একটি সবুজ বিকেল

সবুজ (জুলাই ২০১২)

প্রফেসর আব্দুস সালাম
  • ১৯
  • ৭৩
ফুল বাগান মাঠ বিল। দূরের ঐ বন ভেসে উঠছে কাজল কালো চোখের মণিতে। আকারে ছোট অস্পষ্ট, ঝাপসা। ঝুম করলে কয়েক মাইল বিস্তৃত কয়েকটি গ্রাম। উপরে বিশাল নীল আকাশ। একঝাক ভ্রু নিয়ে বারবার পিটপিট করে পলক পরছে। এক ধ্যানে নিষ্পলক চোখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নিরঞ্জন।

অনেক দিন পর আজ ঘুরতে এসে দারুণ একটা জায়গা পেয়েছে। ডান পাশে সারিবদ্ধ মেহগনি ইউক্যালিপটাস সেগুণ গাছ বাম পাশে বিভিন্ন জাতের ফুলের বাগান পিছন ফেলে দক্ষিণ দিকে মুখ করে বসে আছে। সামনে বিশাল বিল। বিলের ঐপারের বড় বড় গাছ গুলো ছোট হয়ে যেন নুয়ে পড়েছে মাটিতে। দূর্বা ঘাসের সাথে তাদের মিতালী। চেনা যায় না আলাদা আলাদা কোন গাছ। শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো লেপ্টে আছে। সুমিতার গলার উপর দিয়ে হাত বাড়িয়ে সুমিতার বাম পাশের স্তন মুঠি করে বগলদাবা করে বসে ছিল নিরঞ্জন। ঘন ঘন নিঃশ্বাসের ফাকে মৌনতা ভেঙ্গে বলে সুমিতা - এ মধুর পরশ যুগ যুগ ধরে পাই যেন এমনি করে জীবন ভরে, বন্ধু ওগো থেকো পাশে রেখনা কোন দিন একটু দূরে। নিরঞ্জন দূরের আকাশ থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে হাল্কা ঘাড় বামে নিয়ে আড়চোখে তাকিয়ে - কেন নয় বন্ধু আমার। এ জীবন তোমার জন্য বাজী রাখব পুনর্জন্ম হবে যত বার। কথা শেষ করে সুমিতার স্নিগ্ধ গালে চুমো খেয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে উঠে তারা।

কতদিন ভেবেছি তোমাকে নিয়ে ঘুরব। অফিস করে করে সময় আর হয়ে উঠে না। ভাগ্যিস তোমারও কলেজ বন্ধ তাই এমন সুবর্ণ সুযোগটা হল ; আরো কি যেন বলতে চাইছিল নিরঞ্জন কথায় ছেদ করে সুমিতা - হুম আর জায়গাটানা আমার মনের মতো। এমন একটি জায়গা পাব আমি ভাবতেই পারিনি। - আর তাইতো তুমি এখানে এসে কবি হয়ে গেছ। - আরে ধুর কি যে বল না, আমি হব কবি। - তানা হলে এমন সুন্দর করে বললে কি ভাবে - এ মধুর পরশ যুগ যুগ ধরে পাই যেন এমনি করে জীবন ভরে, বন্ধু ওগো থেকো পাশে রেখনা কোন দিন একটু দূরে। - আরে ধ্যাত হঠাৎ মনে আসল তাই বললাম। দেখি এটকু এ পাশটায় আসতো বাম হাত ব্যথা করছে। তুমি ওজন কত? কেন আবার ওজন দিয়ে কিহবে? না মানে এমনি আরকি। মেয়েদের ঐ এক স্বভাব বয়স আর ওজন বলতে চায় না। সুমিতাও একটু আনইজি ফিল করে তার ওজনটা নিয়ে। বয়স তার কাছে গোপন করার কিছু নেই। গত বছর নিরঞ্জন নিজে ফরম পূরণ করে কলেজে ভর্তি করে দিয়েছে। সে জানে তার আসল জন্ম তারিখ। তখন নিরঞ্জন বলে ছিল ইস্‌ তুমি দেখছি আমার দশ বছরের ছোট। তা স্পষ্টই সুমিতার মনে আছে। এখন একটু লজ্জা ওজন নিয়ে।

সুমিতা ডান পাশে এসে নিরঞ্জনের ডান হাতের মুঠিতে আবার সুপে দেয় নিজেকে। কৈ বললে না তোমার ওজন কত? - বয়সে তুমি যেমন আমার প্রায় দ্বিগুণ ওজনেও ঠিক তাই। এক দমে বলে একটি ভেংচি কেটে মুখ ভার করে বসে থাকে সুমিতা। নিরঞ্জন বুঝে তার অভিমান। - থাক বাবা আর ওজন জানতে চাইব না। দয়া করে আগের মুডে ফিরে আসো। এবার দুহাতের মুঠোয় পুরে নেয় সুমিতার স্তন যুগল। নিভির করে চুমু খায়। আগে এমন অভ্যাস ছিল না। বোটানিক্যাল গার্ডেন, চারুকলা আর সিনেমা দেখার সুবাদে মিলেছে এমন নিভিরতা। কয়েক বার হাত ফিরিয়ে দিলেও নিরঞ্জনের বেহায়া পনার কাছে হার মানে। এখন অভ্যস্ত। নিজেকে সুপে দিতেই পরম সুখ। এ অনেক প্রকার ভালবাসার একাংশ। নিভির থেকে নিভিরতম করে পাওয়ার প্রাকৃতিক স্বভাব। হরমোনাল ক্রিয়া কারো অস্বীকার করার উপায় নেই।

বিলের শেষ প্রান্ত দিয়ে বয়ে গেছে তুরাগ নদী। বিলে থৈ থৈ পানি। নদীতে যাত্রী বাহি ট্রলার খুব কম, বালু বাহি ট্রলালের ঘন ঘন চলাচল। চার পাশে মাত্র কয়েক জোড়া কপোত কপোতীরা বসে আছে। এখানে দোকান পাট হয়নি। এখনো নজরে পরেনি বোটানিক্যাল গার্ডেন কিংবা এমন ডাকাত মার্কা চটপটির দোকান ওয়ালা মাস্তানদের। ছিনতাই কারি আর টান মেরে দৌড় দেওয়া পাট্টিরা, এখনো এখানে ভ্যানিটি ব্যাগের গন্ধ পায়নি। তাই খুব নিরিবিলি আর শান্ত। কিন্তু রিকশাওয়ালাদের দাপট কম না। তারা একি রোডে রিক্সা চালায় নতুন লোক দেখলে বিশেষ করে সাথে মেয়ে মানুষ থাকলে দ্বিগুণ ভাড়া হাতিয়ে নেয়। এই স্থানও কয়েক বছর আগে বিল ছিল। আবাসন প্রকল্প ব্যবসায়ীরা বালি ভরাট করে গাছ লাগিয়ে বাগান করেছে। অত মানুষের নজর এখনো পড়েনি। তাই আজ বিকালটা প্রেম সাগরে ডুবে বেশ উপভোগ করছে তারা। সকালে বের হলেও সারাদিনে নিরঞ্জনের বুকে মাথা রাখার মতো এমন স্থান আর পায়নি।

বৃষ্টি হতে গিয়েও হয়নি। সূর্যের প্রখর তাপ এখন নেই। মেঘের আড়ালে লুকিয়েছে। লুকিয়েছে তারাও একে অপরের বুকে। প্রচণ্ড তাপ অনুভব করছে দুজনেই। সুমিতা শান্ত ভাবে প্রশ্ন করে আচ্ছা বিয়ের পর কি এভাবে আমাকে নিয়ে ঘুরবে। বিয়ের পর মেয়েরা হয়ে যায় ঘরণী। ঘর বাচ্চা দেখাশোনা করতেই দিন যায়। ঘুরার সময় কোথায়? তার মানে বিয়ের পর এ ভালোবাসা আর থাকবে না? ঘুরার সময় আর হবে না ? আরে না না। থাকবে অবশ্যই থাকবে। বিয়ের পর ভালোবাসা আরো বাড়ে। বাচ্চা হলে আরো বাড়ে। তা না হলে পৃথিবীতে সংসার বেশী দিন টিকতো না। যদি তুমি সময় পাও অবশ্যই ঘুরব।

পিছনের সবুজ গাছ গুলি বেশী বড় হয়নি। কয়েকটি করে ডালপালা ছেড়ে মাত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। ছোট ছোট কিন্তু সংখ্যায় বেশী আর ঘন বলে ভিতরে কিছুই দেখা যায় না। ভিতরেও লোক আসা যাওয়া করে। এ গুলো দেখে সুমিতার ভালো লাগে না, ভয় লাগে। - চল উঠি আমার ভয় লাগছে- কেন - জানি না চল। - আরে না আর একটু বস আবার কবে কখন সময় হয়, কোন ভয় নেই বস। আবার শুরু হয় তাদের আলাপ। সংসার সাজানো বাচ্চা বড় করা মানুষ করা ইত্যাদি ইত্যাদি। কথা আর ফুরায় না। তারা স্বপ্নলোকের সিঁড়ির সন্ধান পেয়েছে। সুমিতাই বেশী কথা বলে। ছোটছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে তার নিজস্ব আর্টে কথা বলে। অন্যমেয়েদের থেকে ব্যতিক্রম। নিরঞ্জনও তার কথা খুব পছন্দ করে। এই শোন - কি বল - আমাদের পাশের ফ্লাটে গত কাল একটি মেয়ে এসেছিল। - তো ? - কিসের তো ? আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। - আচ্ছা বল - ঐ ফ্লাটের ছেলের সাথে তার তিন বছরের সম্পর্ক। সম্পর্ক হয় মোবাইলে। কোন দিন তাদের সাক্ষাত হয়নি। মোবাইলে তাদের অনেক ভালো সম্পর্ক হয়। মেয়েটি তার ঠিকানা দিলেও ছেলে না গিয়ে তাকে আসতে বলে, এবং ঠিকানাও দেয়। ছেলেটা ভেবে ছিল মেয়েটি কোন দিন আসবে না। কিন্তু মেয়েটি ছেলেকে এতই ভালো বাসে, তার টানে সব ছেড়ে ছেলের কাছে ছুটে আসে। ছেলেটি মেয়েটিকে দেখে পছন্দ না হওয়ায় চলে যেতে বলে। তখন মেয়েটি কান্নাকাটি শুরু করে। এমন কান্না করে যে আশে পাশের লোকেরাও ঠিক থাকতে পারে না। এলাকার লোকেরা ছেলেটিকে বিয়ে করতে চাপদিলে ছেলেটি কৌশলে পালিয়ে যায়। তখন মেয়েটির কষ্ট দেখে আমিও আর ঠিক থাকতে পারিনি। - তার মানে তুমিও কেঁদেছ। - হাঁ। - কেন এত আবেগ যে সব ছেড়ে অপরিচিত একটি ছেলের জন্য বাড়ি ত্যাগ করতে হবে। জানা নেই, শোনা নেই। মুখে বলল আমি তোমাকে ভালো বাসি, তোমাকে বিয়ে করব। আর তাতেই গলে গেল। কেন ?, মেয়েটা এত বোকা কেন? কোন গার্ডিয়ান চান না তার সন্তান খারাপ জায়গায় বিয়ে হোক। সে ছেলে হোক আর মেয়েই হোক। মেয়েটি যদি তার বাবা মাকে জানাত তাহলে তারা এসে ছেলেকে দেখে যেত। তাদের মাধ্যমে দেখা শোনা হওয়ার পর বিয়ে না হলেও মেয়েটির এমন দশা হত না। যার যার মান সম্মান নিয়ে ঠিক থাকতো। এখন মেয়েটি কোথায় যাবে কি করবে ? বাড়িতে না গেলে তার জায়গা কোথায় হবে জান? - না জানি না কোথায় হবে আবার ? আচ্ছা জানার দরকার নেই, আমিও বলতে চাই না। - বলনা শুনি। - থাক ঐ প্যাঁচাল বন্ধ কর। আমাদের কথা বল।

যদিও কসম ভালোবাসা টিকিয়ে রাখার রক্ষা কবজ হয় না। তবু আবেগের জন্য হোক আর বিশ্বাস ধরানোর জন্য হোক। নিজের লাভের জন্যই হোক অথবা হোক অন্যকে বসে আনতে। অথবা হোক সত্যি সত্যি ভালোবাসা। ভালোবাসাতে কসম থাকবেই। আমার জীবনের চাইতেও তোমাকে বেশী ভালোবাসি। যত দিন বাঁচব ততদিন শুধু তোমাকে ভালো বাসব। তোমাকেই ভালোবেসে মরবো। মরণের পরও যেন তোমাকে পাই। এ মধুর পরশ যুগ যুগ ধরে পাই যেন এমনি করে জীবন ভরে, বন্ধু ওগো থেকো পাশে রেখনা কোন দিন একটু দূরে। এ জীবন তোমার জন্য বাজী রাখব পুনর্জন্ম হবে যত বার। তাদের ভালোবাসাও কোন এক পথে চলছে।

এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে নিরঞ্জন সুমিতার সুন্দর দুটি মায়াময় চোখের দিকে। ফুল বাগান মাঠ বিল দূরের ঐ বন ভেসে উঠছে কাজল কালো চোখের মণিতে। আকারে ছোট অস্পষ্ট, ঝাপসা। ঝুম করলে কয়েক মাইল বিস্তৃত কয়েকটি গ্রাম, উপরে বিশাল নীল আকাশ। একঝাক ভ্রু নিয়ে বারবার পিটপিট করে পলক পরছে। এক ধ্যানে নিষ্পলক চোখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে নিরঞ্জন। সুমিতাও পৃথিবীর একমাত্র সুখের সন্ধান পেয়েছে নিরঞ্জনের বুকে। তাদের ভালোবাসাও চলছে সবুজ বিকেলে চির সবুজের পথে। যে পথে তারা পৌঁছে যাবে স্বর্গে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ হাতের তুলি অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ । শুভ কামনা ।
Jontitu সুমিতাও পৃথিবীর একমাত্র সুখের সন্ধান পেয়েছে নিরঞ্জনের বুকে। তাদের ভালোবাসাও চলছে সবুজ বিকেলে চির সবুজের পথে। যে পথে তারা পৌঁছে যাবে স্বর্গে। / সুন্দর পথ, ভালো লাগলো।
ইউশা হামিদ নিরঞ্জন - সুমিতার সবুজ প্রেম অমর হোক । শুভ কামনা থাকলো ।
আহমেদ সাবের বেশ সুন্দর গল্প। ভাষা বেশ ঝরঝরে। এক জোড়া প্রেমিক প্রেমিকার "একটি সবুজ বিকেল" 'এর গল্প ভাল লাগল।
সূর্য ভাল লাগা রইল।
অষ্টবসু sabuj premer galpati bhalo bunechen
স্বাধীন বাহ্ অনেক সুন্দর । সবুজ প্রেম নাকি পার্ক প্রেম হা হা হা এমন হচ্ছে অহরহ চারদিকে, তবে সেগুলো কিন্তু সময়ের গভীরে দ্রুতই হারিয়ে যায়। কবিতার ভাষায় "একবার পাইবার পরে নিতান্তই অবহেলার মনে হয়" এ প্রেম বেচে থাক
প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস সবুজ ভালবাসা পৃথিবীতে বয়ে আনুক শান্তির ললিত ধারা। সাহসী উচ্চারণের জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা নিবেন।
মাহবুব খান পাকা হাতের সহজ সরল গল্প / ভালো লাগলো
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

০৫ ফেব্রুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪