একমুঠো হাসি

পরিবার (এপ্রিল ২০১৩)

আহমেদ ইশতিয়াক
  • 0
কোহিনূর এখনও বসে আছে। ঠাণ্ডা আবহাওয়া। বাঁশের বেড়ার উপর পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ঘরের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে সবসময়ই ঠাণ্ডা বাতাস ঢোকে। এর মধ্যে গত রাতে আবার হয়েছে বৃষ্টি। ঘরে স্যাঁতস্যাঁতে একটা পরিবেশ। এর মাঝেই প্রতিদিনের সেই অপেক্ষা।

কোহিনূরের বেশ ক্ষিধে পেয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় ঘরে চাল নেই। স্বামী চাল ডাল নিয়ে আসবে। তারপর রান্না, তারপর খাওয়া। তবে তার স্বামীর ফিরতে দেরী হচ্ছে। ক্ষিধে নিয়ে সময় কাটানোই মুশকিল। তবে সময় কাটানোর বেশ ভালো একটা পথ সে আবিষ্কার করে ফেলেছে। যখনই একা থাকে তখনই সে তার বিয়ের সময়ের কথা মনে করে।

আহারে আলাভোলা মানুষটা প্রথম রাতে লজ্জায় মারাই যাচ্ছিল... ! একটা কথাও বলতে পারছিল না। কোহিনূর ই প্রথম কথা বলেছিল। আশ্চর্যের বিষয়... এর পরেই লোকটা কথা বলতে শুরু করল। যে লোক প্রথমে কথাই বলতে পারেনি সে দুই লাইন গানও শোনালো। গানের গলা বেশি ভালো না হলেও কোহিনূরের কাছে ভালোই লাগছিল। গানের মাঝখানে ফিক্‌ করে হেসেও ফেলে একবার। পাশের ঘরের ময়নার বুড়ো দাদি একবার খ্যাঁক করে উঠেছিল ... উঁচু গলায় বলেছিল... পীরিতির বাহার দেখছ নি !! এই কথা শোনার পর লোকটা হুট করে চুপ করে গেল। বোকার মত কোহিনূরের দিকে তাকিয়ে ছিল। কোহিনূরের আবারো হেসে দিয়েছিল।

ষাট পাওয়ারের বাল্ব টা যখন লোকটা নিভালো তখন কোহিনূরের লজ্জার পালা শুরু হল। লজ্জায় লাল হয়ে যখন সে শুয়ে পরল ততক্ষণে রাত অনেক !!

এরপর দুই দিন লোকটা কাজে যায় নি। বিয়ের জন্যে জমানো টাকা ছিল, সেখান থেকে বেঁচে যাওয়া টাকায় তারা দুইদিন কাটিয়েছে। দুপুরে রাস্তার ওপাশের হোটেল টাতে খেয়েছে। রমনা পার্কে দুইজন হেঁটেছে। পুরোটা সময়ই লোকটার চেহারা কেমন লালচে হয়ে ছিল। কোহিনূরের মনে হয়েছে ... এই লোকটার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে। তার ঘরাঘুরি ভালো লাগে নি। ১০ টাকা দিয়ে একটা বেলি ফুলের মালা যখন লোকটা কিনে দেয় তখন কি যে ভালো লেগেছিল! সেটাকে রুক্ষ চুলের খোঁপায় সে আজো দিয়ে রাখে। মালাটা শুঁকিয়ে গেছে। কিন্তু মালার সাথে যে ভালোবাসা তা তো শুঁকায় নি ! কোহিনূর মালাটা হাতে নেয়। ইশ্‌ ... কি সুন্দর মালা। তার মনে হয় এত সুন্দর মালা সে কখনও দেখে নি।

তাদের বিয়ে হয়েছে মাস ছয়েক হল। এখনও লোকটা লজ্জা কাটিয়ে উঠতে পারে নি। রাতে যখন সে লোকটার হাত ধরে লোকটা কেমন যেন আড়ষ্ট হয়ে যায়। ভাবতে ভাবতে কোহিনূরের নিজের গালটাই লাল হয়ে যায়। কোহিনূর আরও ভাবে , তার বাচ্চাটা হবে মেয়ে। আজ বাজারে সে বাচ্চাদের একজোড়া স্যান্ডেল দেখেছে। এই স্যান্ডেল জোড়াই সে কিনবে। কিনে রেখে দেবে। যখন মেয়ে হবে তার পায়ে পরিয়ে দেবে। আচ্ছা... মেয়েটার নাম রাখা যায় কি??

কোহিনূর নাম ভাবতে থাকে। খুব সুন্দর একটা নাম রাখতে হবে। শিউলি ফুল কোহিনূরের খুব পছন্দের। শিউলি কি রাখা যায়??

মতি মিয়া ঝুপড়ি ধরে হাঁক দেয়াতে হঠাৎ করেই কোহিনূরের চিন্তার সুতো ছিঁড়ে গেল। কোনমতে ঠেলে ঠুলে ঝুপড়ি সরিয়ে দাঁড়াল কোহিনূর !
মতি মিয়া চাল ডাল আনতে পারে নি। মহাজন আজকেরজ টাকা কালকে দেবে। তবে পকেটে আগে থেকেই কিছু টাকা থাকার কারণে মতি মিয়া দুটো বনরুটি নিয়ে এসেছে।

টাকা কাইল পামু। আজকে আর কিছু আনবার পারলাম না... তাই রুডি আনছি।
-ভালা করছ... এমনেই রাইত হইয়া গেছে। আজকা ভালো লাগতাছিল না, রুডি ই সই। কাইল ধীরে সুস্থে রানমু নে।

দুইজন ই দুইজনের দিকে বেশকিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর একসাথেই হেসে উঠল খানিকটা। একমুঠো হাসির এই শব্দ বাতাসে মিশে যায় খুব গভীর আনন্দে।

এই সুখী পরিবারটিকে প্রত্যক্ষ্য করছে আরও একজন। তার অবস্থান এই পৃথিবীতে না। সে আছে দূরে কোথাও। যে সুখ দুঃখ ভালোবাসা সব কিছুর উর্দ্ধে। তার সৃষ্ট এই অপূর্ব মুহুর্তগুলি কোহিনূর আর মতি মিয়ার মত সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে আছে। সত্যিই ... কি অদ্ভুত !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক অসাধারণ...ছোট হলেও গভীর আবেগে মন ছুয়ে গেল....খুব ভালো হয়েছে....
তাপসকিরণ রায় ছোট হোলেও গল্পটি পূর্ণত্ব পেয়েছে আপনার হাতে--সুন্দর ধারাবহ কাহিনীতি মানসিক তৃপ্তি এনে দেয়।অনেক ধন্যবাদ গল্পকারকে।
ম তাজিমুল ইসলাম অনেক অনেক ভাল লাগলো---------
আরমান হায়দার ছোট অথচ সুন্দর গল্প।
এফ, আই , জুয়েল # অনেক সুন্দর একটি গল্প ।।
সুমন সুখ-শান্তি তো আসলে অঢেল সম্পদ দাবী করে না, দাবী করে সুন্দর কিছু মন। আর এরকম দুটো মনের মিলনে যে সংসার সেটা সুখের না হয়ে পারেই না। সুন্দর সুখী পরিবারের চিত্রণটা বেশ ভাল লাগল।
এশরার লতিফ অল্পতেই খুশী সুখী পরিবারের দারুন সুন্দর গল্প।
মোঃ কবির হোসেন আহমেদ ইশতিয়াক ভাই আপনার গল্পটা পড়ে বেদনায় মনটা ছেয়ে গেল. আমাদের সমাজে অনেক পরিবারেই হয়তো প্রতিদিনই এ রকম হাজার ঘটনা ঘটে চলছে-যা আপনি আপনার গল্পে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন. আমার কাছে গল্পটি ভাল লেগেছে.

২৪ অক্টোবর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪