সু-সময়

সবুজ (জুলাই ২০১২)

Sayed Iquram Shafi
  • ১০
  • ৬৮
বেশ কিছুদিন চাকরি করেছে হাসান। চাকরি জীবনের গৎবাঁধা নিয়ম মানতে পারেনি। চাকরি করতে কেমন জানি ইচ্ছে হয় না। তাই চাকরিটা ছেড়ে দিলো সে। আজকাল সম্মানজনক ব্যবসা করতে প্রচুর টাকা লাগে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হাসান ব্যবসা করার চেষ্টা করে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ টাকা পূঁজি বিনিয়োগ করতে না পারায় ব্যবসা করতে পারে না। পারিবারিক বিষয় সম্পদ বা জমি-জমা বলতে তেমন কিছু নেই হাসানের। তবে তার আব্বা বসবাস করার জন্য একটা বাড়ী করে দিয়ে গেছেন। হাসানের পূর্ব পুরুষদের অনেক জায়গা-জমি ছিলো। সেগুলো বঙ্গোপসাগরের ভাঙ্গনে তলিয়ে গেছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হলে কি হবে হাসানের মন মেজাজ জমিদারের মতো। মেজাজটাও খুব কড়া তার। কারো বাঁকা কথা একদম সইতে পারে না সে। কয় দিন যাবত হাসানের হাতে তেমন কাজ নেই। তাই আজ সে ভাবলও বনানী যাবে। সেখানে একটা সাপ্তাহিক পত্রিকার অফিস রয়েছে। এক সময় সে পত্রিকার সাথে জড়িত ছিলো হাসান। বেশ ক'টি গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট লিখেছিলো সে। সে রিপোর্টগুলো খুব ভালো ট্রিটমেন্ট দিয়ে প্রকাশ করেছিলো পত্রিকাটি। এখন অবশ্য পত্রিকাটির অফিস স্থানান্তর হয়েছে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ী। বনানী ১২ নাম্বার রোডের সে অফিসে গেলো হাসান। অফিসটা বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। হাসান প্রথমে দেখা করলো সহকারী সম্পাদকের সাথে। সহকারী সম্পাদক সাহেব অফিস পিয়নকে ডেকে বললো চা দিতে। পিয়ন এককাপ রঙ চা বা প্লেইন টি এনে রাখলো হাসানের সামনে। হাসান সহকারী সম্পাদককে বললো চা এককাপ কেন ? আপনি খাবেন না ? তিনি বললেন না, আমি কিছুক্ষণ আগে চা খেয়েছি। প্লিজ আপনি চা নিন। হাসান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। চারতলা ভবনের নিচতলায় অফিসটি ছিমছাম ও সুরক্ষিত। অফিসে মোট চারটি রুম। প্রত্যেকটি রুমের ওয়ালে দামী পেইন্টিংস সাটানো। সম্পাদক সাহেব বোধহয় শিল্প রসিক মানুষ। সহকারী সম্পাদক লেখা সম্পাদনার কাজে ব্যস্ত। চা খেয়ে হাসান সম্পাদক সাহেবের রুমে প্রবেশ করলো। সম্পাদক সাহেবের বয়স বোধহয় পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে। শরীরটা বেশি মোটা নয় আবার তেমন হ্যাংলা-পাতলাও নয়। শারীরিক গঠন বেশ সুন্দর বলতে হবে। সালাম দিয়ে সম্পাদকের সাথে পরিচিত হলো হাসান। হাসান রিপোর্ট লেখার কাজ করে এ পরিচয় পেয়ে তিনি বোধ হয় আনন্দিত হলেন। এ পত্রিকায় কাজ করলেও হাসান কখনো অফিসে আসেনি। তাই অফিসের সবাই অপরিচিত। সম্পাদক সাহেব হাসানের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ আলাপ করলেন। আলোচনায় কোনো বিষয় বাদ যায়নি। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বিদেশ ও মিডিয়া হালচাল সহ সব বিষয়ে তিনি হাসানের সাথে ফ্রাঙ্কলি আলোচনা করলেন। আলাপের এক পর্যায়ে তিনি বললেন, লেখালেখি ছাড়া আর কি করেন ? এ প্রশ্নটি হাসানকে অনেকেই করে। কিন্তু এ প্রশ্নটি শুনতে ভারি খারাপ লাগে তার। একজন লেখক, রিপোর্টার বা সাংবাদিক লেখালেখি ছাড়া আর কি করবে ? কিন্তু সম্পাদক সাহেব সিনিয়র মানুষ। ওনার প্রশ্নের জবাবে হাসান স্বাভাবিকভাবে বললো ব্যবসা করার চেষ্টা করেছি। পর্যাপ্ত পূঁজির অভাবে সফল হতে পারিনি। তিনি বললেন এখন কি করছেন ? হাসান বললো এখন আপাতত বেকার। দেখছি কি করা যায়। তিনি দৈনিক পত্রিকার ফাইল হাতে নিলেন। মনোযোগ দিয়ে পত্রিকা দেখতে লাগলেন। সম্পাদক সাহেব পত্রিকার দিকে মনোযোগ দেয়ার কারণে হাসান ভাবলো এবার বেরুতে হবে। হাসানের সাথে প্রথম দেখাতেই খুব আন্তরিক ছিলেন তিনি। তাই সম্পাদক সাহেবকে স্যার না বলে বড় ভাই বলে সম্বোধন করলো হাসান। আসার সময় বড় ভাই আসি বলে সম্পাদকের রুম থেকে বেরিয়ে গেলো সে। হাসান ভেবেছিলো সম্পাদক সাহেব তাকে কিছু বিল দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু না-সেটা হলো না। সে বনানী ১২ নাম্বার রোড থেকে সোজা হেটে চলে এলো চেয়ারম্যান বাড়ী। চেয়ারম্যান বাড়ী বাস স্ট্যান্ডে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। প্রত্যেকটি বাসে প্রচণ্ড ভিড়। বাসে ওঠার কোনো উপায় নেই। অনেকক্ষণ পর ১টা ৬ নাম্বার বাস এলো। সেটাতে উঠলো হাসান। ৬ নাম্বার বাসটিতে যাত্রীধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণের বেশি যাত্রী উঠলো। বাসের মধ্যে দাঁড়ানো দূরের কথা পা রাখার জায়গা পর্যন্ত নেই। মনে হলো যেন দোজখের সাক্ষাৎ পেয়েছে সে। রোডেও বিরক্তিকর ট্রাফিক জ্যাম। বনানী চেয়ারম্যান বাড়ী থেকে মগবাজার আসতে একঘণ্টার বেশি সময় লাগলো। মগবাজার পর্যন্ত এসে বাস থেকে নেমে গেলো সে। সেখান থেকে আবার উঠলো ১১ নাম্বার বাসে। আরামবাগ নটরডেম কলেজের সামনে এসে বাস থেকে নেমে গেলো। প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছে তার। শরীরে হাটার শক্তিও নেই। কিছু খেতে হবে। নটরডেম কলেজের পশ্চিম পাশে ইনার সার্কুলার রোডের দক্ষিণ পাশে একটি হোটেল রয়েছে। সেটাতে প্রবেশ করলো হাসান। হোটেল ক্যাশিয়ারের পাশে একটি টেবিলে ও ৬ টি চেয়ার খালী পড়ে আছে। সে টেবিলে গিয়ে বসলো সে। পকেটে হাত দিয়ে দেখলো কত টাকা আছে। পকেটে আছে একশ টাকার কম। নাশতা করা যাবে। হাসান হোটেলের চেয়ারে বসা মাত্র ওয়েটার সামনে এসে এক নিঃশ্বাসে খাবারের মেনু'র বিবরণ দিতে লাগলো। রুই মাছ, পাবদা মাছ, ইলিশ মাছ, কই মাছ, শোল মাছ, পুঁটি মাছ, বোয়াল মাছ, শিং মাছ, গরুর গোস্ত, খাশির গোস্ত, মুরগির গোস্ত ও গ্রিল। ২ টা পাতলা নান রুটি ও কোয়ার্টার গ্রিলের অর্ডার দিলো হাসান। দিচ্ছি স্যার বলে ওয়েটার চলে গেলো। হোটেলে বসার কিছুক্ষণ পর দু'জন লোক এসে বসলো হাসানের সামনা সামনি হয়ে। ওদের দু'জনের চোখ খুব লাল হয়ে আছে। এদের একজন ফ্রেঞ্চ কাটিং দাড়ি রেখেছে। দাড়িওয়ালা লোকটা চোখ উঁচু নিচু করে হাসানের দিকে তাকাচ্ছে বার বার। লোকটার তাকানোর স্টাইলটা হাসানের পছন্দ হলো না। হাসান ভাবলো লোকটাকে জিজ্ঞেস করি তার দিকে এভাবে তাকানোর কারণ কি ? পরে ভাবলো না দরকার নেই। মনে হলো তারা দু'জন একসাথে ড্রিংক করে এসেছে। এ দু'জন লোক গ্রিল ও কাবাবের অর্ডার দিলো। ফ্রেঞ্চ কাটিং দাড়িওয়ালা লোকটা প্যান্টের পকেট থেকে একটা দামী মোবাইল ফোন বের করে রিং দিয়ে মাতালের মতো বলতে লাগলো : এ্যাই আমি ভাত খাওনের কথা কইলাম। তুমি ক্যান কইলা ভাত খাইবা কই থেইকা। তোমার বউ নাই। আমার বউ নাই ত কি হইছে। বাসায় আইমু না। ভাত খাইমু না। তই কি হইব ? অপর প্রান্ত থেকে মেয়েলী কণ্ঠ শুনা যাচ্ছে। মনে হয় লোকটা তার ভাবির সাথে কথা বলছে। এ একটা কথাই বার বার বলছে লোকটা। হাসানের ধারণাই ঠিক। এ দু'জন লোকের কথার স্টাইলে বুঝা যাচ্ছে তারা এক সাথে ড্রিংক করে এসেছে। মোবাইলে একটা কথা বার বার বলার কারণে ওর সাথে থাকা লোকটা বিরক্ত হয়ে বললো অই মিয়া পঁ্যাচাল বাদ দেও। খাওন আনছে। খায়া লও। ফ্রেঞ্চ কাটিং দাড়িওয়ালা লোকটার পকেটে অনেকগুলো পাঁচশ টাকার নোট। নোটগুলোর কিছু অংশ পকেট থেকে বের হয়ে আছে। নোটের বান্ডিল বের করে সেখান থেকে একটা পাঁচশ টাকার নোট ওয়েটারের হতে দিলো। বিল পরিশোধ করে ওয়েটার অবশিষ্ট টাকা ফেরত দেয়ার পর দু'জন লোক চলে গেলো। এর পর হোটেলে প্রবেশ করলো একদল তরুণ-তরুণী। এদের সংখ্যা হবে ১০-১২ জন। এর মধ্যে ২ জন তরুণী। একজন তরুণী বেশ মোটা। সে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে আর পাঁয়চারী করছে। মনে হয় তার কোনো বন্ধু আসবে। অন্য তরুণী চেয়ারে বসে রয়েছে। তার চুলগুলো খোলা। খোলা থাকার কারণে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে তার চুল অনেক লম্বা। চুলগুলো বেঁধে খোপা করে রাখলে তাকে বোধ হয় আরো সুন্দর দেখাতো। সে বেসিনের দিকে গেলো হাত মুখ সাফ করার জন্য। বসে থাকা তরুণ'রা উচ্চ গলায় আওয়াজ দিয়ে ব্যান্ড সঙ্গীত গাইছে। "তুমি কেন এত অচেনা হলে, তুমি কেন আমায় এত দুঃখ দিলে ........."। এ গানটির মূল শিল্পী 'আইয়ুব বাচ্চ'ু। এসব তরুণ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো উচ্ছ্বল-প্রাণবনত্দ। তাদের মনে সংসার জীবনের কোনো চিনত্দা নেই। তারা সমবেত গলায় গান গেয়ে যাচ্ছে। বেশ ক'জন হোটেল কাস্টমার গানের উচ্চ আওয়াজে বিরক্ত হয়ে বাঁকা চোঁখে তরুণদের দিকে তাকাচ্ছে বার বার। শহুরে তরুণ বলে কিছু বলছে না। একদল উচ্ছ্বল তরুণের বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ-উলস্নাস, গান গাওয়া এবং কিছু লোকের বিরক্তি প্রকাশ গভীরভাবে অবলোকন করছে হাসান। হাসানের সামনা সামনি বসা দু'জন লোক চলে যাবার কারণে সে একা নিরবে বসে রয়েছে। একা থাকার কারণে হাসানের মাথায় নানা চিনত্দা ঘুরপাক খাচ্ছে। মাস শেষ হতে বেশ ক'দিন বাকী। হাত খরচের টাকা নেই। ঢাকায় বসবাস করলে মাস শেষে বাসা ভাড়ার চিনত্দা করতে হয় সবার আগে। এসব নানান রকম চিনত্দা-দুশ্চিনত্দায় আচ্ছন্ন হাসান। কিছুই ভালো লাগছে না তার। ভালো না লাগার ঘোরের মধ্যেই হাসানের চোঁখ গেলো সে তরুণীর দিকে। বেসিন থেকে হাত মুখ সাফ করে সে সামনের দিকে আসছে চেয়ারে বসার জন্য। অচেনা সে তরুণীর শরীরের রঙ ধবধবে ফর্সা। তার উচ্চতা হবে অনত্দত পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। মুখটাও ভারি সুন্দর। সত্দন যুগল পরিপুষ্ট ও আকর্ষণীয়। তার পুরো শরীর জুড়ে পূর্ণাঙ্গ নারী রূপ ফুঁটে উঠেছে। তাকে অনায়াসে একজন প্রিয়দর্শিনী বলা যায়। সে প্রিয়দর্শিনী তরুণীর নারী রূপের দিকে দৃষ্টি হাসানের। অচেনা তরুণী নারীর রূপ সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে রইলো অনেকক্ষণ। সে তরুণী এসে বসলো চেয়ারে। কোনো মেয়ের দিকে এভাবে তাকায় না হাসান। আজ কেন এমন হলো হাসানের ? অচেনা তরুণীর দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকার কারণে মনটা উদাস হয়ে গেলো তার। নাসরিনের কথা মনে হলো। নাসরিন এ তরুণীর চেয়ে আরো বেশি লম্বা ছিলো। তার উচ্চতা হবে কমপক্ষে পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। সেও ছিলো ধবধবে ফর্সা। তবে নাসরিনের কন্ঠস্বর ছিলো কিছুটা মোটা। সে লেখাপড়ায় তেমন ভালো ছিলো না। নার্সারী থেকে ফুলের টব এনে ঘরের সামনে সাজিয়ে রাখতো সে। প্রতিদিন ফুলের টবগুলোর পরিচর্যা করতো। হাসান ও নাসরিনের জন্ম এবং বেড়ে উঠা একই বাড়ীতে। তবে হাসান নাসরিনের দশ বছরের বড়। লেখাপড়ায় খারাপ হলেও মনে মনে নাসরিনকে খুব পছন্দ করতো হাসান। একবার ঈদ উল ফিতরে হাসানকে পা ধরে সালাম করেছিলো নাসরিন। নাসরিনের সালাম পেয়ে কেমনজানি অপ্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলো হাসান। অপ্রস্তুত হলেও নাসরিনের সালাম পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলো হাসান। সালাম করার সময় নাসরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো সে। নাসরিনও হয়তো হাসানকে পছন্দ করতো। কোনো ছেলেকে পছন্দ করলে বা ভালোবাসলে খুব কম সংখ্যক মেয়ে মুখ ফুঁটে বলতে পারে। ভালোবাসার ব্যাপারে ছেলেদেরই আগে এগিয়ে আসতে হয়। হাসানের ভালোবাসার কথা নাসরিনকে কখনো বলা হয়নি। নাসরিনও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসেনি। নাসরিনকে মনে মনে প্রচন্ড ভালোবাসতো ঠিকই। তবে এ ব্যাপারে হাসানের এগিয়ে না আসার অন্যতম কারণ ছিলো নাসরিনের আব্বা। নাসরিনের আব্বা লোকটা খুব দেমাগী বদমেজাজি ও জুলুমবাজ। সুযোগ পেলেই লোকটা নিরীহ মানুষ জনকে নির্যাতন করে, গায়ে হাত তুলে। একদিন তাদের টিউবওয়েল থেকে পানি নেয়ার কারণে হাসানের চোঁখের সামনে এক কিশোরীকে ধাক্কা দিয়েছিলো। ধাক্কার চোটে সে কিশোরী হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিলো। কিশোরীর এ্যালুমিনিয়ামের পানির কলসটা বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো। ঘটনাটা ঘটেছিলো হাসানের চোঁখের সামনে। এ সময় হাসান ছিলো পুকুর ঘাটে। পুকুর পাড়েই টিউবওয়েল। এ ঘটনার কারণে হাসানের খুব মন খারাপ হয়েছিলো। হাসান ভাবলো লোকটাকে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দেই। সম্পর্কে মামা ও বয়সে অনেক বড় হবার কারণে কিছুই বলতে পারলো না সে। হঠাৎ একদিন মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী এক পাত্র নাসরিনকে দেখতে আসলো। সে পাত্র নাসরিনকে দেখেই পছন্দ করে ফেললো। এক সপ্তাহের মধ্যে নাসরিনের বিয়ের তারিখ ঠিক হলো। একই বাড়ীর বিয়ের অনুষ্ঠান। বাড়ীতে চলছে হৈ হুল্লোড়। হাসান তার ধরা বাঁধা নিয়মেই চলছে। বিয়ে বাড়ীর হৈ চৈ আনন্দ উল্লাস হাসানকে স্পর্শ করেনি। নাসরিনের স্বামী দেখতে কেমন সে ব্যাপারে কিছুটা আগ্রহ ছিলো হাসানের। বিয়ের দিন রাত আট টায় বাড়ীতে চলে এলো সে। দুলহা-বরযাত্রী এলো রাত দশটায়। দুলহা দামী শেরওয়ানী পরেছে। শেরওয়ানীটা হালকা হলুদ রঙয়ের। শেরওয়ানীর রঙয়ের সাথে মিলিয়ে পাগড়ি পরেছে। দুলহার স্বাস্থ্য বেশ ভালো। শরীর বেশ মোটাতাজা। তবে নাসরিনের তুলনায় তেমন লম্বা নয়। নাসরিন ও তার বরের উচ্চতা প্রায় সমান। দুপুরে মসজিদে আক্দ হয়ে গেছে। তাই আনুষ্ঠানিকতা কম। বরযাত্রীরা খাবার সারছে। সাদা শুশ্রম্নমন্ডিত এক বয়স্ক লোক বরের স্টেজের সামনে পাঁয়চারী করছে। নাসরিনের আব্বাকে দেখে লোকটা বলছে বেয়াই সাহেব বউটা তাড়াতাড়ি আমার হাতে তুলে দিন। নাসরিনের আব্বা বলছে আমার মেয়েটাকে তো সারাজীবনের জন্য নিয়ে যাবেন এতো তাড়াহুড়া করছেন কেন ? লোকটা বললো ভাইরে আমি রাতের বেলা বেশিক্ষণ বাড়ীর বাইরে থাকতে পারি না। নাসরিনের আব্বা আবার বললো বেয়াই সাহেব এটা কি আপনার পরের বাড়ী ? লোকটা আবার বললো বেয়াই সাহেব বউটাকে তাড়াতাড়ি সাজাতে বলুন। ঠিক আছে-ঠিক আছে বলে ঘরের ভেতরে চলে গেলো নাসরিনের আব্বা। হাসানের বুঝে নিতে কষ্ট হলো না সাদা শুশ্রম্নমন্ডিত বয়স্ক লোকটা নাসরিনের শশুর। নাসরিন কেঁদে কেঁদে ঘর থেকে বের হচ্ছে। তার একপাশে ভাবি সম্পর্কের একজন ও অন্য পাশে ছোট দু'বোন। নাসরিন হালকা হলুদ রঙয়ের কাতান শাড়ী পরেছে। শাড়ীর জরিগুলো ঝিকমিক করছে। চারদিকে আলো ছড়াচ্ছে নববধূ নাসরিন। নাসরিনের ত্বকের রঙয়ের সাথে শাড়ীর রঙ প্রায় মিলে গেছে। বিয়ের শাড়ী নির্বাচনে বেশিরভাগ লোক লালকে প্রাধান্য দেয়। নাসরিনের বিয়েতে লাল শাড়ী প্রাধান্য দেয়া হয়নি। লাল শাড়ীতে নাসরিনকে বোধহয় আরো সুন্দর দেখাতো। মাথায় স্বর্ণের টিকলী পরেছে সে। স্বর্ণের টিকলীটা নাসরিনের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বর্ণের টিকলীটা নাসরিনের বর হয়তো মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিয়ে এসেছে। নাসরিন এমনিতেই সুন্দর। নববধূ সাজে তার সৌন্দর্য ও নারী রূপ বহুগুণ বেড়ে উঠেছে। নাসরিন এখন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী। তার আসল নারী রূপ এ প্রথম দেখলো হাসান। কান্না মুখে আসত্দে আসত্দে হেটে গাড়ীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে সে। বোন ভাবি ছাড়াও দুলা ভাই আছে নাসরিনের দু'পাশে। গাড়ীতে উঠে গেলো নাসরিন। পাশাপাশি উঠে বসলো তার বর। চলে গেলো নাসরিন। নাসরিনের চলে যাবার দৃশ্য অসহায়ভাবে দেখতে হলো হাসানকে। নববধূ হিসেবে নাসরিনকে দেখে খুব কষ্ট হলো হাসানের। মনে হলো নাসরিন ছিলো তার একানত্দ আপনজন। নাসরিনকে হাসান সত্যি খুব পছন্দ করতো এবং ভালোবাসতো। বড় অসময়ে পসত্দাতে হচ্ছে হাসানকে। কেন নাসরিনের সাথে সম্পর্ক জমিয়ে তুললো না সে। হাসান নাসরিনকে দামি শাড়ী, স্বর্ণের গহনা কিনে দিতে পারতো না ঠিকই। কিন্তু বউ হিসেবে তো তাকে মানে-সম্মানে রাখতে পারতো। নাসরিনের আব্বা জহুর হোসেন লোক ভালো না-তাতে তার কি ? পাত্রী হিসেবে নাসরিন তো কোনো অংশে খারাপ ছিলো না। শুধু লেখাপড়ায় একটু দূর্বল ছিলো সে। সবাই কি লেখাপড়ায় ভালো হয় ? হাসান ভাবে অসময়ে নাসরিনের কথা ভেবে কি লাভ ? সে তো সময় মতো নাসরিনকে আপনজন হিসেবে পাবার চেষ্টা করেনি। এসব ভাবতে ভাবতে চেয়ারে শরীর হেলান দিয়ে মাথা কাত করে বসে থাকে হাসান। হোটেল ওয়েটার আবার এসে বলে স্যার আর কিছু লাগবে ? হাসান বললো এককাপ চা দাও। ওয়েটার চা এনে দিলো। চা'য়ের কাপে চুমুক দিলো হাসান। হোটেলের এ্যাকোরিয়ামের দিকে দৃষ্টি দিলো সে। এ্যাকোরিয়ামের ভেতরে সোনালী রঙয়ের অনেকগুলো মাছ খেলা করছে। এ্যাকোরিয়ামে বন্ধি না হলে এদের খেলার পরিধি আরো বিশাল হতো। সোনালী রঙয়ের মাছগুলো দেখতে খুব সুন্দর। হাত দিয়ে ধরে দেখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ধরে দেখার সুযোগ নেই। অনেকক্ষণ ধরে হোটেলে বসে রইলো হাসান। এবার উঠতে হবে। চেয়ার থেকে উঠে যাবার সময় একটা প্রজাপতি হাসানের মাথার ওপর দিয়ে ওড়ে এসে বসলো হোটেলের ওয়ালে। লাল, হলুদ, নীল, কালো রঙয়ের কারুকার্যে রাঙানো প্রজাপতির দু'টি ডানা। কি অপরূপ-বর্ণাঢ্য সৃষ্টি। দু'টি বর্ণিল ডানায় ভর করে যখন তখন উড়ে বেড়ানোর স্বাধীনতা আছে তার। হাসান ভাবছে সেও যদি প্রজাপতির মতো ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে পারতো? প্রজাপতি নাকি সৌভাগ্যের প্রতীক। অতি সৌভাগ্যের বিলাসিতা নেই হাসানের। বিল দিয়ে হোটেল থেকে বের হয় হাসান। হাটা শুরু করে বাসার দিকে। আকাশের দিকে তাকায় সে। আকাশে চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় ভরে উঠেছে রাজধানীর পিচঢালা রাজপথ। হাসানের জীবনটা অমানিশার ঘোর অন্ধকারে ভরে রয়েছে। সে চায় সুন্দর স্থিতিশীল জীবন। নিরিবিলি কন্টকমুক্ত পথচলা। সে প্রত্যাশায় কতো ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করছে সে। কবে ধরা দেবে তার কাঙ্খিত সু-সময় ? পূর্ণিমার চাঁদের আলো হাসানের জীবনকে কবে আলোকিত করবে। কবে তার জীবনটা আলোয় আলোয় ভরে হয়ে উঠবে ?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Sisir kumar gain ভাল লিখেছেন।আরো লেখা পাব আশা করি। ধন্যবাদ ও শুভ কামনা।
সূর্য হাসানের দিনলিপি.........ওর জীবনে একটা পরিপূর্ণ গল্প ধরা দিক.....
স্বাধীন সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় চলে গেলে আর কিছুই করার থাকে না। তখন স্মৃতিগুলোই হয় সঙ্গী। প্যারা না থাকায় পড়তে বেগ পেতে হল।
মিলন বনিক হাসান কাহিনী...স্মৃতিময় পাতা..ভালো লাগলো..
শফিক আপনার গল্পটি একটানে পড়ে শেষ করালাম পড়ে খুব ভালোলাগল.............শুভ কামনা রইল...................
মাহবুব খান আপনার সুসময় আসুক /গল্প ভালো লাগলো
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ....................এইতো আমাদের জীবন। ভাল লিখেছেন, ভাল লাগল। শুভেচ্ছা রইল।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি valo lekha tobe chorchata aktu kom bole mone holo emnite valo laglo .....
আহমেদ সাবের হাসানের দুঃসময়ে সু-সময়ের স্মৃতিচারণা। মন্দ হয়নি। লেখাটায় কিছু প্যারা থাকলে পড়তে সুবিধা হত।

৩০ মে - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪