হোমিওপানি

সবুজ (জুলাই ২০১২)

অসমাপ্তের সমাপ্তি
  • ১৫
  • ৯২
রাত্রীতে আনিদ্রাজনিত কারনে পপুলার নামক স্বনামধন্য হাসপাতাল এর একজন স্বনামধন্য সদ্য ডাক্তারী পাস করা,অল্পবয়সী,ডাক্তার মহোদয়ের সহিত সাক্ষাত করার দরুন হাসপাতালে পদচারণ করিলাম গত রাত ৮ টা নাগাদ।উনার কম্পাউন্ডার কহিল;উনি কিঞ্চিত বেস্ত আছেন,আপনি বসেন,উনি ফ্রী হইলে আপনাকে ডাকা হবে। বলিয়া রাখা ভালো;-অল্পবয়সী,সুদর্শন ডাক্তার সাহেবের,আনুমানিক ১৮ কী ১৯ বছর বয়সী সাবালীকা কম্পাউন্ডার এর মুখশ্রী একবার দেখিয়া আরেকবার দেখিতে মন সায় দিলনা। তাহার শ্রী-পানে ২ বার চাহিবার জো থাকিলে,অপেক্ষমাণ মিনিট বিশেক উনার সহিত খোশগল্প করিয়া কাটাইয়া দিতাম। ডাক্তার সাহেবের সহিত দেখা হওয়ার আগ- মুহূর্তে চেয়ারে বসিয়া বসিয়া ভাবিতেছিলাম যে এরূপ সুদর্শন একজন ডাক্তারের কম্পাউন্ডার,কী করিয়া এরূপ শ্রী- সম্পন্ন হয়¿?আধ্ঘন্টা পর ডাক্তার সাহেবের কম্পাউন্ডার এর সাড়া পাইয়া প্রসন্ন মনে ডাক্তার সাহেবের সামনে সুসজ্জিত ভাবে পেতে রাখা চেয়ার দু'টাতে বসিলাম আমি আর আজ অবধি আমার দেখা মজার মানুষগুলোর একজন রিপন ভাই।উনার কথা আজ নয়,আরেক্দিন বলিব। উনিযে শুধু মজার মানুষ, তা নহে,উনার চরিত্রে হিমুসূচক কতক গুণাবলী সুস্পষ্টত লক্ষণীয়।তা যাহাইহোক প্রথমেই যাহা আমার দৃষ্টিগোচর হইল তাহা হইল;ডাক্তার সাহেব লেপ্টপ নামক আধুনিক কম্পিউটারে মুখ গুঁজে আছেন। কম্পিউটারে মডেম সংযোগ রহিয়াছে দেখিয়া আন্দাজ করিলাম হয়তো উনি ফেসবুক নামক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বন্ধুদেরকে বলিতেছে,কিছুক্ষণ আগে ২ জন রুগী নামক প্রজার কাছ থেকে জমিদার রুপে কত টাকা খাজনা বাবদ আদায় করিয়াছে। ভাবিলাম; এই মুহূর্তে যদি ডাক্তার সাহেব কে নিম্বাজ নামক ওয়েব সাইটে আমার চেট- রুমে পাইতাম,অনতিবিলম্বে 'কিক' মারিয়া জোর পূর্বক রুমে থাকা অন্যান্য ইউজার দের কাছে নিজেকে বিশাল ক্ষমতাশালী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করিতাম। যাইহোক,একবার ফেসবুকের নটিফিকেশন দেখে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিলাম,ফেসবুকে আসিয়া আমার ওয়ালের একটা পোস্ট এর কমেন্ট ও করিলাম,আবার বের হইয়া আসিলাম। প্রথমবারের মতো উনার চক্ষু দেখিয়া উনাকে লইয়া করা আমার পূর্বের মন্তব্য ভুল মনে হইল। আমার মনে হইল উনি ইন্টারনেট ব্যবহার করিয়া আমার আগের ছিরিয়াল নম্বর-ধারী বলদা টাইপের রুগীটার নির্ণীত রোগের সর্বাধুনীক ঔষধ খুঁজিতেছেন। আমার এবারের ধারনার সত্যতা পাইলাম যখন দেখিলাম ডাক্তার সাহেব উনার কম্পাউন্ডারকে কী একটা কাগজের মতন
হাতে ধরাইয়া দিয়ে কহিলেন;'এই ঔষধ টা বানিয়ে দাও আর উনার কাছ থেকে ---- টাকা রাখ।' ডাক্তার সাহেব এর জরুরী হাতের কাজ টা সারিয়া প্রায় আধ্ঘন্টা পর মুখ ঘুরাইলেন আমাদের দিকে।!! উনি ডাক্তার মানুষ,বেস্ত থাকা টা উনার ই মানায়।আমি মনে মনে কহিলাম'বেপার না,কিছু মনে করিনাই' ডাক্তার সাহেবের জেরা আরম্ভ হইল;
-রুগী কে?
আমি।
জেরা করার সুবিধার্থে উনি আমার দিকে মুখ ঘুরাইয়া লইলেন।
-নাম?
হীরা।
উনি 'ইরান'লেখিলেন,আমি কিছুই কহিলাম না,উনি আমার বাবা-মা'র দেয়া নাম পরিবর্তন করে দিলেন তা দেখিয়াও আমি মুখ বুঝিয়া রইলাম। কিছু মনে করিলাম না।
-বয়স?
২১
-পেশা?
ছাত্র -কোথায় পড়েন?
ভার্সিটি এডমিশন টেস্ট দিব। উনি কী যেন একটা ভেবে নিলেন,তারপর আবার কহিলেন;-
কন্টাক্ট নাম্বার?
০১৮২৯....৩৫
উনি ৪ ধাপে শুনিয়ে শুনিয়া লিখিলেন। প্রাথমিক জেরা শেষ করিয়া উনি আমার দিকে চাহিলেন।
-কী সমস্যা বলেন?
আমি খুলিয়া কহিলাম; টেনশন-বিহীন ফাঁকা মাথা থাকা সত্ত্বেও রাত্রীতে নিদ্রা আসেনা,যাহার ফলে প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির বিপরীত গতিতে ওজন কমিতেছে,শরীরে দুর্বলতা অনুভব করি। আমার কথা শুনিয়া ডাক্তার সাহেব আতি- সুকৌশলে উনার ৩২ খানি দন্ত বের করিয়া আমাদেরকে দেখাইলেন,কিন্তু তা দেখিয়া আমি পড়িলাম আরেক টেনশনে;
আমার চোখেরো কী দৃষ্টিশক্তি কমিয়া গেলো নাকি? শুনিয়াছিলাম যে সৌখিন মানুষেরা শখ করিয়া ২/১ টা দন্ত স্বর্ণ দিয়া বানাইয়া কৃত্রিম ভাবে মুখে লাগায় আর সুযোগ পাওয়া মাত্রই অকারনে হাসিয়া দিইয়ে সবাইকে দেখাইয়া দেয়। আমি ডাক্তার সাহেবের মুখে কোন স্বর্ণ দন্ত না দেখিয়া পড়িয়া গেলাম মহা টেনশনে.. ডাক্তার সাহেব প্রাথমিক জেরা শেষ করিয়া মূল জেরা আরম্ভ করিলেন- -বাবা কি করেন?
স্কুল শিক্ষক। অসুখ আমার,এর ভিতর বাবাকে কেন টানিয়া আনা হইল বুঝিলাম না,কিছু কহিলামওনা।উনি বিশাল জ্ঞানের আঁধার।রোগ
নির্ণয় ক্ষেত্রে ইঁহার কোন যোগসূত্র থাকিতেও পারে।-আগে কী ঔষধ খেতে,হোমিওপ্যাথিক নাকি এলোপ্যাথিক? দু'টাই তবে আমার বাবার হোমিওপ্যাথিকের প্রতি কিঞ্চিত আস্থা বেশী রহিয়াছে। ছেলেবেলায় একবার আমার বাম পায়ে এলার্জির মতন হইয়াছিল।কোন এলোপ্যাথিক ঔষধে যখন কাজ করিতেছিল না আর অবস্থা যখন প্রকট আকার ধারন করিতে থাকিল তখন বাবা কাহার পরামর্শে যেন হোমিওপ্যাথিক সেবন করাইয়া আশানুরুপ ফল পাইলেন। এরপর থাকিয়া হোমিওপ্যাথিক কে উনি সকল রোগের মহৌষধ ভাবিতে লাগিলেন আর পরিবারের কাহারো সামান্য সর্দি- কাশিতে উনি ছুটিয়া যাইতে লাগিলেন শামছুল ডাক্তারের কাছে। -চিকিৎসা কোথায় করিয়েছ?
শামছুল ডাক্তারের কাছে।
-সেটা না,দেশ কোথায়?
বাংলাদেশ।
- আরেহ,বাড়ি কোন জেলায়?
জামালপুর।
-হুম।
ডাক্তার সাহেব এমনভাবে 'হুম' কহিলেন,যেন আমার জেলার নাম শুনিয়া উনি আমার রোগ ধরিয়া ফেলিলেন। ইহারপর উনি আরো কতক প্রশ্ন করিয়া পস্রাব,পায়খানার স্বাভাবিকতা জানিয়া লইয়া উনি আমার সাথে এমন আচরণ আরম্ভ করিলেন যাঁহাতে মনে বুঝিলাম,উনি আমার সহিত উনার ভগ্নীর সম্মন্ধ করাইতে চাহিতেছেন। আবার পড়িলাম ভাবনায়;আমারতো এখনও বিয়ে করার বয়স হয়নাই¿!? উনি প্রশ্ন করিলেন;
-প্রিয় খাবার কী?
-মাছ/মাংস/ডিম?
মাংস আর ডিম।
-ভাজা ডিম নাকি সিদ্ধ ডিম?
ভাজা। - ডাক্তার সাহেব দ্বিতীয়বারের মতো উনার মুখের অদৃশ্য স্বর্ণ-দন্ত বাহির করিয়া দেখাইলেন। অজ্ঞাত কারনে আমি এবার্ও তাহার স্বর্ণ-খচিত দন্ত-পাটী দেখিতে পারিলামনা। এবার ডাক্তার সাহেব উনার জেরা থামাইলেম আর উনার লেপ্টপের স্ক্রীনে চোখ গুঁজিলেন। আমার পাশ থেকে এতক্ষণ নীরবরত পালনকারী রিপন ভাই ডাক্তার সাহেবকে নালিশ জানানোর স্বরে কহিল;'উনি কিন্তু সকালের খাবার দুপুরে,দুপুরের টা রাতে আর রাতের খাবার কদাচিৎ মধ্যরাতে খায়,বেশীরভাগ সময় খায়না। ডাক্তার সাহেব শুনিয়া না শোনার ভান করিলেন। হয়তো উনি আনিদ্রাহীনতা রোগের জন্য ঔষধ হিসেবে যে ফর্দ করিলেন,রুগী সম্পর্কে নতুন কিছু শুনিয়ে তাহা পরিবর্তন করিতে চাহিলেননা তাই ঔষধের ফর্দ টা চিরকুটের মতন কম্পাউন্ডারকে দিয়া পুনরায় আমার দিকে মুখ ঘুরাইলেন আর কহিলেন;' ৪০০ টাকা কম্পাউন্ডারকে জমা দিয়ে ঔষধ নিয়ে যাবেন।কোনরকম দুঃচিন্তা করবেন্না,বেশী বেশী পানি খাবেন,রাত ১২ টা নাগাদ ঘুমোতে যাবেন আর সকাল ৬ টা নাগাদ উঠবেন আর এক সপ্তাহ পর দেখা করবেন।' ডাক্তার সাহেবের কথা আমি বাবার বাধ্যগত সন্তানের মতন শুনিয়া লইয়া উনার কথামতো উনার কম্পাউন্ডারকে ৪০০ টাকা দিলেম,আর উনি আমাকে ৪ শিশি হোমিওপানি দিলেন। শিশি ৪ টির মুখ খুলিয়া আমার মাথায় ঢালিয়া দিলেও চুল ভেদ করিয়া মাথার তালু ভিজিবে কিনা এই বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে, এইটুকুন পানি নাকি আমাকে ড্রপার দিয়া ধাপে ধাপে খাইতে হইবে,প্রতিদিন দুইবার,১০ ফোঁটা করিয়া,স্পষ্টত
জানাইয়া দিলেন কম্পাউন্ডার.. শখ করিয়া ডাক্তারের কাছে আসিয়া ৪০০ টাকা আক্কেলসেলামী দিয়া,হোমিওপানি লইয়া বাসায় আসিলাম। রাত ১১ টা ৪৫ মিনিট,আমি ঘুমোতে যাওয়ার আগে মোবাইলে সকাল ৬ টায় অ্যালার্ম দিলেম। সকাল ৬ টায় রিংটোন বাজার বদৌলতে ডাক্তার যেন কহিতে লাগিলেন;'ইরা....ন ইরা..ন,ইরান,উঠুন,..... খালিপেটে ১০ ফোটা হোমিওপানি খেয়ে নিন।'
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অসমাপ্তের সমাপ্তি অসংখ্য ধন্যবাদ মন্তব্যকারীদের প্রতি... ভুলগুলো সুধরে দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা রইল, প্রায় ৫ বছর পর পুনঃপ্রত্যাবর্তন করলাম গল্পকবিতায় :-)
Sisir kumar gain ভাল লাগল গল্পটি।তবে সাধু চলতি ভাষার মিশ্রন এড়িয়ে চলতে হবে।
মাহবুব খান রম্য লেখা অনেক ভালো লাগলো
আহমাদ মুকুল আপনার রম্য পড়িয়া মজা পাইলাম। চূড়ান্ত মজা পাইতাম যদি আরেকটু সতর্কতাপূর্বক সাধু-চলিত ভজঘট এবং কিছু অসাবধান বানান-ত্রুটি দুর করা যাইতো। আরো লিখিবেন নিশ্চয়ই।
দিপা নূরী বেশ ভালো লাগলো রম্য গল্প।
Sujon হোমিওপানি এর সাথে সবুজ এর মিল পেলাম না.............
সিয়াম সোহানূর রম্য বলার ঢংটি সত্য ভাল লাগল । লেখাটির আগাগোড়া আনন্দে মোড়ানো। অভিনন্দন সুন্দর লেখা উপহার দেয়ার জন্য।
আহমেদ সাবের সুন্দর একটা রম্য-রচনা। বেশ কিছু মজার বাক্য পেলাম। কিছু বানান ভুল আর দুর্বল বাক্যগুলো ঠিক করে নিলে একটা ভাল রম্য-রচনা হিসাবে গণ্য করা যাবে।
স্বাধীন অনেক বানান ভুল, আর সাধু-চলিত এক মোহনায় মিলেছে বহুবার। শব্দের কিছু রূপ যেমন নিরবরত পালন কারী, আনিদ্রাহীনতা হয়তো ঠিক হয়নি। আবার কিছু পাঞ্চ লাইন "তাহার শ্রী-পানে ২ বার চাহিবার জো থাকিলে,অপেক্ষমাণ মিনিট বিশেক উনার সহিত খোশগল্প করিয়া কাটাইয়া দিতাম।" বেশ ভাল লাগল। আরেকটু রিভিসন দরকার ছিল। সব মিলিয়ে ভাল রম্য
সূর্য রম্য ভাল লাগলো তবে "কম্পিউটারে মডেম সংযোগ রহিয়াছে দেখিয়া আন্দাজ করিলাম হয়তো উনি ফেসবুক নামক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বন্ধুদেরকে বলিতেছে,কিছুক্ষণ আগে ২ জন রুগী নামক প্রজার কাছ থেকে জমিদার রুপে কত টাকা খাজনা বাবদ আদায় করিয়াছে"। এমন বাক্যগুলো ভেঙ্গে একটু সুন্দর করে সাজালে অসাধারণ গল্প হয়ে উঠতো।

০৪ মে - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী