আঁধারের চক্রাকারে পৃথিবী ঘুরছে । সূর্যের বেদনা বিধুর আলো থেকে রাত্রির চাঁদ বিপ্লবী হয়ে উঠেছে ।
টিপু সুলতান আর সাদেক স্টেশনে বসে আছে নতুন আলোর অপেক্ষায় । কখন গাড়ি আসবে যাত্রীদের ব্যাগ মাথায় নিয়ে মোটর গাড়ি, রিক্সা, বাইকে তুলে দিবে । বিনিময় যে অর্থ পাবে তা মা ও বোনের জন্য পাঠাবে ।
টিপুর গ্রামের বাড়ি রূপপুর। ঢাকা থেকে অনেক দূরে । বাবা দিন-মজুরীর কাজ করত, সেই সুবাদে নারায়ণগঞ্জ কাজ করতে গিয়েছিল । কয়েক সপ্তাহ কাজ করার পর তার ছেলে মেয়ে আর স্ত্রীর অন্ন বস্ত্রের জন্য টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিল । তখন দেশে ছিল রাজনৈতিক নানা সমস্যা । বাবা যখন গাজীপুর পৌছায় দেশে তখন হঠাৎ করেই অবরোধ আর হরতালের ডাক আসে ।
সেই অবরোধ আর ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয় টিপুর বাবা । তারপর সে আর দেশে ফিরতে পারেনি । সেই থেকে টিপু খুব চুপচাপ থাকে । আর ভাবে ছোট বোন আর মাকে কিভাবে রোজগার করে বাঁচিয়ে রাখা যায় । টিপু প্রকৃতিকে খুব ভালোবাসে, মাটিকেও খুব ভালোবাসে ।
এই প্রকৃতির দিকে চেয়ে একদিন সে আকাশ, দিগন্ত নদী আর সকালের সোনারঙ ঝরা রোদ্দুর দেখতো । ওর শরীর যেন পৃথিবীর ক্ষুধিত কান্না শুনতে পেত, আজো সেই আওয়াজগুলো তার কানে ভেসে আসে । বসন্তের পুষ্পিত স্মৃতির শালবনগুলো এখনো যেন তাকে অব্যক্ত বেদনায় ডাকে । তার বিস্তৃত অন্ত:করণ ভাবে এক পুরাতন স্মৃতির রঙে । আর তখন থেকেই সে স্টেশনের সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করে । বন্ধু সুলতান আর সাদেক ওর সাথে কাজ করে আপন মনে । কাজ শেষে ক্লান্ত সন্ধ্যায় সে পৃথিবী দেখে, মনে পড়ে যায় মা আর ছোট বোন নওরিনের কথা । মা তাকে অনেক গল্প বলতো, বোন তার হাত ধরে স্কুলে যেত । বাবা আর কোনদিন ফিরে না আসলেও বোনটির স্কুলে যাওযা বন্ধ হয়নি ।
ছোট নদীর বাঁক ঘুরে আজও বোনটি স্কুলে যায়, খেলা করে । শৈশবের জামগাছে যে স্বপ্ন গুলো বাসা বেঁধেছিল হঠাৎ এক ঝড় এসে তাও ভেঙে দিয়েছিল । ক্লান্ত সন্ধ্যা আস্তে আস্তে গভীর রাতের দিকে হেঁটে যাচ্ছে । টিপু ভাবলো ঘুমাতে হবে, এমন সময় সাদেক এসে বলল আগামিকাল হরতাল ।
টিপু বললো প্রতিদিন হরতাল হলে আমরা বাঁচবো কিভাবে ? যাত্রী ছাড়াতো, স্টেশনে আমাদের রোজগার নেই । সাদেক বলল এমনটাই আমদের দেশ আর দেশের রাজনীতি । আমরাই কেবল ক্ষুধার্ত আর অসহায় । টিপু বললো, আমরা না হয় অনাহারে কাটালাম কিন্তু মা আর বোনটি কি খেয়ে বাঁচবে ? সাদেক বললো কেন ওরা অনাহারে থাকবে ।
আমাদের ক্ষুধার্ত শাসক আর বিরোধী দলের পেটকে জ্বালায় না, জ্বালায় শুধু দেশের ক্ষুধার্ত আর অনাহারীদের । কিছুক্ষণের মধ্যে সুলতান এসে দাঁড়ালো এবং বললো এভাবে দেশ চলতে থাকলে জাতির শরীরকে ক্ষুধা আর দুর্ভিক্ষ আঁকড়ে ধরবে ।
টিপু বললো আমরা আর রাজনীতিবিদরা যদি মহৎ ভালোবাসা দিয়ে দেশকে গড়ে তুলতাম তাহলে এই দেশ আর জাতি পৃথিবীর মাটিতে মাথা উঁচু হয়ে দাঁড়াত । সাদেক নিঃশব্দ কণ্ঠে বললো তাহলে তো আমাদের জীবনের নীরব দুঃখ-কষ্ট আর দহন জ্বালাগুলো মুছে যেত ।
টিপু বললো আমাদের জাতিকে জানতে হবে যে, পরিত্রাণের ভিতর দিয়েই নিজের আত্মার সাথে কথা বলতে হবে । আর নিজেরাই নিজেদেরকে সংশোধন করে নিতে হবে । সুলতান বললো সৃষ্টিকর্তা যেভাবে সবার মধ্যে সূর্যের আলো আর পৃথিবীর পানি বণ্টন করে দেয় । আমাদের এই জাতিকেও সেই জ্ঞান থেকে মহৎ ভালোবাসা আর কর্মের সম্পদ যেন মানুষকে বণ্টন করে দিতে পারে । সাদেক বললো রাত গভীর হয়েছে ঘুমাতে যাই ।
মধ্যরাত। পৃথিবীর ক্ষুধার্ত যৌবন জেগে আছে নারী ও পুরুষ রূপ ধারণ করে । আজন্ম স্বপ্নগুলো প্রকৃতির সাথে খেলা করছে । প্রেম ভালোবাসা আর বিরহ মিলনে । আলো আর আঁধারের বুকে নির্মিত চাঁদ স্বচ্ছ মৃত্তিকাকে বন্ধরূপে আলিঙ্গন করছে । অনুভব উপলব্ধির মন নদী আর সাগরকে ডাকছে ।
শেষ রাতের ছায়া থেকে ঐশ্বরিক আভা নতুন সকালকে আলো দিচ্ছে । ট্রেনের হুইসিলে টিপুর ঘুম ভেগে যায় । দ্রুত কাজের জন্য স্টেশনে যেতে হবে । সকালের নাস্তা সেরে টিপু স্টেশনে যায় । সূর্য মাথার উপর উঠে আসছে কিন্তু সকাল থেকে একটি গাড়িও স্টেশনে আসেনি ।
খবর আসছে অবরোধ আর হরতালের কারণে রেললাইনের পেটগুলো খুলে ফেলা হয়েছে । বিচ্ছিন্ন জায়গায় গাড়ি লাইনচ্যুত হয়েছে । স্টেশনে যাত্রী না থাকায় টিপুকে অসহায় মনে হচ্ছে । টিপু মনে মনে ভাবছে আর কতদিন এভাবে চলবে, অন্যকিছু করতে হবে। সন্ধ্যার আগেই টিপু বাড়িতে চলে আসে, কিছুক্ষণ পর সুলতান আর সাদেকও ফিরে আসে । ওরা তিনজন বস্তির একটা কাঁচাঘরে মাসে একহাজার টাকার বিনিময়ে বসবাস করে ।
সুলতান দোকান থেকে রুটি নিয়ে এসেছে। ঘরে তিনজন একসাথে খাবে । পাশেই ছোট হোটেল, কর্ম না থাকলে ওরা তিনজন হোটেলে বাকীতে খাওয়া-দাওয়া সারে । খাওয়া শেষে ওরা তিনজন বিশ্রাম নিচ্ছে ।
এমন সময় সুলতান বললো জীবনের দেনা পাওনাগুলো সব গরমিল হয়ে যাচ্ছে । আজ যা আসে কাল তা ফিরে যায় । সময় অতি দ্র“ত অতীতের সাথে সাথে পুরাতন হয়ে যাচ্ছে ।
টিপু বললো জীবনের ভালোবাসা পৃথিবীর বুকে কাঁদে সে এক ভাসমান যাত্রীর ঠিকানা খুঁজে। কিন্তু খুঁজে পায় না । নিরন্তর বেদনা হয়ে বন্দী জীবন-যাপন করে । সময়ের সাথে জ্বলে আর নেভে । উভয়ের কথা শুনে গম্ভীরভাবে সাদেক বলে দয়া আর করুণার গ্লানি নিয়ে জগতে বেঁচে থাকা যায় না । আত্মিক প্রতিধ্বনির বাস্তবতায় গভীর জীবনকে নির্মাণ করতে হবে । সৃষ্টির সত্য আলোই মহৎ হতে পারে।
সে এক রাহমানের দান । যার ভেতর অনুগ্রহ থাকে । টিপু মৃদু হেসে বললো তুই তো অনেক চিন্তা করে আর ভেবে কথা বলছিস, কে তোকে এই কঠিন কথাগুলো শেখালো । সুলতান বললো জীবনকে অনুসন্ধান কর, দেখবি জীবনের ভেতর থেকে আর একটি জীবন মহৎ জ্ঞান দিচ্ছে । টিপু ভাববাদী চিন্তা মাথায় নিয়ে বললো এ কেমন জীবন ।
সুলতান বললো এটা মহাপরম সত্তার রহস্যভেদ । রাত্রি গভীর হচ্ছে নিঃসঙ্গ-নিঃশব্দতার ভেতর পৃথিবীর নিষ্ক্রিয় সৌন্দর্য ব্যাকুল প্রতীক্ষায় ঘূর্ণমান খাচ্ছে । বিচ্ছেদের দহন বেদনায় নক্ষত্রগুলো জ্বলছে । টিপু ঘুমিয়ে পড়ে আর স্বপ্নের ভেতর ছোট বোনটির ছবি ভেসে ওঠে, দাদাভাই লেখাপড়ার জন্য বই কিনতে হবে । শিক্ষককে-এ মাসের বেতন দিতে হবে । তোমার তো কাজ নেই এ মাসে কিভাবে টাকা পাঠাবে । টিপু ঘুমের ভেতর থেকে বোনকে বললো এটাই আমদের জীবন । আমরা প্রতি মুহূর্তে ক্ষুধার্তের সারিতে অপেক্ষমাণ ।
এখানে শিল্পের বিশাল নগর তবু আমরা অনাহারী । কিভাবে মানুষ তার আত্মার তৃষ্ণা নিবারণ করবে । দাদাভাই আমাদের জীবনে দুঃখ থাকলে ঈশ্বরও দুঃখিত হয় । ঈশ্বর যদি আমাদের জন্য করুণা করে তাহলে আমরা অবশ্যই মহৎ জীবন যাপন করবো । ঈশ্বর তোমকে পরিশুদ্ধ জ্ঞান দান করুক তোমাকে।
স্বপ্নের মধ্যে টিপুর ঘুম ভেঙে যায় । আজও হরতাল আর অবরোধে স্টেশনে গাড়ি আসবেনা । এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো মানুষগুলো কিভাবে বাঁচবে । ভাবতে ভাবতে টিপু রাস্তার দিকে হাটতে থাকে এবং দেখতে পায় একদল কিশোর বিবস্ত্র অবস্থায় রাস্তার ধার দিয়ে কাগজ, পুরাতন স্যান্ডেল সহ বিভিন্ন জিনিস কুড়িয়ে বস্তায় ভরছে ।
টিপু ধীরে ধীরে তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো এবং প্রশ্ন করলো এগুলো দিয়ে তোমরা কি করবে । অনেকের ভেতর থেকে একজন কিশোর বলল কেন এগুলো বিক্রি করে আমরা অর্থ উপার্জন করবো আর সেই অর্থ দিয়ে আমাদের জীবনকে চলমান করবো । টিপু মৃদু হেসে বললো জীবন কি তুমি তা জানো ? কিশোর বললো আমি তো জীবন বুঝিনা, আমি বুঝি কিভাবে বেঁচে থাকবো ।
টিপু বললো জীবন হলো মৃত্যুর বন্ধু । মৃত্যু তাকে বহন করে নিয়ে বেড়ায় । দেহের খোলস ভেঙে গেলে আমরা তাকে মৃত্যু বলি । এই মৃত্যুই যখন নতুন খোলস ধারণ করে তখন আমরা তাকে জীবন বলি । কথাগুলো বলতে বলতে টিপু হেটে যাচ্ছে ।
তাকে কর্মের সন্ধানে গুলিস্তান ফুলতলী বাস স্ট্যান্ডে যেতে হবে । বাংলা মোটর পাড়ি দিয়ে সে শাহবাগের মোড় দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে । হাঁটতে হাঁটতে একবার থমকে দাড়ায়, পথে রক্তের দাগ ! লাল রক্তে অনেক পথ ভেসে গেছে । টিপু এক পেপার বিক্রেতাকে বললো এতো রক্ত, এখানে কি হয়েছিল । পেপার বিক্রেতা বললো গতকাল সন্ধ্যায় মা ও তার শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিল । এক দল দুষ্কৃতিকারী এসে সিএনজিটিকে লক্ষ করে পেট্রোল বোমা ছোঁড়ে । আর সাথে সাথে সিএনজিটি উল্টে গেলে এই দুঃখজনক ঘটনা ঘটে । টিপুর চোখে জল, পেছনের রাজনৈতিক দলের অফিস থেকে গান ভেসে আসছে । সকল দেশের সেরা আমার জন্মভূমি, আমার সোনার বাংলা, মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, আর সামনে রক্তাক্ত রাজপথ ।
শাশ্বত কান্নার জ্বরাক্রান্ত ধ্বনি । জাতির প্রাণশক্তি আজ বিপন্ন । দুধারি তরবারি এসে সাধারণ জনতাকে ক্ষত-বিক্ষত আর হতাহত করছে । সব জীবনই সুবিচার চায় । আমরাও এই বেদনাদায়ক মৃত্যুর বিচার চাই । আজ কয়েকদিন ধরে গাজীপুর সহ দেশের বিভিন্ন জায়গাতে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষকে আগুন জ্বালিয়ে হত্যা করা হয়েছে । আবার যৌথ বাহিনীর গুলিতে অনেক নিরীহ মানুষ মৃত্যু বরণ করেছে। জাতি সব মৃত্যুরই বিচার চায়। কথাগুলো টিপুর শরীর থেকে প্রতিবাদের ভাষায় জেগে ওঠে।
ফুলতলী বাসষ্ট্যান্ড নৈঃশব্দ্যের গহনে আবদ্ধ। কোথাও গাড়ীর শব্দ নেই। কোলাহলহীন এই বিশাল নগর। মাঝে মাঝে শুধু ককটেলের বিস্ফোরণ আর ধোঁয়া। টিপু ফিরে যাচ্ছে হাতিরঝিল বস্তির দিকে যেখানে তিন বন্ধু বসবাস করে।
সামনে মতিঝিল নগরের প্রাণকেন্দ্র। টিপু হেঁটে যাচ্ছে হঠাৎ সামনে মিছিলের শব্দ পেছনে পুলিশের গুলি ধ্বনিত হচ্ছে। টিপু কোন দিকে যাবে অল্প কিছু নিরীহ মানুষই ছুটাছুটি করছে। ককটেল আর অস্ত্রের গুলিতে মতিঝিল এলাকা বিধ্বস্ত। টিপু প্রাণপণ বাঁচার জন্য সরে আসার চেষ্টা করে কিন্তু ছোট গলির পাশ থেকে একটি গুলি এসে টিপুর মাথাকে ভেদ করে। টিপু লুটিয়ে পড়ে পিচঢালা রাজপথে। টিপুর স্বপ্নগুলো অšি—ম শয্যায় ক্লান্ত হতে থাকে। চোখ দুটি বিষণ্ণ বেদনায় মা আর বোনকে বলছে। আমি ফিরে যাচ্ছি পরাজিত আর ব্যর্থ জীবন নিয়ে। তোমাদের প্রতীক্ষার আশার আমি আর কখনো ফিরে যাবোনা। কখনো আমার উপার্জিত অর্থ দিয়ে ছোট বোনের লেখাপড়ার বেতন দিতে পারবো না। প্রকৃতি ছোট গ্রাম আর আঁকা বাঁকা নদীটি আমাকে বিদায় জানাচ্ছে। কয়েক দিন আগে ওরা বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছে।
দীর্ঘ রাত সাদেক আর সুলতান টিপুর খবর জানতে পারেনি। পরের দিন খবরের কাগজ আর টেলিভিশনের মাধ্যমে তার মা বোনসহ দেশবাসী সবাই তার মৃত্যুর কথা জানতে পারে যেন অনুশোচনার অশ্রুটুকু মৃত্তিকার চোখ দিয়ে ঝরে পড়ছে আর দুঃখের ক্লান্ত প্রকৃতি চেয়ে আছে বিনিদ্র দহনে। চন্দ্রের আলো থেকে বেদনার জ্যোৎনা পৃথিবীকে ঘিরে ধরছে।
দূরবর্তী ফসলের মাঠে বসন্ত বাতাস কেঁদে উঠছে, অবিচ্ছেদ্য বেদনার ভারাক্রান্ত ভালোবাসায়। পৃথিবীর ক্রোধ প্রতিশোধের মুখোমুখি দাঁড়ানোর জন্য স্টেশনে আর একটি বালক একা একা বিপ্লবী। সুলতান আর সাদেক মৃতদেহ নিয়ে তাদের গ্রামের বাড়িতে যায় এবং দাফন শেষে দুজনই শহরে ফিরে আসে।
গভীর রাত সাদেক আর সুলতান জেগে আছে। বিষদ রক্তক্ষরণের এক বুক যন্ত্রণা তাদেরকে আহত করছে। জাতির প্রত্যাশার দিনগুলো যেন ক্ষয়ে ক্ষযে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ সুরক্ষার উৎকর্ষ যেন আঁধারে ঢেকে যাচ্ছে। অশুভ্র মৃত্যুর দহন যন্ত্রণা পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে।
সাদেক ভারাক্রান্ত মনে বললো সুলতান আকাশের দিকে তাকায় আর দ্যাখে টিপু আমাদেরকে বলছে আমার মা আর বোন কিভাবে বাঁচবে। সুলতান বললো সমস্ত আকাশ আজ অন্ধকারে ভরে গেছে কোথাও কিছু দেখতে পারছিনা। দেশের মানুষের ভেতরে যদি পরিবর্তন হয় আর শাসক যদি ন্যায়পরায়ণ হয় তবে টিপুর মা ও বোন বাঁচতে পারবে নইলে এক অশুভ ওদেরকে গ্রাস করবে।
সুলতান একটু মুখ তুলে বললো টিপুর মৃত দেহ দেখার পর তার মা আর বোন যেন পৃথিবীর হাহাকারের বেদনা বিধুর শব্দ শুনলো। স্বাধীনতার বিধ্বস্ত দেশ নিপীড়নে ফলকহীন সমাধির মতো নিঃশব্দ একা। অদম্য ক্ষুধার লড়ায়ে লড়ায়ে বড় ক্লান্ত।
সাদেক ক্লান্ত কণ্ঠে বললো দেশ এখন বেহাল ভাবানুভূতির জোয়ার ভাটায় ভাসছে।
যেন অক্ষমতার কষ্ট কাতরে সূর্যালোকের সামনে গভীর ছায়া। কিভাবে বাঁচতে পারে টিপুর মা আর বোন।
দিন যায় রাত যায় বেশ কিছুদিন পরে একদিন সাদেক আর সুলতান টিপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পৌছায়।
নির্জন চিত্রকর্মের মতো সৃজনশীল গ্রাম গভীর চিন্তা আর বেদনা বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আঁকা বাঁকা ছোট নদীটি ছুটে যাচ্ছে প্রত্যাশার সংকল্প বুকে নিয়ে, এক অনুপম সৌন্দর্যের ঠিকানায়।,কোন এক জায়গায় আত্মস্বর্গ গড়ে তুলবে প্রশান্তির প্রত্যাবর্তনে। শূন্য বাড়ি কেউ কোথাও নেই। একা একা বাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতি সঞ্চিত স্বপ্নগুলো বুকে নিয়ে।
গ্রামের এক কৃষক এসে বললো টিপুর মা অন্যের বাড়িতে কাজ করতে গিয়েছে। লেখাপড়ার খরচ চালাতে না পেরে বোনটি চাকুরীর সন্ধানে নগরে গিয়েছে। বহুদিন ওদের খবর কেউ রাখে না। সাদেক বললো শাসক আর বিরোধী দলের লোকজন তো ভালোই থাকে। বেদনা শুধু আমাদের জন্য বেদনা শুধু টিপুর মা ও বোনের জন্য।
সুলতান বললো দেশকে জাগাতে হবে দেশের মানুষকে জাগাতে হবে নতুন বিপবের চূড়ান্ত আহবান বার্তা পাঠাতে হবে। আশায় স্বপ্নগুলো যেন ধনী আর গরীবের আকাঙ্খার মধ্যে সুষমবন্টনের আলিঙ্গন ঘটায়। ব্যথার অশ্রুটুকু যেন মহৎ কর্ম দিয়ে মুছে দিতে পারে। টিপুদের মতো পরিবারের খবর যেন শাসক রাখতে বাধ্য হয়, নইলে সব জীবন আর আমাদের স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে।
২১ অক্টোবর - ২০১২
গল্প/কবিতা:
৯৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪