সাইফের সরলতা

সরলতা (অক্টোবর ২০১২)

এস এম অাখতারুজ্জামান
  • ১২
  • ৭৬
দুই বন্ধু একসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। সাইফ আর রায়হান। ক্লাসের সবাই সাইফকে একটু বোকা, সহজ সরল বলে জানে। একেকদিন একেক রকম কান্ড ঘটিয়ে থাকে বলে সবাই ওকে বোকা মনে করে। তো সাইফ একদিন বই কেনার জন্য নীলক্ষেত গেল এবং যথারীতি একটি বই কিনে নিয়ে আসল ২৭০/= টাকায় । এর পরের দিন রায়হান সেই একই বই ২০০/= টাকায় কিনে নিয়ে আসে । ক্লাসে জানাজানি হলে এ নিয়ে হাসির রোল পরে যায়। অন্যদিকে বেচারা সাইফ ভিষণ মন খারাপ করে বাসায় চলে যায়।


কয়েকদিন পরে বাবু , সুমন ও সাহিদা দুষ্টামী করে সাইফের নোট খাতা ও বই নিয়ে লুকিয়ে রাখে, সাইফ নোট খাতা ও বই না পেয়ে স্যারকে বলে দেয় অন্যাদিকে ওরা টের পেয়ে নোট খাতা ও বই সাইফের ব্যাগের পিছনের পকেটে রেখে দেয়। ক্লাসে স্যার বলে ওর নোট খাতা ও বই যে নিয়েছো দিয়ে দাও নইলে সবাইকে বেতের বারী খেতে হবে । রায়হান বলল স্যার ঠিক আছে, তবে আগে সাইফের কাছেই চেক করা যাক, তো যথারীতি সাইফের ব্যাগ চেক করতেই নোট খাতা ও বই পাওয়া গেলে ক্লাসে সবাই হেসে ওঠে। আর বেচারা সাইফ কেদেঁ ফেলে।


কয়েকদিন পরে একদিন সাইফ ধানমন্ডি ২৭ থেকে শ্যামলী যাওয়ার জন্য বাসে ওঠে । বাসের সুপারভাইজার তার কাছে থেকে সিটিং গাড়ীর কথা বলে ১৫/= টাকা বাস ভাড়া নেয়। সাইফ বেচারা সুপারভাইজারকে কিছুই বলতে পারে না।
আর এই কথা কিভাবে যেন রায়হান জেনে যায় এবং ক্লাসে তা নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে । বেচারা সাইফ শুধু বাম্বু খেয়েই যাচ্ছে।

তাই সা্ইফের মনের অবস্থা খুব খারাপ আর রায়হান সাইফের মনের অবস্থা বুঝে তাকে ধানমন্ডি লেগে ঘুরতে নিয়ে গেল । নানা কথায় রায়হান সাইফকে বলল, আসলে দোষ তো তোর না আমাদের দেশের নিয়ম-কানুন থেকেও তার বাসত্দবায়ন ও নিয়ন্ত্রন না থাকার দরম্নন এরকম তোকে ঠকতে হচ্ছে, আর তুই যে একা ঠকছিস তা কিন্তু নয় এরকম অনেকেই প্রতিনিয়ত ঠকে যাচ্ছে। তাই মন খারাপ করিস না শুধু একটি হিসেব করে চলবি বুঝলি । সাইফ হু। এভাবে দুই বন্ধুর বিকেল টা কেটে গেল।


কয়েকদিন পরে.........

ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অনেকদিন ধরেই ঝামেলা চলছে। সুবজ দলের প্রভাবে নীল দল ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছে না । নীল দলের বারেক, নঈমুল, শফিউলরা সন্ধ্যা থেকেই রাজু চত্তরে অবস্থান নিয়ে আছে সবুজ দলের নেতা রমজানকে ধরার জন্য। বিভিন্ন ক্যাডার রা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে আছে । এদিকে সাইফের সন্ধ্যায় প্রাইভেট থাকায় সে নীলক্ষেতের রাস্তা হতে রাজু চত্তরের দিকটায় আসছে । সাইফ কাছাকাছি চলে এসেছে টের পেয়ে বারেক শফিউলকে বলে কে যেন আসছে শালাকে ধরতে হবে অন্যদের শিষ দিয়ে জানিয়ে দেয় শফিউল । সাইফ কাছে এলে সবাই মিলে ধর ধর বলে ওর উপরে ঝাপিয়ে পরে এবং ওকে ধরে ফেলে । সাইফ চিৎকার করে বলে তোমরা কারা ? তোমরা কেন আমাকে ধরেছো ? আমি তো প্রাইভেট পরতে যাচ্ছি..। শফিউল বলে শালা চুপ কর আজ আমরাই তোকে প্রাইভেট পড়াবো বলে ওরা সাইফকে কিল ঘুশী দিয়ে হলের ভিতরে একটা রুমে নিয়ে যায়। সাইফকে রুমে আটকে রেখে জিঙ্গেস করে বল শালা তোর নেতা রমজান কোথায়। সাইফ বলল দেখ আমি খুবই সহজ-সরল একটা ছেলে আমি এসব কিছু জানি না আমি রাজনীতি বুঝি না আমাকে ছেড়ে দাও। সাইফের কথা শুনে সবাই হেসে দিল। ওকে চেয়ারের সাথে বেধেঁ রাখল।


এেিদকে রায়হান দেখল প্রায় ৭ টা বেজে আসছে কিন্তু সাইফ তো আসছে না পথে কোন ঝামেলা হলো নাকি। তাই সাইফকে ফোন দিল, ফোন বাজছে কিন্তু কেউ ধরছে না এভাবে দু'বার রিং হওয়ার পরে নঈমুল ফোন ধরে বলল ওকে আমরা আটকে রেখেছি আমাদের দাবী না মানলে ওকে ছাড়বো না । রায়হান বলল দেখো ও কোন দলের লোক নয় তোমরা ভুল লোক কে ধরেছো ও রাজনীতি বুঝে না প্লিজ ওকে ছেড়ে দাও। নঈমুল বলল ও সবুজ দলের লোক ওকে তো আমরা ছেড়ে দিতে পারি না । ক্যাম্পাসে আমাদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত তো ওকে ছেড়ে দেওয়া যায় না । বলে ফোন কেটে দিল।



এভাবে অস্থিরতায় প্রায় তিন চার ঘন্টা কেটে গেল হঠাই খবর এল সবুজ দলের নেতা রমজান গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন দূবর্ীতদের হাতে রাত ২০.৩০ মিনিটের দিকে। এদিকে সাইফ এর অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো । নঈমুলরা রমজানের মৃতু্য খবর শুনে সাইফকে ছেড়ে দিল এবং বলল কাউকে যেন কিছু না বলে তাহলে তার ক্ষতি হবে।
সাইফ ওখান থেকে বেরিয়ে রাস্তার কাছে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়ল। তখন সময় ভোর ৪.৩০মিনিট এক মুরব্বী ঐ সময় ফজরের নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন ঐ পথ ধরে সে পথে সাইফকে দেখতে পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান।



অন্যদিকে রায়হান,সুমন,বাবুরা তো হন্য হয়ে সাইফকে খুজে বেড়াচ্ছে। মুরব্বী সাইফের সেল ফোন পেয়ে বন্ধ দেখে খবর দেওয়ার জন্য ফোন ওপেন করলেন। সে সর্বশেষ ডায়েল নাম্বারে ফোন দিতেই রায়হানের সেল ফোন বেঁজে উঠল। রায়হান মুরব্বীর সব কথা শুনে হাসপাতালের দিকে ছুটল।

সকাল ৭ টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে কিছুটা বির্মষ অবস্থায় সাইফকে পেল ওরা। সাইফকে ডাক্তার ইনজেকশন ও কিছু ঔষধ দিয়েছে তাই তার শরীর বেশ দূর্বল। পুরো ফিট হতে দুই/তিন দিন লেগে যাবে। রায়হান সাইফের অবস্থা দেখে জিঙ্গেস করল তুই এখন কেমন আছো সব ঠিক আছে তো । সাইফ বলল, শরীর একটু দূর্বল। খুব ব্যাথা লাগছে। রায়হান একটু ধৈর্য্য ধর সব ঠিক হয়ে যাবে। রায়হান সাইফের বাসায় খবর দিল।

রায়হান আক্ষেপ করে বাবুকে বলল, আসলে আমরা কোন পথে চলছি বল, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখা-পড়ার পরিবেশ নাই,পথ-ঘাটে স্বাভাবিকভাবে চলার অবস্থা নাই, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নাই, যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক নাই, সুষ্ঠু রাজনীতিক পরিবেশ নাই, চাকুরীর নিশ্চয়তা নাই । আর তাই কোন কিছুতেই আজ গতি নাই এভাবে আর কত দিন উদ্ভট উটের পিঠে চলবে স্বদেশ যার কারনে এভাবে সাইফের মত নিরাপরাধ ছেলেরা বার বার বিপদে পরবে। আমাদের স্বাভাবিক জীবন-যাবনে ছন্দ হারাবে। আমরা আর কত সহ্য করবো বলতে পারিস,জীবনে চলার বাকেঁ আজ একি রঙ, তবে কি সরলতা মানে জীবনের ছন্দহীনতা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এশরার লতিফ বেচারা সাইফের কথা ভেবে খারাপই লাগছে। লেখকের জন্য শুভকামনা।
ধন্যবাদ অাপনাকে।
শাহরুজ্জামান বাবু চমৎকার লিখেছ বন্ধু...... এগিয়ে যাও
প্রিয়ম একদম ঠিক বলেছেন ভাই , আর আমাদের মোট মানুষের কিছু করার নাই |
কামরুল হাছান মাসুক ভাল লাগল। ধন্যবাদ লেখককে।
আহমেদ সাবের আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের গল্প। "এভাবে আর কত দিন উদ্ভট উটের পিঠে চলবে স্বদেশ যার কারণে এভাবে সাইফের মত নিরপরাধ ছেলেরা বার বার বিপদে পড়বে। " - 'এর উত্তর বোধ হয় কারো জানা নেই। ভাল লাগল গল্প।
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ নির্ভেজাল সরলতার সত্যিকারের সরল গল্প । খুব ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ ও শুভকামনা ।
ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
যমুনাবতী জানতাম না এত ভালো লেখক এখানে আছে
দোঅা করবেন ভাই যেন ভালো িলখতে পাির।
ওবাইদুল হক দুই বন্ধুর সুন্দর ভাব দিলেন সরলতায় । তবে অনেক করুণাময় সরলতাও খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে ধরেছেন ্

২৭ মার্চ - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী