চিত্রকর

প্রিয়ার চাহনি (মে ২০১২)

আরমান হায়দার
  • ৩০
  • ২৫
ড.সাদিকের এপিএসের নাম বদরুল। সাদিক স্যারের সাথে দেখা করার বায়না ধরে অনেক্ষণ বসে থাকায় বদরুল এই মাত্র যাবার পথে বলে গেল,
-‘ আপনিতো আগেও একদিন স্যারের সাথে দেখা করেছেন । আজকে আবার কেন ? স্যার ব্যস্ত আছেন।’ তারপরে ত্যাড়া ব্যাকা মার্কা কি যেন একটা ইংরেজি বললো, ঠিকমত বোঝা গেল না। অবশ্য বোধগম্য করার জন্য এই ইংরেজি সে বলেনি। আমি বেশ বুঝতে পারি এ ধরনের ইংরেজির আক্ষরিক অর্থে বঙ্গানুবাদ হয় না;এর অর্থ হল তুমি চলে যাও। কিন্তু আমি তো সহজে ফিরে যাবো না। আমি ডেল কার্নেগীর অনুসারী। অর্থ-সম্পদ, বন্ধুলাভ, প্রতিপত্তি, জীবনে প্রতিষ্ঠা - এগুলো আমার একান্ত দরকার। নিদেন পক্ষে এগুলি কিভাবে অর্জন করা যায় তার জন্য জীবনে লব্ধপ্রতিষ্ঠ ব্যক্তির অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য আমি আজ এখানে উপস্থিত।

বদরুলের কথা ঠিক। আগেও একদিন এসেছিলাম । ড. সাদিক বলেছিলেন বিসর্জন দিতে শেখো। তারপর সাদিক স্যার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হয়তো ভেবেছিলেন বিসর্জন কথাটির অর্থ আমি বুঝিনি। তাই আবার জিজ্ঞেস করেন ,
-‘ কুরবানি বোঝ ?’ আমি হ্যাঁ সূচক ভাবে মাথা নাড়াতেই বললেন,
-‘সবাই যা আঁকড়ে ধরে থাকে তা কুরবানি দিতে হবে। যদি তুমি জীবনে উন্নতি করতে চাও। এটাই তোমার করণীয়। ’ এর চেয়ে বেশী কিছু বলার বা বুঝানোর প্রয়োজনীয়তা সেদিন অনুভব করেন নি তিনি। সেই বিসর্জন বা কুরবানির বিষয়টি আমি আরো একটু ভালভাবে শোনার জন্য, বোঝার জন্যই আজ দ্বিতীয়বার এসেছি। আমার ধারনা মফস্বলের একজন অতি উৎসাহী যুবকের ইচ্ছাশক্তি দেখে সাদিক স্যারের মত একজন বড়মাপের মানুষ খুশিই হবেন। তিনি খুলে বলবেন তার বর্ণাঢ্য জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠির কথা। আমার জানা মতে জনাব সাদিক একাধারে আবৃতিকার, কবি, প্রথম বিভাগ ফুটবল টিমের খেলোয়াড়,রাজনীতি সচেতন নাগরিক, বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতির ভাল গবেষক, বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং উচ্চশিক্ষিত একজন সফল মানুষ। সেই সাথে সুদর্শন পুরুষও বটে। তিনি তথাকথিত স্টারদের মত পথে বেহায়ার মত সর্বগুণে গুণান্বিত হয়েছেন বলে আমি শুনিনি । এখন যেমন একজন তথাকথিত স্টার প্রথমে হন টেলিভিশনের মডেল। তারপর একটি বা দুটি নাটকে অভিনয় করে অভিনেতা বা অভিনেত্রী , তারপর শুভানুধ্যায়ীর লেখা একটি নাটক নিজের নামে চালিয়ে দিয়ে নাট্যকার, একটি বই লিখে একুশের বই মেলায় গণ্যমান্য কাউকে দিয়ে উদ্বোধন করিয়ে লেখক, তারপর নাচের কিছুটা তালিম নিয়ে নৃত্যশিল্পীর পরিচিতি নেন এবং টেলিভিশনের কোন টকশোতে উপস্থাপনা করে প্রতিভার ষোলকলা পূরণ করেন। পরবর্তীতে সেই পরিচিতিকে ব্যবহার করে শিল্পপতি,সমাজপতি বনে যান,তেমন স্টার নন ড.সাদিক। আমার কাছে তিনি জাত প্রতিভাবান এবং ভণিতা বিহীন একজন চৌকস ব্যক্তিত্ব। তা’ছাড়াও তার এমন আরো অনেক গুন আছে যেগুলি দেশের অন্যান্য মানুষের মত আমাকেও এতটাই আকৃষ্ট করেছে যে আমার মত ডেল কার্নেগী পড়া, ডঃ লুৎফর রহমান পড়া হবু ভালমানুষ ও সফল মানুষ হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় উদ্বেলিত যুবকের কাছে তিনি পরম শ্রদ্ধার ও স্বপ্নের একজন মানুষ । আমি বদরুলের এই কথায় ভেঙ্গে পড়তে পারি না। আমি রবার্ট ব্রুসের মত বার বার চেষ্টা করতে রাজি। তাই আমি এখন অন্য কোন উপায় ভাবছি এবং ভেবে দেখলাম বদরুলকে দিয়ে হবে না। সাদিক স্যারের সাক্ষাত আর একবার পেতে হলে অন্য পথ খুঁজে বের করতে হবে।

ড. সাদিকের বাসার কাছাকাছি একটি চায়ের দোকানে বসে আমি যখন এসব সাত-পাঁচ যখন ভাবছি তখন দেখি একজন লোক ড. সাদিকের বাসা থেকে বের হচ্ছেন। লোকটা অনেকটা উদাসীন প্রকৃতির, মানুষের ভিড় ঠেলে মাটির দিকে চোখ রেখে মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছেন। আমি অনেকটা দৌড়ে তাকে অনুসরণ করতে থাকি। এক সময় মৃদু স্বরে ডাকি,
-‘ স্যার। আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?’ লোকটি সংকোচহীন গলায় বলেন,
-‘ হ্যাঁ হ্যাঁ চিনতে পেরেছি।’
-‘ আমার সাথে আপনার প্রথম দেখা হয়েছিল ড.সাদিক স্যারের বাসায়। গত শুক্রবারের আগের শুক্রবার। ’
- ‘ওখানে দেখা হয়েছিল ? বল কি ! তাহলে তো তোমাকে আমি চিনতে পারলাম না।’
আমি দেখলাম এ তো ভারী মুসকিল। একটা পাগলা কিসিমের লোকের পাল্লায় পড়া গেল দেখছি। অন্য সময় হলে হয়তো রাগের মাথায় কিছু একটা বলে ফেলতাম। কিন্তু এখন তা করা ঠিক হবেনা। লোকটার সাথে সখ্যতা গড়ার শেষ সুযোগটা হাত ছাড়া করা যাবে না। আমি নিজকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক ও বিনীত ভাবে বলি,
-‘ঐ যে! সেদিন আমি যখন সাদিক স্যারের সাথে কথা বলছিলাম, আপনি তখন দুইটি ছবি স্যারের কাছ থেকে দেখিয়ে নিলেন । ছয় নম্বর দিয়ে সাত নম্বর ছবিটা নিলেন। স্যার পেন্সিল দিয়ে কিছু সংশোধন করার পর আবার আপনাকে সাত নম্বর ছবির একটা কপি দিলেন।’ আমি এ কথা বলার পর লোকটার মুখশ্রীতে হঠাৎ পরিবর্তন দেখে আমার মনে হল হয়তো তার স্মৃতি তিনি ফিরে পেয়েছেন । তিনি ভ্রু কুঁচকে বলেন,
- ‘না। তারপরও তোমাকে আমি চিনতে পারলাম না।’ একটু থেমে আমাকে কিছুটা অপ্রস্তুত করে দিয়ে ছবির প্রসঙ্গ টেনে আনেন,
-‘ আচ্ছা তুমি কি নিশ্চিত যে সেটা সাত নম্বর ছবি ছিল?’
-‘ হ্যাঁ, অনেকটাই নিশ্চিত। কারণ ছয় নম্বর ছবির পর সাত নম্বর হওয়াটাই স্বাভাবিক। ছয় নম্বরটি দেখেছি - এটা নিশ্চিত।’
-‘ তুমি এরপর থেকে ভাল করে খেয়াল করতো। তুমি যদি গত শুক্রবারের আগের শুক্রবারে এসে থাকো, তাহলে ঠিকই বলেছো । সেদিন আমি ছয় নম্বর ছবিটিই নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তারপরের ছবিটি এখন আমার হাতে এবং সেটির নম্বর দেখছি পাঁচ।’ তারপর হাতের কর গুনে কি যেন একটা হিসাব মিলাতে চেষ্টা করতে থাকেন। আমি কিছু ঠাহর করতে পারি না।
হঠাৎ পরিচিত হওয়া এই ছবিওয়ালা চিত্রকর ভদ্রলোককে আমার কাছে প্রথম থেকেই অদ্ভুত ঠেকছিল। তিনি এই বলছেন আপনাকে চিনি আবার বলছেন চিনি না। পরক্ষনেই আবার বলছেন, হ্যাঁ চিনি। মুখে একবার প্রশান্তির হাসি আবার পরক্ষনেই গভীর চিন্তার ছাপ। ছবির নম্বর গুলোই কেমন উল্টো করে বলছেন । ছয় নম্বর ছবির পর সাত নম্বর ছবি হবে এটা কোন গাধা না বোঝে। ইনি বলছেন পাঁচ নম্বর ছবি। একি বিশ্বকাপ খেলার কোন কাউন্ট ডাউন না কি! সাত এর পরে ছয় , ছয়ের পরে পাঁচ, পাঁচের পরে চার। তাছাড়াও একটি নতুন কাজ দিচ্ছেন, এর পর থেকে খেয়াল করবে তো। লোকটার বাস্তব জ্ঞানও বোধ লোপ পেয়েছে। আমি এসেছি মফস্বল থেকে । এই শহরে আমার থাকার কোন জায়গাটি পর্যন্ত নেই। আর আমি কিনা তার ছবির নম্বর গুনে বেড়াবো। বেক্কল টাইপের মানুষ হবে একটা - মনে মনে ভাবছি। এমন সময় তিনি আবার কথায় ফিরে আসেন,
-‘ঐদিন তুমি কোন বিষয়ে যেন আলাপ করছিলে ?’
-‘ জানতে চেয়েছিলাম কিভাবে তার মত এত গুনের অধিকারী হওয়া যায়।’
-‘ তাই নাকি ? এই আলাপ করছিলে ? ও আচ্ছা । তা তোমার কি কি গুনের অধিকারী হতে ইচ্ছে করে?’
-‘ অর্থ সম্পদ, প্রতিপত্তি, প্রতিষ্ঠা, বন্ধুলাভ- এই সব আর কি।’
-‘ ও আচ্ছা!’
-‘‘ আপনি তো তার কাছের মানুষ । আপনি কি বলতে পারেন এর মূলমন্ত্রটি কি ?
-‘ তা উনি কি বলেছেন।’
-‘উনি বিসর্জন দিতে বলেছেন। মানে কুরবানি করতে।’
-‘ ঠিকই বলেছেন। তা এখন সমস্যা কি ?’ আস্তে আস্তে কথাগুলো জিজ্ঞেস করে যাচ্ছেন এই লোকটি। শুনে মনে হল তিনি এখনই কোন সমাধান দিয়ে দিবেন। আমি বললাম,
-‘সমস্যা হল কি কি জিনিষ বিসর্জন বা কোরবানি দিতে হবে তা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি।’ কিন্তু আমার কথা শুনে দ্রুত সমাধান দেয়া তো দুরের কথা কোন কথাই বললেন না ভদ্রলোক। বললেন,
- ‘চল! ওদিকটায়।’
ড. সাদিকের বাসার কাছেই যে দোকানের থেকে উঠে একটু আগে আমি এই নতুন লোকটিকে অনুসরণ করেছিলাম ভদ্রলোক সেই দোকানেই আমাকে নিয়ে এলেন। আমি ওখানে বসে চা খাওয়ার জন্য বেশ আগেই বয়কে অর্ডার দিয়েছিলাম। ভিড়ের কারণে হোক বা চায়ের কাপের স্বল্পতার কারণেই হোক অথবা আরো অনেক কারণ থাকতে পারে যে জন্য অর্ডার মত এখনো চা পাইনি। এখন ভদ্রলোক আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন ,
-‘চা খেয়েছেন ? চা খাবেন ? ’ বলে কোন দিকে না তাকিয়ে ক্যাশ বাক্সে বসে থাকা পেট মোটা দোকানীকে বললেন, দুই কাপ চা ,দুটো বিস্কুট।
এবার সাথে সাথেই চা চলে এল। ভদ্রলোক চা মুখে তুলেই এক চুমুক, দ্বিতীয় চুমুকের আগে একটি সিগারেট ধরালেন। আমি খেয়াল করলাম তিনি আমাকে সিগারেট অফার করলেন না। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তার সমস্ত কাজকে পঞ্চেন্দ্রিয়ের ক্যামেরায় বন্দি করছি।
তাকে অনুসরণ করা, বিশেষ করে তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ করার দুটো কারণ আছে । প্রথমত: আমি চাই না যে সাদিক স্যারের ঘনিষ্ঠ কারো দৃষ্টি থেকে আমি হারিয়ে যাই । আর দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে ছবির নম্বর সংখ্যা লক্ষ্য করতে ভদ্রলোক নিজেই আমাকে বলেছেন। এতে লক্ষ্য করার উৎসাহ আমার এতই বেড়ে গেছে যে তার প্রত্যেকটি জিনিষ, কার্যকলাপ আমি লক্ষ্য করছি। লোকটি দেখতে রোগা পাংশুটে। তবে মুখের চোয়ালের দৃঢ়তা বলে দিচ্ছে সে বেশ সাহসী । মাথায় একটা সাদা হ্যাট, টেস্ট ক্রিকেটে খেলোয়াড়রা যে রকম সাদা টুপি পড়ে থাকে তেমন। একটা কালো রঙের পাঞ্জাবী পড়া। নোংরা হলেও কালো রঙের কারণে খুব একটা দৃষ্টিগোচর হয় না। কিন্তু এ মুহূর্তে আমার চোখ এড়ানো কঠিন হল। কাঁধে যথারীতি একটি কাপড়ের ব্যাগ ঝোলানো। আমি শুনেছিলাম শিল্পী গোছের মানুষ এরকমই হয়। নিজেদের প্রতি তাদের কোন খেয়াল থাকে না। দাড়ি-গোঁফ কামানোর ইচ্ছা ,সময় বা পয়সা কোনটাই থাকে না। অথবা পয়সা থাকলে সময় থাকে না; সময় থাকলে ইচ্ছে বা পয়সা থাকে না।

চা খাওয়া শেষ হলে চায়ের দাম দিয়ে দিলেন। তত সময়ে আমার অর্ডার দেওয়া চা চলে এলো। আমি নিজের অর্ডারে চায়ের দাম দিতে চাইলে সেটি নিতে দোকানীকে বারণ করলেন। দোকান থেকে বাইরে যাওয়ার ইঙ্গিত করে আমাকে প্রশ্ন করেন,
-‘তুমি জীবনে বড় হতে চাও?’
-‘ হ্যাঁ।’
-‘কেন?’
-‘সবাইতো বড় হতে চায়? তাই আমিও চাই।’
-‘কত ধরনের বড় আছে তা কি তুমি জানো?’
আমি তার কথাটি বুঝতে না পেরে চুপ থাকি এবং তিনি সম্ভবত অন্য কোন চিন্তা করে চুপ থাকেন। দুই জন লোক যখন কোন বিষয়ে আলোচনা করতে করতে হঠাৎই তাদের ভাষা হারিয়ে ফেলে তখন বেশ একটা অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। কথোপকথনের এরকম বিরতিতে আমার ধারনা হল তিনি আমাকে কিছু নতুন জিনিষ শিখাতে চাচ্ছেন এবং সে রকম একটা নির্বাক-মূঢ় অবস্থার ভেতর দিয়ে সময় অতিবাহিত হতে থাকলো।
দোকান থেকে বের হয়ে তিনি আমাকে নিয়ে নীরব হেটে চলেছেন। কোথায় যাচ্ছেন আমি জানি না। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একবার মনে হল কিছু দুর যাবার পর হয়তো আমাকে বিদায় দেবেন। কিন্তু সেরকম ঘটলো না। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি একরুমের দোতলা বাসায় আমাকে নিয়ে ঢুকলেন। তাকিয়ে দেখিয়ে দেখি এটি একটি চিত্রশালা, এখানে ছবি আঁকা হয়। রাত্রি যাপনও হয় বোধ হয়; পাশে ছোট একটি বিছানা। তিনি বিছানার উপর ছড়ানো একগাদা ছবি থেকে একটি ছবি তুলে নিয়ে আমার হাতে দিয়ে বলেন,
-‘ এই যে মেয়েটিকে দেখছো। কোন এক সময় এই মেয়েটি একজনকে খুব ভালবাসতো। সেই একজন যে ভদ্রলোক তিনিও মেয়েটিকে ভালবাসতেন। তারপর একদিন মেয়েটিকে শহরে নিয়ে এসে তুলে দিয়েছিলেন অন্যের হাতে। মেয়েটি এই ঘটনা বুঝতে পেরে এতটাই হতবিহবল হয়েছিল যে লোকটির কাছে তাকে ছেড়ে দেওয়ার বা বাঁচাবার কোন আকুতি করেনি। যতক্ষণ চোখে চোখ পড়ছিলো ততবারই সে নাকি প্রিয়ার স্বাভাবিক চাহনিতে তাকিয়ে থাকতো। ’ একটু থেমে আবার একই কথা বলেন,
-‘একেবারেই স্বাভাবিক চাহনি ছিল মেয়েটির চোখে মুখে। যেভাবে প্রেমিকের দিকে তাকায় তার প্রেমিকা। তোমার কি মনে হয় এমন হতে পারে?’
আমি বললাম ,
- ‘দেখুন হৃদয়ঘটিত ব্যাপারে আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই । তাই বলতে পারছিনা। আচ্ছা ! মেয়েটিকে কার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল? বলতে পারেন?’
-‘ না। বলতে পারি না। কারণ শুধু মাত্র ছবিটি নিখুঁতভাবে আঁকার জন্যই আমি ঘটনাটি বহু অনুরোধ করে জেনেছি। কেননা আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না, এ অবস্থার কোন মেয়ের চাহনি একেবারেই প্রিয়ার চাহনি হতে পারে কিনা । আর তোমাকে প্রশ্ন করার উদ্দেশ্যও ঐ একটাই, আর তা হলো আমার সন্দেহটাকে, বিশ্বাস-অবিশ্বাসটাকে যাচাই করে নেওয়া। নাথিং এক্স ’ একটু থেমে অন্যদিকে মুখ করে এটা সেটা নাড়াচাড়া করতে করতে বলতে থাকেন,
-‘ও! তুমি যেটা জানতে চাচ্ছিলে ! হতে পারে যুদ্ধের সময় শত্রুসৈন্যদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। হতে পারে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। আবার এমনো হতে পারে কোন প্রবাসী মেয়েটিকে পছন্দ করেছিল কিন্তু কোন ভাবেই তাকে হস্তগত করতে না পেরে অর্থের বিনিময়ে সংগ্রহ করেছিল। আমি এব্যাপারে এর চেয়ে বেশী কিছু বলবো না। কারণ এ কথাটি গোপন রাখার জন্য আমি প্রতিজ্ঞা করেছি। আর এ ধরনের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ আমার প্রফেশনাল ইথিকসে পড়ে না। তাই সেটি আমি বলবো না।’ হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই বলে উঠলেন,
-‘ ওহ্ আর একটি কথা । তোমাকে আগেই বলা দরকার ছিল। তবে এখন বলছি। তোমাকে সফল হওয়ার যে মন্ত্র আমি দেব আমার জীবিতাবস্থায় এটি তুমি ছাড়া আর কেউ জানবে না। কোন কাক-পক্ষীও যেন না জানে। কি রাজি ?’
বলে তিনি ঘরের মধ্যে পায়চারী করতে থাকেন এবং তার হাতের ছবিটার সাথে অন্যান্য ছবিগুলো মেলাতে থাকেন। আমি যখন বললাম,
-‘ জ্বী রাজি। আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার সাথে করা শর্ত ভঙ্গ হবে না। ’
তখন তিনি কয়েকটি হাতে আঁকা ছবি আমার হাতে তুলে দেন ।
-দ্যাখো তো কেমন হয়েছে। ’
আমি বিস্মিত হয়ে দেখি একটি মেয়ের অদ্ভুত সুন্দর চাহনি। কাজল কালো ডাগর চোখের আহবান এতই জীবন্ত ও প্রাঞ্জল যে দেখেই মনে হচ্ছে কোন শিল্পীর হাতের তুলিতে গড়া। পৃথিবীর সব মেয়েই সুন্দর এটা যেমন সত্য, আবার সব মেয়েই এত সুন্দর নয় এটাও তেমনি সত্য। এধরনের ছবি কেবল শিল্পীর তুলির আচরেই আঁকা সম্ভব। আমার সামনে যে চিত্রকর দাঁড়িয়ে আছেন তার তুলির স্পর্শে বিভিন্ন ভঙ্গিতে আঁকা কয়েকটি মুখাবয়বের ছবি। আমি স্বাভাবিক ভাবেই জানতে চাই,
-‘ আপনি এটি কি দেখে এঁকেছেন ? নাকি একেবারেই আপনার মন থেকে আঁকা। অবশ্য প্রশ্ন করছি একারণে যে ছবি আঁকার ব্যাপারে আমার কোন ধারনা নেই। ’
-‘ না ছবিটি আমাকে দিয়েছেন এক ভদ্রলোক। তার মানিব্যাগে ছোট একটি পাসপোর্ট সাইজের ছবি অবশিষ্ট থেকে গিয়েছিল। সে এই ছবি থেকে যত খুশি ছবি আঁকতে বলেছেন। তিনি অবশ্য আমার কাছে ছবি আঁকার হাতেখড়িও নিচ্ছেন গত কয়েক মাস ধরে। আজকে যে ছবিটি দেখলে এটি হচ্ছে আমার আঁকা পাঁচ নম্বর ছবি।’
-‘আপনি তাহলে এর আগে চারটি ছবি এঁকেছেন।’
-‘সেটাই তো তোমাকে খেয়াল করতে বলেছি। তুমি যে বললে এর আগে সাত নম্বর ছবি দেখেছো; গত শুক্রবারের আগের শুক্রবার। ’
-‘ ও হ্যাঁ। হ্যাঁ হ্যাঁ বলেছি ’ আমি কিছুটা চমকে উত্তর দিলাম।
-‘ এর আগে উনিশটি ছবি এঁকেছি মেয়েটির। ’
-‘অপরাধীরা তাহলে এভাবেই হয়তো প্রায়শ্চিত্ত করে।’ আমি বলি। কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেন না এই চিত্রকর। বলেন,
-‘ মেয়েটির ছবির খোঁজ ভদ্রলোক প্রতিদিনই নেন। অবশ্য এর বিনিময়ে তিনি আমাকে মোটা অংকের পারিশ্রমিক দিয়ে থাকেন। ’


সকালে বদরুলের কাছ থেকে অনুৎসাহী আচরণ পাবার পর ঘটনা যে এত দ্রুত এভাবে গড়াবে তা আমি ভাবতেও পারিনি। কারণ আমার উদ্দেশ্য ছিল জীবনের সকল ক্ষেত্রে না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফল হওয়ার ‘বিসর্জন তত্ত্বটি’ সম্পর্কে ড. সাদিকের কাছ থেকে বিশ্লেষণ চাওয়া। তার পরিবর্তে এই চিত্রকরের কাছ থেকে এসব কি শুনছি আমি! আমি বিষয়টি সুনির্দিষ্ট ভাবে জানার জন্য জিজ্ঞেস করি,
-‘ কিন্তু আমার জানা হল না সাদিক স্যার যে বিসর্জন বা কোরবানির কথা বললেন সেটার মানে কি?’
-‘যে কোন কথারই কমপক্ষে দুটো মানে করা যায়। উনি যে কথা বলেছেন তারও দুটো অর্থ করতে পার। বিসর্জনের একটি অর্থ হল তুমি জীবনের সকল সুখ শান্তি , ভোগবিলাস ত্যাগ করে ক্রমাগত পরিশ্রম করতে পারো। তাহলে তুমি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। আবার দ্বিতীয় আর একটি অর্থ হল তুমি মানুষের সকল মূল্যবোধকে গোপনে ত্যাগ করেও তোমার উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারো। তবে মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দেওয়ার কাজটি করতে হবে সুকৌশলে। শোন ! সত্যের সাথে মিথ্যের মিশেল দিয়ে যদি তুমি চৌর্যবৃত্তির শৈল্পিক ও নিখুঁত উপস্থাপন করতে পার তবে সাফল্য অবধারিত। তুমি এ দু’পথের যেকোনোটি বেছে নিতে পার। ’
-‘ কিন্তু আমরা তো মৃত্যুর পরের জীবন বিশ্বাস করি। ’
-‘ সেটাতো নতুন কিছু নয়। তুমি,আমি, আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি। আর এই বিশ্বাসের সুযোগইতো নিতে হবে সুকৌশলে- ভয়ংকর রূপে, অবলীলায় এবং অবিশ্বাস্য ভাবে। এখন থেকে আর একটি বিষয় মনে রাখবে,একই সাথে দুই জীবনে সফল হওয়া যায় না। তুমি,যেকোনো একটিকে বেছে নিবে, সৃষ্টি জগতের এটাই মুল দাবী। এটাই সাফল্যের সবচেয়ে বড় মন্ত্র, নিগূঢ়তম কথা। এক জীবনের উৎসর্গ অন্য জীবনের প্রাপ্তির সোপান। সেটা এই জীবনেই হোক আর পরজীবনে বা অন্য কোন জীবনেই হোক।’
-‘ কিন্তু দ্বিতীয় পথটি তো পাপের পথ। সেখানে মানুষ প্রায়শ্চিত্তের আগুনে জ্বলতে থাকে।
এই সাফল্যে তো কষ্টের শুরু হবে।’
-‘সেটা কেমন? কিভাবে ?’
-‘ এই ছবির কথাটিই ধরুন। ছবির স্রষ্টা ভদ্রলোক কিন্তু প্রেমিকাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে ঠিকই এই পাপের জন্য অন্তরজ্বালায় জ্বলছেন। প্রায়শ্চিত্তের আগুন তাকে নিরন্তর জ্বালিয়ে মারছে। তা না হলে পয়সা খরচ করে আপনাকে দিয়ে তার প্রিয়ার একখানা চাহনিকে কেন বার বার এঁকে রাখছেন? এতে করে কি তার সাফল্যের প্রশান্তিটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে না? ’

এরকম একটি প্রশ্নটি আমি কিছুক্ষণ আগেও করেছিলাম,চিত্রকর সুকৌশলে সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছিলেন। আমি আবার সেই প্রশ্নটি করায় তিনি অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকলেন । আরো গোটা দুই সিগারেট শেষ করে তৃতীয় সিগারেট ধরালেন। সমস্ত ঘর সিগারেটের ধুঁয়ায় ভরে উঠেছে। আমার দম আটকে আসছিল। আমি ঘর থেকে সামনের ছোট বারান্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। চিত্রকর লোকটি কি বুঝলেন জানি না, সিগারেটটি অ্যাসট্রেতে গুজে দিয়ে বললেন,
-‘ এখন কি তাহলে যেতে চাচ্ছো? যাবার আগে তোমার নাম ঠিকানা, পোষ্ট অফিসের নাম লিখে দিয়ে যাও।’
আমি কলম বের করে নাম-ঠিকানা লিখে বের হয়ে আসবো এমন সময় চিত্রকর বললেন,
-‘ তুমি যে কথাটি বললে তা সত্য কিনা বা কতটুকু সত্য তা জানতে হলে তোমাকে আর কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। অন্তত আমার এক নম্বর ছবিটা না হওয়া পর্যন্ত। ওকে !, গুডবাই!’
আমি খেয়াল করলাম চিত্রকর শেষ দুটি কথা ইংরেজিতে বললেন। এর আগেও একবার শেষ কথায় এরকম বলেছেন। সকালে যেভাবে এপিএস বদরুল শেষ কথাটি ইংরেজিতে বলেছিলেন। আমি জানি না যে ড.সাদিকের মত লোকের সাথে যারা ওঠা বসা করেন তারা শেষ বেলায় এসে দুই এক সেন্টেন্স ইংরেজি বলেন কিনা। নাকি এটা শহুরে লোকদের কথা বলার একটা স্টাইল।

আমি চিত্রকরের চরিত্র এবং কথাগুলো নিয়ে বেশ একটা গোলমেলে অবস্থার মধ্যে পড়লাম। অনেক অজানা তথ্য হঠাৎ করেই আমার কাছে চলে এলো ঠিকই কিন্তু এখান থেকে কোন উপসংহার টানা বেশ কঠিন। আবার চিত্রকর লোকটির সাথে একদিনের স্বল্প পরিচয়ের কথা দিয়ে নিশ্চিত কোন কিছু বলাও যাচ্ছে না। বেশ একটা কেমোফ্লেক্স তৈরি হল। এদিকে চিত্রকরকে কথা দিয়েছি তার বলা কথা যাতে কাকপক্ষীও না জানে। আমি পুরো বিষয়টাকে আপাতত ভুলে যাবার চেষ্টা করলাম। অন্য কাজে মন বসাতে চেষ্টা করলাম। ধীরে ধীরে মনের পর্দায় ড.সাদিক এবং পাগলাটে ঐ চিত্রকরের স্মৃতি অনেকটাই ফিকে হয়ে এল। এমন সময় একদিন ডাকপিয়ন একটা চিঠি নিয়ে এল । খাম হাতে নিয়ে দেখি ঠিকানা লেখা একটুকরো কাগজকে কেটে গাম দিয়ে সেঁটে দেয়া হয়েছে খামের ওপর। কিন্তু একি অবাক করা কাণ্ড! চিঠির উপর নাম ঠিকানা আমার নিজের হাতে লেখা।
চিঠিটি খুলে পড়লাম। নীচে লেখকের নাম সুমিত । নামটা অপরিচিত, এই প্রথম দেখলাম । সুমিত নামটির উপরে কয়েক লাইন মাত্র লেখা। ‘তুমি সৎভাবে বড় হতে চাও, চৌকস হতে চাও-এটা আমি জানি। এটা অর্জনে তুমি নিরন্তর আমৃত্যু চেষ্টা করতে থাকো। আমি ছবি এঁকে কিছু টাকা পেয়েছি। সব খরচ করতে পারলাম না। তুমি বদরুলের সাথে যোগাযোগ করে টাকাটা নিও , কাজে লাগবে।’ ব্যাস এই কয়েক লাইনের চিঠি। আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম এই ভেবে যে টাকাটা নেয়া ঠিক হবে কিনা? তা’ছাড়া এ রকম ঘটনা তো নাটক উপন্যাসে দেখা যায়,শোনা যায়; তাও কদাচিৎ। তারপরও মনে হল টাকা নেয়া না নেয়া পরের ব্যাপার, একবার ঘুরে আসি। সবার সাথে অন্তত: দেখাটাতো হবে।

শহরে এসে প্রথমেই ভাবলাম চিত্রকরের সাথে দেখা করি। হেঁটে চললাম চিত্রকরের বাসার দিকে। রাস্তাটা আমার চেনা ছিল। বাসাটাও রাস্তা থেকে দেখা যায়। দোতলা বাসার সামনের বারান্দায় গ্রিল নেই । দুর থেকেই দেখা যাচ্ছে দরজায় তালা ঝুলছে। ফিরে এলাম বদরুলের কাছে। তার কাছে আমার আসতে খুব একটা মন চাচ্ছিল না। লোকটার ব্যবহার আমার মনে আছে। কিন্তু সুমিত আমাকে বদরুলের সাথেই দেখা করতে বলেছেন। আমি চিঠিখানা এপিএস বদরুলকে দেখালাম। আমার ধারনা ছিল এপিএস সাহেব বিরক্ত হবেন। এবার কিন্তু আমার ধারনা ভুল প্রমাণিত হল। দেখা মাত্রই বদরুল চেয়ার থেকে উঠে আমাকে সোফায় বসালো। বেশ বিনীত ভাবে বললো,
-‘ চিঠি পেয়েছেন? চিঠিটা আমিই পোষ্ট করেছিলাম। সুমিত দা মারা যাওয়ার সময় মুখ বন্ধ খামটা দিয়ে বলেছিলেন চিঠিটা পোষ্ট করে দিতে। আর টাকা পয়সা গুলো আপনাকে বুঝিয়ে দিতে। বোঝেনই তো ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের শেষ ইচ্ছে। আমি চিঠিটা আগেই দিতে পারতাম। দেইনি। আমাদের বড় স্যারের একটা একক চিত্র প্রদর্শনী চলছে। এ কারণে ব্যস্ত ছিলাম,এখনো ব্যস্ত। মনে করেছিলাম ব্যস্ততা কেটে গেলে আপনার দেনা পাওনা বুঝিয়ে দেব। আবার মনে হল আপনি দু’বার স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। শেষবার তো দেখা করিয়ে দিতে পারিনি। তাই এটা একটা সুযোগ । প্রদর্শনীটা দেখেও গেলেন, সুযোগ পেলে স্যারের সাথে কথাও বললেন। প্রদর্শনীর সময় স্যার সবাইকে সময় দেন। চলেন গাড়ি দাড়িয়ে আছে, আমি এক্সিভিশনেই যাবো।’

আমি ও বদরুল একসাথেই আর্টস গ্যালারীতে ঢুকলাম। বদরুল বললো,
-‘ যান, ভিতরে স্যার আছেন। আর একটি কথা, এখানে কাজ সেরে চলে আসবেন আমার অফিসে; মানে স্যারের বাসায়।’
আমি মাথা নাড়লাম। বদরুল হন্তদন্ত হয়ে ভিতরে কোথায় যেন মিলিয়ে গেল। আমি ঘুরে ঘুরে প্রদর্শনী দেখছি। গুনে দেখলাম চব্বিশটি ছবি আছে। প্রায় সব গুলো ছবির চেহারাই আমার কাছে একই রকম মনে হল। আমি প্রদর্শনীর যে পাশ দিয়ে ঢুকেছিলাম সেদিক থেকে উনিশতম ছবিতে গিয়ে আমার পূর্বদৃষ্ট সেই ছয় নম্বর ছবিটি দেখলাম। তার পরের ছবিটিই পাঁচ নম্বর। এটাও আমার পরিচিত । আমি বেশ খেয়াল করছিলাম। সর্বশেষ ছবিটি তা হলে এক নম্বর ছবি। আমার কাছে চিত্রকরের হিসেবটা এখন কেন যেন বেশ পরিষ্কার হয়ে গেল। চব্বিশ মাস আগে ক্যান্সার ধরা পড়েছিল বা চিকিৎসা শুরু করেছিলেন। টাকার বিনিময়ে ড.সাদিকের সাথে ছবি তৈরির চুক্তি করেছিলেন হয়তো। তারপর তার পরমায়ুর কাউন্ট ডাউন করে প্রতিমাসে একটি করে ছবি এঁকে গেছেন। মৃত্যুর আগে এঁকে গেছেন সর্বশেষ এক নম্বর ছবিটি। আমি চারিদিকে দর্শদের দিকে তাকালাম। ড. সাদিককে ঘিরে দর্শকদের উৎসাহ ,ঔৎসুক্যের শেষ নেই । চৌকস ড. সাদিকের আর একটি পরিচয় ছড়িয়ে পড়েছে পুরো শহরময়, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে। তিনি এখন দেশের অন্যতম রোমান্টিক চিত্রকর। অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য গিজগিজ করছে মানুষ, বিশেষ করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা। সারা শহরে পোষ্টার সাটানো হয়েছে। বদরুলের সাথে গাড়িতে আসতে আসতে সব রাস্তার মোড়ে মোড়ে এসব পোষ্টার দেখলাম। তিনদিন আগে উদ্বোধনী দিনে নাকি সমাজের সব উঁচুদরের মানুষ এসেছিলেন। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছেন স্বয়ং ...... গাড়ির ঝাঁকিতে বদরুলের কথা ঠিকমত শুনতে পাইনি। পরে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়নি। এখন প্রদর্শনী থেকে ফিরবার সময় শেষ বারের মত তাকালাম গ্যালারীর প্রধান ফটকে, প্রবেশ মুখের দিকে। উদ্বোধন ফলকে প্রধান অতিথির নাম লেখা আছে। কিন্তু দুর থেকে নামটি পড়তে অসুবিধা হচ্ছে। আমি ভালভাবে তাকাতেই ফলকের উপরে প্রদর্শনীর শিরোনাম দেখতে পেলাম। সত্যি কথা বলতে কি শিরোনামটি পড়তে আমার দৃষ্টিযন্ত্রের কোন অসুবিধা হল না। দুর থেকেও আমি শিরোনামটি স্পষ্ট দেখতে পেলাম। সেখানে লেখা আছে প্রিয়ার চাহনি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিষণ্ন সুমন ঝরঝরে তরতরে লিখা । বর্ণনাভঙ্গিতে রহস্যময়তা জুড়ে থাকায় পাঠক'কে শেষাবধি টেনে নিতে সক্ষম । ঠিক যেন একটা জটিল অঙ্কের সমাধান করতে যেয়ে হিমশিম খেতে খেতে শেষমুহুর্তে উত্তর পেয়ে গেলাম। তাই এর আকৃতির বিশালত্ব চোখেই পরেনি। দারুন আরমান ভাই। ধন্যবাদ নেবেন।
বিষন্ন সুমন! আপনাকে ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য। আমার পিসিতে বসে নেটে যখন কাজ করি তখন এই সাইটে অনেক স্থানে মন্তব্র্য করা/ শেয়ার করা/ লেখা/---- ইত্যাদী করার জন্য কারসর কাজ করে না। তা' ছাড়া পঠিত-আপঠিত সিলেকশন পদ্ধতিও কাজ করে না। আমি অন্তত ১৫ বার সম্পুর্ন স্ক্রিনিং করেও যখন আপঠিত লেখা পাইনি তখন ভেবেছিলাম আপনার কোন লেখা আপঠিত নাই। কিন্ত গত ২দিন আগে দেখলাম আপনার গল্পটি পড়া হয়নি।তাই দেরী করে পড়ার জন্য দুঃখিত।
আহমাদ মুকুল আমার পড়া এই সাইেটর অন্যতম সেরা গল্প এটি। ভিন্নমাত্রিক চিন্তা, মনন আপনার সুলেখনিতে দারুন ফুটেছে। কাহিনীর গতি, রহস্যময়তা কখনই বুঝতে দেয়নি যে এটির আকার বড়। মন্তব্য অংশে একটা ছোট্ট অনুযোগ- বেশ কয়েকজনের মন্তব্যের জবাবে উত্তর কপি-পেস্ট করেছেন! হ্যা, দ্বিধাহীনভাবে বলছি, আপনি একজন অনুসরণীয় লেখক।
ভাই আহমদ মুকুল ! আপনাকে ধণ্যবাদ একটি বড় আকারের গল্প পড়ার জন্য। আপনার ছোট অনুযোগটি পেয়ে আমি খুশি হয়েছি। কারন এমন একটি কথা আসুক এমনটি হয়তো চেয়েছিলাম। কারনটি ভেঙ্গে বলি। কিছুদিন আগে কন্যডুবি নামের এক পাঠক/ সদস্য একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তাতে অন্য অনেক কিছুর সাথে এ কথাটিও লেখা ছিল য়ে কবিতা বা গল্পের মন্তব্য সংখ্যা দেখে অনেক পাঠক আকৃষ্ট হয়ে লেখাটি পড়েন। অর্থাৎ মন্তব্য বেশী দেখলে ঐ পাঠকের লেখার প্রতি বেশী আগ্রহ জন্মে। তাই এবার আমি প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যারাই আমার গল্পটি পড়ে মন্তব্য করুক না কেন আমি মন্তব্যের উত্তর দেব না।কারন মন্তব্যের প্রতিটি উত্তরের জন্য লেখার স্ট্যটাসের পাশে আরো একটি করে মন্তব্য সংখ্যা বেড়ে যায়। এটা বাড়ুক তা আমি চাচ্ছিলাম না। কিন্ত পরে ভেবে দেখলাম মন্তব্যের জবাবটা আনেক পাঠকই আশা করে এবং এটা সাধারন সৌজন্যতা। সেই হিসেবে পড়ে জবাব গুলো লিখেছি। সে সময় জবাবে উত্তর কপি-পেষ্ট কিছু করেছি। সেই সময় কোন একটা যুক্তি/ চিন্তা মাথায় এসেছিল। এখন ঠিক মনে নেই। তবে এমনও হতে পারে মুকুল ভাইয়ের মত কেউ একজন এরকম অনুযোগ করবেন এবং তার অনুযোগের জবাবে গল্পের পাঠক সংখ্যার ভয়ংকর ঘাটতির কথা লিখবো------ এমন চিন্তাও হয়তোবা সে সময় মাথায় খেলেছিল। যা হোক আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। --------/////// আর একটি কথা মুকুল ভাই ! আমি বুঝি না যে অন লাইনে সারাদিন যাদের উপস্থিত দেখি , তারা ত্রিশ দিনে একটি লেখা পড়ার সময় পান না। তাহলে নেটে বসে তারা করেন কি ? ------ এটাও একটা গবেষনার বিষয় বৈকি।
আমরা লেখক, আমাদের কাজ লেখা। নিজের বিবেক যা বলবে তাই করবো আমরা, কে কি বললো ভাববো না। গল্পকবিতায় মারাত্নক একটা পাঠক ঘাটতি গেছে গত কয়েকটি মাস। মনে হয় সুদিন ফিরছে। .....একবার লগইন করে লগআউট করে না বের হলে এখানে অনলাইন দেখায়। আমি নিজেই যেমন সকালে লগইন করি, সারাদিন হয়তো সাইটেই থাকি না, কিন্তু অনলাইন দেখায়।...যাই হোক, আপনার কাছ থেকে এ রকম দারুন দারুন লেখার অপেক্ষায় থাকবো।
তানি হক খুবই ভালো লেগেছে ভাইয়ার গল্প .. একদম ভিন্ন স্বাদের গল্প পড়লাম ..বড় গল্প কিন্তু কখন শেষ হয়েছে বুঝতেই পারিনি ..কাহিনীটাও অসাধারণ .. ভাইয়াকে ধন্যবাদ জানাই..সুভেচ্ছা জানাই ..
ধন্যবাদ তানি হক, গল্পটি পড়ার জন্য।যদিও মাসের শেষে এসে পড়লেন। তারপরও ভাল লাগলো এ কথা শুনে যে গল্পটি আপনার ভাল লেগেছে।
ফয়সাল বারী মানুষের চিন্তা এত বিচিত্র পথে যেতে পারে? অবাক এবং নির্বাক।
ভাই ফয়সাল বারী ! আপনার মন্তব্যের সাথে আমি একদম একমত। সমাজের অসংগতিগুলো যখন চোখে পড়ে যায় তখন আমিও অবাক এবং নির্বাক হয়ে যাই। সেই মুঢ় মূহুর্তের কিছু চিত্র গল্পে তুলে ধরার চেষ্টা করি মাত্র। গল্পটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ধ্রুব অন্যরকম..
ধ্রুব ! সময় করে গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এবং অন্যরকম মন্তব্য করার জন্য অন্যরকম ধন্যবাদ।
পারভেজ রূপক ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন ধারার একটা গল্প। ভাল লাগতেই হবে এমন গল্প।
ভাই পারভেজ রুপক! সময় করে একটি বড় আকারের গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ। গল্পটি আপনার ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগছে। শুভকামনা থাকল আপনার জন্য।
স্বাধীন অসাধারণ লিখেছেন।
সময় করে গল্পটি পড়ার জন্য, স্বাধীন ! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
খোরশেদুল আলম আপনার কলমের জোরেই গল্পটি একদমে পড়িয়ে ছাড়লেন, এখন বুঝুন আপনার গল্পের সামান্য একজন পাঠক হয়ে কেমন মুগ্ধ হয়েছি। গল্পের প্রতিটি লাইনে সতর্ক দৃষ্টি রেখে নিখুঁদ ভাবেই লিখেছেন প্রিয়ার চাহনি সংখ্যার 'চিত্রকর' নামের গল্পটি। শুভ কামনা আপনার জন্য।
সময় করে পড়ার জন্য খোরশেদুল আলম ভাইকে ধন্যবাদ। এ সাইটে বড় আকারের গদ্য তেমন কেউ পড়তে চায় না। আপনি একটি বড় গল্প পড়েছেন এ জন্য আরো একবার ধন্যবাদ। চমৎকার মন্তব্যের জন্য ৩য় ধন্যবাদ।
আহমেদ সাবের অসাধারণ একটা গল্প পড়লাম। আপনার 'এ গল্পটা পড়তে গিয়ে মোঃ আক্তারুজ্জামান ভাই 'এর মত আমারও "বার মনে হয়েছে যেন নামকরা কোনও বিদেশী সাহিত্যিকের লেখা পড়ছি"। গল্পের দর্শনে গভীরতা আছে। বিসর্জনের দুটো পরস্পর বিরোধী দার্শনিক ব্যাখ্যা অতুলনীয়। আপনার পরবর্তী লেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকলাম।
সময় করে পড়ার জন্য আহমেদ সাবের ভাইকে ধন্যবাদ।
মিলন বনিক ভিন্ন স্বাদের কাহিনী বিন্যাসে অসাধারণ লাগলো কাহিনীটা..প্রতিটা বিষয় যেন নিখুতভাবে দক্ষ শিল্পীর তুলিতে আঁকা হয়েছে..খুব ভালো লাগলো আরমান ভাই..শুভ কামনা...
সময় করে পড়ার জন্য ত্রিনয়ন ভাইকে ধন্যবাদ। এ সাইটে বড় আকারের গদ্য তেমন কেউ পড়তে চায় না। আপনি একটি বড় গল্প পড়েছেন এ জন্য আরো একবার ধন্যবাদ। চমৎকার মন্তব্যের জন্য ৩য় ধন্যবাদ।

২৩ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪