শ্বশুরবাড়ী যাচ্ছি

মুক্তির চেতনা (মার্চ ২০১২)

পন্ডিত মাহী
  • ৩৪
  • ৩৯
আমি বেশ অবাক হলাম। এমনি হলাম। সাধারনত আমি অবাক হইনা, তবুও হলাম। কারনটা অনেকক্ষন বিছানায় গড়াগড়ি করেও বের করতে পারলাম না। বেশ হই-হই রই-রই রব পড়ে গেছে চারিদিকে। বুঝলাম না কেন! দরজায় জোরে জোরে করাঘাত হলে আমি খানিকটা চমকাই। আমার বেলুনের মত হার্টটা দূর্বল ভঙ্গিতে কেঁপে ওঠে। হঠাৎ মনে পড়লো কারনটা। ধুর! এমন হবে বলেই তো জানি। আমাকে জামাই আদরে রাখার জন্য প্রিয় শালারা চলে এসেছে। শালারা সব কালো রঙের হাউন্ড কুকুরের মত দেখতে সব। তবে ওদের চোখে সবার সানগ্লাস থাকে, সান থাক আর না থাক।

জানি কেন এসেছে।“দৈনিক এলোমেলো” পত্রিকা গতকাল কোন জনৈক মন্ত্রীর ২ কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাটের ২০০০ টাকা দামের কাজের মেয়ের হাস্যকর খবর ছেপেছে।হে হে…ওটা আমারই লিখা।বেচারা মন্ত্রীর বউ শপিংযে গিয়েছিলো। ঘর মোছার সময় ঐ মেয়ের উঠতি যৌবন মেঘ সরিয়ে উকি দিল। তাতেই মন্ত্রীর অবস্থা কাহিল।নাস্তার নরম পাউরুটিতে কামড় না দিয়ে, কামড় দিল নরম মাংসে। আহ্, স্বাদ জিভে লেগে আছে!

কাহিনী শুধু এটাই না, গত “গরু কাটাকাটি ও কসাই হবার প্রতিযোগিতা”র ঈদে জাতির জননীর হাটে হাটে গরু কেলেংকারী আর স্বঘোষিত বিধবা সুন্দরী, আমাদের প্রিয় প্রতিবাদী কন্যার রোডশো’র তেল চুরির কাহিনীও যুগপৎ আনন্দ বিলিয়েছে নাগরিক মনে। গরু কাহিনীর পর এবার দেশী্য কুত্তার চাহিদা বেড়ে যাওয়াতে কুকুর প্রজাতির চেয়ারম্যান, আমাকে অনুরোধ করলো তাদের জন্য লিখতে। আমি না করতে পারি নাই।

অন্যদিকে হালের খবর বেশ গরম ছিলো। রাস্তায় রাস্তায় তেল কেলেংকারীতে নগরের চার-ছয়-ষোল চাকার কিছু না হলেও তিন চাকা গুলো বেকায়দায় পড়ে গেল। চার-ছয়-ষোল চাকার গাড়ি গুলো এখন নাকি হাওয়ায় চলে। তাই খুবই হাস্যকর ভাবে তিন চাকার চেন গুলো তেলের অভাবে ছিড়ে গেল। অন্যদিকে অফিসে অফিসে পেনশনের টাকা তোলার জন্য পর্যাপ্ত তেলের সাপ্লাই ছিল না। তেল না পেয়ে কয়েকজন কন্যাদায়-গ্রস্থ পিতা পটল তুলল। ডাক্তার সার্টিফিকেট দিলেন, চর্বি জনিত কারনে রক্তনালী বন্ধ হয়ে গেছে। আমি কি মনে করে এগুলোও লিখে দিলাম।

যাইহোক শালা-সুমন্দীরা চলে এসেছে। তাদের একটা সম্মান আছে, বেশীক্ষন বাইরে দাড় করিয়ে রাখা যাবেনা। আমি পাশের বেডে থাকা ইউ.পি.এস ইঞ্জিনিয়ারকে ঠেলে তুললাম,
-আরে ওঠ শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি…

মীযান ধরমর করে উঠে বসলো। যেন এইমাত্র ওর পশ্চাতদেশে কেউ আচমকা লাথি মেরেছে। চোখ ডলতে ডলতে বললো,
-ভাইজান মাফ কইরা দাও। চিলেকোঠায় আর জীবনে যামুনা। তোমার ট্যাকা এখনি দিতাছি।

আমি বেশ প্রসন্ন হলাম। দুষ্ট ছেলে। মাঝে মাঝে একটু বেয়াদবী করে ফেলে না বুঝে। দুনিয়ায় তো কত জনকে মাফ করে দিয়েছি। তাই মীযানকেও দিলাম।
গতরাতে বেচারা মানিব্যাগ থেকে ১০০ টাকা মেরে দিয়েছিল। নতুন নোট। জাতির জননী টাকায় তার বাবার সীল মেরে দিয়েছে এবার। আমার তো গর্বে বুক ফুলে ঢোল। সেই নোট কিনা চুরি! আমার রাগে গা জ্বলছিলো, চুল গুলো মেশিনের মত দাঁড়িয়ে গেলো। দৌড়ে প্রিয় চিলেকোঠায় গিয়ে দেখি মীযানের হাত পা দুইটার বদলে চারটা। নীচে উঁচু বক্ষা কেউ খাবি খাচ্ছে। আমি প্রাইভেসি মানলাম। দরজার ধারে আহ্ উহ্ শব্দ শুনে কাটিয়ে দিলাম কিছু সময়। আধ-ঘন্টা পর ওদের ভালোবাসা দিবস পালন হতেই আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। উঁচু বক্ষা তরুনী বেরিয়ে আসে। বিদায় বেলায় মীযানের চোখ ভারি হয়ে আসে। আমার নতুন ১০০ টাকা ও তরুনীর হাতে দিল। তরুনী সটান সেটা চালান করে দিল ব্লাউজের ফাঁকে। আমি টাসকি খেলাম। আফসোস! আগে কেন জন্মালাম না! এই ভেবে আক্ষেপ হলো,
-ইস্ আমি যদি জনক-টনক হতে পারতাম। নিশ্চিত টাকায় ছবি উঠতো। তাহলেই ঐ উঁচু বক্ষে বাসা বাধঁতে পারতাম।

আমি আড় চোখে তাকিয়ে ছিলাম। তরুনী আমায় দেখে মুচকি হাসলো। আমি শুধালাম বাড়ী কই? যা ইশারায় বোঝাল তাতে বুঝলাম, আমাদের স্বঘোষিত বিধবা সুন্দরী ওরফে প্রতিবাদী কন্যা’র স্বামীর মাজারের আশে-পাশে। আহ্ সেকি জায়গা! মন ভরে আসে। তবে একটাই সমস্যা, সে রাতে। রাতের পূজারীদের কারনে মাজার উদ্যান সরগরম হয়ে ওঠে। দেদার বাংলা-ইংলিশ চলে। ঠোলাবাহিনী রাইফেল বগলে নিয়ে প্রতি গাছের আড়াল হিসেব করে তাকা তোলে। যত বড় আড়াল তত বড় টাকা। ওদিকে তরুনী চলে যেতেই বুঝলাম আমার টাকার সৎ ব্যবহার হয়েছে। আমি তাই ফিরে এলাম বেজার মনে।

কিন্তু এখন আমি মহা খুশি। জননীর বাপের মাথাওয়ালা টাকাটা আবার পেয়েছি। মীযান টাকাটা হাতে দিয়েই পিছনের দরজা খুলে ভাগলো। বোধহয় বাংলা টানতে যাচ্ছে। আমি এবার চুল আচঁড়ে, কাধে একটা ঝোলা চাপিয়ে দরজা খুলে দেই। হুরমুর করে ঘরে ঢুকে পরে কালো বিড়ালের দল, আমার শালা-সুমুন্দীরা। আমাকে দেখতে পেয়ে ওদের মায়াবী চোখ রসগোল্লার মত বড় বড় হয়ে যায়। বিড়ালের মত হুংকার দিয়ে বলে উঠলো বাঘের মত,
-চল এবার তোরে আদর করবো।

আমি স্বানন্দে উঠে পড়ি। অনেকদিন পর আমি শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Israt ভাল লাগল। সাহসী প্রতিবাদের জন্য অভিনন্দন।
মোঃ শামছুল আরেফিন গল্পটা খুব মনে দিয়ে পড়লাম। ভোট দিতে গিয়ে দেখি ভোটিং বন্ধ। এমন গল্প লিখে আবার লেখায় ভোটিং বন্ধ রেখেছেন। আপনাকে শাস্তি হওয়া উচিত।
সূর্য শশুর বাড়ী না যাও এই দোয়াই করছি আপাতত................. হা হা হা
মিলন বনিক অসাধারণ...অল্প কথায় অনেক সাহসী উপমা তুলে ধরেছেন...নামের যথার্ততা ফুটিয়ে তুলেছেন..শুভ কামনা....
ইসমাইল বিন আবেদীন যে সন্তান কথা কম বলে মা তাকে ভালো বলে তবে মুখচোরা বলে ......আর যে বাস্তবিক সত্য বলে মা তাকে বাহবা দেয়, গর্ব করে বলে আমার এই ছেলেটা খুব ভালো | আপনি পরেরটার দলে ...শুভকামনা মাহী.!!!
ইসমাইল বিন আবেদীন যে সন্তান কথা কম বলে মা তাকে বল বলে তবে মুখচোরা বলে ......আর যে বাস্তবিক সত্য বলে মা তাকে বাহবা দেয়, গর্ব করে বলে আমার এই ছেলেটা খুব ভালো | আপনি পরেরটার দলে ...শুভকামনা মাহী.!!!
ঝরা বাহ ! অসাধারণ
রওশন জাহান খুব ভালো হয়েছে লেখা। এরকম লেখাই চাই।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি অনেকদিন পর আমি শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি! // Heida to thiki achhe toy .... Mistida loichen....na lichen na....???...Khub Moja pelam Mahi Vai .....Apnake suvo kamona.........
ওবাইদুল হক আশা করি সামনের দিনে আমরা লাল ভাত খেতে পারব হাহাহাহা পণ্ডিত ভাই আপনার মনটা আসলেই এক রুপায়ক । শুভকামনা ।

০১ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪