যে সবে বঙ্গেতে জন্মে

বাংলা ভাষা (ফেব্রুয়ারী ২০১৩)

সানোয়ার রাসেল
  • ১৪
  • ৩৫
কাছিমের পিঠের মত পাথরটার উপর বসে শফিক ব্রহ্মপুত্রের ওপাড়ে আরো একটি সূর্যডোবা সন্ধ্যার সাক্ষী হচ্ছিলো । তার হাতে ২৯-তম বিসিএস ভাইভা পরীক্ষার চূড়ান্ত রেজাল্টশীট। হয়নি তার। হবে যে না এটা সে তখনই জানতো, সেই দেড় মাস আগে যখন সে ভাইভা বোর্ডের শীতাতপ কক্ষে বসেও ঘামছিলো, তখনই। না, ছাত্র সে খারাপ কোনকালেই ছিলো না। এসএসসি এইচএসসিতে ইংরেজিতে যাকে বলে ‘মার্ভেলাস রেজাল্ট’- তাই করে ভর্তি হয়েছিলো বাকৃবিতে। তারপর অনার্স শেষে বেশ প্রস্তুতি নিয়েই সে বসেছিলো বিসিএস পরীক্ষায়। প্রিলি থেকে ভাইভা পর্যন্ত সেই দীর্ঘ ক্লান্তিকর যাত্রা শেষের ফলাফল কি? লবডঙ্কা।
- ব্যাদা-া-া-া-াম খাইবেন ব্যাদা-া-া-া-ম। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া বাদাম ওয়ালার হাঁক শুনে শফিকের চিন্তার জাল ছিন্ন হয়। সে একটু জোরে ডাক দেয়-
- এ্যাই বাদাম, কাম হিয়ার।
- বাদাম লাগবো মামা?
- ইয়েস, গিভ মি ফাইভ হানড্রেড গ্রাম বাদাম।
- কি কন বুঝলাম না, বাংলায় কন।
- এ্যাই ব্যাটা, ইংরেজী জানস না আবার ব্যবসা করতে আইছস? তর সাহস তো কম না! জানস না, সব বেইন্যার বড় বেইন্যা হইলো ইংরেজ।
- অত জাইন্যা কাম নাই মামা। বাদাম বেইচ্চা ভাত খাই, ইংরেজী দিয়া আমার কি কাম?
- দে , পাঁচ টাকার বাদাম দে।
বাদাম খেতে খেতে ভাবে শফিক, সেদিন ভাইভা বোর্ডে সে এই বাদামওয়ালার মতো সাহস করে বলতে পারেনি। বাংলা, গণিত, সাধারণ জ্ঞান সব কিছুতেই সে ভালো, কেবল এই ইংরেজীতেই তার সমস্যা। তাও পড়তে বা লিখতে কোন সমস্যা হয় না তার, কেবল বলতে গেলেই গলার কাছে কি যেন আটকে আসে, জিভ শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যায়। আর তারও যেমন কপাল। ভাইভা বোর্ডে ঢুকতেই পরীক্ষক চশমার উপর দিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
- প্লিজ ইনট্রোডিউস ইওরসেলফ।
কোন মতে মুখস্ত করে আসা প্যারাটা উগরে দেয় শফিক।
- হোয়াট ডু ইউ নো বাউট আওয়ার লিবারেশান ওয়ার?
- হাউ ক্যান উই ইনক্রিয়েজ আওয়ার জিডিপি?
- প্লিজ স্পেল কামোফ্লাজ, সাবোটাজ, ডাইরিয়া। ব্লা ব্লা ব্লা ব্লা।
জড়ানো জিভে আমতা আমতা করে উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলো শফিক। নার্ভাসনেসের কারনে জানা উত্তরগুলোও ভুল হয়ে যাচ্ছিলো। অনেক সুন্দর করে সাজানো কথাগুলোর যথাযথ ইংরেজী না জানার কারনে বলতেও পারছিলো না।
- আচ্ছা, ট্রান্সলেশান কর, ‘আমি ইংরেজীতে মোটেও ভালো নই’।
অপমানে মাথা নিঁচু করে সেদিন বসে ছিলো শফিক। আজকের বাদামওয়ালাটির মতো বলতে পারে নি- স্যার, আমার চাকরি হলে পোস্টিং হবে বাংলাদেশের কোন উপজেলায়, কথা বলতে হবে গ্রামের কৃষকদের কাছে তাদের ভাষায়, ইংলিশ স্পিকিং এ আমার কাম কি?
মাথা নিঁচু করে বেরিয়ে আসতে আসতে শফিক সে দিনই বুঝেছিলো, বিদ্যায় বুদ্ধিতে বাঙ্গালী যতই বড় হোক, বেনিয়ার ভাষা না জানলে তার মুক্তি নাই। চাকরিটা যে তার হবে না এটা সে তখনই বুঝে গিয়েছিলো। আর তাই আজ সে কাছিমের পিঠের মত পাথরটার উপর বসে ব্রহ্মপুত্রের ওপাড়ে আরো একটি সূর্যডোবা সন্ধ্যার সাক্ষী হচ্ছিলো আর ভাবছিলোঃ
কবি আব্দুল হাকিম সাহেব, তুমি বলছিলা যে সবে বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী, সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি। আজকে এসে তুমি বলে যাও এই বাঙ্গালি কার জন্ম? কার? কার?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বশির আহমেদ চমৎকার ভাবনার অসাধারণ গল্প । লেখক কে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
বশির ভাই, আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। ভাবনাটি সঞ্চারিত হোক গুরুমহলে এটাই কামনা।
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
রোদের ছায়া খুব গোছানো লেখা । অল্প কথায় বাংলা আর ইংলিশ এর এই ইঁদুর বেলার খেলার বিষয়টা তুলে ধরলেন । আমারও বলতে ইচ্ছা করছে বাদাম অয়ালার মতই '' এতো ইংরেজির কাম কি ?''
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ রোদের ছায়া, আপনি ঠিকই বলেছেন। বাদাম বেইচ্যা ভাত খাই, ইংরেজী দিয়া আমার কি কাম? হা হা হা।
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মিলন বনিক সুন্দর একটা মার্ভেলাস থিমের উপর আপন স্বকীয়তায় সমুজ্জল গল্পটি খুব ভালো লাগল...অনেক শুভ কামনা....
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
অনেক ধন্যবাদ ত্রিনয়ন।
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
আহমেদ সাবের "পোস্টিং হবে বাংলাদেশের কোন উপজেলায়, কথা বলতে হবে গ্রামের কৃষকদের কাছে তাদের ভাষায়, ইংলিশ স্পিকিং এ আমার কাম কি?" - এই কথাগুলো ইন্টারভিউ বোর্ডের সাহেবরা যদি জানতেন, ভালোই হতো। চমৎকার থীমে দারুণ একটা গল্প। "কবি আব্দুল হাকিম" নামটা আমার যতদূর মনে পড়ে "কবি আব্দুল হাকাম"। তবে আমার ভুলও হতে পারে। বেশ ভালো লাগলো গল্প।
ভালো লাগেনি ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ সাবের ভাই। এই কথাগুলো ইন্টারভিউ বোর্ডের সাহেবরাও জানেন ভাই, কারণ ওরাও প্রথম জীবনে ঐ লেভেলে চাকুরি করে এসেছেন। আসল কারণ হল আমাদের মানসিক ও নৈতিক অবক্ষয়। আর "কবি আব্দুল হাকিম" ও "কবি আব্দুল হাকাম" দুটি নাম একজন কবিরই, এক এক গবেষক এক একটা ব্যবহার করেছেন। তবে আমি হুমায়ুন আজাদ স্যার এর লাল নীল দীপাবলী বইয়ে প্রাপ্ত নামটাকেই প্রাধান্য দিয়েছি।
ভালো লাগেনি ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ কবি আব্দুল হাকিম সাহেব, তুমি বলছিলা যে সবে বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গবাণী, সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি। আজকে এসে তুমি বলে যাও এই বাঙ্গালি কার জন্ম? কার? কার?--------- রাসেল ঠিক যেখানে আঘাত করেছ ভাই ; উত্তর দেওয়া খুবই কঠিন ! এতেও যদি আমাদের বোধের কিঞ্চিৎ ফিরে আসে ! অনেক ধন্যবাদ তোমাকে ।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ জসীম ভাই। আঘাতে আঘাতে আহত পাথর, অথচ বাঙ্গালি তবুও নিথর। ফিরে আসুক শুভ বোধ।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
তাপসকিরণ রায় ছোট গল্প-- নির্ধারিত বিষয়টি তাতে স্পষ্টতা লাভ করেছে।ভাষার প্রতি লেখকের দরদ সহজেই ধরা পড়ে।ভালো লাগার মত একটি গল্প।লেখককে জানাই ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
আবারো ধন্যবাদ তাপস ভাই।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
তাপসকিরণ রায় ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা আপনার গল্পটি ভালো লাগলো,ভাই ! সুখপাঠ্য।ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ তাপস ভাই। আসলে ঘটনাটি ছোট্ট হলেও এর প্রভাব আমাদের জাতীয় জীবনে ব্যাপক। এভাবেই নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি হীনমন্য এক প্রজন্মের লালন ও বিকাশ ঘটছে।
ভালো লাগেনি ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মিনহাজুর রহমান জয় ছোট পরিসরে লেখা খুবই ভাল একটি গল্প. শুভকামনা রইলো রাসেল ভাইয়া।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ মিনহাজ ভাই।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
শাহ আকরাম রিয়াদ আসলেই আমরা অপ্রয়োজনীয় কত কিছু করি, কত কিছু বলি... যা মোটেই প্রয়োজন নেই। আপনার গল্পটি শিক্ষামূলক। ভাল লাগল।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ শাহ আকরাম ভাই। আমরা সবাই ঐ বাদামওয়ালার মত হতে পারলে এই সমস্যার সমাধান হবে।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
এশরার লতিফ চমৎকার গল্প, ভাষা নিয়ে হীনমন্যতার অবসান প্রয়োজন.
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ঠিক তাই এশরার ভাই।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

০১ ডিসেম্বর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী