অঙ্কুরের ইতিহাস

কোমলতা (জুলাই ২০১৫)

এনামুল হক টগর
গভীর রাত পূন:জন্মের পাপ বুকে নিয়ে কয়েকটি ¶ুধার্ত কুকুর সারারত ঘেউ ঘেউ করে ডাকছে। বৃত্তবানদের প্রাসাদের নীচে বি¯—ীর্ণ ব¯ি—র বসবাস। প্রাসাদ থেকে ফেলে দেওয়া মাংশের টুকরোর হাড়গুলো চুষে চুষে কুকুরগুলো খটখট করে কামড়াচ্ছে।
ব¯ি—র ভাঙা কুটিরের ভেতর থেকে দাউ দাউ ¶ুধা বুকে নিয়ে তর“ণ যুবক শরীফ বেড়িয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে গিয়ে দাঁড়ালো, আর ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য দূর প্রকৃতির আগামিকে আহবান করলো। ব¯ি—র অন্য ঘর থেকে কলি হাঁটতে হাঁটতে শরীফের কাছে এসে দাঁড়ালো আর বললো ভাগ্যের পরিবর্তন কি ? আর কিভাবেই বা ভাগ্যের পরিবর্তন করা যায়। ভাগ্যতো টাকার দাস বৃত্তবানদের হাতে। অর্থ দিয়েইতো ওরা মানবতার সভ্য পোষাকগুলো ছিঁড়ে ফেলছে। যমদূত হয়ে অসহায় ও নিপীড়নের রক্তমাংশ চুষে খাচ্ছে।
শরীফ নদীর দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো আর নিরব সহ্যের ভেতর থেকে নিজেকে জানার চেষ্টা করলো। দেখলো দেশ ও সমাজের প্রতিটি গ্রাম, নগর ও মহল­ায় ¶ুদ্র ¶ুদ্র ভাঙা কুটির বৃদ্ধের মতো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাসা দেখছে, আর মনে করছে এমনি এমনিই জীবন ও ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।
ব¯ি—র নোংরা পরিবেশে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে জীবনধারণ করছে কতো শিশু, বৃদ্ধ, যুবতী। বৃত্তবানরা অর্থ দিয়ে কিনে নিচ্ছে তাদের বিবেক। এরা যেন বিংশ শতাব্দীর আধুনিক দাস। গলায় মানবতার দড়ি ঝুলিয়ে অন্ন বস্ত্র আর চিকিৎসার জন্য সময়ের পথে পথে ঘুরছে ও যুদ্ধ করছে। মুহুর্তে পেটের জ্বালায় বিক্রি করে দিচ্ছে সম্মান। এ যেন পুরোনো দাস প্রথারই অন্যরূপ। নতুন নতুন রঙে নতুন নতুন বোতলে ঢেলে পান করছে আর মাতাল হচ্ছে। যেন আইনের ঘোমটার নীচেই এক পৈশাচিক ক্রিয়া।
শরীফ আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো পরিবর্তন যে এক কঠিন শপথ, বা¯—বতার চৌকোষ রা¯—া দিয়ে হেঁটে যাওয়া, আর নিজেকে পরিবর্তন করে অন্যায়ের বির“দ্ধে যুদ্ধ করা। কলি জীবন কি জানে না, যুদ্ধ কি জানে না শুধু জানে দুই বেলা পেট ভরে ভাতের দরকার, নইলে ¶ুধা তাকে ক্লাš— করে তুলবে। গরীব নিরিহ খেতাবধারীরা এভাবেই নিরবে অবিচার অত্যাচার সহ্য করে যায়, প্রতিবাদ করতে পারে না। তাই বৃত্তবান, ভন্ডপন্ডিত ও অসত্য ধর্মবাজরা সীমা পেরিয়ে অত্যাচারের ভয়াবহ দৃশ্য দেশও সমাজে ফুটিয়ে তোলে।
কলি ভাবছে, কিন্তু কিছুই বোঝেনা, বুড়িগঙ্গা নদীর নৌকা থেকে নেমে ঝন্টু কলির কাছে এসে দাঁড়ালো। নদীর ওপারে নিষিদ্ধ পল­ী। মায়াবিনী খান্নাসের লোভ-লালসার ভেতর প্রেমহীন চতুরতা খেলা করছে। আগুনের মতো উগ্রকামভাব ক্রোধের যৌবনকে দাউ দাউ করে পুড়িয়ে দিচ্ছে।
মাঝে মাঝে সত্য এসে বিনয় গৌরব আর সম্মানকে চেতনা দিয়ে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছে। এক সত্য বন্ধুকে খুঁজে পাওয়ার জন্য। যেন প্রশাšি—র আতœশুদ্ধি এসে জীবনকে আলিঙ্গন করতে চায়। কিন্তু আফসোস বুকে নিয়ে সময় কখনো চিৎকার করে আবার কখনো নিরবে চলে যায়। কাঁটা ও পাথরের শক্ত খন্ড পরে থাকে, বিপদগামী পথের ধুলা বুকে নিয়ে। মান অপমান তিরষ্কার অভিষাপ ও লাঞ্ছিত এক হয়ে অš—দৃষ্টির কাছে আতœসমর্পন করতে চায় শুধু বিশ্বাসকে খুঁজে পাওয়ার জন্য। ওরা সবাই একই ব¯ি—তে বাস করে। ঝন্টু কলির পাশে দাঁড়িয়ে গভীর চিš—া করতে করতে বললো জীবনতো মৃত্যুর ¯^াদের জন্য তৈরী হয়েছে।
দেখানো ঝড় তুফান দুর্যোগও বন্যায় প্রতিবছর ল¶ ল¶ মানুষ অসহায়ের মতো নিরবে মৃত্যু বরণ করে। কিন্তু সত্যকে বুকে নিয়ে ওই ভন্ড ও কালোবৃত্তবান আর টাকার দাসদের বির“দ্ধে কেউ যুদ্ধ করে না, উত্তাল জনতা শুধুই ফোঁসফোঁসানিতে ব্য¯— থাকে। তাই অসহায় ভাগ্যের খাতায় অন্ধকার আর অশাšি— লিপিবদ্ধ হয়। শরীফ উগ্রকন্ঠে চিৎকার করে বলতে লাগলো উত্তাল চেতনার তরঙ্গ থেকে জাতিকে মহৎ আদর্শের দর্শন দিতে হবে আর প্রতিনিয়ত নব নব সত্য বার্তা পৌছে দিতে হবে।
বহু বছর জাতি সত্য চেতনার বার্তা পায় না, পূর্বে যাদের বার্তায় জাতির কাছে পৌঁছেছিল এবং গ্রাম ও নগরের রা¯—াকে উত্তপ্ত করে তুলেছিল তারা সবাই ভাগ্যের পরিবর্তনের আগেই অন্ধকারে সাথে বন্ধুত্ব করে নিয়েছিল।
তাই দেশ সমাজ আর ভাগ্য এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। কিছু¶ণের মধ্যে সূর্য গোধুলির সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলবে। তারপর আঁধার নেমে এলে অবৈধ মজুদার সম্পদ ও কালো টাকার দাসরা ভয়ংকর অত্যাচারে জেগে উঠেেত থাকবে। আলোতে ওরা নি:ষ্পাপ প্রভূর রূপ ধারণ করে।
ঝন্টু কিছু¶ণ চুপচাপ থেকে বললো মানব ধর্ম হলো নিজের সুখ দু:খের সাথে অপরের সুখ দু:খ এক করে নেওয়া। ইনসাফ ও আদর্শের সাম্য দিয়ে ন্যায়ের সেবা ও কল্যাণে এগিয়ে যাও।
দেশের সব মানুষকে শাহীখানার উপযুগি খাদ্যের যোগান দিয়ে নিজে শাহী খানা খাওয়া কর্তব্য। কিন্তু ভন্ড ও অসত্য ধর্মবাজ অত্যাচারী শাসক ও কালো টাকার দাসরা কিছুই বুঝতে চায় না, তারা ডোরাদার বিলাসী পোষাক পড়ে আর ¯ৈ^রাচারিতার রূপ ধারণ করে গরিব ও এতিমের উপর অত্যাচার করে। যেন জাহেলী যুগের প্রভাব তাদের শরীরে বি¯—ার করছে।
প্রয়োজনের মানদন্ডে কিভাবে গরিব অধিকার ফিরে পাবে। কলি চুপচাপ শুধু মাথা নাড়াচ্ছে মনে হয় কিছু বুঝতে পারছে তাই সে নিরবে নিরবে বলে উঠলো অপমান লাঞ্ছিত আর অন্যায়ের ভেতর দিয়ে আমাদেরকে জাগরিত হতে হবে। মানবতার সাহসী প্রেমিক ও যোদ্ধাদের ভ্রাতৃত্বের মহাসংঘ গড়ে তুলতে হবে।
দৈহিক ও মানসিক দাসমুক্তির বিধান দিয়ে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তবেই দুঃখ কষ্ট আর যন্ত্রণার এক সারিতে মিলন ঘটবে আর প্রশাšি—র দর্শন মিলবে। পৃথিবী যেন সুদর্শন চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু সত্য ও বিশ্বাসী প্রেমিক খুঁজে পাচ্ছে না। তপস্যা দিয়ে ভালোবাসাকে উৎসর্গ করতে চাইছে। কিন্তু নেশায় দিশেহারা নাগর আমিত্বের অহংকারে রাত্রিকে উপভোগ করছে প্রতারণার অবিশ্বাসে। কিন্তু সত্য প্রেমিক কোথায় তিনি কি হাজারো পর্দার আড়ালে সুবিশাল উদ্যানে বিচরণ করছে ? যেখান থেকে মেঘমালা কান্না হয়ে অশ্র“ ঝরায় আবার রোদ্রের উজ্জল আলো দিয়ে প্রকৃতিকে হাসায়। মনে হয়ে সরল নিদের্শের এক প্রতিফলিত অর্পন ছবির অবলোকন। অতীত পেরিয়ে গেছে কিন্তু এখন অনাগত অতীতের জন্য আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে। অভাব অনটনের ভিষণ কষ্ট থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। সম্পদ ও বস্ত্র বন্টনের জন্য সাম্যবাদকে স্থাপিত করতে হবে। অত্যাচারী ও অপকারিতা হতে থেকে দেশ ও সমাজের মানুষকে নিরাপদ রাখতে হবে। মাতৃভুমির প্রতি শ্রদ্ধার সাথে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। দূর্নীতি সন্ত্রাস ঝগড়া ফেসাদ ও হানাহানি থেকে বেরিয়ে এসে দেশকে বাঁচাতে হবে। বৃত্তবানরা খাবো খাবো বলে আর আমার আমার বলে মানবতার নৈতিক আদর্শকে হারিয়ে ফেলছে। অভিনব কৌশলে করে ও ভন্ড প্রভু সেজে কোটি কোটি মানুষের অন্ন বন্ত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে ও ধীরে ধীরে গ্রাস করছে প্রিয় জন্মভুমিকে।
শরীফ রক্তঘাম মুখ লাল করে পৃথিবীর দিকে তাকালো বলতে লাগলো ভোগ বিলাসের লোভী শুকুনরা সাবধান হয়ে যাও, আর কত দিন গরিব ও এতিমের পাঁজর ভেঙে লাল রক্ত চুষে চষে তোমাদের বিলাসীতার উপকরণ তৈরী করবে।
টাকার দাসরা কি বুঝতে পারছো ? আসন্ন আগামি পরিবর্তনের মুখোমুখি। শিঘ্রই অসাম্যের বিলাসী পোষাক ছিঁড়ে মানবতার আদর্শকে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবে। প্রতিটি ঘরে ঘরে অগ্নিশিখার দাউদাউ ন্যায় মশাল জ্বলাবে।
পৃথিবী নিরব নদীও নিরব, মৃত্তিকা ও প্রকৃতিও নিরব। অন্যায় অপরাধ আর অসাম্যের বির“দ্ধে মানুষ ধীরে ধীরে জেগেই উঠছে। বিশ্বাসের বাঁধভাঙা পানির স্রোতের মতো অনাগত আগামিকে আমাদেরকে ডাকছে, জেগে ওঠো। সত্যবাদীরা একবাক্যে ও বৃহৎ ভ্রাতৃসংঘের আদর্শে দেশ ও সমাজের মানুষের জন্য জেগে ওঠো এবং সত্য ও আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করো। নিজের ও অপরের জন্য সমান অধিকারের শে­াগান দাও। আতœকেন্দ্রিকতা ও শ্রেণি¯^ার্থের বির“দ্ধে প্রতিনিয়ত সত্যের জন্য প্রবল আঘাত করো। আনন্দ ও বেদনার অনুভূতিকে এক ধারায় মিলন ঘটাও, মানবতার উৎকর্ষের উপরই যেন প্রিয়দেশ ও পৃথিবী আজন্ম দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, সার্বজনীন শি¶ার সমান অধিকার নিয়ে। এটাই মানুষের বিশ্বাস গৌরব ও আগামির প্রতি বিনয় আহবান। জীবন ক্লাš— তাই সময়কে ধরে রাখা কঠিন, সময়ের স্রোতে শরীফ ঝন্টু ও কলি অধিকারের শে­াগানে হেঁটে যাচ্ছে, দেশ সমাজ নগর ও প্রিয়মাতৃভুমিকে ভালোবেসে। চারিদিকে দীর্ঘ প্রতি¶া ¯^প্ন আর বা¯—বতার ভেতর বিফল সংগ্রাম খেলা করছে। তারপরও সম্ভবনার জন্য বুড়িগঙ্গা নদী ও নগরের বুক দিয়ে জাহাজ আর বিভিন্ন যানবাহন চলছে। নদীর শরীর জুড়ে বিশাল পৃথিবী যেন দাউ দাউ ¶ুধায় অন্যায় আর অবিচারের বির“দ্ধে জেগে উঠছে। উত্তাপ জ্বালা বিদ্বেষের রাজত্বকে ভেঙেচুরে ছাড়খার করে দিতে, যেন আবর্তন বিবর্তন দিয়ে যুগের চেতনাকে ঘাতকরা আঁধারের সাথে মিশিয়ে দিতে না পারে। অস্থির উগ্রকাম বিলাসে দাঁড়িয়ে আছে নগরের প্রাসাদ যেখানে আতœবিরোধের কেউটেরা মুখোশে রূপ ধারণ করে জেগে থাকে। তারপরও শরীফ ঝন্টু ও কলি একসাথে হেঁটে যাচ্ছে নতুন পরিশুদ্ধ অঙ্কুরের ইতিহাসে। গ্রাম ও নগরের অসহায় মানুষগুলো যেন আগুন পানি খাদ্য দ্রব্য পোষাক ও চিকিৎসার জন্য সমান অধিকার ফিরে পায়...।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সুখের পায়রা ভালো লাগা রেখে গেলাম।
গোবিন্দ বীন সত্যিই মন ছুয়ে গেল।ভোট রেখে গেলাম,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
দিপেশ সরকার অসাধারন লেখা.......প্রতিবাদি লেখার এক নতুন মাত্রা পাচ্ছে আপনার লেখাই, খুব সুন্দর।

২১ অক্টোবর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৯৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪