ছোট বেলায় সিদ্দিক আর মার“ফা এক সাথে স্কুলে যেত, গ্রামের আঁকা বাঁকা বেশ কিছু পথ পেরিয়ে। মার“ফা ছিল খুব মেধাবী ছাত্রী। সিদ্দিকের বাড়ি থেকে কিছু দূরে মার“ফার বাড়ি। মাঝে মাঝে তার বাড়িতে সিদ্দিক যেত।
এই নিয়ে পাড়ার মানুষ নানা রকম কথা বলতো। ছোট বেলায় সব কথার অর্থ বুঝা যায় না। মার“ফার প্রতি গাঁয়ের অনেক ছেলেরই ¶োভ, তা শুধু সুন্দরী হওয়ার কারণে। সিদ্দিককে মাঝে মাঝে ওরা শাসাতো কিন্তু সিদ্দিক ভয় করতো না। তার মনের গভীরে এক প্রেমের সুরেলা বাঁশি বাজতো। মনে হতো জন্ম জন্মাš—র ধরে মার“ফা তার। এই পৃথিবীতে মার“ফার জন্মই হয়েছে সিদ্দিকের জন্য।
¶ুধায় কাতর ¯^প্নহারা সেই আহাজারী শুনে অতন্দ্রায় হেঁটে যেতো কালের বধুরা। মাঝে মাঝে মার“ফা তার মা বাবার সাথে জোছনা রাতে পদ্মা নদীর তীরে এসে দাঁড়াতো। নদীর পাশেই তাদের বাড়ি ছিল। আরো ছিল সাত পুর“ষের স্মৃতিময় ভিটে।
নদীতে জোছনা দেখার নাম করে মাঝে মাঝে মার“ফা সিদ্দিকের সাথে দেখা করতো। মার“ফা আর সিদ্দিক আ¯ে— আ¯ে— বড় হয়ে উঠছে। আগামী বছর তারা এস, এস, সি পরী¶া দিবে। পরী¶ার জন্য প্রস্তুতি চলছে। দুজন ভালো ফলাফল করবে বলে তারা বিশ্বাস করে।
সিদ্দিকের বাবা একজন কৃষক। নতুন ফসল ফলানোর চেষ্টায় মাটিকে ভেঙে আবাদের উপযোগী করে তোলেন। সিদ্দিককে নিয়ে তার অনেক বড় ¯^প্ন। তার সš—ান লেখা পড়া করে অনেক বড় হবে। মানুষকে ভালোবাসবে, দেশকে ভালোবাসবে। জীবনের কল্যাণে সিদ্দিক অনেক দূর পথ হেঁটে যাবে।
সিদ্দিকও নিজেকে দ¶ ভাবে গড়ে তুলতে চায়। মার“ফার বাবা একজন ছোট চাকুরিজীবী। একটি মাত্র মেয়ে তার। সব সময় মেয়ের লেখা পড়ার খোঁজ রাখেন। নিয়মিত স্কুলের শি¶কদের সাথে যোগাযোগ করেন। মার“ফা বরাবরই তার ক্লাসে প্রথম। সিদ্দিক কখনো দ্বিতীয় কখনো তৃতীয় হয়। আ¯ে— আ¯ে— তারা উভয়ই উপরের ক্লাসে উঠতে লাগলো। ব¶ময় সুন্দর তর“ণ তর“ণীর রূপ ধারন করলো। সোনালী শস্যের বুক ছুঁয়ে পাখিরা উড়ে গেলো। জীবনের অক্লাš— গান নিত্য নতুন জেগে উঠলো।
ফেব্র“য়ারী মাসে এস, এস, সি পরী¶া, মাত্র তিন মাস সময় আছে। স্কুলের অধিকাংশ শি¶ার্থী রীতিমত পড়াশোনা শুর“ করেছে। আষাঢ় মাস গভীর রাত। একদিন নদীতে বর্ষার গর্জন শোনা গেলো। এমন ভয়ংকর গর্জন সিদ্দিক জীবনে শোনেনি। নদীর বান দ্র“তবেগে ছুটে আসছে। সিদ্দিক তার বাবাকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। বাবাকে বললো মারূফাদের বাড়ির দিকে যেতে। অন্ধকার রাত বাতাস আর বৃষ্টি ঝরছে। মার“ফাদের বাড়িতে যাওয়ার পথ পানিতে ভরে গেছে। সিদ্দিক তার বাবাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ ভয়ংকর এক ঢেউ এসে সিদ্দিক আর তার বাবাকে পৃথক করে ফেললো।
সিদ্দিকের বাবা কোথায় ভেসে গেলেন একমাত্র নদীই বলতে পারে। সিদ্দিক ভাসতে ভাসতে এক উঁচু দ্বীপের উপর গিয়ে দাঁড়ায়। নদী তাকে ভালোবেসে দ্বীপের উপর পৌঁছে দিয়েছে। গভীর রাত্রে অনেকেই এই দ্বীপে এসে আশ্রয় নিয়েছে। সিদ্দিক তার বাবা মা, ভাই বোন কারো কোন খোঁজ জানে না।
বাবাকে তো এই নদীর ভয়ংকর ঢেউ তার সামনে থেকেই ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। মার“ফা কোথায় কেমন আছে সিদ্দিক তা জানে না। কেবল নদীর বিভৎস আওয়াজ তাকে বিপন্ন করে তোলে। কোন মৃত পথিক ঘুমিয়ে আছে বটের শেকড়ে। নষ্ট প্রহর পচনের গলিত লাশ ভেসে যায় দূরে। ¶ুধার্ত অনাহারীর আহাজারী, শেয়াল কুকুরের ছিঁড়ে খাওয়া দেহ। নিখোঁজ পাখিরা আর নীড়ে ফিরেনি।
জীবনের ক্লাš— গানে এই নিসর্গ বিরাণ ভূমিতে মার“ফার কথা তার মনে পড়ে। অসহ দহন, ভোরের প্রহরে জেগে উঠেছে তার অ¯ি—ত্বের ভেতর দূর্ভি¶ের ছবি। এই বিষণœ মহামারি আতংকভরা জাতি। নিত্য জন্ম মৃত্যু জ্বলš— শিখায় কালের ধ্বনি শোনে দূর লোকালয় থেকে। বিদীর্ণ জ্বালা ভয়ার্ত দুঃসময়ে এক কালো নির্মম সকাল উঠেছে জেগে। সিদ্দিক দ্বীপ থেকে দূরে তাকালো। কোথাও কোন গ্রাম চোখে পড়লো না। শুধু ধু-ধু শূন্য।
সিদ্দিক মনে মনে ভাবে বর্ষার এই ভয়ংকর দাপটে বাবা, মা ভাই বোন কেউ হয়তো বেঁচে নেই। থাকলেও আমার মতো নদীর পানি ভালোবেসে হয়তো তাদেরকে কোন দ্বীপে পৌঁছে দিয়েছে। মার“ফা হয়তো তার পরিবার নিয়ে দূরে কোথাও ভেসে গেছে। ছায়াহীন বৃ¶ের নীচে মানুষের এক দীর্ঘ রাত কেটে যাচ্ছে। ঘুমহীন জীবনের চোখ উলঙ্গ মানুষের মতো হাহাকারে কাঁদে। সিদ্দিক ভাবে আলাদা আলাদা পথে আমরা সবাই হারিয়ে গেলাম। ভাঙনের গান র“দ্ধ করে দিলো আমাদের জীবন।
কোথায় মার“ফা কোথায় আমি আমরা কেউ কারো খবর জানি না। শুধু নদী জানে আমাদের ঠিকানা। এভাবে দিন যায় রাত যায়। সিদ্দিক ঘুমায় আবার জেগে ওঠে। কখনো কখনো নদীর তীরে বসে ভালোবাসার সুরেলা বাঁশি বাজায়। যে বাঁশির সুরে একদিন মার“ফা ছুটে আসতো নদীর তীরে। সেই প্রাচীন ব্যথিত জীবনের কান্না, অমীমাংসিত ¶োভ, দহন বিষে ভ্রষ্ট আঁধারের মতো সিদ্দিককে কাঁদায়। জীর্ণ কৃষকের বুকে জ্বলে শানিত আগুন। ¶ুধার অনাহারী পেট ছিঁড়ে ফেলে ঘাতকের অস্ত্র। সিদ্দিক চেয়ে থাকে নদীর পানে।
কখন ফিরে আসবে তার আপন জনেরা। কবে তার ভালোবাসার বাঁশি নতুন করে সুর ফিরে পাবে। এভাবে মাস যায়, বছর যায়। প্রায় এক যুগ পরে হঠাৎ একদিন সিদ্দিকের বাঁশির সুরে নদীর ঘাটে একটি নৌকা দাঁড়ায়।
নৌকা থেকে নেমে একজন মহিলা ধীরে ধীরে সিদ্দিকের দিকে আসছে। সিদ্দিকের বাঁশির সুর তার ঠিকানা। বহুদিন পরে সিদ্দিকের বাঁশির সুর তার কানে গিয়ে বিঁধেছে। জীবনের ভালোবাসা গুলো শস্য বীজের মতো অঙ্কুরিত হচ্ছে অতীত স্মৃতির গন্ধে। পুরানো দিনের কথা তার মনে পড়েছে। সিদ্দিক চেয়ে দেখে এ যে মার“ফা! দুর্যোগ অন্ধকার ভাঙা সেই পুরাতন পরিচিত মুখ। যে কঠিন তিমিরে হারিয়ে গিয়েছিল। সিদ্দিকের ক্লাš— মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। প্রিয়তমার রঙিন বিষণœ চোখ দেখে, দুঃখের রঙ দিয়ে, সিদ্দিক যে ভালোবাসা একদিন এঁকেছিল তার দেহের ছোট্ট ঘরে। অনেক ¯^প্ন দিয়ে কষ্ট দিয়ে নির্মাণ করেছিল সুন্দর একটি ছবি। সে আজ বহু বছর পর তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
যেন হৃদয়ের মর্মমূলে আঁকড়ে ধরেছে নতুন শেকড়। দুর্যোগ দিনে হারিয়ে যাওয়া অনাহার পীড়িত সেই কিশোরী হেঁটে এসেছে তার ঠিকানার পথে। নির্জন এই নদীর তীরে জীবনকে ভালোবেসে জীবন কথা বলে। সরল ¯^প্নের সংসার জাগে সিদ্দিকের মনে। দেহের ভেতরে শীতল আশা। শেষ বিকেলের তমসা ঝরে পড়েছে সবুজ মাটির বুকে। দিনের রোদ ঝরে ঝরে সন্ধ্যা নেমে আসছে আঁধারের খোঁজে। সিদ্দিক আর মার“ফা দাঁড়িয়ে আছে অনুকুল বিশ্বাসী জীবনের বেদনায়।
হঠাৎ একটি কিশোর আর একটি মাঝ বয়সী লোক নৌকা থেকে নেমে হাঁটতে হাঁটতে মার“ফার কাছে এসে দাঁড়ালো। মার“ফা বললো, এই কিশোর আমার সš—ান। আমার ¯^ামী ব্যবসা করে গঞ্জের নতুন বাজারে। সময় পেলে তুমি আমাদের বাড়িতে এসো। কথাগুলো বলে মার“ফা তার ¯^ামী সš—ানকে নিয়ে নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা নৌকাটির দিকে হাঁটতে থাকলে সিদ্দিকের বুকে নিঃশব্দ মৃত্যুর নীরব ¶ত বি¶ত বেদনা কেঁদে উঠলো।
তার ক্লাš— বাঁশী থেমে গেলো। ¯ে^চ্ছাদহনে নিরূপায় মাঝি নদীর পথ হারালো। বিশাল পৃথিবীর অ¶ম বেদনা তার বুকে এসে বিঁধলো। পরাজিত ব্যর্থ দেহে রাতের আঁধার নেমে এলো। গানির স্পর্শে কর“ণার চাঁদ মেঘে ঢেকে গেলো।
মনে হয় অনিদ্রার শোকে পৃথিবী জেগে আছে। এই মাটি শ্যামলিমা বালুর চর পেরিয়ে উদাসী রাখাল বাঁশি হাতে আঁধারে পথে হাঁটতে হাঁটতে ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে। জীবনের শেষ সুরেলা বাঁশি তার হৃদয়ের গভীরে ক্লাš— সুর তুলেছে এক অচিন জগতের খোঁজে...।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রিয়ম
অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে , কিন্তু বানান সমস্যা .........................|
আহমেদ সাবের
দু'জন কিশোর কিশোরীর প্রেম ও বিচ্ছেদের সর্বকালীন গল্প। নদীর প্লাবন তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। প্রকৃতি তাদেরকে কাছে আনে অনেক বছর পর। ততদিনে কিশোরী এক সন্তানের মা। কিশোরের হারিয়ে যাওয়া বছরগুলো নিয়ে কিছু প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। কাব্যিক গল্প। ভালো লাগলো।
তাপসকিরণ রায়
বেশ কিছু শব্দ পড়তে গিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে,অক্ষরগুলি তার স্পষ্টতা হারিয়েছে।দু এক জাগায় ঘটনার ধারাবাহিকতা হারিয়েছে।কিন্তু তবু বলব--গল্পটি খুব ভালো,এর কাব্যিক ভাবনা প্রশংসনীয়—অনেকটা গদ্য কবিতার মত। লেখকের কলমে ধার আছে—আগে গিয়ে এটা আবশ্যই কাজে আসবে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।