নির্জনতা খুনের গল্প

অবহেলা (মে ২০২৪)

গাজী তারেক আজিজ
  • ৩৯
দিনটি শনিবার। বন্ধের দিন হলেও। স্বভাবতই বাড়িতে না থেকে শহরে চলে আসি। নিজেকে একটু আধটু ব্যস্ত রাখার চেষ্টা। বলতে গেলে আড্ডায় গল্পে বিভিন্ন লোকজনের সাথে পরিচিত হয়ে ওঠা। সেটাও পেশাদারত্বের বাইরের বিষয়। ওটুকুই। এরই মাঝে একজনের সাথে আলাপে আড্ডায় বেশ কাছাকাছি চলে আসি। আমার প্রতিও তার ব্যাপক আগ্রহ ছিল। তার চেহারায় অদ্ভুত ধরনের মায়া ভর করেছিল আমি কেমন যেন টান অনুভব করতে লাগলাম। শিকলের একপ্রান্ত ধরে টানলে যেমন শুরশুরিয়ে চলে আসে হাতের নাগালে। তেমন একটা টান। সুতীব্র সেই টান! আমি যেন উড়ন্ত ঘুড়ি নাটাই ধরে টেনে আমাকে তার মুখি করে তোলে। এত বেশি এত প্রকট যে নিজেকে সামলে রাখা যেন তীব্র বাতাসে পালতোলা নৌকাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মত। কিন্তু আমি সেই বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতার জানা মাছ।
প্রতিদিনকার ন্যায় তাকে ফোন করি। রিংটোন বেজে ওঠে। এ প্রান্তে বিপ শব্দ। ফোন কল রিসিভ হয়। সে বলে ওঠে
-হ্যালো
-কি করছো?
-এই তো বাসায়।
-আর কে আছে?
-কেউ নেই।
আর কোন কথা না বলেই আমি ফোনকল কেটে দিয়ে একটা রিক্সায় উঠে তার বাসার উদ্দেশ্যে যাই। গেইটের সামনে নেমে ভাড়া চুকিয়ে সোজা তার বিল্ডিংয়ের সিঁড়ি বেয়ে উঠে পড়ি। কলিংবেলের সুইচ চাপতেই ডিংডং শব্দ। সে দরজা খুলে। আমি ভিতরে ঢুকি। আহা দারুণ লাগে তাকে। ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না। তারও চোখেমুখে অদ্ভুত এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করতে শুরু করে। আমি বুঝে যাই। এই মুহূর্তে আমাকেই কাছে পেতে চাইছে তার উদ্বেল মন। চঞ্চল চোখ আমাকে মেপে নেয় বেশ কয়েকবার।
-লোক আসবে বাড়ি থেকে।
-কে?
-হাতে তৈরি করা খাবার পাঠাব। স্যুপ বানিয়ে পাঠাব।
-কার জন্য?
সে একজনের কথা বলেছে। আমি শুনলাম। একটু পরপর কি রান্না করছে দেখতে যাই। কখনো সে আসে আমার কাছে। আমাকে বেডরুমে বসতে বলে। আমি বসি। টিভি চালু করতে বলে। আমি করি। আজ যেন আমি বাধ্যগত কেউ। আজ আমি স্বকীয় থাকি না। আজ কেন খুব তার হতে মন চাইছে! কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। আমার মুখে কোন কথা ফোটে না। কেবলই চোখ অস্থির হয়। আমি কেবল স্থির হতে থাকি। জমাট আইসক্রিমের মত আরো জমতে থাকি। মাঝে মাঝে গল্পের দুষ্টু ছেলের মত হয়ে যাই সে আর আমি৷ আমাকে নিয়ে তার অনেক আগ্রহ দেখি। আমি তার কাছে লুট হয়ে যাই। সেও আমার কাছে অবলীলায় লুট হয়। অন্তরঙ্গ সময় বেশ জমে ওঠে। মধ্যযুগীয় কিংবা শৈল্পিক সেইসব মুখর সময়। কেবলই নিজেকে হারাতে থাকি। হঠাৎ বাসার দারোয়ান এসে কলিংবেল বাজায়। সে দরজা না খুলে কথা সেরে নেয়। আমি জানি না দারোয়ান কি আমার আসা দেখেছে! চতুর তার স্বভাব সব সামাল দেয়। ক্ষণে ক্ষণে কথা ক্ষণে ক্ষণে উষ্ণ আলিঙ্গন। জানি না কে কাকে চাষের জমিন ভাবে। কে কাকে উর্বর করে।
একসময় সে ইঙ্গিত করে বেডরুম দেখিয়ে বলে
-ওইদিকে কি?
আমি তখন আরেকটু খোলস ছেড়ে বেরিয়ে তাকে জড়িয়ে বেডরুমে ঢুকে খাটে শুয়ে পড়ি। সে নিচে আমি.....। সত্যিকারভাবে বলি হয়তো অনেকেই ভেবেছে আমাদের কিছু ঘটে গেছে। আদতে আমরা আদিমতা খুঁজিনি! নিজেকে খুঁজে পেতে মরিয়া ছিলাম। আমি খুব স্ববিরোধী হয়ে নিজেকে সামলে নিলাম। আজো বলতে পারি আমি হারিনি। জিতেছি তার কাছে।
সেইদিনের পর থেকেই টানাপোড়েনের শুরু। একটি গল্পের মধ্যে দিয়ে আরেকটি গল্পের সূচনা। অব্যাহত বেদনার সূত্রপাত। তার নাম যেন কেউ না জানে সেদিকটা খুব খেয়াল থাকে আমার। আমি কষ্ট পাই। এই কষ্ট আমাকে চিনিয়েছে একটি সংকল্প আরেকটি বিলীন হওয়ার গল্প। তার সাথে যখনই দেখা হয় আবেগে উথাল-পাথাল করা সময় আজ আইসক্রিমের মতই জমাট বেঁধেছে। সে বড় জাদু জানে। আমাকে কাছে টানার জাদু। সময় শেষে দূরে ঠেলে দিয়ে কোমল মনকে পাথর বানানোর জাদু। নিদয়া বন্ধুয়া তার একটা রোগ আছে ভালোবাসা রোগ। নিত্যনতুন প্রেমে পড়া রোগ নিয়ে সে বেশ সুখে আছে। অথচ আমি ভালো নেই। জাদু জানি না। ছলনা জানি না। বেদনার ভারে চাপা পড়ে আমি যে আমার নেই! কত হৃদয় নিয়ে সে খেলে। আচানক মূর্ছা যাওয়া রোগ তার। শুধু আমার সাথেই যেন সে জিতে যায়। সবার সবকিছু ভালো।
সেদিনের দুপুর তার জন্য ছিল। আমার জন্য নয়। ভালোবাসি বলে আমি এক দুপুরের নির্জনতা খুন করে তাকে বাঁচিয়ে রাখি! আমি মরে যাই মনে মনে। শারীরিক দহন আমাকে এত বেশি নিঃশেষ করে। নিজেকে খুঁজে পাবার সক্ষমতা হারিয়ে ভিখিরির মত তার কাছেই ধর্না দেই৷ সে ফিরিয়ে দেয়। আমি ফিরে আসি। বেদনায় আহত হই মোটাদাগে। ক্ষত বিক্ষত হই। সে ঔষধি আমার কাছে। জীবনের নামে বেদনা নির্মূল করে বাঁচিয়ে রাখে। অথচ আমি বেঁচে নেই! প্রেম ছাড়া প্রেমিক কি করে বাঁচে! বল?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
কেতকী গ‌ল্পের নায়ক নি‌জে‌কে ধ‌রে রে‌খে‌ছে। এটা গ‌ল্পের ভা‌লো দিক। শুভকামনা রইলো।
ফয়জুল মহী চমৎকার সুনির্মিত। মুগ্ধতা রইলো।
মাহাবুব হাসান ভিন্ন স্বাদের একটা গল্প। কিন্তু দারুণ! গল্প বলার ধরণটাও সুন্দর। ভালো লাগল।
অসংখ্য ধন্যবাদ ও ভালোলাগা

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

দিনটি শনিবার। বন্ধের দিন হলেও।

২৪ নভেম্বর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ২২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪