোথাও আলো জ্বলতে দেখা যাচ্ছে? ওগুলো নিশ্চিৎ মাছ ধরার নৌকা| রাত জেগে মাছ ধরে জেলেরা এখানে| নৌকার ছলাৎ ছলাৎ শব্দের সঙ্গে শুনতে পাবে রাতের পাখির ডাকাডাকি আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার গান| রাতের খাবার চলন্ত নৌকাতেই তৈরি হবে| এটাও নিশ্চয়ই তোমার কাছে নতুন তবে একটা ছোট্ট চুলায় রান্নার ব্যবস্থা নৌকাতে থাকেই|
দ্বিতীয় দিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে যা দেখবে, তা দেখার জন্য তোমার তৈরি না থাকারই কথা| অনেক ভোরে পাখির ডাকাডাকি তোমাকে আর এক মিনিটও ঘুমাতে দেবে না| কিচির মিচির শব্দে নৌকার ছই থেকে মাথা বের করেই হঠাৎ তোমার মনে হতে পাওে যে, এ আমি কোথায় এলাম! কারণ তখন তুমি হাওড়ে| যতোদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি| এর মধ্যেই ফুটে আছে অসংখ্য ফুল| আবার এই শাপলা শালুক ফুলের উপরেই ঘুর| বেড়াতে দেখবে নানা রঙ্গের ফড়িং| এ ফুল থেকে সে ফুলে উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ানো ঐ দুষ্টু ফড়িংগুলো কিন্তু বড্ড অস্থির| এদের যদি দেখতে থাকো, তবে কিন্তু আরো কিছু দেখা বাকী থেকে যাবে| কারণ ঠিক সেই মুহূর্তেই আবার তোমার খুব কাছে না হলেও, কাছাকাছি কোনো জায়গায় পানি থকে ভুস করে মাথা তুলে সাঁতার কাটতে দেখবে কালো কালো পানকৌড়িদের| ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখবে হঠাৎ করেই যেনো আবার কোথায় ওরা হারিয়ে গেছে| আসলে ওরা এই সময়টাতে আবারও পানিতে ডুব দিয়েছে মাছ ধরবে বলে| আর এই সব সুন্দর দৃশ্যের মাঝ দিয়েই পানি বেয়ে এগিয়ে চলেছে তমার নৌকা|
যেতে যেতে দেখবে কিছু দ্বীপের মতো বাড়ি-ঘর| চারপাশে পানিঘেরা বাড়িগুলোতে সে অঞ্চলের মানুষের বসবাস| দুপুরে নৌকা থামিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারো তেমন কোনো বাড়িতে| ভাবছো অপরিচিত একটি বাড়িতে কিভাবে বেড়াতে যাবে ? শহুরে মানুষগুলো থেকে গ্রামের মানুষ অনেক অতিথিপরায়ণ| পরিচিত কি অপরিচিত, যেই হোক না কেনো, আদর আপ্যায়নে সে কথা তোমাকে একেবারেই বুঝতে দেবে না| এরকমই কোনো বাড়িতে নেমে সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারো, সঙ্গে পানিতে নেমে একটু খেলাও করতে পারো| তবে সাঁতার না জানলে এই কাজটি ভুলেও করতে যাবে না|
দুপুর গড়িয়ে বিকেল এলেই দেখতে পাবে সাদা বকের ঝাঁক| একটু পর পরই বকের ঝাঁক চক্রাকারে ঘুরে যাবে তোমার মাথার উপর দিয়ে| তারপর আবার চলে যাবে দূর অজানায়। মানে ঠিক অজানা নয়, ওরা চলে যাবে ওদের বাসার দিকে| এরই মাঝে যখন চারপাশে হলুদ আভা ছড়িয়ে দিয়ে যখন সূর্য ডুবে যাবে সেই সময় তোমার মনে হবে এই জায়গা ছেড়ে কোথাও যাবো না| এতোই সুন্দর সেই দৃশ্য|
প্রথম রাতে তো বেশ শুয়ে বসে কাটিয়েছিলে|তবে এই সন্ধ্যায় তোমার দেখা উচিত কিভাবে মাঝিরা রান্না করে| হাওর থেকে ধরে আনা তাজা মাছগুলো রান্না করে খাবার তৈরি করতে করতে হয়ে যেতে পারে গভীর রাত| তবে এই রাতে আর নৌকা সবসময় চলবে না| নোঙর করে রাখা নৌকাতেও কিন্তু রয়েছে অন্যরকম মজা| ঢেউয়ের তালে তালে নৌকা একটু একটু দুলবে, আর সেই সঙ্গে জোর বাতাস তোমাকে পাগল করে দেবে| এ সময় বসে ভুতের গল্প করা যেতে পারে| তবে তোমাদের মধ্যে যদি কেউ একটু ভীতু থেকে থাকে, তাহলে আর সে গল্প না করাই ভালো| তবে আড্ডা জমবে বেশ ভালো| গানও গাইতে পার| মাঝিদেরও কিন্তু সঙ্গে নিতে ভুলো না| তারাও অনেক সুন্দর সুন্দর গান জানে|
পরেরদিন সকালে নৌকাটা যে কোন গ্রামের দিকে চলে এসেছে, তা তুমি মোটে বলতেই পারব না| কারণ, খুব ভোরে নৌকা নিয়ে রওনা হয়ে যাবে মাঝিরা, যখন তুমি গভীর ঘুমে| চোখ মেলে তুমি দেখবে চারপাশ শুধু সবুজ|একটি মজার জিনিসের সঙ্গেও পরিচিত হতে পারো ভাগ্য ভালো থাকলে| তা হলো কাকতাড়ুয়া|মাটির হাড়ির মাথাওয়ালা রঙ্গীন কাকতাড়–য়াগুলো নানা ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ| তুমি চাইলেই নৌকা থেকে নেমে একটু দৌড়ে আসতে পারো ধানের ক্ষেতের মাঝে| আর দৌড়ানোর সময় তোমার হাতদুটো দু’দিকে মেলে ধরলেই দেখবে উপরের নীল আকাশের দু’পাখা মেলে ধরা চিলের সঙ্গে কেমন যেনো মিলে গিয়েছো তুমি| ধান ক্ষেতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা কাকতাড়–য়াগুলো সঙ্গে ছবিও তুলতে পারো| তোমার ভাগ্যে যদি ভালো থাকে তাহলে হাওড়ে বৃষ্টি দেখতে পাবে| কী যে সুন্দর লাগে তখন চারপাশটা| যতদুর দেখা যায় ততদুর পর্যন্ত বৃষ্টি|টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনেছো হয়তো কিন্তু পানিতে বৃষ্টির শব্দ তুমি না শুনলে বুঝতে পারবে না ব্যাপারটা কেমন|
যাত্রা শেষে বাড়ি ফেরার কথা ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে? কিন্তু বাড়ি যে ফিরতেই হবে| বাড়ির যারা যায়নি আর তোমার সব বন্ধুরা অপেক্ষা করে আছে, নৌভ্রমণের গল্প শোনার জন্য|কি! যেতে ইচ্ছে করছে নিশ্চয়ই| তবে তোমারা বাবা মাকে বলে রাজী করিয়ে ফেলো ঝটপট, আর ঘুরে আসো হাওর থেকে| তবে নৌকাভ্রমণে সঙ্গে নিতে হবে অনেক কিছু| তার মধ্যে প্রথমেই তুমি তোমার প্রয়োজনীয় জামাকাপড় নিও| তবে অতিরিক্ত নিও না, কারণ একসময় এই অতিরিক্ত জামাকাপড় নিজের কাছেই বোঝা মনে হবে| সঙ্গে নিও খাবারের প্লেট, গ্লাস, আর শুকনো খাবার| একটা বই নিতে পারো সঙ্গে| রোদ থেকে বাঁচতে সানগ্লাস আর ক্রিম নিও| টর্চটা অবশ্য নিতেই হবে সঙ্গে মশা তাড়ানোর ক্রিম| আর অবশ্য অবশ্যই সঙ্গে ক্যামেরা নিতে ভুলো না| সব ছবি তুলে আনতে হবে না?
১৯ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪