আমার ইচ্ছেরা

ইচ্ছা (জুলাই ২০১৩)

নাজনীন পলি
  • ২১
  • ৬৩
ভ্যাপসা গরম পড়েছে । নীল আকাশটাকে কাল মেঘ এমনভাবে ঢেকে ফেলেছে যেন ফাঁসির আসামি। নিজেকে ও আমার ফাঁসির আসামি মনে হতে থাকে । কেমন যেন দমবন্ধ ভাব শরীরে । বাবা সামনের রুমে বসে আছে ।মাথার মধ্যে নানান স্মৃতি ঘোরপাক খাচ্ছে। এতক্ষণে খেয়াল হল বাবা সেই কখন থেকে বসে আছে, তাকে এ বাড়ির কেউ এক কাপ চা পর্যন্ত দেয়নি ।এ কথা ভেবেই হাসি পেয়ে যায় । কে বাবাকে চা দেবে – শাশুড়ি ? শাশুড়িতো আমি এ বাড়িতে আসার পর থেকে রান্নাই ভুলে গিয়েছে , রান্না ভুলে গিয়েছেন শব্দটা হয়তো ভুল বললাম বরং বলা যেতে পারে রাঁধুনি থেকে তিনি রান্না সমালোচক হয়েছেন। আর দেবরের বউ লাইজু সে তো এখনো ঘুম থেকেই ওঠেনি । হঠাৎ বাবার ডাক কানে এল ,মা হৃদি তাড়াতাড়ি কর; না হলে তো আজ আর নড়াইলে যাওয়া হবে না । আমার ধ্যান ভাঙ্গে কি করছি এসব! আজকের দিনে কার জন্য আমি নাস্তা বানাচ্ছি, কেউতো বানাতে বলেনি । তবে কি অভ্যাস? সাত বছর ধরে যে অভস্থতা তা এক মুহূর্তে ছাড়ব কি করে ?

আমার বিয়ে হয় অনেকটা ‘উঠ ছুড়ি তোর বিয়ে’ মত ।মাত্র এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি । ছোট ফুফার বন্ধুর ছেলে কোথায় যেন আমাকে দেখে পছন্দ করেছে । ছোট ফুফা বাবাকে খুব করে বলে এমন ছেলে পাবে না এমবিএ পাশ , প্রাইভেট ব্যাঙ্কে চাকরি , ঢাকাতে নিজেদের বাড়ি সব মিলিয়ে পাত্র ফাস্ট ক্লাস । তারপরও বাবা দোটানায় ছিল , চাচা ফুফু বিশেষ করে দাদির কথাতে বাবা রাজি হয়। বাবার কথার অবাধ্য আমি কখনও হইনি । ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছি আমার মায়ের মৃত্যুর পর শুধু আমার কথা ভেবেই বাবা আবার বিয়ে করেন নি । বাবার এতো বড় সাক্রিফাইজ সত্ত্বেও আমি বাবার অবাধ্য হবো কি করে । বাবা বলেছে তোমাকে ভাল রেজাল্ট করতেই হবে । আমি যেন গর্ব করে বলতে পারি এই যে দেখছ হৃদিতা ইসলাম , এ আমার মেয়ে । আমি বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে দিন রাত পড়েছি । ভেবেছি একদিন অনেক বড় অফিসার হব । আমার অফিসার হওয়ার স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে বিয়ের কিছুকাল পরেই । বাবা যদিও আমার স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়িকে বারবার অনুরোধ করেছিলন যেন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি কিন্তু নিজের পায়ে কুড়ালটা আমি নিজেই মেরেছিলাম ।

বিয়ের পর নতুন জীবন শুরু হল আদর্শ স্ত্রী , সুগৃহিণী হওয়ার সাধনা । বাবার আদর্শ কন্যা থেকে হয়ে গেলাম স্বামীর আদর্শ স্ত্রী । বিয়ের আগে কখনও কোন ছেলের দিকে চোখ তুলে তাকাই নি পর্যন্ত। আমার স্বামীই আমার জীবনের প্রথম প্রেমিক । তার ভালবাসা পেয়ে তাই গলতে শুরু করলাম মোমের মত । অনভিজ্ঞ আমি প্রথম বছরেই কন্যা সন্তানের জননী হলাম । যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম কিন্তু স্ত্রী ও জননী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে করতে অফিসার হওয়ার স্বপ্নকে দিতে হল জলাঞ্জলি । এ বাড়ির সমস্ত দায়িত্ব আমার কাঁধে আর ক্ষমতা আমি ছাড়া বাকি সবার কাছে । আমার মেয়ের জন্মের কিছুদিন পর জানতে পারি আমার স্বামী এর আগেও একবার বিয়ে করেছিল । এটা জানার পর নিজেকে এতো অসহায় মনে হয়েছিল সেই সাথে আমার বাবা ও ফুফুর উপর হয়েছিল রাগ । স্বামীর কাছে যখন জবাবদিহি চেয়েছি বিনিময়ে পেয়েছি স্বামীর বলিষ্ঠ হাতের মার । এ ঘটনা জানার পর বাবার হার্ট অ্যাটাক হল । ডাক্তার বললেন টেনশন বাবার প্রাণ নাশক হতে পারে । আমার বাবার প্রাণের মূল্য আমি দিলাম , আমার প্রতারক স্বামীকে তালাক না দিয়ে একই ছাদের নিচে বাস করতে থাকলাম ।

এরপর আমার মেয়ে বড় হতে লাগলো । ওকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চাইলাম । দিনের পর দিন স্বামী আমার মাতাল হয়ে ফিরেছে কোন কোন দিন ফেরেয়নি । লোকে মুখে শুনেছি প্রতিনিয়ত সে তার শয্যাসঙ্গিনী পালটে চলেছে । ঘরে শাশুড়ি সমস্ত দোষ আমার কাঁধে চেপেছে , কেন তুমি স্বামীকে ধরে রাখতে পারো না ? আমি এক দুর্বিষহ জীবন বয়ে বেড়িয়েছি । শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার । এই অন্ধকারকেই আমি মেনে নিয়েছিলাম ।কিন্তু পরশুদিনের ঘটনা আমাকে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করল। আমার কাজের মেয়ে জমিলা বয়স বড়জোর বার তের হবে । রাতে জমিলার চিৎকার শুনে দৌড়ে গেলাম রান্না ঘরে যেয়ে দেখলাম সেখানে আমার স্বামী অর্ধ মাতাল অবস্থায় ---। জানিনা কোথা থেকে এতো শক্তি পেলাম , আমার সমস্ত শক্তি জড় করে স্বামীর গালে এক চড় বসালাম । আমার হাতের আঙ্গুলের ছাপ বসে গেলো তার গালে । ঘটনার আকস্মিকতায় আমার স্বামী আমার দিকে নিস্পলক চেয়ে রইলো । আমি আমার নিজের ইচ্ছাই প্রথম কোন সিদ্ধান্ত নিলাম । আমি এ বাড়িতে আর থাকবনা । আমি তালাক দিব ।

আজ আমি সাত বছরের সাজানো সংসারের মায়া, অভস্থতা ছেড়ে চলে এসেছি । বাসে যাচ্ছি আমার জন্মভূমি নড়াইলের দিকে । নিজেকে খুব হালকা লাগছে , স্বাধীন লাগছে যেন কোন এক রাক্ষসপুরি থেকে স্বাধীন হয়ে যাচ্ছি নিজের দেশে আমি এক রাজকন্যা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শিউলী আক্তার সব গুলো কথাই আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়ের মনের কথা । অসাধারন গল্প ।
জায়েদ রশীদ গল্পের শুরুতে ঘটনার আকস্মিকতাটা ভাল ফুটিয়েছেন। পুরোটা জুড়েই কঠিন বাস্তবতার ঘনীভবন। স্বকীয়তা লোপ পেতে পেতে জ্বলে উঠেছে। ভাল লাগল।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন মনে হচ্ছে যেন বাস্তব! শুভেচ্ছা রইল।
মামুন ম. আজিজ নারীদের ইচ্ছে শক্তি প্রবল ..সেটা আরও শক্তিশালি করে তুলতে হবে এইভাবে..তবেই তাদের মুক্তি ....ঠিক ফুটিয়েছ
অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই ।
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ নিজেকে খুব হালকা লাগছে , স্বাধীন লাগছে যেন কোন এক রাক্ষসপুরি থেকে স্বাধীন হয়ে যাচ্ছি নিজের দেশে আমি এক রাজকন্যা।-------------এতটুকুই বলবো------দারুন!!!
অনেক ধন্যবাদ । ভবিষ্যতে ও পাঠক হিসেবে পাবো আশা করছি ।
এফ, আই , জুয়েল # অসহায়ত্ব আর বিদগ্ধ আত্মার করুন আহাজারি এতে বর্নিত হয়েছে । বাস্তবতার আলোকে অনেক জটিল ব্যপারের সহজ সমাধান এতে চলে এসেছে । ছোট হলেও অনেক মারাত্মক একটি লেখা । ধন্যবাদ ।।
জুয়েল ভাই , আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক ভালো লাগছে । শুভেচ্ছা রইল ।
Lutful Bari Panna বর্ণনাগুলো সুন্দর, আকর্ষক। যদিও ছোট, তবু মনে হচ্ছিল না গল্পটা এত ছোট। তারপরও ভাবছি আর একটু বিস্তিৃত করা যেত বোধ হয়। তবে সবচাইতে বড় কথা দারুণ লেগেছে মেয়েটার আত্মসম্মানবোধ।
পান্না ভাই , আপনার সব মন্তব্যই আমি মনযোগ দিয়ে পড়ি । এরপর থেকে গল্প বড় করার চেষ্টা থাকবে । আমার গল্পটা আসলে ছোট গল্প না , অনুগল্প হয়েছে । মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
এশরার লতিফ নিজেকে ফিরে পাবার চমৎকার গল্প। অনেক ভালো লাগলো।
ভাইয়া , আপনার সময় হয়েছে গল্প পড়ার এতেই আমি খুশি । ভাল লেগেছে জেনে আরও খুশি :D
শাহীন মাহমুদ ছোট ছোট ইচ্ছে------ জেগে উঠার গল্প ভাল লেগেছে---- গল্পকারের জন্য শুভেচ্ছা...।
ধন্যবাদ , আপনাকে ও শুভেচ্ছা ।
মোজাম্মেল কবির জেগে উঠার গল্প। খুব ভালো লাগলো...

০৫ অক্টোবর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪