পর্ব এক.
এই সব ভালবাাবাসি অনেকটা পাটভাঙ্গা শাড়ীর মতো। হাতে নিলে সুন্দর ন্যাপথালিনের গন্ধ,কিন্তু কোথাও ন্যপথালিনটা নেই। যখন ছিল তখন সযতেœ সাজানো ছিল শাড়ীটা,তারপর একসময় সুবাস ছড়িয়ে ন্যাপথালিনটা হারিয়ে গেছে । ছিল ,এখনো আছে,অনুভবে ,কিন্তু এই যে নেই-সে কথাটিই সত্যি।
আশ্বিনের রোদ্দুর । সামিউলের পকেটে সাতাশি টাকা। একজন বিদেশী কনসালট্যান্ট আসবেন ,তিনি নিশ্চয়ই গাড়ী নিয়ে আসবেন। গাড়ী না আনলে মহাবিপদ। বিশমাইল পথ শেষে আহসানগঞ্জ পেীছাতে কোন স্কুটারই একশত টাকার কম নিবে না। আর বিদেশী দেখলে সীমাšেত চোরাচালানে অভ্য¯ত ড্রাইভাররা বলবে-
ঃ ডলারে তো চাই নাই মামু,ট্যাকায় চাইছি।
ঢাকার বড় স্যার বলেছেন কোন অসুবিধা যেন না হয়। অসুবিধা শুধু টাকার। টাকা থাকলে সামিউল এমএসসিটা শেষ করতে পারতো । বিএসসিতে মেধা তালিকায় নাম উঠিয়ে লাভ হয়নি। অর্থনীতির উপযোগীতার মতই জীবনটা বাজারে অতিরিক্ত হয়ে গেছে। হায়রে বনিক গৌরসুন্দর । গৌরসুন্দর স্যার যখন ক্লাসে অর্থনীতির উপযোগীতা পড়াতো , নিজেকে মনে হতো মনোপলি ব্যবসার পন্য। এমন মেধা ও মননে আর যাই হোক সে আলাদা । সমস্যা শুধু অমর্ত্য সেন -একবার যে নোবেল পায় , তাও তাকে মাথায় তুলে ধরে আছে দরিদ্র দেশের হাজার ভুখা মানুষ। একদিন রাতে ঠিকই অমর্ত্য সেন সামিউলের সঙ্গে দেখা করে গেছে।অমর্ত্য সেন বললেন-
: সামিউল তোমার দেশের যে মঙ্গা হয় , কোন সমাধান অছে?
:জি স্যার আছে।
: আছে?......তোমার কিভাবে মনে হলো আছে?
: স্যার , আমার দেশের আয়তন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল,ঠিক?
: ঠিক।
: নদীনালা,বাসযোগ্য ভুমি বাদ দেন অর্ধেক ...আটাশ হাজার বর্গমাইল । এক বর্গমাইল মানে ২৭৮৭৮৪০০ বর্গফুট , মোট ৭৮০৫৯৫২০০ বর্গফুট ,প্রতি বর্গফুটে ৫০০ দানা ,মোট প্রায় চলিশ হাজার কোটি দানা। তিন ফসলে একশো বিশ হাজার কোটি দানা ....১২ কোটি মানুষ,আপনাকে দিলাম একশো কেটি দানা...ওজন কতো?
অমর্ত্য সেন চিšতায় পড়ে গেলেন ,বাজার অর্থনীতির হিসাব গড়মিল হয়ে যাচেছ...
: সামিউল ,একটা ক্যালকুলেটর আনো ,আর তোমার দেশের বাকী অর্থনীতিবিদদের খবর দাও।
সামিউল চিšতায় পড়ে গেল, নামজাদা অর্থনীতিবিদ কাউকে চেনেনা ,একমাত্র কলেজের প্রফেসর গৌরসুন্দর।সামিউলের কাছে ক্যালকুলেটরও নেই । যেতে হবে লুবনাদের বাড়ী।
:স্যার একটু অপে¶া করেন...এই বলে লুবনাদের বাড়ীর পথে দৌড় ।অমর্ত্য সেন এসেছেন, লুবনা একথাটা বিশ্বাসই করলো না । তারপরও ক্যালকুলেটরটা পাছে ভুলোমন সামিউলের হাতছাড়া হয়ে হারিয়ে যায় সে জন্য সামিউলের সাথে এলো।
বাড়ী পৌছে সামিউল দেখলো -যে ঘরটাতে অমর্ত্য সেন বসেছিলেন সে ঘরটা তালা দেয়া। লুবনা একটাা অবিশ্বাসের হাসি দিয়ে তার দিকে তাকালো।.....সামিউলের ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।মঙ্গা এলাকার হিসাবটা অমর্ত্য সেনকে আর দেয়া হয়নি....এখন প্রতিদিনই মঙ্গা দুর্গত লোক নিয়ে তার কাজ ।
পেছনে দামী গাড়ীটা এসে কখন দাড়িয়েছে সমিউল খেয়াল করেনি। ড্রাইভার তাকে ডাকছে ....ভাইজান কি আহসানগঞ্জ থেকে আসছেন ?
:....জ্বি।
বিদেশীর দিকে তাকিয়ে ড্রাইভার বললো -স্যার লোক আসছে, চিšতা নাই।
সামিউল বিস্মিত ,ড্রাইভার বিদেশীর সাথে বাংলা বলছে ...আরো বিস্মিত হলো যখন বিদেশী তাকে ডেকে বললো...চামিইল বাই বিতরে আসেন।
সেই যে এডওয়ার্ড বাউ নামে ইউরোপীয় তরুনের সঙ্গে গাড়ীতে চেপে বসলো সামিউল ..চলার শেষ নেই। নানা প্রশ্ন ,নানা রকম ডাটা । বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু কতো? গড় সšতানসংখ্যা কতো? কতজন দারিদ্রসীমার নীচে ?এতসব প্রয়োজনীয় অপ্রযোজনীয় প্রশ্ন। মাথা ধরে যায় । আবার যখন জিজ্ঞাসা করে ..চামিইল টুমি কয়টা চেলেমেয়ে নিবে?
সামিউল হেসে জবাব দেয় ...বিয়ে হয় নাই... হবে...লুবনার কথাটা সে আর এড়াতে পারে না।
: এখদিন আমি তোমার ফিয়াসেকে দেকতে যাবো। আমার ফিয়াসে সিসিলিয়া ষ্টিল ওয়েটিং ফর মাই রিটার্ন।
সিসিলিয়াটা কে? দেখতেইবা কেমন? উঠোনে লুবনা ধান ছড়াচেছ ,এডওয়ার্ড মুচকি হেসে আধো বাংলা আধো ইংরেজিতে প্রশ্ন করছে - সামিউলের খুব জানতে ইচেছ ছিল, তোমার দেশের সিসিলিয়া কি লুবনার চেয়েও সুন্দর? কিন্তু গ্রামের একদল ছেলেমেয়ে এমন ভিড় করেছে , প্রশ্নটি আর করা হয়ে উঠেনি।
এডওয়ার্ড লুবনার দিকে হেসে বললো...টোমাদের বিয়েটে আমি একটা ডায়মন্ড রিং ডেবো,চাইমলকে ডিয়ে যাবো।
অনেকদিন এডওয়ার্ড বাংলাদেশে ছিল...এতে লুবনার কোন আগ্রহ ছিল না। শুধু বিদেশীর দেয়া কথাটিকে মনে রেখে সামিউলকে বার বার হীরের আংটির কথা জিজ্ঞাসা করতো । আসলে আংটিটা যতনা লুবনার জরুরী ছিল ,তারচেয়ে জরুরী ছিল,একনজর হাতে নিয়ে দেখা,রবীন্দ্রনাথের গানের মতো ..শুধু মনের মধ্যে লুকিয়ে আছে ঐ ¯^পনের পারা ।
পর্ব দুই.
এডওয়ার্ড কথা রেখেছিল । দেশে ফেরার আগে একটা হীরের আংটি সামিউলকে দিয়ে গিয়েছিল -অর্থনীতিতে যার বাজার মূল্য পঞ্চাশ হাজার হবে। দেশে ফিরে জানিয়েছিল সামিউল সফল-এডওয়ার্ডের সিসিলিয়া অন্যের ঘর করছে।। এক বৈশাখের জোৎøায় সামিউল লুবনার ভালোবাসার সংসার শুরু হয়। বিযের আগে সামিউল যে আংটিটি লুবনাকে দেখিয়েছিল, সে আংটিটি আর বিয়ের রাত থেকে লুবনা দেখেনি। উত্তরবঙ্গের মঙ্গাপীড়িত এলাকায় সেই আংটিটি ত্রান হয়ে অনেক ¶ুধার্ত মানুষের জ্বালা মেটায়। বিয়ের পর ভালোবাসাটা খানিক রং বদলায়....বাচচার অসুখ,ঈদের জামাকাপড় এসব এলেই লুবনা সামিউলকে সংসার ভাঙ্গার হুমকি দেয় আংটি চুরির অপরাধে ।আজ থেকে দুবছর আগে এডওয়ার্ডের পুরো জীবনটাই চুরি হয়ে গেছে।
২৪ জুন - ২০১২
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪