মেয়েটি কি আমায় ভালোবাসে? হয়তো। মেয়েটি কি আমায় বোকা ভাবে? হয়তো। আমি কীভাবে জানব তার মনের কথা? এই বয়সী মেয়েদের মনে কত বিচিত্র ভাবনা বাস করে। নবম- দশম বা কলেজ পড়ুয়া।কত বাঁধা , কত সীমাবদ্ধতা, কত অনিশ্চয়তা নিয়ে চলতে হয়।কখনও অগোছালো অথবা ঝড় হাওয়া অবাধ্য চুলের মত। কখনও ছবির নায়িকা, কখনও কবির প্রেমিকা। কখনও আবার পাড়ার সব থেকে ভদ্রছেলেটির প্রেমে পড়ে নিজেকে উজাড় করে দিতে চাওয়া।বয়ঃসন্ধির সময়। অস্থির সময়। সামান্য অভিমান হয়ে উঠে জীবনের কাঁটা। আমি কীভাবে বলব তার চাহনি আমার প্রতি প্রেম না অস্থিরতা? নাকি প্রথম প্রেমে পড়া? যা মনকে আন্দোলিত করে অতুলনীয় অনাগত স্পর্শে। মেয়েটিকে আমি চিনি। দীর্ঘদিন ধরে। নাম ইতি । তার পরিবারকে অল্প অল্প চিনি।নানা বাড়িথাকে। বাবা নেই।ছোট বোন আছে। ইতিকে চিনি দেড়- দু বছর। আগে কখনও ছাঁদে দেখিনি। দেড়- দু বছর ধরে দেখছি। তাও টের পেতাম না যদি ছাঁদে না উঠত, আমার দিকে তাকিয়ে না থাকত। রোজ উঠে রুটিন করে। এক বার তাকালে বার দেখতে ইচ্ছে করে।একটা সময় অনবরত চেয়ে থাকাতাম দুজন, অনিমেষ। কখনও চোখ নামিয়ে নিত হাসিতে। আমার জানালার ঠিক মুখোমুখি। কিশোর বয়সে রোজ বিকেলে ছাদে উঠতাম। সেই সময় মন হত কেন সব মানুষ বিকেলে ছাদে উঠে না? কেন মানুষ বিকেলে কাজে বাস্ত থাকে?বিকেল সময়টা শুধু ছাদে উঠার সময়; অন্য কিছু না। হয়তো আজ মেয়েটি আমার মত ভাবছে। ছাদে উঠার সময় চলে গেল, ঘুড়ি উড়ানোর সময়, এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে গভীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকার সময়। হঠাৎ পাওয়া মেয়েটির জন্য আকাশ দেখি এখনও জানালায়। একটা সময় আকাশে তাকাতে তাকাতে চোখ পড়ত মেয়েটির ছাদে। মেয়েটির মত রুটিন করে আমি জানালায় আকাশ দেখতাম । কখনও দুজন আকাশ দেখি কখনও বা দুজন দুজনকে। আমার জানলায় চেয়ে থাকতে দিনের পর দিন মেয়েটি শুধু হাসে, কোন ইশারা করত না।আযান দিলে নেমে পড়তো জামাকাপড় নিয়ে। জামাকাপড় কি উসিলা? আমাকে দেখার জন্য। তাও জানি না। মেয়েটির নিরব ভুমিকায় অধৈর্য হয়ে উঠলাম। ইশারা বলতে হাসি টুকুই। আবারও মনে হতে থাকল সত্যি কি মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে? নাকি অন্য কোথাও? এভাবে বছর পেরিয়ে গেল। আর পারলাম না ।একটি আর্টপেপারে বড় বড় করে লিখলাম ‘তোমার মোবাইল আছে?’ ‘নাম্বারটা কি দেয়া যায়?’ জানলার কাছে এনে ধরতাম। মেয়েটির কোন উত্তর পেতাম না। আমার নাম্বারটা বড় বড় করে লিখলাম। পরের দিন লিখলাম, ‘ তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?’ তাও উত্তর পেতাম না। প্রায় প্রায় মেয়েটির সাথে দেখা হত রাস্তায়; আমাকে চিনতো না। না দেখার ভান করত। বিষয়টা আমার কাছে অসহ্য লাগত। এতো দিন ধরে চোখাচোখি হচ্ছে যার সাথে সে কিনা আমাকে না চেনার ভান করে! জেদ চেপে বসল। কোন ইশারা না দেয়া পর্যন্ত আমি নিজ থেকে কিছুই করব না। যা হবার হবে। কি হবে? কিছুই তো হয়নি মেয়েটির সাথে ফ্যালফ্যাল করে বছর দু এক তাকিয়ে থাকা ছাড়া।অনেকটা সময় চলে গেছে। মেয়েটি পাল্টে গেছে। মেয়েটির মুখ দেখা যায় না, হাসি দেখতে পারি না। দেখতে পারি পিঠটা। মুখ ফিরিয়ে নিল কোন অভিমানে? মেয়েটি কি ভেবে নিয়েছে? নির্বোধ বোকা ভীতু মানুষের সাথে প্রেম করা যায় না। মেয়েটি কি ভেবে নিয়েছে? যে ছেলে কি-না অন্য ছেলেদের মত স্কুল শেষে দাঁড়িয়ে থাকে না, কোচিং শেষে দাঁড়িয়ে থাকে না, পিছু পিছু যায় না। বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করে না, তার সাথে প্রেম করা যায় না। হয়তো মেয়েটি ঠিক। প্রেম করতে যোগ্যতা লাগে সেই যোগ্যতা আমার নেই, হয়তো সবার থাকেও না। হয়তো মেয়েটি ঠিক। আমি নির্বোধ বোকা ভীতু। যে ছেলেরা কিনা মেয়েদের মন জয় করার জন্য কিছুই করে না সেই ছেলেদের মেয়েরা ভালোবাসবে কেন? ভীতুরা জানালায় আকাশ দেখে হৃদয় পোড়ানো ছাই আকাশে উড়ায় নির্বোধরা আকাশ দেখতে দেখতে ভালোবাসা হারায়।
হয়তো মেয়েটিও আকাশ দেখতে দেখতে হারিয়ে যায় অন্য কার সাথে। তুমিই ঠিক আমি নির্বোধ বোকা ভীতু। আমি জানালায় আকাশ দেখি এখনও, যদিও অনেকটা দেখা বাকি। হঠাৎ পাওয়া ভালোবাসা হারিয়ে যাওয়া এক অসীম দিগন্ত...।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।