শয়নকক্ষে খাটের ওপর বসে আনমনা হয়েছিলাম কিছু সময়। জানি না সেই সময়টা ঠিক কতক্ষণ? কিছুক্ষণ পর মেহেরজান আসতেই আমি উঠে দাঁড়ালাম। তার কাছে যেতেই দুইজনই একসাথে একে অপরের আলিঙ্গণের সুতীব্র আগ্রহ নিয়ে যখন এসে বললো- দাঁড়ান আমি ধরি। তখন আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। সে আমাকে জড়িয়ে আদরে ভরিয়ে দিল। আমিও নিজেকে গুটিয়ে রাখা শামুকের খোলস থেকে বের করে তাকেও আদরে আদরে ভাসিয়ে দিলাম। সেই সময়টাও আজ থেকে অনেকদিন আগেকার কথা। তবুও মনে হচ্ছে যেনো এইতো সেদিনকার ঘটনা। সেদিন আরো যা যা ঘটেছিলো তাও একে একে স্মৃতির আয়নায় ভেসে উঠতে শুরু করে।
আজ হঠাৎই ঘুম ভাঙার পর তার জন্য কি ব্যাকুলতা অনুভব করছি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। বুকটা কেমন যেনো কেঁপে কেঁপে উঠছে। শিহরিত হচ্ছে। বারবার বারবার মনে তার কথাই অনুরণিত হচ্ছে। তবে কি তার কিছু হয়ে গেলো? আজ আমার দিন শুরুর সময়টা কেনই তাকে নিয়ে এই ভাবনা?
সম্পর্ক ছেদের অনেকদিন হতে চললো। তার সাথে রোজই দেখা হয়। তবে আগের মতো দেখা হয় না। কিন্তু তাকে দেখে আমি সেই প্রথম দিনের তীব্র আবেগ আজও অনুভব করি। একটুও কমতি নেই। সেও কি আমাকে আগের যেকোন সময়ের মতো করে ভালোবাসে? সে কি আমার ফোনকলের অপেক্ষায় থাকে? সে কি আজ আমার ফোনোকলে স্বর শোনার আগ্রহ হারিয়েছে? তাহলে আমাত দিকে তাকিয়ে অপলক কি বোঝাতে চায়?
আগের মতো মন খুলে কথা হয় না সাথে। আমিও বলি না তাকে খুব মিস করছি। এই শহর অলিগলি মানুষজন ফুল পাখি কিছুই আর আগের মত টানে না আমাকে। আমি আজও নির্ঘুম রাত কাটাই। তাকে ভাবনায় রাখি। সে হয়তো উপলব্ধি করে। কিন্তু প্রকাশ করে না। আমি সমস্ত আবেগজুড়ে তার বসতি। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত তাকে দেখার ব্যাকুলতা আমি আজও হারাইনি। অথচ প্রতিদিন সন্ধ্যায় তারাদের খুনসুটি উপেক্ষা করে তাকে ভেবে কত কবিতা কত গান যে মুখে মুখে আওড়েছি তার ইয়ত্তা নেই। প্রায় সন্ধ্যায় তার টানে ছুটে যাওয়া আজ শুধুই অতীত নয় একটি জ্বলজ্বলে ইতিহাস একটি ব্যাথাতুর অধ্যায়।
কেন জানি আজ তাকে খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। কেন এত ইচ্ছে আমার? কেন প্রকট অনুভূতির স্ফুরণ ঘটছে বুঝতে পারছি না! সকল নামজাদা লেখকের বইতে উদ্ধৃত হয়েছে নারী যাকে ভালোবাসে মন প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসে। এই ভালোবাসা নিখাঁদ। অথচ মেহেরজান বলে কেউ আছে এটাও নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে হয়েছিলো আমাকে। এত বেশি নিয়ন্ত্রণহীন বেপরোয়া জীবনে অভ্যস্ততা ব্যক্তি আমার সাথে যায় না।
তাকে বুকে জড়িয়ে নিতেই বুক ভরে যেত। সে সব সময় বলতো- আপনার সমস্যা হয় না? আমার সমস্যা হচ্ছে। তখন এই কথার মর্মার্থ না বুঝলেও ধীরে ধীরে যখন তাকে বুঝতে শিখি। তার সকল কথার অর্থ বুঝতে শিখি। তার চোখের ভাষার অর্থ বুঝতে শিখি ঠিক ততক্ষণে সে সরে যেতে বিভিন্ন অজুহাত। আর এতেই আমার সমুদয় স্বত্ত্বা যেনো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মস্তিষ্কের। আমি আর পারছি না! খুব কষ্টে বুক ভারী হয়ে আসছে। কি লিখবো? মেহেরজান কাছে আসে। দূরে সরে যায়। পৃথিবীর তাবৎ মেহেরজানদের কি অসুখ কি ব্যাধি আমার দুচোখে স্পষ্টতা হারিয়েছে। আমার সকল ব্যাকুল অনুভূতি শুধু ধরা দিয়ে যায় কিছু আলো আঁধারির খেলায়। কলমে কালিতে কাগজে পাতায় পাতায় লিখে রাখি। এ যেনো শুষ্ক বৃক্ষের অমরত্ব লাভের মতো! মেহেরজান এক কৃষ্ণগহব্বর! আর আমি নিজেকে তুলনা দিতে গেলে বলতে পারি শুভ্রগহব্বর নামে। মেহেরজান আমাকে গিলে খেয়েছে। আমি এখন স্মৃতির পাতা ঝরিয়ে সব কিছুই যেনো উগড়ে দিচ্ছি! মানুষ কৃষ্ণ গহব্বর আবিষ্কার করেছে অনেকদিন আগে। শুভ্র গহব্বর নতুন এক মতবাদ!
মাঝে মাঝে তাকে ফোন করলে সবক শুনিয়ে দেয়। ভালো লাগে না! তবু্ও ফোন করি। নিজেকে প্রবোধ দেই। এতো বেশি আপন মনে হওয়া লোকটির আমাকে ছেড়ে যেতে কোণ কারণ লাগে না! আমিও আর কারণ খুঁজি না। বেপরোয়া জীবন এত ধীর হয়ে আসে মানিয়ে নিতেও কষ্ট। শ্বাসকষ্টের মতো অনুভূতি! একদিন তারও তেমন অনুভূতি হয়েছিল। অনেকদিন ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে আমাকেও কষ্টে ভাসিয়েছিলো। অবিশ্বাস্য একটি ফোনকলে নাটকীয় মোড় আসে জীবনে। ব্যাপক পরিবর্তন। প্লাবন পরবর্তী দূর্যোগের মতো পরিবর্তন।
আচ্ছা কোন নারীই কি হীন স্বার্থের উর্ধ্বে উঠতে পারে না? যদি না'ই পারে! তবে কেন এই সীমাবদ্ধতা? তবুও কেন আমরা তাদের মহীয়সী বলি? কেনইবা প্রেরণাদায়ী বলি! আরো কত বিশেষণ দিয়ে তাদের সকল কিছুর উর্ধ্বে রাখতে চাই। পূজনীয় করে রাখি! আমার বুঝে আসে না। এত এত যাদের কদর সমাদর করি সমঝদার আমরা অথচ অল্পতেই তারা বিগড়ে যায়! কেন অকৃত্রিম ভালোবাসার পুরুষকে সীমাহীন কষ্ট দিয়ে ঝাঁঝরা করে দেয় এপিঠ ওপিঠ! প্রেমিকের ব্যাথা বেদনা বিরহ কোন নারীকেই ভাবায় না। যদি ভাবাতো পরিপূর্ণ যৌবনবতী কখনোই প্রেমকে অবজ্ঞা ভরে প্রত্যাখ্যান না করে আরো উজাড় করে দিত নিজেকে। যেনো নিজেকে নিজে ছাপিয়ে যাবার তীব্রতা পেয়ে বসতো।
আমার জমানো ক্ষোভ গুলো আজও প্রশমিত হয়নি। আজও তাড়া করে ফেরে সেই সুখ সুখ অনুভূতির কথা। তারপরের বিচ্ছেদপর্ব এবং ধারাবাহিকতা নিয়ে পূর্বাপর কষ্ট আর কষ্ট! এই কষ্ট অন্য কেউ বুঝবে। যে কষ্ট আমি লালন করেছি সেই কষ্ট আর কারো নয়! এটাই যেন আমার সম্পদ এটাই যেন আমার প্রতিপত্তি।
ঘুম থেকে তাগিদ না থাকা সত্ত্বেও বিছানা ছাড়তে হলো। তারপর ফোন করবো করবো করে করা হয়ে ওঠেনি। কতবার মনে পড়ে তাকে ফোন করে কথা বলি। করা হয় না। করা হয় না এটাও যথাযথ নয়। আসলে করি না। যদি করি তবে সবক শুনিয়ে দিলে আরো কষ্ট ব্যাথা বেড়ে যাবে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে কিছু করে বসার ভয়! অজানা এক শংকা! সম্পর্ক চলমান থাকা অবস্থায় হারানোর শংকা যেমন ছিলো। ঠিক তেমনই এক শংকা। আচ্ছা মানুষ কি কখনো শংকার উর্ধ্বে উঠতে পেরেছে? আমার মনে হয় পারেনি। আর সেটা অবশ্যই পুরুষের বেশি। প্রেমিক তারও একধাপ এগিয়ে থাকবে সকল সময়ে। সকল পরিস্থিতি বিবেচনায়। কথায় আছে নারী গর্ভধারণ করে সন্তান প্রসব করে নয় মাস ১০ দিন আগে-পরে। কিন্তু পুরুষ মানুষ সারাজীবন মাথা-মগজে শংকা পুষে। চাপ নিয়ে চলে। যেমন নিজের তেমনই পরিবারের সকল সদস্যের। এই চাপ মাতৃত্বের চেয়ে কোন অংশে কম? আমার জানা নেই। জানার চেষ্টাও করিনি কখনো।
হয়তো আজ সকালবেলা মেহেরজানের সাথে দেখা হতেও পারে। যদি দেখা হয় মনের ভেতরকার অনিয়ন্ত্রিত আমি বেরিয়ে আসতে চাইবে। কিন্তু আমি বের হতে দিতে চাই না। কারণ আমরা সম্ভ্রম নিয়ে ভাবি সমাজের সকলেই। সেও বিব্রত হোক আমি চাই না। তবে তাকে দেখলেই সে বুঝে যাবে আমার চোখের ভাষা। এ দু'টি চোখ যেনো একেকটা অথৈ সাগর। যার ভেতর একের পর এক ঢেউ এসে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে নিজেকে ছাপিয়ে যায়। ছাপিয়ে যেতে হয়।
-সমাপ্ত-
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
এই গল্পটা এমনই এক গল্প যে স্বপ্নের মতো করে প্রেয়সীকে কাছে পাওয়া। আবার পেয়েও হারানো। বিরহ বেদনা কষ্টকর অনুভূতি লুকায়িত আছে। পরে আবার প্রায় প্রতিদিনই প্রেমিকার সাথে দেখা হওয়া। কথা না হওয়া। যেনো এক স্বপ্নলোকে ছাওয়া।
২৪ নভেম্বর - ২০১২
গল্প/কবিতা:
২২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।