মায়ের প্রতি স্কুল শিক্ষক বাবার ভালোবাসা বুঝেছি তখন যখন দেখেছি সারারাত ধরে গোয়ালের বিশ-পঁচিশটা গরু যে গোবর জমাতো রোজ সকালে স্কুলে যাবার আগে তিনি তা’ পরিষ্কার করে নির্দিষ্ট ভাগাড়ে ফেলতেন (জমতে থাকা ওই গোবরগুলো প্রতি মৌসুমে রবি শস্যের সার হিসেবে ব্যবহৃত হতো)।
বাবাকে পরিশ্রমী হিসেবে দেখতাম দশজন সন্তানের ভরন-পোষণের জন্য এতোসবের পাশাপাশি তাঁকে ভোর থেকে দুই – তিন ব্যাচ প্রাইভেট পড়াতে হতো যাতে একটু টানা-টানি কমে। শুক্রবার-গুলোতে তিনি যেতেন জমি দেখাশুনার নামে কামলাদের সাথে গতর খাটাতে। জমির আইলে বসে তাঁর কাজ করা দেখতাম আর সন্ধ্যায় তাঁর কাঁধে চড়ে তারা-জ্বলা আকাশ দেখতে দেখতে বাড়ি ফিরতাম। লোকটা ক্লান্ত বাড়ি ফিরেও মায়ের রান্নায় হাত লাগাতেন।
পঁচাশি বছর বয়স্ক সেই গতর খাটানো আর গোবর ফেলানো বাবাও এখন গুগল – সার্চ বোঝেন। একদিন অফিসে কাজ করছিলাম হঠাৎ ফোন করে বাবা জানতে চাইলেন – গুগলে দেখোতো’ ইউনিভার্সের ওজন কত? আমি মোটেও আশ্চর্য হইনি। কারণ তিনি এমনই – প্রশ্নের উত্তরটা ছিল তাঁর লেখালেখির খাদ্য। এখনো তাঁর দিনাতিপাত হয় পড়ে কিংবা লিখে।
সময়ের সাথে মানিয়ে চলতে পারদর্শী এই বাবা খুব সৌখিনও ছিলেন – বর্ষা-মৌসুমে যেদিন বিকেলবেলা রোদ থাকতো কিন্তু বাতাস বইতো কম গ্রামের ভাষায় ‘নিরি-পড়া’ সেই দিনগুলোতে তিনি বের হতেন কুঁচ নিয়ে সৌখিন নায়ে চড়ে মাছ মারতে। আমরা যারা ছোট ছিলাম তাদেরকেও সাথে নিতেন। কখনো কখনো- বাড়ির বউদেরকেও নিতেন। আমরা চুপ করে বসে থাকতাম নৌকার মাচালে বাবা দাঁড়াতেন কুঁচ হাতে সামনের চরাটে। পেছন থেকে লগি দিয়ে আস্তে আস্তে নৌকা চালাতে হতো। লগি যে চালাতো তার নজর থাকতো বাবার বাম হাতের ইশারার দিকে। কোনো-কোনোদিন নৌকার ডওরা ভর্তি করে মাছ নিয়ে ফেরা হতো। মা আর দাদী খুব আনন্দ করে সেই মাছ কুটতেন আর রাঁধতেন। পাড়া-প্রতিবেশীদের বিলাতেও তাঁরা খুব মজা পেতেন।
‘সময়ের সাথে মানিয়ে চলতে পারদর্শী’- কথাটা বলার পেছনে ছোট্ট একটা ঘটনা আছে – তিনি ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সেকেন্ড ব্যাচের ছাত্র আর – তৎকালীন সময়ে ঢাকা কলেজ থেকে স্ট্যান্ড-করা। তাঁর বাবা মানে আমার দাদার মৃত্যুর কারণে – অর্থকষ্টে থার্ড – ইয়ার ফাইনাল না দিতে পেরে ডাক্তারির স্বপ্ন বাদ দিতে হয়েছিলো যে মানুষটিকে সেই মানুষটি টানা – পোড়েনের ভেতর দিয়ে ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয় থেকে স্রেফ গ্রাজুয়েশন করে স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিকাজ করে দিব্যি দশজন সন্তানকে মানুষ করেছেন এবং এই পঁচাশি বছর বয়সেও একটা স্কুলে স্বেচ্ছা-শ্রম দিয়ে চলেছেন। তাঁর জীবন নিয়ে কোনো কষ্ট-বোধ আছে কি-না আমরা সন্তান হয়েও আজো বুঝতে পারিনি...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।