স্বাধীনতা চাই

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১৩)

কামরুল হাছান মাসুক
  • 0
  • ৩৬
আফজাল বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ছোট থেকেই কিছুটা বাঁকা স্বভাবের। অনেকেই বলে জন্মের সময়ই নাকি ঘাড়ের একটা রগ বাঁকা ছিল। এই জন্য কারো কথা শুনে না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে না শুনার রোগটাও বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে একটা সময় চরম অবস্থানে উঠে যায়। কারো কথা শুনে না। এমনকি বাবা, মার কথাও শুনে না।

আফজালের বাবা আমজাদ সাহেব খুব কড়া লোক। উনার একমাত্র ছেলে হলেও তিনি তাকে বখে যেতে দিবেন না। ছোট থেকেই উনি খুব কড়া শাসনে রেখেছেন। তারপরও ছেলেটা একরকম বখে যাওয়ার জন্য দায়ী করেন আফজালের মাকে। আফজালের মায়ের জন্যই আফজালের এই অবস্থা। ছোট থেকেই যদি বাঁকা ঘাড়টাকে সোজা করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হত তাহলে আজকে এ রূপ দেখতে হত না। বাবার শাসন আফজাল মানে না। বাবার হোটেলে খায় বলে সে বাবাকে কিছুটা সমীহ করে। বড় হলে সে এই বাড়ি থেকে চিরদিনের জন্য চলে যাবে। এটা আফজালের অনেক দিনের স্বপ্ন। আফজালের স্বাধীনতা দরকার। চরম স্বাধীনতা দরকার। কেউ কিচ্ছু বলতে পারবে না। যা খুশি সে তা করতে পারবে।

আমজাদ সাহেব আফজালকে ধরে আচ্ছা মত মার দিলেন। মার দেয়ার কারণ হচ্ছে আমজাদ সাহেব যা বলেন আফজাল তার উল্টা করে। এভাবে কতদিন সহ্য করা যায়। সে সহ্য সীমার বাহিরে চলে গেছে। আর এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। কিছু যদি একটা ব্যবস্থা করা না যায় তাহলে তাকে ডাকাতের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। পুলিশের কাছে দিয়ে আসা যেত। আজকালকার পুলিশের চেয়ে ডাকাত নাকি অনেক ভাল। যুগের পরিবর্তন হয়েছে। কত কিছুই শুনতে হবে।

আফজাল বাবার বকুনি খেয়ে চিন্তা করল এই বাড়িতে থাকাই যাবে না। এখানে কোন স্বাধীনতা নেই। একটা পাখি যে রকম করে স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়ায় সে মানুষ হয়ে পারে না। তাকে সব সময় শুনতে হয় এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। সারাদিনই এটা ওটার ভিতর থাকতে হয়। এর চেয়ে ভাল এখান থেকে চিরদিনের জন্য চলে যাওয়া। রাস্তায়, ডাস্টবিনে খেলেও স্বাধীনভাবে থাকা যাবে। যা ইচ্ছা তা করা যাবে। স্বাধীনতা দরকার। স্বাধীনতা পেতে হলে প্রথম সূত্র হচ্ছে বাড়ি থেকে পালানো। বাড়ি থেকে পালালেই স্বাধীনতা পাওয়া যায়। আফজাল তাই করল। বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল। সে একেবারে স্বাধীন হয়ে যাবে।

আফজাল বাড়ি থেকে পালানোর পরই বুঝতে পারল সে স্বাধীন হয়ে গেছে। তাকে আটকানোর মত কেউ নেই। কিছু দূর যাওয়ার পরই এক লোকের সাথে পরিচয় হল। উনি বললেন, বাবা কোথায় যাও। আফজাল বলল, আমি স্বাধীনতার খোঁজে যাই। পরাধীনতা আমার একদম ভাল লাগে না।

উনি বললেন, এক কাজ কর। আমার সাথে আস। আমি তোমাকে প্রকৃত স্বাধীনতার খোঁজ দিব।

আফজালের ক্ষুধা লেগেছিল। পকেটে কোন টাকা নাই। অযাচিত এরকম উপকার করতে দেখে আফজাল খুশিই হল। সে চিন্তা করল উনি যদি স্বাধীনতা দেন তাহলে আমার যেতে দুষ কি?

অযাচিত লোকটার সাথে আফজাল চলে গেল। অযাচিত লোকটা আফজালকে একটা রুমের ভিতর নিয়ে গেল। নিয়ে বলল, আজ থেকে এটা তোমার রুম। এই রুমে তুমি থাকবা।

আফজাল ফ্রেস হয়ে ঘুমার আয়োজন করতেই দেখে এই র“মের এক লোক জীবিত বাচ্চা নিয়ে গবেষণা করছে। উনি জীবিত বাচ্চাটাকে মেরে ফেলতে চাইছেন। বাচ্চাটা যখন মারা যাচ্ছে তখন তিনি বাচ্চাটার আত্মা ধরার চেষ্টা করছেন। আমার মনে হল উনি চাচ্ছেন আত্মাটা কি ভাবে বের হয় এবং আত্মাটাকে ধরা যায় কিনা। তাই বলে একটা মানুষের বাচ্চার শাবককে। কি ভয়াবহ একবার চিন্তা কর“ন। উনাকে দেখে মনে হচ্ছে একটা ছারপোকাকে মারছেন। আফজাল চিৎকার দিয়ে উঠল। অযাচিত ব্যক্তি দৌড়ে আসলেন। আফজাল সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। অযাচিত লোকটা বলল, এখানে কারো স্বাধীনতায় কারো হস্ত¶েপ করার অধিকার নেই। উনি এখানে ¯^াধীনভাবে আচেন। উনার যা ইচ্ছা তিনি এখানে তা করতে পারবেন। আপনারও যা ইচ্ছ তা করতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখবেন কারো যেন ডির্স্টাব না হয়। কারো যেন ¯^াধীনতার খর্ব না হয়। আপনি ইতিমধ্যেই একজনের ¯^াধীনতা খর্ব করে ফেলেছেন।

আফজাল কাতর ¯^রে বলল, আপনি আমাকে অন্য র“মে দেন। এই র“মে আমি থাকতে পারব না।

অযাচিত ব্যক্তি বলল, ঠিক আছে। পাশের র“মে আপনি থাকেন।

পাশের র“মে গিয়ে দেখেন মানুষের অঙ্গ প্রতঙ্গ নিয়ে ডাবা খেলছেন। অঙ্গ প্রতঙ্গ দেখতে অবিকল পঙ্গু হাসপাতালে র“গি যেমন শুয়ে থাকে সেরকম। অঙ্গ প্রতঙ্গ জীবিত নড়ছে। উনি এক মনে ডাবা খেলে যাচ্ছেন। উনাকে কিছু বলা যাবে না। উনি ¯^াধীন মানুষ। আফজালের বোমি আসতে থাকে। চিৎকার করতেই অযাচিত ব্যাক্তিটি আসল। সে আবার এসে বলল, কি হয়েছে। আপনি চরম বিরক্ত করছেন। আপনি নিজে ¯^াধীনভাবে থাকতে এসে অন্যের ¯^াধীনতাকে খর্ব করছেন। আপনাকে সর্বশেষ সতর্ক করলাম আপনি এবারের পর আর কোন সুযোগ দেওয়া হবে না।

আফজাল চুপ মেরে গেল। লোকটাকে দেখলে লাগল। কিছু¶ণ পর পাশের ঘর থেকে প্রথম র“মের লোকটা বাচ্চাটার হাত পাঁ কেঁটে ডাবা খেলার জন্য দিয়ে গেল। বাচ্চা ছেলেটার হাত পাঁ এখনো কিছুটা নড়ছে। রক্ত পড়ছে। ডাবা খেলার লোকটা বাচ্চাটার হাত পাঁ গুলি বড় বড় বিভিন্ন ছকে সাজাতে লাগল। বাহির থেকে একজন এসে যোগ দিল। দুই জন মানুষের অঙ্গ প্রতঙ্গ নিয়ে ডাবা খেলছে। আফজার সহ্য করতে পারল না। ঘর থেকে বাহির হয়ে গেল।

পাশের র“মে গিয়ে দেখে অবস্থা আরও ভয়াবহ। পর্ণমূভি যেখাবে করে এভাবে এক লোক অনেক মহিলাদের নিয়ে মজে আছেন। আফজালের দেখেই র“মে ঢুকতে ইচ্ছে করল না। এর পাশের র“মে গেলেন। পাশের র“মে গিয়ে দেখেন মানুষের গু, মুত নিয়ে কি যেন করছেন। এই ধরণের র“মে প্রবেশ করার প্রশ্নই আসে না। পাশের র“মে গিয়ে দেখা যায় সব জিমাচ্ছেন। মনে হচ্ছে ওরা সবাই গাঁজা, মদ খায়। এই র“মটাকে আফজাল নিরাপদ মনে করলেন। একটা কোণা দেখে জায়গা করে নিল।

রাতের বেলায় ¶িদা লেগেছে। এখনও খাবার দিচ্ছে না কেন। আফজাল র“ম থেকে বের হয়ে অযাচিত লোকটার কাছে গেলেন। অযাচিত লোকটা বলল, এখানে সবাই ¯^াধীন। যার যা ইচ্ছা সে তা করতে পারবে। তবে তার জন্য অর্থ দিতে হবে। যে যা চাইবে অর্থের বিনিময়ে তাকে সবই সরবরাহ করা হবে। অর্থ না থাকলে এখানে থাকা যাবে না। আপনি অর্থ দেননি তাই আপনাকে খাবার দেওয়া হয় নি। আপনি অর্থ দিয়ে রিসিট কেটে নেন। তাহলে দেখবেন সব আপনার র“মে হাজির। র“ম ভাড়াও দিতে হবে। আপনি যদি কোন মেয়ে চান তাহলে ও নিতে পারবেন। কোন বাচ্চা চান তাও পারবেন। গাঁজা, মত, হিরোইন, ইয়াবা যা দরকার সবই পাবেন। তবে আপনাকে টাকা আগে পরিশোধ করতে হবে।

আফজালের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। তার কাছে কোন টাকা নেই। টাকা থাকলেও সে এ ধরণের ¯^াধীনতা উপভোগ করত না। এটা কি কোন জীবন হল নাকি। সব পশুর মত আচরণ।

আফজাল বাসা থেকে বের হয়ে আসে। গেইটের কাছেই অযাচিত লোকটার সাথে দেখা হয়। অযাচিত লোকটা বলে আপনি যে কিছু¶ণ ছিলেন তার জন্যও ভাড়া দিতে হবে। এখানে কেউ যেমন ¯^াধীনভাবে আসতে পারে, আবার কেউ ¯^াধীনভাবে চলেও যেতে পারে। আপনি ভাড়া দিয়ে ¯^াধীনভাবে চলে যাবেন। তা না হলে আপনাকে আটকে রাখা হবে।

আফজালকে সত্যি সত্যি আটকে রাখা হল। তাকে ভয় দেখানো হল সে যদি টাকা না দিতে পারে তাহলে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হবে। যদি বিক্রি করে দেওয়া হয় তাহলে এখানেও কেউ কিনতে পারে। সে মানুষ কাঁটাকাঁটি করে সে নাকি আফজালকে কিনার আগ্রহ প্রকাশ করছে। বড় মানুষের প্রাণটা কিভাবে যায় তা সে দেখতে চাচ্ছে। আফজালের গলা শুকিয়ে আসল। আফজালকে কে ছাড়িয়ে নিবে।

পরের দিন আফজালের বাবা আসল। আফজালকে অর্থ দিয়ে ছুটিয়ে নিল। বাবা একটা কথাও বলল না। নিরব থাকল। আফজাল চাইছে বাবার কাছে মাফ চাইতে। আফজাল বুঝছে ¯^াধীনতা ভাল, অবাধ ¯^াধীনতা ভাল না। অবাধ ¯^াধীনতা পেলে মানুষ নষ্ট হয়ে যায়। মানুষ মানুষ থাকে না। পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে যায়। পরিবারের সে শাষণ এটা দরকার আছে। পরিবারের শাষণটাকে ¯^াধীনতাবিহীন বলা যায় না। এটা একটা ব্যক্তির সুষ্ঠু বিকাশের জন্য খুবই দরকার। এরপর থেকে আফজাল একেবারে ভাল মানুষ হয়ে যায়। বাঁকা রগটা নিমেষেই সোজা হয়ে যায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ কবির হোসেন প্রিয় কামরুল হাসান মাসুক ভাই বাস্তবধর্মী একটি গল্প পড়লাম এবং মুগ্ধ হলাম. ধন্যবাদ.
এশরার লতিফ বাস্তব এবং পরাবাস্তবের মিশেল দেয়া সম্ভাবনাময় গল্প. ভালো লাগলো.
তাপসকিরণ রায় গল্পের বক্তব্য ভাল লেগেছে।তবে লেখাটি আরও একটু সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা যেতো।
আহমেদ সাবের দারুণ শিক্ষামূলক একটা লেখা। বেশ ভালো লাগলো।
মিলন বনিক পাদটিকায় গল্পের মূল ভাবটা ফুটে উটেছে...গল্পের থিমটা ভালো...একটু যত্ন নিয়ে গুছিয়ে লিখলে আরো সুন্দর ও নির্ভুল হতে পারত...অনেক ধন্যবাদ....
রোদের ছায়া গল্পটিকে কল্পকাহিনী র দিকে না নিয়ে বাস্তবতার কাছাকাছি রাখলেই মনে হয় ভালো হত..... তবে গল্পে যে মূল কথাটি বলার চেষ্টা করেছেন সেটা অবশ্যই ভালো.... আর হা অযাচিত লোক না বলে লোকটির একটা নাম দিলে আমার মনে হয় ভালো লাগত আর তা না হলে আগুন্তুক বলা যেত ...
এফ, আই , জুয়েল # বেশ বড় এবং সুন্দর গল্প । অবাধ স্বাধীনতা সব সময় সবার জন্য ভাল হয় না ।পারিবারিক শাসনের দরকার আছে । অনেক চমৎকার । লেখককে ধন্যবাদ ।।
কষ্ট করে পরার জন্য ধন্যবাদ।

১৮ মার্চ - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪