কাল রঙের চোখ ঝলসানো চকচকে গাড়িটি ঘ্যাঁচ করে থামে। উপস্থিত ভিড়ে গুঞ্জন আলোড়ন, বড়বাবু আজ নিজেই এসেছেন! বাবুটিকে চেনা চেনা লাগে মাঝির, কোথায় যেন দেখেছে আগে। গাড়ি থেকে নেমেই বৃদ্ধ মাঝির দিকে নজর পড়ে তার, শতচ্ছিন্ন কাপড়ে মাঝি জড়সড় কাঁচুমাচু হয়।
কি রে মাঝি বেটা, বলেছিলি তো আমার জীবন নাকি ষোল আনাই মিছে। দেখ চেয়ে দিব্যি বেঁচে আছি- শ্লেষাত্মক স্বরে বাবু বলেন।
বৃদ্ধটি ফ্যাল ফ্যাল করে শোনে, আর ভাবে, কী বলছে বড়লোক বাবুটি?
তোর নদী আমাকে খেতে পারে নি, আমিই খাচ্ছি তোর নদী- বাবু বলেই চলেন।
বৃদ্ধের স্মৃতি একটু একটু কাজ করে। মনে পড়ে এক কালবোশেখীর দিনে নদী পারাপারের ঘটনা। সে তখন তাগড়া যুবক। এই বুড়ির মত শুকিয়ে যাওয়া নদী তখন সোমত্ত যুবতী। নদীর উপর দিয়ে যখন সে বৈঠা বাইতো, নদীর পানির আলোড়নে মনে হত যেন উদ্ভিন্ন যৌবনে দোলা। এক একটি ঢেউ যেন বিশাল স্ফীত স্তন, বুকে কাঁপন লাগত মাঝির।
দীর্ঘশ্বাসে বাস্তবে ফেরে বৃদ্ধ। ঝাপসা চোখে ভাসে ঘটনাটি। বাবুটি ছিলেন এক ননীর পুতুল। যদিও দু’জনের তর্ক বড়াই চলেছিল সমানে সমানে। শেষমেষ নদীতে ঝড় উঠলে সাঁতার না জানা ধনীর দুলালকে চূড়ান্ত আঁতে ঘা দিয়েছিল মাঝি।
তারপর……..কত দিন গত হল। নদী মরল। ক্ষেতে পড়ল আরো কত আইল। বাবুটি জ্যামিতিক হারে আরো ধনী হল, উল্টো হারে অর্ধ্ব-চতুর্থাংশ-অষ্টমাংশ গতিতে সাড়ে তিন হাতের কাছাকাছি পৌঁছুল মাঝির আবাদী জমি। দারিদ্রই শক্তি দরিদ্রের, মানসিক সক্ষমতায় বেঁচে-বর্তে থাকাই তার অহঙ্কার। মাঝিরও তাই। তিন বিঘা থেকে সাড়ে তিন হাতের দূরত্ব অতিক্রান্তের সময় বৃদ্ধিতে রত। নদীর শীর্ণধারা দিয়ে আধুনিক নৌকা চলে। ইঞ্জিনের দাপটে অনেক আগেই সে তার টাপুরে নৌকা হারিয়েছে।
এদিকে, প্রচণ্ড আত্মগরিমা বহু বছর আগের তুচ্ছ অপমানটি ভুলতে দেয় নি বাবুকে। নদীর পাড় ভরাট করে তিনি এখন নজর দিয়েছেন মাঝি’র ক’ছটাক জমিতে।
ক্রুঢ় হাসি মিলাতে না মিলাতে অত্যাধুনিক ফোনে কী যেন খবর আসে বাবু’র কাছে। সঙ্গী সহচরের চকিত চিৎকারে মাঝি পাশ ফিরে দেখে বুক চেপে ধরে বাবু পড়ে আছে মাটিতে।
আল্লাহ সইল না!
এত সহজে গরীব মরে না। সর্বস্ব কাইড়া নিলেও শুধু দিলে’র শক্তিতে ওরা খাড়াইয়া দাড়ায়…আর ওরা? কয়েক শ’ কারখানার মইদ্যে একটায় আগুন লাগার খবরে দিলে’র ধড়ফড়ানি উইঠা খাড়ার তে’ পইড়া মইরা গেল- বিড় বিড় করে বলতে বলতে বৃদ্ধ মাঝি বাড়ির পথ ধরে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আদিব নাবিল
আমাকে আরেক জন ‘বড়’ মানুষের সাথে কম্পিউটার শেয়ার করতে হয়। তিনি যতটুকু সুযোগ দেন, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ভাল আছি, আপনিও ভাল থাকবেন, আযহা ভাই।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।