এখনো আটই ফাল্গুনে

বাংলা ভাষা (ফেব্রুয়ারী ২০১৩)

নাজনীন পলি
  • ২৩
  • ৯৫
আসমানি বেগম ৭৮ বয়সেও বেশ আয়েশে আছেন । তার নাতনীর ছোট্ট মেয়ে মিতি বাড়ি মাথায় করে রাখে । সবাই যে যার মতো ব্যস্ত শুধু আসমানি বেগমের সময় অফুরন্ত । মিতি তাই ঘুরেফিরে বড়মার কাছেই আসে তার আবদারের ঝুলি নিয়ে । প্রতি দুপুরে তার ঘুমনের আগে একটাই আবদার বড়মার মুখে গল্প শুনবে । আজ আবদার মিটাতে বড়মা গল্প শুরু করলেন “ এক যে ছিল মনুষ্য রাজ্য নাম তার সোনার বাংলাদেশ । সে দেশে কৃষক- রাখাল-মাঝি-কামার-কুমার-গায়ক-লেখক সবে থাকতো যে মিলেমিশে । ছিল না কারো দুঃখ মনে , পেটে ছিল না খিদে। গোলা ভরা ধান ছিল , গোয়াল ভরা গরু , পুকুর ভরা মাছ ছিল , বনে ছিল মধু । কেউবা বাজাতো বাঁশি , কেউ গায়ত গান , কেউবা করতো নৃত্য , কেউবা লিখত পদ্য এভাবে আনন্দে কাটতো কাজের সময় ।কাজের শেষে ফিরত সবে নিজের ঘরে খেত বউয়ের হাতের রান্না করা গরম গরম ভাত । তোমার মতো খোকা খুকিকে তাদের মায়েরা শুনাত ঘুম পাড়ানি গান । সেই গান শুনতে শুনতে খোকা খুকি ঘুমতো আর স্বপ্নে যেত পরীর দেশে চলে । নতুন ধান কাঁটা হলে বসতো মেলা বট তলাতে । সেখানে থাকতো নানা রকম পিঠার সমাহার ।মা নতুন ধানে করতো মুড়ি, খই, মোয়া আরও কত কি !এভাবে হাসি আনন্দে কাটছিল যে সময় , কেউ কি পেরেছিল জানতে থাকবে না যে বেশি দিন তা আর । এই আনন্দ পুরিতে একদিন পড়লো যে নজর রাক্ষসদের। তাদের ছিল ইয়া বড় দাঁত , ধারালো নখ , আর লম্বা লেজ । গায়ে ও ছিল শক্তি ভীষণ । এক রাতের অন্ধকারে রাক্ষস করলো আক্রমন । মনুষ্য রাজ্যের মানুষেরা তো ভয়েই অস্থির । রাক্ষস তাদের ভয় দেখিয়ে রাজ্য করলো দখল । বলল আজ থেকে আমরা হলাম রাজা আর তোরা মানুষেরা সব প্রজা । কাজ করে ফসল ফলাত মানুষেরা আর সেই ফসল নিয়ে যেত রাক্ষসেরা ,করতো ভীষণ অন্যায় এমন । ভীতু মানুষেরা ভাবল ফসল গেছে যাক আমাদের আনন্দ তারা কিছুতেই নিতে পারবে না । কিন্তু মানুষেরা জানত না তলে তলে চলছিল গভীর ষড়যন্ত্র । একদিন হঠাৎ রাজা জানালো আমন্ত্রণ তার প্রজা মানুষদের । সবাই ভাবল কি ব্যাপার চলতো দেখি । সেখানে রাজা উচ্চ কণ্ঠে করলো দাবি মনুষ্যদের ভাষা নয় রাক্ষসদের ভাষাতেই সকলের বলতে হবে কথা । শুনেতো মনুষ্যরা সব অবাক ! এ কি করে সম্ভব ? আমার মায়ের ভাষা প্রানের ভাষা যা দিয়ে আমরা কথা বলি , রচি গান কবিতা গল্প সেই ভাষা করবে এরা নিষিদ্ধ । সকলে সমস্বরে বলল না । এ আমরা মানিনা । এ হতে পারে না । অনেক সহ্য করেছি আর না । রাক্ষসেরা বলল বটে এতো বড় কথা , কে আছিস ? আয় তবে দেখি কত বড় বুকের পাটা । এ কথা শুনে মায়ের অপমানের প্রতিশোধ নিতে জ্বলে উঠলো কৃষক-মাঝি-রাখাল-কামার-কুমার-গায়ক-লেখকদের তরুন ছেলে মেয়ে । তারা সবে বলল মাকে, আমায় আশীর্বাদ করো মা তোমার মুখের ভাষা বাংলাকে যেন করতে পারি রক্ষা । মা অশ্রুসিক্ত নয়নে করলো আশীর্বাদ । সেই তরুন তরুণীর সম্মিলিত কণ্ঠ যখন হল এক রাক্ষস পেল ভয় । তারা আচমকা করলো আক্রমন তাদের সেই নোংরা দাঁত–নখ-লেজসহ । রক্তে রক্তে সোনার বাংলাদেশ হল রক্তাক্ত । সেই রক্তের দাম দিয়ে মনুষ্য কিনল মায়ের ভাষা বাংলা । সেই সময়টা ছিল ফাল্গুন । তাই তো আজ ও ফাল্গুনে ফোঁটে রক্ত রাঙ্গা পলাশ । এখনো মনুষ্য দেশের মানুষেরা কেঁদে ফেরে ভুলবো না ভুলবো না বলে । প্রতি বছর আটই ফাল্গুনে সেই সব শহীদের স্মরণে আজও জানায় শ্রদ্ধা শহীদ বেদিতে ।” গল্পটা এতো মগ্ন হয়ে বলছিলেন আসমানি বেগম তাই কখন যে মিতি ঘুমিয়ে পড়েছে টের পাননি । মিতি জেগে থাকলে তার বড় মাকে জিজ্ঞেস করতো তোমার চোখে পানি কেন ?

*** এই গল্পটি আমার পাঁচ মাস বয়সী ভাগ্নি মিতিকে নিয়ে লেখা । তার যখন পাঁচ বছর বয়স হবে তখন সেও হয়তো এভাবে বড়মার কাছে গল্প শুনতে চায়বে । সবাই মিতির জন্য দোয়া করবেন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
হিমেল চৌধুরী দারুণ লিখেছেন। অনেক ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগছে , অনেক ধন্যবাদ ।
ভালো লাগেনি ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মামুন ম. আজিজ রূপকথার টোনে বাস্তব ইতিহাস...বেশ লিখেছো
ভালো লাগেনি ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মামুন ভাই , আমার লেখা পড়েছেন জেনে ভালো লাগছে আমি ব্যস্ততার কারণে কারো লেখা পড়তে পারছিনা ।
ভালো লাগেনি ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
নাইম ইসলাম অনেক সুন্দর গল্প পলি | মিতি ঘুমিয়ে পড়েছে, পড়ুক | ওর জন্য দোয়া আর আপনার জন্যও শুভকামনা ....
অনেক ধন্যবাদ ভাই , আগামী সংখ্যার লেখা পড়ার আমন্ত্রণ রইলো ।
ভালো লাগেনি ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ অসম্ভব সুন্দর লেখা । সত্যি প্রশংসনীয় । শুভেচ্ছা জেনো ।
অনেক ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
রোদের ছায়া সহজ সরল বর্ণনায় খুব সুন্দর গল্প, ভাষার জন্য মানুষের ভালবাসার প্রকাশ সুন্দর হয়েছে ।
তাপসকিরণ রায় হ্যাঁ,পড়লাম গল্পটি--তবে এত ছোট কেন ? লেখার থিমটা সুন্দর ও আলাদা ভাবে তুলে ধরেছেন।যা বলার সব কিছুই বলেছেন এটা স্বীকার করতেই হবে।রূপ কথার টানে চুপ কথা বলেছেন।খুব ভালো লেগেছে।শুভেচ্ছা রইল।
রূপ কথার টানে চুপ কথা বলেছেন - এই কথার মানে বুঝিনি । পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ
মানে ওপরে ওপরে দেখলে মনে হবে এটা নিছক একটি রূপকথার গল্প--কিন্তু আসলে তো তা নয়,আপনি বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা সে সঙ্গে বর্তমান সমস্যার কথাই রুপ কথার ছলে তুলে ধরেছেন,তাই না?
ফিদাতো মিশকা এই গল্পটি আমার পাঁচ মাস বয়সী ভাগ্নি মিতিকে নিয়ে লেখা । তার যখন পাঁচ বছর বয়স হবে তখন সেও হয়তো এভাবে বড়মার কাছে গল্প শুনতে চায়বে । সবাই মিতির জন্য দোয়া করবেন। -------------- আগে মিতির জন্য দোয়া করলাম , পড়ে গল্প নিয়ে মন্তব্য করব । ---------- এই সংখ্যায় লেখা দেই নী , শুধু মন্তব্য করব
বশির আহমেদ ছোট্ট মিতির জন্য রূপকথার মোড়কে ভাষার ইতিহাসকে সুন্দর উপস্থাপনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
আপনাকে ও অনেক শুভেচ্ছা । পড়ার জন্য ধন্যবাদ
মোহাঃ সাইদুল হক অসম্ভব ভালো লাগলো আপা আপনার গল্পটি। শুভ কামনা রইলো।
পাঠকের ভালো লেগেছে এর চেয়ে ভাললাগার বিষয় লেখকের আর কি হতে পারে !
আহমেদ সাবের আপনার কলমে যাদু আছে। এমন একটা কঠিন বিষয় নিয়ে এমন সরল করে লেখা আপনার পক্ষেই সম্ভব। আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মের মিতিরা আপনাদের লেখার মাধ্যমেই আমাদের অতীতকে জানবে, ভালবাসতে শিখবে। এমন একটা অসাধারণ লেখা উপহার দেবার জন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন আর মিতিকে অনেক আদর।
আপনার প্রশংসা পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে । পাঠকের প্রশংসা না পেলে লেখার উৎসাহ থাকে না , অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।
আহমেদ সাবের, প্রিয় অগ্রজ, আপনার উপরক্ত মন্তব্যটি আমার ধারনা সত্যি সত্যি লেখকের উৎসাহ অনেক বাড়িয়ে দেবে! আপনার জন্য শুভকামনা রইল। মিতিদের জন্য সহজ সরল ভাষায়, পলি আমাদের গৌরবময় দিনগুলির গল্প শুনাবে আই প্রার্থনা পলির জন্য। সবাই ভাল থাকুন!
প্রিয় পারভেজ , আপনাকে ধন্যবাদ ।

০৫ অক্টোবর - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্বাধীনতা”
কবিতার বিষয় "স্বাধীনতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারী,২০২৫