প্রথম যখন তোমার সাথে দেখা করতে যাই, আমার হাতে বেশি সময় ছিল না।অনেক কাজ ছিল আমার সঙ্গী।কাজ সেরে রাবি’র চারুকলার পিঠা উৎসব্-এ যেয়ে তোমার সাথে দেখা করাটা রীতিমত অসম্ভব ছিল।তাতে বাড়ি যাবার ট্রেনটা মিস করার সমূহ সম্ভাবনা ছিল।সত্যি বলতে কি, আমার হয়ত সেরকম আগ্রহই ছিল না।একজনের সাথে মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলি,তার অনুরোধ রাখতে পিঠা উৎসব-এ যাব, ব্যাপারটা কেমন বাহুল্য মনে হচ্ছিল আমার কাছে।
কিন্তু সেই অনুরোধ-এর ঢেঁকিটা শেষ পর্যন্ত গিললাম।নিতান্ত অনিচ্ছা সত্বেও গেলাম। তোমাকে দেখলাম।তোমার চোখে এক অসাধারণ মুগ্ধতা,যেটা ফেলতে পারলাম না।তুমি শাড়ী পরেছিলে।শাড়ীতে তোমাকে অসাধারণ লাগছিল।এতটাই যে, “আমি যদি কবি হতাম, বনলতা সেন তোমার কাছে অসহায় হয়ে যেত”।আমি সময় ভুলে গেলাম, বাড়ী যাওয়া ভুলে গেলাম।মুগ্ধ চোখে তোমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম।তুমি আমাকে ‘বোকা’ বলে হেসে দিলে।এ হাসির মুগ্ধতা আমাকে আরো কাছে টানল।
সেই মুগ্ধতা, মুগ্ধতার সীমা ছাড়িয়ে ভালবাসার পথ ধরল।আমার মনের একটা জায়গা তোমার অজান্তেই তোমার জন্য বরাদ্দ হল।সেই জায়গায় হয়ত তুমি ফুটবল খেলতে পারবে না, কিন্তু তোমার মনের রঙ তুলি দিয়ে আচঁড় কাটতে পারবে।ভালবাসার বৃষ্টিতে নতুন করে ভিজতে ইচ্ছা হল।স্বপ্নে তোমায় নিয়ে মাঝে মাঝে হারিয়ে যেতাম।তোমার গান শোনার জন্য মন সদা ব্যাকুল থাকত।মাঝে মাঝে নিজেকে রবি ঠাকুর ভেবে তোমায় নিয়ে দুকলম লিখতে ইচ্ছা হত, কিন্তু কবিতা লেখা যে আগুনে ঝাঁপ দেয়ার মতই কঠিন, এটা বুঝতে পেরে আবার বাস্তবে ফিরে আসতাম।
সময় যেন আর পার হতে চায় না। বার বার তোমাকে দেখতে মন চায়। কতবার মনকে আর মানা করা যায়? তাই আবার রাজশাহী গেলাম।তুমি শাড়ী পরে দেখা করতে এলে।সেই একই শাড়ী।আমার ভালবাসা অন্য মাত্রা নিল।ভালবাসার নৌকায় ভাসতে ভাসতে তোমার দিকে যাচ্ছিলাম।তুমি আমার নৌকার পাল টেনে ধরলে, ভালবাসার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে।আমাকে শুধু বন্ধু ভাবতে এটা বুঝতে আমার হয়তো ভুল হয়েছিল।কে জানে, হয়ত তোমার চোখ, তোমার শাড়ী আমাকে সেই কথা বলত না।মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরতে যাচ্ছিল, দিলাম না।সামলে উঠলাম।বললাম, আমাকে যে শুধু বন্ধু ভাব এটা আমি বুঝতে পারিনি।আমার বুঝার ভুল ছিল। ভুল ক্ষমা করে দিও।
ওর সামনে-ত নিজেকে সামলালাম।নিজের মনকে কিভাবে আর বুঝাব? মন-ত আর মানতে চায় না। মনের আকাশের মেঘ অশ্রুপাত হয়ে ঝরল।বন্যায় ভেসে যেতে চাইল।সেখানে বাঁধ দিলাম।কষ্টে বুক বাধঁলাম।রবি ঠাকুরের বাঁশি কবিতার কেরানীর যেমন মনে পরত, “পরনে ঢাকাই শাড়ী, কপালে সিঁদুর”, আমারও তেমনি শাড়ী পরা ঐ মুখ-খানা বার বার চোখে ভাসতে লাগল। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলাম।কয়েক দিন পর হয়ত হয়েও গেলাম।জীবনের যান্ত্রিকতায় আবেগ নামক বস্তুটিকে বাক্সবন্দী করলাম।কিছুদিন পর তোমার বিয়ের খবর পেলাম।আমাকে ফোনে দিয়ে হয়ত জানাতে চেয়েছিলে, আমি ফোন ধরিনি।এসএমএস দিয়ে অনুষ্ঠান-এ আসতে বললে,যাইনি।হয়ত কষ্ট পাবার ভয়ে, কিংবা তোমার প্রতি এক ধরণের রাগ থেকে।আবার হয়ত কোন কারণ-ই নাই। মানুষ যদি সব কারন জানত তাহলে প্রকৃতি এত রহস্যময় থাকত না মানুষের কাছে।
অনেক সময় পার হয়েছে। মানজাতির বংশবিস্তারের ধারায় অবদান রাখার সময় হয়েছে।মা-বাবা তাদের দায়িত্ব নিয়ে মহা আনন্দে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।যথা সময়ে বিয়ে হল।কিছুদিন পর কুরিয়ারে একটা উপহার আর চিঠি আসল।তুমি পাঠিয়েছ।এতদিনেও আমার খবর রেখেছ বলে কৃতজ্ঞ বোধ করলাম।চিঠি পড়ে বুঝলাম, বিয়ের খবর তুমি জান।খোঁজ রাখি না, বিয়ের দাওয়াত দেইনি বলে অর্থহীন রাগ দেখালে।আর কিছু সাধারণ কথাবার্তা।সাথে একটা উপহার।উপহার টা খুললাম।ঠান্ডা হয়ে গেলাম।পুরনো স্মৃতি মাথা চাড়া দিল।তুমি শাড়ী পাঠিয়েছ, সেই একই রকম শাড়ী,নতুন কিনা।কিছুটা সময় লাগল নিজেকে ঠিক করতে।
শাড়ী-টা আমি আমার বউ-কে দেইনি।এই শাড়ী-টা তোমারই জন্য।এরকম শাড়ীতে শুধু তোমাকেই মানায়।নতুন বর্ষার পানিতে নতুন উদ্যমে ভিজতে হয়, তাতে অতীত টেনে আনলে প্রানচাঞ্চল্য থাকে না, আবেগ কমে যায়,আনন্দও মলিন হয়ে যায়। এই শাড়ী কি করেছি, কেউ জানে না, জানবেও না কোনদিন।শাড়ীর রহস্যটা আমার কাছেই থাক। ভাল থেকো তুমি।
১৪ আগষ্ট - ২০১২
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪