পড়ছে তো পড়ছেই। থামার আর নাম নিচ্ছে না। কিন্তু সবচেয়ে আজব ব্যাপারটা হচ্ছে আকাশে রোদ। এই রোদের মাঝে এরকম ঘন্টা খানেক যাবৎ বৃষ্টি হচ্ছে কথাটা ভাবা একটু অকল্পনীয়। তবুও চোখে দেখলে হয়তো সবাই বিশ্বাস করবে।
কাসের একদম শেষ বেঞ্চে বসে আছে বিপুল। ওকে সবসময় দ্য লাস্ট বেঞ্চ স্টুডেন্ট’ বলা যায়। এবার সেকেন্ড ইয়ারে। আপনি ভুল ভাবছেন। সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট মানে এটা নয় যে তিনি এবার ইন্টারমিডিয়েট এর স্টুডেন্ট যিনি এইচ.এস.সি. পরিক্ষা দিবেন। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে তিনি কাস নাইনের সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। গতবছর গনিতে ২৩ পাবার ওসিলাতেই তাকে এবারও কাস নাইনে থাকতে হয়েছে।
টিফিন টাইমে আন্টি অর্থাৎ বিপুল ভাইয়ের মা আসলেন। পাঁচ তলায় আমাদের কাসের সামনে। এসে বিপুল ভাইকে দেখে চলে যাবেন। কিন্তু যাবার আগে আমাকে ডাকলেন। আমি বিপুল ভাইয়ার সামনের বেঞ্চেই বসে ছিলাম। আমাকে ডাকলে আমি তার সামনে গিয়ে তাকে সালাম দিলাম। - আসসালামু আলাইকুম। - ওলাইকুম আসসলাম। তো বাবা তোমার নাম যেন কি? - জ্বী আন্টি! আমার নাম জয়। - আচ্ছা জয়, বিপুলের সাথে তোমার সম্পর্ক কেমন? - মাত্র এই কলেজে আসলাম। তো সবার সাথে এখনও তেমনভাবে মিশতে পারিনি। - ও আচ্ছা। জয় তোমাকে আমি বিপুলের সম্পর্কে কিছু বলতে চাচ্ছি। যদি কিছু মনে না কর আমি কি তোমাকে কথাগুলা বলতে পারি? অবশ্য কথাগুলো বিপুলের ব্যক্তিগত। আমি যখন আন্টিকে বলার জন্য অনুরোধ করলাম তিনি সবকিছুই আমাকে সবকিছুই বললেন। কথাগুলো বলতে গিয়ে তার চোখের রঙ লালচে আকৃতির হয়ে গেল আর চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু পানির ঝর্ণা নেমে আসল।
কাসের বেল বেজে উঠায় আন্টি থমকে গেল। আমি কাসরুমে প্রবেশ করার পর শেষের বেঞ্চে গিয়ে বিপুল ভাইয়ার পাশে বসলাম। প্রথমে তিনি আমাকে দেখে একটু হতবিম্ব হলেন। কারনটাও আমি বুঝতে পেরেছিলাম। এর কারণ হচ্ছে তর পাশে কেউই বসে না।
তার সাথে আমি অনেক কথোপকথন করলাম। কথার এক পর্যায়ে: - ভাইয়া, ঐশী কে? - কোন ঐশী? - কাস টেন, বিজনেস স্টাডিস। - কথাগুলা তোকে কে বলেছে? - যেই বলুক। মেয়েটা কে? - বুঝেছি। আমার মা’ও না! একদম কোনো রূপেই চুপ করে থাকতে পারে না। একটু মাত্রাতিরিক্ত চিন্তাই করেন তিনি আমাকে নিয়ে। ঐশী হচ্ছে আমার এককালের বেস্ট ফ্রেন্ড। - এককালের বেস্ট ফ্রেন্ড মানে? আন্টি কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বিপুল ভাইয়ার জীবন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে চাইলাম। তিনি আমাকে সবকিছুই বলতে লাগলেন। আন্টি আমায় বলেছিলেন, বিপুল ঐশী নামের এক মেয়েকে পছন্দ করত। গতবছর শেষের দিকে ঐশী কথাটা জানতে পারে। আর এজন্য বিপুলের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। তাই বিপুল ঐশীর সামনে আসছে আর চায় না। এজন্যই ইচ্ছে করে এক কাসে দুবার থাকা।
টিফিনের পরে কাসে বিপুল ভাইয়া আমাকে বললেন, ‘এশী আর আমি সবসময় বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। ঐশীর বয়ফ্রেন্ড হচ্ছে সাদাত। যখন ঐশী জানতে পারল যে, আমি ওকে নিজের চেয়েও বেশি ভালবাসি তখন আমার সামনে আসা ওর পক্ষে সম্ভব ছিল না। যখন আমি বললাম এই কলেজ ছেড়ে আমি অন্য কলেজে চলে যাব তখন আমার সব কাসমেটরা আমায় বলল, বিপুল তুই এখানেই থাক। এখানে থাকলে অন্তত তুই ঐশীকে একবার হলেও তো দেখতে পারবি আড়ালে থেকে। আর আমরাও তোকে দেখতে পারব। বন্ধুত্বের তো একটু দাম দে। ওদের কথায় আমি এখানে থেকে গেলাম। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, ওরা পাশের রুমে থাকলেও মনে হয় আমাকে আর মনে রাখেনি। তার জন্যই মনে হয় আজ পর্যন্ত আমার সাথে দেখা করতে আসে নি।’
কাসের দিকে আমি একটুও মনযোগ দেই নি। ছুটি হয়ে গেল। আমরা সবাই ছেলেদের সিঁিড়র পাশে দাড়িঁয়ে রইলাম। হঠাৎ করে মনে হয় এই রোদ্রময় আকাশের বৃষ্টি একটু বেড়ে গেল। কিছু স্টুডেন্টকে দেখলাম বৃষ্টিতে ভিজছে। বিপুল ভাই আর আমিও ভিজতে গেলাম। বিপুল ভাই আমাকে এক মেয়ে দেখিয়ে বললেন, ঐ দেখ আমার ঐশী। - তাহলে পাশে যে ছেলেটা আছে ওকে? - ওর নাম সাদাত। ঐশীর বয়ফ্রেন্ড। ঐশী অনেক পছন্দ করে সাদাতকে। - আপনার সামনে ওরা এইভাবে বৃষ্টিতে ভিজছে আপনি কি ইর্র্ষান্বিত হন না? - আমি ঈর্ষা করব কেন? আমি ওকে ভালবেসেছি। তাও আবার আনকান্ডিশনেবল ভালবাসা’। আমি ওকে ভালবাসি বলে যে ওকেও আমাকে বাসতে হবে এই শর্ত যদি আমি রাখতাম তাহলে মনে হয় এটা ভালবাসার মতো পবিত্র সম্পর্ক থাকত না। আর তোর কি মনে হয় আমি এখানে এক বৃষ্টিতে ভিজছি? আমার পাশেও ঐশী আছে। সে ঐশী যে আমার কাছ থেকে কখনোও দূর হবে না। আমার স্বপ্ন আর হৃদয়ের ছবির ঐশী। পৃথিবীতে এমন কি কিছু আছে যা আমার মুখ থেকে হাসি আর আমার হৃদয় থেকে ঐশীকে কেঁড়ে নিতে পারবে?
বৃষ্টির মাত্রা বাড়ল না। কিন্তু রোদের মাত্রা আর বাড়ল না। কলেজ ক্যাম্পাসের বাহিরে বিপুল ভাইয়া এক রিকশা ডাকলেন আর উঁেঠ পড়লেন। আমি লক্ষ্য করলাম তিনি রিকশার সিটের এক পাশে বসেছিলেন। মনে হয় তার পাশের পাশের সিটে তার স্বপ্ন আর হৃদয়ের কল্পনার ঐশী বসে ছিল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পন্ডিত মাহী
গল্পটা অনেক সুন্দর। ছোট অথচ কি আবেগ! তবে গল্পের মাঝে বেশ কিছু ফাঁকা স্থান আছে, যেগুলোতে কাজ করলে, কারুকাজ করলে গল্পটি আরো বড় হতো আর আরো সুন্দর হতো।
Rajib Ferdous
লেখাটা যদি শুধুই লেখার খাতিরে লেখা হয়, তবে কিছু বলার নেই। আর যদি লেখক হয়ে উঠতে পারার চেষ্টায় লেখা হয়, তবে বলবো প্রয়োজন আরো বেশি বেশি চর্চার। শুভকামনা আপনার জন্য।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।