আমেরিকার জন কেরি এবং রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন দুইজন বন্ধু। উনারা একসাথে বসবাস করেন চাকুরীর সূত্রে। বন্ধুও হয়েছেন চাকুরীর সূত্রেই। প্রতিদিন একটি ক্লাবে একসাথেই আড্ডা দেন। উনাদের আড্ডার একেক দিনের বিষয়বস্তু একেক রকম।
আজকের আড্ডার বিষয়বস্তু হচ্ছে কে বেশি উন্নত। আমেরিকা না রাশিয়া। দুইজন বিভিন্ন ভাবে নিজের দেশকে সবচেয়ে উন্নত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিভিন্নভাবে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করছেন। কেউ কারো যুক্তিতর্ক মানছেন না। যুক্তিতর্কের চেয়ে আসল কথা হচ্ছে নিজের দেশকে বড় করা। যুক্তিতর্কের মাঝেই হালকা হাতাহাতিও হয়ে গেল।
দুইজন ব্যক্তিবর্গই ছিলেন দুই দেশের বিখ্যাত ব্যক্তি। পত্রিকায় খবরটি আসতে সময় লাগল না। দুই দেশের নাগরিকরাই দুই জনের পক্ষ নিয়ে নিল। সরকার জনগণের পক্ষ হয়ে দুই দেশের সরকার দুই দেশের নাগরিকের পক্ষে চলে গেলেন।
শুরু হল তুমুল স্নায়ুযুদ্ধ। ঘটনাটা দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল না। বিশ্বের প্রতিটা দেশই একেকজন একেকজনের পক্ষ নিতে আরম্ভ করল। যেই দেশের সাথে যার ভাল সম্পর্ক সে সেই দেশের পক্ষ নিয়ে কথা বলা আরম্ভ করল।
হাত থাকতে মুখে কথা বলা দুই দেশই সমুচিত মনে করলেন না। শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। যার যার সহযোগী দেশ তার তার পক্ষ হয়ে যুদ্ধ শুরু করে দিল। তৃতীয়বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। ক্ষুদ্র ঘটনাটার কথা কেউ মনে রাখল না। এখন বিশ্বে যুদ্ধ চলছে। বরাবরেই মতই বলির পাঠা হয় তৃতীয়, চতুর্থ বিশ্ব। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না।
আমেরিকা এবং রাশিয়া দুই দেশই সামরিক দিক থেকে উন্নত। পারমানবিক শক্তি সম্পন্ন দুই দেশই। এই নিয়ে দীর্ঘকাল ধরেই তাদের মাঝে ঈর্ষা লেগে আছে। একজন একটা প্রযুক্তি বানালে আরেকজন অবশ্যই আরেকটা প্রযুক্তি বানাবে। ক্ষমতা, প্রযুক্তি, সামরিক, মহাকাশ ইত্যাদি নিয়ে দুই দেশ একে অপরকে ঈর্ষা করে এটা অনেক পুরাতন ঘটনা। এই ঘটনাটা যুগের পর যুগ ধরে চালুই আছে।
আমেরিকা এবং রাশিয়া যুদ্ধ করছেই। কেউ কারো থেকে কম না। সমান তালেই যুদ্ধ এগিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার মাথায় সব সময় চিন্তা একটু বেশিই থাকে। ওরা চিন্তা করল হিটলারকে বধ করার জন্য আমরা যেরকমভাবে পারমানবিক বোমা আবিষ্কার করেছিলাম। এবার যদি নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারি তাহলে রাশিয়াকে দমানো যাবে। পারমানবিক ওদেরও আছে। আমাদেরও আছে সুতরাং এ দিয়ে তাদের বদ করা যাবে না।
আমেরিকার সিদ্ধান্তটার কথা রাশিয়া জেনে যায়। তারা চিন্তা করে হিটলারও পারমানবিক বোমা আবিষ্কারের কথা ভাবছিলেন। আবিষ্কারও করে ফেলেছিলেন। এর আগেই আমেরিকা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলেছে। এবার আমাদের হিটলারের মত হলে চলবে না। আমাদের আমেরিকার আগেই এমন কিছু আবিষ্কার করতে হবে যাতে করে ওদের আমরা বধ করতে পারি।
শুর“ হয়ে গেল নতুন কোন প্রযুক্তি বানানোর প্রক্রিয়া। আমেরিকা পাইলট বিহীন ড্রোন আবিষ্কার করল। এমন এক ধরণের রোবট আবিষ্কার করল যা দেখতে হুবহু মানুষের মত। এগুলি দিয়ে রাশিয়াকে চমকে দিল।
রাশিয়ার জনগণ ঈর্ষায় মারা যাচ্ছিল। আমেরিকার এত বড় সাহস। আমাদের চেয়ে ওদের প্রযুক্তি উন্নত করে ফেলল। এর একটা বিধিব্যবস্থা না করলেই নয়। রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের উপর বিভিন্ন ধরণের চাপ আসতে লাগল। জনগণ আমেরিকার নতুন প্রযুক্তির উৎসব মানতে চাইছে না।
রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণা করে মানুষের মতই ভম্পেয়ার নামক এক ধরনের মানুষ আবিষ্কার করল। যারা শুধুমাত্র মানুষের রক্ত খায়। রাশিয়া ভম্পেয়ার গুলিকে আবিষ্কার করেছে শুধুমাত্র আমেরিকার নতুন প্রযুক্তির ঈর্ষা থেকে। ওদের মাথায় এর নেতিবাচক প্রভাব কি হতে পারে তা ছিল না।
আমেরিকা ঘটনাটা শুনে সহ্য করতে পারল না। তারা চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ভাম্পায়ার নামক মানুষের মত প্রাণী আবিষ্কার করতে বলল।
এদিকে রাশিয়ার আবিষ্কার করা ভাম্পায়ারগুলি শহরে নেমে পড়ল। এরা কারো কোন দিক নির্দেশনা মানছে না। যারা এদের আবিষ্কার করেছে তাদের দিক নির্দেশনাও মানছে না। বের হয়েই একের পর এক রক্ত খাওয়া আরম্ভ করল। যাদের রক্ত খাচ্ছে ভম্পেয়ার থেকে এর ধরণের ভাইরাস গিয়ে ওরাও ভম্পেয়ার হয়ে যাচ্ছে। রাশিয়াতে ভম্পেয়ারের বন্যা হওয়া আরম্ভ হল।
আমেরিকাও ভম্পেয়ার আবিষ্কার করে ফেলেছে। রাশিয়ার ভম্পেয়ার এর অবস্থা আমেরিকায় যেতে বিলম্ব হয়েছিল। ভাম্পায়ার আবিষ্কার হওয়ার সাথে সাথেই আমেরিকাতেও রক্তপান আরম্ভ হল। ভাম্পায়ার রক্ত খাচ্ছে। মানুষজন ভাম্পায়ার হয়ে যাচ্ছে। এভাবে জ্যামিতিক হারে ভম্পেয়ার হওয়া আরম্ভ হল। মানুষের নিয়ন্ত্রণে কিছুই রইল না। চারদিকে ভম্পেয়ারের রাজত্ব।
আমেরিকা এবং রাশিয়া থেকে মানুষজন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেতে লাগল। ভম্পেয়ার অনেকটা মানুষের মতই। তাদের দেখে বুঝা যায় না তারা ভম্পেয়ার কি না। রক্ত খাওয়া আরম্ভ হলেই বুঝা যায়। ভম্পেয়ারের কোন দেশ নেই। তাদের কোন জাতি নেই। তারা শুধু ভম্পেয়ার। যাকে পাচ্ছে তাকেই খাচ্ছে। তাকেই ভম্পেয়ার বানাচ্ছে।
আমেরিকা এবং রাশিয়া থেকে ভম্পেয়ার গুলি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়তে লাগল। পৃথিবীর প্রতিটা দেশের অবস্থাই খারাপ। ভম্পেয়ারের রাজত্ব শুর“ হয়ে গেছে। চারদিকে শুধু ভম্পেয়ার আর ভম্পেয়ার। বাবা মেয়ের সাথে হাঁটছে। মেয়ে জানে না বাবাও ভম্পেয়ার হয়ে গেছে। হঠাৎ করে বাবা মেয়ের শরীর থেকে রক্ত খাওয়া আরম্ভ করল। মেয়ের কিছুই করার নেই। মেয়ে ভম্পেয়ার হয়ে গেল। মেয়ে আবার বাসায় গিয়ে তার ভাইকে ভম্পেয়ার করে ফেলল। এভাবে ভম্পেয়ার করার প্রক্রিয়া দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। একদল বিজ্ঞানী ছিলেন যারা তাদের ধ্বংস করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সময় থাকতে হবে। সময় পেতে হবে। যেভাবে দেশে দেশে ভম্পেয়ার হওয়া আরম্ভ হয়েছে তাতে মনে হয় না পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাবে।
যারা সত্যিকার অর্থেই বুদ্ধিজীবী ছিলেন তারা ভাবতে লাগলেন সব মানুষের দুষ। বর্তমান এই অবস্থার জন্য মানুষই দায়ী। ভম্পেয়ারগুলিকে একমাত্র ঈর্ষা থেকেই আবিষ্কার করা হয়েছে। আবিষ্কার করার আগে মানুষ জানত এগুলি মানুষের কোন উপকারে আসবে না। এগুলি দিয়ে মানুষের ক্ষতিই বেশি হবে। শুধু মাত্র এক দেশ আরেক দেশের সাথে ঈর্ষা করার কারণেই এগুলিকে আবিষ্কার করা হয়েছে। সর্বপ্রথম যখন বন্দুক, পিস্তল আবিষ্কার করা হয়েছিল তখনও এই অবস্থা থেকেই করা হয়েছিল।
সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষের জন্য যা ক্ষতিকর তা ঈর্ষা থেকেই আবিষ্কার করা হয়েছে। এক জনের সাথে আরেকজনের প্রতিযোগিতা করা খারাপ না। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ভাল কিছু বেড়িয়ে আছে। প্রতিযোগিতাটা যদি নেতিবাচক হয় তাহলে নেতি বাচক জিনিষটা ভাল করে বেড়িয়ে আসে। বর্তমান পৃথিবী যেটি হারে হারে টের পাচ্ছে। কিছু করার নেই। তারপরও বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জন টেরি এবং পুতিন এখন বুঝতে পারছেন। তাদের জন্যই পৃথিবীর আজকে এই অবস্থা। পৃথিবীর দখল নিয়ে যাচ্ছে ভম্পেয়ারগুলি। ভম্পেয়ারগুলি কাছে আমেরিকা বা রাশিয়ার নাগরিক বলে কথা নেই। যাকে পাচ্ছে তাকেই ভম্পেয়ার করে ফেলছে। দুই ব্যক্তি এবং দুই দেশের ঈর্ষার কারণে পৃথিবীর আজ এই অবস্থা।
পৃথিবীর সব মানুষ ভম্পেয়ার হয়ে গেছে। পৃথিবীতে একটা মানুষও বেঁচে নেই। একটা মানুষও যদি বেঁচে থাকত তাহলে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে কোনদিন ভম্পেয়ার গুলির হাত থেকে মানুষদের ক্ষমতা নিতে পারত। এখন সেই সুযোগ নেই। সব শেষ হয়ে গেছে। মানুষের পতন মানুষই ডেকে এনেছে। শুধুমাত্র ঈর্ষার কারণে সাত থেকে আটশ কুটি মানুষের পৃথিবীটাকে ভম্পেয়ার করে ফেলেছে। ঈর্ষায় যে পতন হয় তা ইবলিশের মত মানুষ দেখিয়েছে। মানুষও ইবলিশে পরিণত হয়ে গেছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আহমেদ সাবের
ছোটকালে পড়েছিলাম, "প্রয়োজনই আবিষ্কারের প্রসূতি"। আপনার গল্প পড়ে মনে হলো, "ঈর্ষাই আবিষ্কারের প্রসূতি"। অবশ্য, ঈর্ষা থেকেও প্রয়োজন আসতে পারে, আর প্রয়োজন থেকে ...। আশা করবো, আমেরিকার জন কেরি (হা) এবং রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন (খা) নিজেদের ভুল বুঝতে পারবেন আর সারা দেশ ভাম্পায়ারের হাতে যাবার আগেই হাতাহাতির বদলে যুক্তি-তর্কের আশ্রয় নেবেন। চমৎকার রূপকে ঈর্ষার একটা দারুণ স্যাটায়ার। বেশ ভালো লাগলো।
এশরার লতিফ
আগেও লক্ষ্য করেছি আপনি আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে বিশষ আগ্রহী. রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের ঈর্ষাকে একটা স্বাভাবিক গতিময় পরিণতির দিকে এগিয়ে নিতে নিতে সহসা ভ্যাম্পায়ার এনে কাহিনীটাকে ফ্যান্টাসীর দিকে মোড় ঘুরিয়েছেন. হয়তো রূপক হিসেবে এনেছেন. শুভেচ্ছা রইলো.
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।