মাদক

অন্ধকার (জুন ২০১৩)

রফিকুল ইসলাম সাগর
  • 0
ছেলেটা প্রতিদিন নেশা করে। এমন কোনো মাদক দ্রব্য নেই যা সেবন করা হয়নি। মহল্লার সবাই তাকে খারাপ জানে,বখাটে বলে। কিন্তু কেউ জানেনা কেন ছেলেটা নেশা করে। সবার সাথে মিশেনা সে, কথা কম বলে। তার বন্ধু শুধু মাদক সেবকরা। বুক চাপা কষ্ট তার। মাদক সেবন করে সব কিছু নাকি ভুলে থাকা যায়। কোথায় কী হয়েছে সেই খোজ খবর তার কাছে নেই তারপরেও মহল্লায় যখন কোনো খারাপ কিছু ঘটে তখন সবাই ছেলেটাকেই সন্দেহ করে। নেশা খোররা নাকি মাদক কেনার টাকা জোগাতে সব কিছুই করতে পারে। মাঝে মাঝে নিজের ঘর থেকে টাকা চুরি করলেও অন্যের ঘরের কিছুতে হাত দেয় না ছেলেটা। তার পরেও সমাজের প্রতিটা মানুষের অপবাদ মাথায় নিয়ে বেচে আছে সে। ছেলেটা জানে সে নির্দোষ। যারা নেশা করে সবাই তাদের খারাপ জানে এই কথা সে জানে,আরো জানে নেশা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। তারপরেও সে নেশা করে,আত্মার তৃপ্তি যোগাতে,শান্তি পেতে,নিজেকে নিয়ে মগ্ন থাকতে আর ভাবতে। ছেলেটা কেনো নেশা করে? কেনো এই অন্ধকার পথে পা বাড়িয়েছে?
ছেলেটার নাম রমজান। যখন থেকে বুঝতে শিখেছে এমন কোনো রাত নেই যে রাতে বাবা-মাকে ঝগড়া করতে দেখেনি। প্রতিটা রাত সে ঘুমাতে পারেনা। বাবা-মায়ের উচ্চ সূরে ঝগড়ার শব্দ রমজানের ঘর থেকে শুনতে পাওয়া যায়। রাত কাটে আতংকে,এই বুঝি ঝগড়া শুরু হবে। রমজানের প্রতি বাবা-মায়ের কোনো দৃষ্টি নেই। ছেলেটা কোথায় যাচ্ছে? কার সাথে মিশছে? কী করছে এসব নিয়ে কারো মাথা ঘামানোর সময় নেই। বাবা-মা কাজ আর ঝগড়া নিয়ে খুব ব্যস্ত।
আজ বাবা-মা দুজনেই বাসায়। সকাল থেকেই একজন আরেকজনের সাথে লেগেই আছে। ঘুম থেকে উঠে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে রমজান বলল মা তোমরা একটু ঝগড়া বন্ধ করবে? আর কত? কিছুক্ষণের জন্য তারা চুপ হয়ে গেলো। একটু পর মাকে আগে কথা বলতে শোনা গেলো তারপর এভাবে শুরু হয়ে গেলো ঝগড়া। বাবা-মায়ের প্রতিদিনের ঝগড়ার কারনে কোনো মেযের সাথে সম্পর্কে জড়াতে ভয় পায় রমজান। তার মতে একটি ছেলে আর একটি মেযের সম্পর্ক মানে হচ্ছে ঝগড়া। তাই ঠিক করেছে কোনোদিন বিয়ে করবে না। ঘরে শান্তি পাওয়া যাচ্ছে না। খুব অস্থির লাগছে। বন্ধু সবুজকে ফোন করে বলল সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থাকার জন্য দু'জন মিলে কুমিল্লা যাবে। প্রায় সময় রমজান বন্ধুদের সাথে দূর দুরান্তে চলে যায়। তিনদিন,চারদিন কখনো সপ্তাহ পার হয়ে যায় বাড়ি ফিরে আসে না। কুমিল্লা যাওয়ার বাসে উঠার আগে পরিচিত একজন মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মাদক কিনে নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস ছাড়বে। একটি চিপা গলিতে গিয়ে ঝটপট অল্প কিছু মাদক সিগারেটে ভরে টানতে থাকে রমজান ও সবুজ। মাতাল হয়ে তারা দু'জন বাসে উঠে বসে। পকেটে আরো কিছু মাদক সিগারেটে ভরা আছে বাস যাত্রা বিরতি দিলে তখন নেমে টানবে। চলতি পথে পুলিশের চেক পোস্টে বাস থামানোর নির্দেশ দেয়া হয়। দু;জন পুলিশ বাসের ভিতরে তল্লাশি শুরু করে। রমজান ও সবুজ দু'জন চুপ করে বসে আছে। তাদের পকেটে মাদক। দু'জনই ভয় পাচ্ছিলো। মাদক জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই পুলিশ পুরো বাস টিকে ঘিরে রেখেছে। তল্লাশি শেষে পুলিশ বাস থেকে নেমে গেলো কিন্তু রমজান ও সবুজকে তল্লাশি বা প্রশ্ন করেনি এতে তারা খুব খুশি। কুমিল্লা বাস টার্মিনাল পৌছানোর পর বাস থেকে নেমে মাদক সেবন করার জন্য জায়গা খুচ্ছে দুজনে। কুমিল্লার বন্ধু তমাল এতক্ষণে বাস টার্মিনালে থাকার কথা। কিন্তু তাকে দেখা যাচ্ছে না। হাটতে হাটতে সামনের দিকে এগিয়ে পেয়ে যায় খোলা মাঠ। চারদিকে মানুষের আনাগোনা নেই। ঝটপট দুজনে মাদক সেবন করে নেয়। এরই মধ্যে বন্ধু তমাল হাজির। মোবাইলের সুইচ অফ করে দেয় রমজান যেন কেউ ডিস্টার্ব করতে না পারে। ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় গিয়ে তিনজন ডুবে যায় মাদকের মাঝে। এভাবে অতিক্রম হয়ে যায় তিনদিন। ওদিকে রমজানের বাবার অবস্থা খুব খারাপ। স্ট্রোক করার পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রতি মিনিটে মিনিটে মা রমজানকে ফোন করছে কিন্তু মোবাইল বন্ধ।
রমজান ডুবে আছে মাদকের অন্ধকার জীবন নিয়ে। টাকা ফুরিয়ে এসেছে। বাড়ি ফিরতে হবে। বাস টার্মিনাল পর্যন্ত এসে পকেট থেকে টাকা বের করে হিসেব করে দেখা যায় যা টাকা আছে বাস ভাড়ার জন্য পর্যাপ্ত না। কী করা যায়? তারা ঠিক করল লুকিয়ে বাসের ছাদে উঠে বসে থাকবে। যথা সময়ে বাসটি ঢাকার উদ্যেশ্যে ছাড়ল। চলতি পথে বাসের চালক ছায়া দেখে বুঝল বাসের ছাদে কেউ আছে। বাস থামিয়ে হেলপারকে নির্দেশ দেয়া হলো দেখতো বাসের ছাদের উপর কারা। হেলপার গিয়ে দুজনকে নামিয়ে এনে বলল ওস্তাদ এরা ছিল।
বাসের চালক দুজনকে গালাগাল করল। এক পর্যায়ে রমজান বলল আপনারা কালু ভাইরে চিনেন? হ্যা চিনি। কালু ভাই আপনাগো কী হয়? আমগো আত্বীয় হয়।
আরে কন কী আগে কইবেন না আপনারা কালু ভাইয়ের আত্বীয়। ভাই আপনাদের যে গালাগাল করছি কালু ভাইরে কইবেন না। আচ্ছা ঠিক আছে বলবোনা। ওই হেগোরে দুইডা সিট্ খালি কইরা দে,বেনসন সিগারেট দে ! বলে চালক বাস চালাতে থাকল। কালু ভাইয়ের নাম বেচে রাজকীয় ভাবে দুজন ঢাকা পৌছালো। কালু ঢাকা শহরের শীর্ষ সন্ত্রাসী। বাড়ি ফিরে মাকে একটু দুঃখী মনে হলো রমজানের। এ আর নতুন কী মনে হয় বাবার সাথে ঝগড়া করেছে এই ভেবে নিজের ঘরে চলে গেলো মায়ের সাথে কথা না বলে। মা একটু পর রমজানের ঘরে প্রবেশ করে কাদতে থাকে। কী হয়েছে? মাকে প্রশ্ন করে রমজান।
তোর বাবা আর নেই। তোকে অনেকবার ফোন করেছি তোর মোবাইল বন্ধ ছিল।
বাবার এরকম একটি সংবাদ পেয়ে রমজান একটি কথাও বলতে পারে না। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় তার। শপথ করে আর মাদক সেবন করবে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রোদের ছায়া (select 198766*667891 from DUAL) সুন্দর গল্প । মাদকের হাত থেকে মুক্ত হবার ইচ্ছা রমজানকে আলোকিত করবে হয়তো ।।
ঝিনুক রিমঝিম সুন্দর ভাবে সাজানো পজেটিভ একটা গল্প। বাস্তবতার সাথে মিল আছে।
মিলন বনিক ছোট ছোট খন্ড খন্ড করে লেখা গল্পটা বেশ চমৎকার....গল্পের সাবলীল গতিময়তা মুগ্ধ করেছে....খুব ভালো লাগল...শুভকামনা...
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,আশা করছি আগামীতেও এভাবে মতামত জানিয়ে পাশে থাকবেন। ভালো থাকুন।
F.I. JEWEL N/A # বাস্তবতার আলোকে বেশ সুন্দর একটি গল্প ।।
সূর্য N/A অনেক হারানোর পর ফিরে আসা হুশ যদি বহাল থাকে যে এখনো বেঁচে আছে তার কিছুটা শান্তনা থাকবেই। রমজান ফিরেছে মাদকের কালো থাবা থেকে এটাই গল্পের বড় পাওয়া। গল্পের শেষে পজিটিভ দিকটা ভালো লাগলো বেশ।
আপনার সুন্দর মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
তাপসকিরণ রায় সাদামাটা গল্প--সাজাবার বিশেষ কৃতিত্ব এতে নেই।তবু ভাবনার তারিফ করি।
মোজাম্মেল কবির ততোক্ষণে কিন্তু যা হারাবার তা হারিয়েছে রমজান...
মতামতের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

০৩ মে - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫