বাস ছুটে চলেছে সেই সাথে দৃশ্যমান গাছের সারি । মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে নদী কিংবা খাল , যার বেশির ভাগই শুকনো প্রায় কোনরকমে বেঁচে আছে । নদীগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হৃদয়ের এক গভীর ক্ষতে ঘা লাগে তৃষার । তার জীবনটার সাথে কি আশ্চর্য রকমের মিল এই নদীগুলোর ! ছুটন্ত বাস পিছে ফেলে যাচ্ছে কোন কোন সবুজ প্রান্তর । তৃষা ও তার জীবনের সবুজ সতেজ প্রাণ চঞ্চল সময়টাকে সেই কবে ফেলে এসেছে । সেগুলো এখন শুধুই স্মৃতি । বাবা কেন যে ওর নাম রেখেছিল তৃষা । জীবনটা তার তৃষা নিয়ে কেটে গেল । বুকের ভীতর জমতে থাকে নানা ক্ষোভ অভিমান ।
আজ প্রায় চার বছর পর ঢাকা যাচ্ছে তৃষা । এই নোংরা শহরের নিষ্ঠুর মানুষগুলোর কাছে আর কোনদিন ফিরবে না বলে যে পণ সে করেছিল আজ তা ভাঙ্গতে যাচ্ছে । খুব সহজে টলানো যাবে এমন মেয়ে তৃষা নয় । চার বছর বুকে পাথর বেঁধে নিজের কাছে করা পণ সে রক্ষা করেছে । তবে নিয়তির নির্মম পরিহাস , পণ তাকে ভাঙ্গতেই হল । গত পরশু হঠাৎ তৃষার নাম্বারে একটি কল এসেছিল , শিশির খুব অসুস্থ -হয়তো শেষ বিদায়ের ঘণ্টা ধ্বনিও খুব শিগ্রহি বাজবে । এই শেষ বেলাতে শিশির একবার শুধু তৃষার সাথে দেখা করতে চায় । প্রথমে ভেবেছিল যাবে না সে , শিশিরের অসুস্থতাতে তার কি যায় আসে । কিন্তু নানা কাজের ফাঁকে শুধুই শিশিরের স্মৃতি এসে ধরা দিয়েছে মনে । এই তো সেই শিশির যার পুরো দেহাববয় এখনো বন্ধ চোখের পাতায় ফুটিয়ে তুলতে পারে । যে দেহের ঘ্রান এক সময় মাতাল করেছে তৃষাকে সেই দেহ এখন নিশ্চল প্রায় জানার পর ও অভিমানের পাথর গলবে না , এমন সুকঠিন পাথর হয়তো কারো হৃদয়েই থাকে না ।
শিশিরের সাথে তৃষার পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়ে , দুজনই ইতিহাসে পড়তো । শিশির এক বছরের সিনিয়র । পরিচয় হয়েছিল নোট নেওয়ার প্রয়োজনে কিন্তু এক সময়ে নোট বিনিময় করতে করতে হৃদয় বিনিময় ও হয়ে গিয়েছে । তৃষা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান । অতি আদরে বড় হওয়া তৃষার একাডেমীক রেজাল্ট খুবই ভালো হলেও পৃথিবীর রুঢ় বাস্তবতার চ্যাপ্টারটা তার একেবারেই পড়া হয়নি । মফঃস্বলে বড় হওয়া তৃষা ঢাকা শহর চিনিছে শিশিরের মোটর সাইকেলের পিছের সিটে বসে । শিশিরের বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরেই । বাবা মায়ের সপ্তম সন্তানের একেবারে শেষের সন্তান সে। বাবা মা এতগুলো সন্তান মানুষ করতে যেয়ে ছোট সন্তানের প্রতি খুব বেশি মনোযোগ দিতে পারেনি । শিশির বেড়ে উঠেছে নিজের মত করে , অনেকটা বাউন্ডুলে স্বভাবের হয়ে। মেয়েরা আবার এসব বাউন্ডুলে স্বভাবের ছেলেদের প্রেমে ছটপট পড়ে যায় । তৃষাও সেই সব মেয়েদের একজন । শিশিরের প্রেমে পড়ে তৃষার শুধুই মনে হয়েছে ‘আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!’ কিন্তু এই আনন্দ বেশিদিন থাকেনি । আকাশ বাতাস ভারি হয়েছে বিষাদের কালো থাবায় ।
তৃষা শিশিরের পরিচয়ের প্রথম বছরের মাথায় বিয়ে করেছিল তারা । অবশ্যয়ই বাবা মায়ের নিষেধ অমান্য করে , বন্ধুদের সহায়তায় পালিয়ে । তৃষার বাবা মা এ ঘটনায় ভীষণভাবে মুষড়ে পড়লেন এবং শুধু এ কথাই আওড়াতে থাকলেন – এতো আদর , ভালবাসার এই প্রতিদান দিল মেয়েটা । শিশিরের বাবা মা বিয়েতে রাজী না থাকলেও ছেলে আর ছেলের বউকে বাড়ি থেকে বের করে দেন নি। এরপর শুরু হয় শিশির তৃষার নতুন জীবন ।
বাস চলতে চলতে হঠাৎ ব্রেক কষায় তৃষা খানিকটা সামনে ঝুঁকে পড়ে । একটা মাইক্রোবাসকে সাইড দিতে যেয়েই বাসটা প্রায় উলটে যাচ্ছিল ।এই মুহূর্তে কি ঘটতে পারতো ভেবে তৃষার বুকের ধুকধুকানি বাড়তে থাকে । কি যে আদ্ভুত মানুষের এই বেঁচে থাকার আশাটা ! কয়েক বছর আগেই তো তৃষা জীবনটাকে অর্থহীন মনে করতো । কয়েকবার তো আত্মহত্যা করার কথা ও ভেবেছে । সেই তৃষা মৃত্যুকে এভাবে সামনে দেখে এমন ভয় পেয়েছে । তৃষার এটাও মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে যদি ওর কিছু একটা হয়ে যেত তাহলে হাসপাতালে প্রতীক্ষারত শিশিরের সাথে তার আর এ জীবনে দেখা হতো না । আবার ভাবে শিশির কি সত্যি তার জন্য প্রতীক্ষা করছে ? বিয়ের পর প্রথম দিকে শিশির সারাক্ষণই প্রায় ঘরে থাকতো । নতুন বউয়ের আঁচলের ছায়াতে এক পরম তৃপ্তি পেত ।তারপর শিশিরের বাউন্ডুলে মন বিদ্রোহ করতে থাকে। শিশির পুরানো বন্ধু আড্ডা মিস করতে থাকে । তাছাড়া বাড়িতে বাড়িতে বাবা মা ভাই বোনদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর তাগাদা তাকে বাইরেমুখি হতে বাধ্য করে । সকাল দশটা থেকে রাত এগারোটা সময় পর্যন্ত শিশিরের আর দেখা পাওয়া যায় না । অন্যদিকে তৃষার জীবনে শুরু হয় সুগৃহিণী হওয়ার পরীক্ষা । যে মেয়ে কোনদিন ডিম ভেজে খায়নি সে প্রতিদিন এক ডজন মানুষের রান্না করা শুরু করে । প্রতিদিন খাবার পুড়ে যায় অথবা লবণ ,ঝাল , মসলা কম হতেই থাকে । আর শুনতে হয় শ্বশুর বাড়ির লোকদের গালমন্দ । ‘তুমি কি প্রেম করে বিয়ে করাটা ছাড়া আর কিছুই পারো না’ এই প্রশ্নটা তাকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন সময়ে করেছে । শিশিরের অন্য ভাইয়েরা বলেছে তারা আর শিশির আর শিশিরের বউকে খাওয়াতে পারবে না । ‘বসে বসে খেলে রাজার গোলাও একদিন শুন্য হয়ে যায় বুঝলে ছোট বউ’ কে যেন একদিন বললেন । যদিও তৃষা বসে বসে খায় না সে প্রতিদিন কাজ করে চলেছে – রান্না করা , বাসন ধোয়া, ঘর মোছা কি করছে না সে । এভাবে প্রেম করে বেকার ছেলেকে বিয়ে করার প্রায়শ্চিত্র সে করেছে । ঘরের কাজ করতে করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে যেতে পারেনি। পরীক্ষার ফিস যোগাড় করতে বিভিন্ন বন্ধুদের কাছে হাত পাততে হয়েছে । আজ এসব কথা মনে পড়ে চোখ ভিজে আসে তৃষার ।
বাস ঢাকা শহরে ঢুকে পড়েছে । সূর্যের আলো নিভু নিভু প্রায় । আর কিছুক্ষণ পরই নগরী সাজবে কৃত্রিম আলোতে । তৃষার সবচেয়ে ভয় পায় এই রাতের ঢাকাকে । এমনই এক আলোকসজ্জল রাতের ঢাকা কেড়ে নিয়েছে তার সব । আজ আবার সেই রাতের ঢাকার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে সে । জানেনা আজও কিছু হারাতে হবে কিনা । আজ তৃষা রাতকে ভয় পাচ্ছে কিন্তু একসময়ে তো সে রাতের জন্যই অপেক্ষা করতো। বাড়ির সবাই যখন ঘুমিয়ে শিশির ফিরতো তখন দুইটা টিউশনি ও বন্ধুদের সাথে আড্ডা শেষ করে । সমস্ত শরীরে তামাক পোড়া ঝাঁঝালো গন্ধ নিয়ে শিশির ঢুকতো শিশির ও তৃষার জন্য বরাদ্ধ চিলেকোঠার ঘরটিতে । তৃষার সারাদিনের অমানসিক পরিশ্রমের পর শান্তির পরশ বোলাতো শিশিরের উপস্থিতি । যদিও সিগারেট খাওয়া বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করা নিয়ে ছোটখাটো ঝগড়া প্রতিদিনই হতো তারপর ও শিশিরের বাঁধভাঙ্গা আদর সব ভুলিয়ে দিত তৃষাকে । তারপর তৃষা শিশিরের জীবনে এলো সেইক্ষণ - তারা দুজন সৃষ্টি সুখের আনন্দে উদ্বেলিত হল । কিন্তু তৃষার মা হওয়ার খবরে সকলের মুখ ঢেকে গেল অন্ধকারে । বড় ভাই বললেন ‘ বাচ্চা হতে কত খরচ লাগে সে খেয়াল আছে শিশিরের ? নিজের চলাফেরার খরচ জোগাতে পারে না , সে কিনা বাবা হতে চায় ।’ শাশুড়ি তৃষাকে ডেকে বললেন ‘ ভারি বেহায়া মেয়েতো তুমি ,একেতো বাপ মা ছাড়া বিয়ে করেছো তারপর এখন পেট বাঁধিয়ে বসে আছো ।’
এরপর শুরু হল তৃষার জীবনের আরেক অধ্যায় । বাউন্ডুলে আড্ডা পাগল শিশির চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে ও কোন চাকরি নামক সোনার হরিণের দেখা পায়নি । যে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও হাজার হাজার যুবক চাকরি পায় না সে দেশে শিশিরের মত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনভিজ্ঞ যুবককে কে চাকরি দিবে ? শিশির তার টিউশনির সংখ্যা বাড়িয়ে দেয় । এতেও অর্থ সঙ্কুলান না হওয়ায় তৃষাও টিউশনি করতে বাধ্য হয় । প্রতিদিনের সংসারের কাজ , টিউশনি তৃষাকে অসুস্থ করে দেয় । বিশ্রাম নিতে গেলেই কারো না কারো টিপ্পনী ‘নবাবজাদী বিছানায় আরাম করছেন , এতো কাজ কি ওর বাপের বাড়ি থেকে পাঠানো বান্দিরা করে দেবে ?’ এভাবেই চলছিল জীবন ধুকেধুকে । এরপর তৃষা শিশিরের জীবনে আবির্ভাব ঘটে খল নায়িকা নার্গিসের । সে তছনছ করে দিয়ে যায় তৃষা শিশিরের সংসার ।
স্টেশনে এসে পৌঁছেছে বাস । এখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে তৃষাকে। চারিদিকের শব্দদূষণ আর কার্বন ডাই অক্সসাইডের আধিক্য এতদিন গ্রামের বাচ্চাদের পড়ান তৃষাকে বিপর্যস্ত করে তোলে । বিপর্যস্তটা কোনমতে কাটিয়ে একটা ট্যাক্সি নেয় সে । হাসপাতালে কি সবার সাথে দেখা হবে ওর ? কেমন ব্যবহার করবে সবাই ? নার্গিস নিশ্চয় থাকবে । নার্গিস আর শিশিরের কোন বাচ্চা আছে কিনা কে জানে ? থাকাটাইতো স্বাভাবিক ,অনেকদিনই তো হল । তৃষা ট্যাক্সিতে বসে হাসপাতালের দৃশ্য ভাবতে থাকে ।
নার্গিস শিশিরের মামাতো বোন । তৃষা তার মেঝ জায়ের মুখে শুনেছে শাশুড়ির নাকি নার্গিসের সাথে শিশিরের বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল । শিশিরের সাথে নার্গিসের নাকি বেশ ঘনিষ্ঠতা ও ছিল । দুই পরিবারের সবাই নাকি শিশিরের পড়া শেষ হলেই নার্গিসের সাথে বিয়েটা সেরে ফেলবে ভেবেছিল । শিশির অবশ্য তৃষাকে বলেছে নার্গিসকে সে ছোট বোন ছাড়া আর কিছুই ভাবে না । তৃষার প্রেগনান্সির তখন তিন মাস চলে তখন নার্গিসকে দেখার সৌভাগ্য অথবা বলা যায় দুর্ভাগ্য ঘটে তৃষার । তৃষা মনে মনে ভাবে মেয়েটাতো দেখতে বেশ সুন্দরী , এই মেয়েকে বিয়ে না করে শিশির ওকে বিয়ে করেছে ভেবে শিশিরের প্রতি এক ধরনের মমত্ববোধ জাগে তার মনে। নার্গিস প্রথমদিনই তৃষাকে বলেছিল কি করে শিশির ভাইকে পটালে বলতো, ওতো কোন মেয়ের দিকে ফিরেও দেখে না । তৃষা মনে মনে ভেবেছিল কেন তুমি কি পটাতে যেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলে যদিও মুখে কিছুই বলেনি । তারপর মেয়েটা একে একে এমন সব কাণ্ড করতে লাগলো যা দেখে তৃষা ভীষণ ক্ষুব্ধ হতে লাগলো এবং রাতের বেলা এই ঘটনার রেশ ধরে শিশিরের সাথে ঝগড়া । শিশির বাড়িতে আসলেই নার্গিস শরবত নিয়ে হাজির হত , তারপর দুজনে গল্প করতে করতে টিভি দেখা শুরু করতো । কিছুদিন পর দেখা গেল শিশির সন্ধ্যার পর পরই ঘরে ফিরতে শুরু করেছে ।শিশিরের জীবনে নার্গিসের প্রভাব দেখে শাশুড়ির খুশি খুশি চেহারা কিন্তু তৃষার বুকে ঈর্ষার আগুন দাউদাউ । আর ফলাফল শিশিরের সাথে তৃষার দূরত্ব । সেই দূরত্ব শেষ পর্যন্ত দুজনকে দুপথের সঙ্গী করেছে ।
তৃষা হাসপাতালের ৫১৫ নাম্বারটা খুঁজছে এমন সময় পরিচিত কণ্ঠস্বর ‘ভাবি’ । তৃষা ঘুরে তাকায় নার্গিস হাসিমুখে তাকিয়ে আছে যেন তৃষাকে দেখে কতই না আনন্দিত হয়েছে । কেমন আছো ভাবি ? তৃষা সংক্ষেপে বলল ভালো । সামনেই শাশুড়ি বসে আছে সাদা শাড়ি পরা চেহারাও ভেঙ্গে গিয়েছে । তৃষাকে দেখে শাশুড়ি বলল ‘ এতদিন কোথায় ছিলে অনেক খুঁজেছি তোমাকে ।’ তৃষার কাছে সব কিছুই খুব ফালতু মনে হচ্ছে । এরা এমন নাটক শুরু করেছে কেন ? ইনিইতো সেই মহিলা যার ফরমায়েশ পূরণ করতে তৃষা তার সন্তান হারায় আর এই সেই মেয়ে যে তার স্বামীকে তার জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে । আজ এমন ভাব দেখাচ্ছে যেন কিছুই ঘটেনি , বাপের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এই মাত্র তৃষা ঘরে ফিরল ।
তৃষার সেদিনের কথা মনে পড়ছে।শরীরটা ভালো ছিল না সেদিন , রাতে শিশিরের সাথে ঝগড়া হয়েছিল । শাশুড়ি বলেছিলেন,নার্গিসের জন্য আজ ভালো কিছু রান্না কর এবং বিশাল এক রান্নার মেনু হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন । রান্না করার মাঝেই তৃষা মাথা ঘুরে পড়ে যায় তারপর হাসপাতালে থাকতে হল দুদিন কিন্তু বাচ্চাটাকে বাঁচানো গেল না । প্রথমদিন শিশির হাসপাতালে থাকলেও দ্বিতীয় দিন সারাদিনে শিশির হাসপাতালে আসেনি । বাচ্চাটা মারা গিয়েছে শুনে তৃষার পাগল প্রায় অবস্থা । সারাদিন তৃষার চোখ শুধু শিশিরকেই খুঁজেছিল। এ ঘটনার কথা জানতে পেরে তৃষার বাবা মা এসেছিল দেখতে।হাসপাতালের সমস্ত টাকা তৃষার বাবা শোধ করে দিয়েছিলেন । তারপর হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দিয়েছিল তৃষাকে । তখন রাত আটটা ।কেউ নিতে আসেনি তাই তৃষা কাউকে না জানিয়ে বাসায় ফিরে আসে।নিজের রুমে ঢুকে পাথরের মূর্তি বনে যায় সে , এই দৃশ্য দেখবে কোনদিন ভাবেনি । তৃষার চোখের সামনে শিশির শুয়ে আছে আর নার্গিস মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । তৃষা চিৎকার করে উঠেছিল কি হচ্ছে এখানে ? নার্গিস ও শিশির দুজনই চমকে যায় ‘তুমি এখানে কিভাবে ?’ তৃষা শুধু বলেছিল ‘আমাকে আশা করনি না ? বেশ ভালো থাকো তোমরা আমি চলে যাচ্ছি ।’ শিশির ও শিশিরের পরিবারের কেউ তাকে সেদিন আটকায়নি । সেই রাতে শিশিরের সাথে তৃষার শেষ দেখা ।
শিশিরকে ICU তে রাখা হয়েছে । জানালা দিয়ে তৃষা শিশিরের মুখ দেখার চেষ্টা করছে। নার্গিস তৃষার কাঁধে হাত রেখে বলল ‘ ভাবি তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল , জানো এ কদিন আমি একটুও ঘুমাতে পারি নি ; সব সময় মনে হয়েছে শিশির ভাইয়ের এ অবস্থার জন্য আমিই দায়ী ।এটা সত্য যে আমি ভীষণভাবে শিশির ভাইকে চাইতাম তবে ও কখনোই আমাকে সে চোখে দেখেনি । ও সব সময় আমাকে ছোট বোন ভেবেছে আর সারা জীবনে ভালো বেসেছে শুধু তোমাকে। ’ নার্গিসের কথা শুনে তৃষা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে । নার্গিস বলতে থাকে ‘ সে রাতে শিশির ভাই তোমার চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে না পেরে আমার কাছে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে , আমি ওকে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলাম । এটা ও সত্য যে তুমি চলে যাওয়াতে আমি ও ফুফু খুশিই হয়েছিলাম কিন্তু ভাইয়া বাড়ি ছেড়ে কোথায় হারিয়ে গেল । পরে শুনেছি ও নাকি সিলেট থাকে । আমি তুমি চলে যাওয়ার পরের বছরই বিয়ে করেছি। ভাইয়া ঢাকা ফিরেছে ভীষণ অসুস্থ হয়ে । আমিও তোমার মত অসুস্থতার খবর শুনেই দেখতে এসেছি।ভাইয়াই আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে বলল তোমাকে খবর দিতে ।আমাদের কাছেতো তোমার ঠিকানা ছিল না ভাইয়ার কাছে ঠিকই তোমার ঠিকানা ছিল ।’ তৃষা নার্গিসের সাথে কোন কথা না বলে হাসপাতালের গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে । সমস্ত আকাশ জুড়ে তারার হাতছানি । আজকের রাতের আকাশের সাথে সেই যেদিন তৃষা শিশির বিয়ে করল সেই রাতের আকাশের কোন তফাৎ নেই । কিন্তু তাদের জীবনে ঘটে গেছে কত পরিবর্তন ।
০৫ অক্টোবর - ২০১২
গল্প/কবিতা:
১৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪