তখন বেশ ঠাণ্ডা পড়েছিল। একে তো পৌষের শেষ সময়, অন্য দিকে বনাঞ্চল। যেন তেন বন নয়, নদীর তীরবর্তী আমাজান বন। তাই শীতের তীব্রতা ছিল আরো বেশি। ঠিক সেসময় সাপ বাহিনীর নিকট খবর এল সাপুড়েরা সাপ শিকারের লক্ষ্যে একটি জাহাজ ‘বীণতরী’ বন এলাকার অদূরে আমাজান সংলগ্ন নদীর মোহনায় নোঙ্গর করেছে। অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত বীণতরী সাপুড়েদের খাবার ও বীণ বহন করছিল।
এই সংবাদ শোনে বনের সাপ সম্প্রদায়ের রাজা ও প্রজাগণ সকলে একত্রিত হয়ে পণ করলেন শিকারীকে আজ শিকার করবো। সাপ সম্প্রদায়ের সর্পরাজ তার দল নিয়ে রওয়ানা দিলেন নদীর মোহনার দিকে। কিছু পথ এগিয়ে তারা দেখেন রাতের অন্ধকারে অসংখ্য পশু-পাখি পালাচ্ছে। সম্ভবত সাপুড়েরা সমগ্র এলাকায় ত্রাস করে বেড়াচ্ছে। এতে ভয় পেয়ে পিছু হটা যাবে না।সর্পরাজসহ সকলে অগ্রসর হতে লাগলেন। সবার মনে আতংক বিরাজ করছিল। এ আতংকের খবর সাপুড়েদের নিকট পৌঁছালে তারা সতর্ক হয়ে যাবে। তাই দ্রুত পৌঁছাতে হবে।
চলতে চলতে সাপের দল নোঙ্গরের অদূরে একটি জঙ্গলে পৌঁছে এবং সেখানে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে শুরু করেন চূড়ান্ত মিশন।
রাত তখন দশটা। গায়ে দ্বৈত খোলস জড়িয়ে রাখারমত শীত। তারপরেও অপারেশনে যেতেই হবে। সর্পরাজ ভাবলেন, বেশি সাপ অপারেশনে গেলে চোখে পড়তে পারে। তাই তিনি গুঁই ও দারাইশকে বাছাই করলেন অপারেশনে যেতে। প্রস্তুত তারা। কিন্তু কাজটা জটিল। এই শীতে বিশাল নদী সাঁতরায়ে বীণতরীতে যেতে হবে। তারপর বীণতরীর তলার শেওলা পরিষ্কার করে দুটি মাইন মুখ খুলে আটকাতে হবে। অবশ্য মাইনের মুখ খুললেই চুম্বকের প্রলেপ আছে, ফলে আটকে যাবে। তবে মুখ খোলার বিশ মিনিটের মধ্যে পাঁচশ গজ দূরে ফিরতে হবে। নতুবা বিস্ফোরণের আঘাতে তারাও মারা যাবেন। গা ছমছমে অবস্থা। এ যেন মৃত্যুর ঘরে আজরাইলের দরজায় টোকা দিয়ে জীবন নিয়ে ফিরে আসা।
সম্প্রদায়ের মায়ায় গুঁই ও দারাইশ একটুও বিচলিত হননি। তারা পানিতে নেমে গেলেন। স্রোতের বিপরীতে সাঁতরাতে সাঁতরাতে নদী পারি দিচ্ছিলেন। অবশেষে পৌঁছলেন বীণতরীর আঙ্গিনায়। ভয়ে ভয়ে মাইন দুটো বীণতরীর তলায় আটকায়ে দুজনে একত্রিত হলেন। তখন উপরে সাপুড়েদের পায়ের বুটের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। দ্রুত ফিরতে হবে। এক ডুবে বেশ দূরে গিয়ে ওঠে ওরা। তারপর চিৎসাঁতার।
এভাবে নদীর মাঝামাঝি পৌঁছে ওরা। এরইমধ্যে একটি মাইন বিস্ফোরিত হয়। সাথে সাথে জ্বলে ওঠে বীণতরীর সার্চ লাইট এবং বেজে ওঠে ভয়ংকর ভেপু। তাৎক্ষণিক গর্জে ওঠে মেশিনগানের শব্দ। ভয়ংকর অবস্থা। তারা ধরে নিয়েছেন মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অল্প সময়ের মধ্যে অপরটি বিস্ফোরিত হয়। ‘বীণতরী’ ডুবে যায় নদীর তলায়। গুঁই ও দারাইশ তখনো অগ্রসর হতে থাকেন স্বীয় সীমানার দিকে। অতঃপর নদী পার হয়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছেন। তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। পড়ে যান ভোঁদরদের কবজায়। শীত আর ভয়ে তাদের কাঁপুনির অন্ত ছিল না। তাদের কাঁপুনী দেখে ভোঁদরেরা ভাবলো তাদের ভয়ে সাপগুলো কাঁপছে। মহান আল্লাহ্র রহমতে ভোঁদররা তাদের ক্ষতি না করে বরং সহযোগিতা করে গুঁই ও দারাইশকে তাদের ঘাঁটির পথ দেখান। চলার মধ্যে দূরের একটি তাবু থেকে ক্ষীণকণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল আযানের বাণী- “আস্সলাতু খইরুম মিনান-নাওম।”
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আখতারুজ্জামান সোহাগ
রূপক গল্প। গেরিলা বাহিনী এভাবেই নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তীব্র শীতের রাতে শত্রুবাহিনীর শক্তিকে বিনাস করেছে। এর ফলশ্রুতিতে আমরা পেয়েছি অমূল্য বিজয়।
গল্পের জন্য ধন্যবাদ। শুভকামনা গল্পকারের জন্য।
মাহমুদ হাসান পারভেজ
গল্পটি শেষ হয়েছে ’ঘুমের চেয়ে সালাত উত্তম’ এই চিরাচরিত ধ্বনিতে তবে গল্পটির ভেতরে প্রতিধ্বনিত- সেইসব গেরিলাদের বিজয় ছিনিয়ে আনার গল্পরূপকে। আমাজন আর সুন্দরবন- দুনিয়ার যেকোন প্রান্তেই যেসব গেরিলা যোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে নিজের মা মাটি দেশকে মুক্ত রাখতে যুদ্ধ করেছে বা করে যাচ্ছে তাদের জন্য আমরা ‘বিজয়’ পাই। স্বাধীনতার স্বাদ বুঝতে পারি।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।