ভিজিয়ে দেবো।
অজান্তেই সমুদ্রের সীমানা থেকে
কিছু জ্বলন্ত বাষ্প এনে।
ভিজিয়ে দেবো রাস্তা, নগর
আর তোর কাঁচা কাঁচা ভালোবাসা বোধ...
বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তা-দোকান-ওভার ব্রিজ আর তাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো, দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া মানুষগুলো ভিজছে। শুধু ভিজছে। গাছের পাতা ভিজছে, গাড়ির চাকা ভিজছে, রূপসীর শাড়ি ভিজছে। কিন্তু কেউ আসলে ভিজতে চাইছে না। রাস্তার ভিখেরি চাইছে না, প্যান্ট ছেড়া টোকাইটাও চাইছে না, হুস করে বেরিয়ে যাওয়া বি.এম.ডাব্লিউর মালিক চাইছে না, তার ড্রাইভার চাইছে না। গাড়িটা কি চেয়েছিলো! জোড় পায়ে হাঁটা ওই মেয়েটিও চাইছে না ভিজতে, যার কানে সেলফোন, মুখে আলাপ ঝুলে আছে। হয়তো বলছে,
-জান, জানো না এখানে কি মরার বৃষ্টি। আসতে দেরী হবে। একটু ওয়েট করো সোনা। না, না, রিক্সা পাচ্ছি না।
বুক থেকে ওড়না টেনে নিয়ে মাথায় চাপিয়ে দৌড়ে চলে যায় নাটকের শেষ পর্দার মত। মেয়েটা ভিজতে চায় না একফোঁটা।
রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্য-বয়সী যুবক ভেজা চুলে আঙ্গুল চালিয়ে চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাসটা ফেললো। দীর্ঘশ্বাসের দীর্ঘ শব্দ বৃষ্টির শব্দের সাথে মিলেমিশে একটা বিশ্রী তরঙ্গ তৈরি হয়ে যুবকের কানে ধরা দেয়। যুবক সেটির বঙ্গানুবাদ করতে পারে না। শব্দটা দীর্ঘক্ষণ কানে বাজে, যতক্ষণ না আরেকটা সিগন্যালে একরাশ হর্ন বেজে ওঠে। এর মাঝে কাঁধে ঝোলানো ব্যাগের চেন খোলা প্রকোষ্ঠে কয়েকটা সদ্য লেখা কবিতার পাতা উঁকি দেবার ভঙ্গিমায় থেকেই ভিজে গেছে বৃষ্টিতে শুরুতেই। যুবক আর কবিতা পরস্পরকে চেনে, জানে।
চলে যাবার সময় হয়ে এসেছে। অনেককাল আগে শহরের মরুময় কষ্ট দেখে যুবকের বুকের ভেতর একটা কাটা কাটা কষ্ট জেগেছিলো। মনে মনে চিঠি দিয়েছিলো শহরের নামে সবচেয়ে প্রাচীন ডাকঘরে, একদিন তোমাকে বৃষ্টিতে ভেজাবো। যুবক কথা রেখেছে। চলে যাবার আগে বৃষ্টি পাগল যুবক মাথা তুলে আকাশের মেঘ গোনে।
আকাশে যখন মেঘ;
দেয়ালের বয়স্ক রঙ
নিয়নের বাতি
নিঃসঙ্গ ঠোঁটে চাপা সিগারেট
মোটর, রিক্সা, বাইসাইকেল-
ওরা সব ভিজে যাক।
ভিজে যাক হলদে রোদ
হলদে অভিমান,
যাদুঘর সম্রাট-পুত্র ও
নিরানন্দ জ্যাম- ভিজে যাক।
রেলিং ছেড়ে মধ্য-বয়সী যুবক ভেজা সিঁড়িতে পা দেয়। এই সিঁড়ি ধরেই সে উঠে এসেছিলো কড়া রোদে। তারপর কত করে মেঘের কাছে, আকাশের কাছে কত কবিতা পড়ে শোনালো। কত মিনতি করে যুবক বললো, আমায় ভিজিয়ে দাও। ভিজিয়ে দাও কদমের ঘ্রাণ, পিচ-ঢালা পথ, বিরক্ত এই নগর মুখোশ।
তাই আজ ঝুম বৃষ্টি পড়ছে সকাল থেকেই। শহরের প্রতিটি উঠোনে আজ বৃষ্টি পড়ছে। রাস্তার অবুঝ ধুলো, অবুঝ মেয়ে, মোটর আর রিক্সার দল, সব আজ ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরছে।
ভেজা সিঁড়ি বেয়ে বৃষ্টি-যুবক নেমে আসে রাস্তায়। তার ফিরে যাবার পথ পেছনেই। পেছনে ফিরে না তাকিয়েই তার যেন কি মনে পড়ে গেলো। গভীরের কোন এক অনুভূতি। ইস, কদমের কাছে যাওয়া হয় না বহুকাল। আজ সে কদম নিশ্চই ভিজছে। ওর মাতাল করা ঘ্রাণ ভিজছে। এক পলক ভেজা বাতাস এক ঝাপটায় যুবকের চুল ছুঁয়ে যায়। যুবক কদমের ঘ্রাণ পায়। সেই কদমের ঘ্রাণ, যার অনেক নির্জন সন্ধ্যা কেটেছে, দুপুর কেটেছে একা একা। কদম বোধহয় ভুলেই গিয়েছিলো বৃষ্টি দিনে ফুটতে, হাসতে। এক আবেগের বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে অভিভূত হয়ে কদম শেষ কবে ভিজেছিল তা ভুলে গেছে প্রথম শৈশবেই। আজ বৃষ্টিতে ভিজে কদম কি বৃষ্টি-যুবককে ভালবাসবে? গাঢ় অন্ধকারে ঝুম বৃষ্টিতে অসতর্ক অসহায় হয়ে কি ঝাঁপিয়ে পড়বে বুকে?
যুবক কল্পনায় ছবি একে হেসে ফেলে অনায়াসে,
আমরা ছিলাম শৈশব জন্মে-
বুকের হাওয়ায় ঝড়ের বেগ।
পেছনে সন্ধ্যা নামা বিকেল ভিজে থাকে। রাস্তায় জল জমে কাঁদা হয়। শালিকগুলো রোদ পোহাবার অপেক্ষায় প্রহর গোনে। যুবকের কিছুই যায় আসে না তাতে। বৃষ্টি-যুবক হেঁটে যায় কদমের ঘ্রাণ শুকে। পেছনে পড়ে থাকে কয়েকটা কবিতার লাশ, যা ভিজে গেছে বৃষ্টিতে শুরুতেই।
০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৬৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪