পাহাড় চূড়া

ইচ্ছা (জুলাই ২০১৩)

রীতা রায় মিঠু
মোট ভোট ৫৭ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৬.৭৮
  • ৩৩
  • ৩৪
ঊর্মিদের বাড়ীটি ছোটখাটো একটি পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তা থেকে প্রায় পনেরো-ষোলোখানা সিঁড়ি বেয়ে তবেই মূল দরজায় পৌঁছা যায়। কম করে হলেও একশ বছরের পুরানো বাড়ী এটি, অথচ এখনও কী শক্তপোক্ত দেখায়। উপরে উঠে যাওয়া সিঁড়িগুলো খুব ভারী পাথরে তৈরী, পাথরের চেহারা দেখলেই মনে হয় যেন ওরা একেকটি কালের সাক্ষী হয়ে শুয়ে আছে। পুরো বাড়ীখানা কাঠের তৈরী, কাঠের পাটাতন, কড়ি বড়গার ছাদ, কাঠের বেশ মোটা মোটা থামের বেড়া, একেবারে ছবির মত। বাড়ীর পেছন দিকে পাইনের বন, রাস্তা থেকে পাইনের মাথা দেখা যায়। বাড়ীটির একটি বিশেষত্ব আছে, সামনের দিকটি এত উঁচুতে হলেও পেছনের দিক সমতলে মিশে আছে। কিচেনের দরজা দিয়ে পেছনে যাওয়ার রাস্তা। পেছন দিকটায় বেশ অনেকখানি চওড়া জমি খালিই পড়ে আছে, ইচ্ছে করলে লাউ, কুমড়োর চারা লাগানো যায়, ঊর্মী কিছুই লাগায়নি। ইন্ডিয়ান গ্রোসারী শপ থেকেই যখন শাক-সব্জী কিনতে পাওয়া যায় তখন এত খাটুনি করে বাগান করার দরকার কী। এর আগেরবার যখন এসেছিলাম, একটি কমলার চারা লাগিয়ে গেছিলাম। এবার দেখলাম, ওটা বেশ বড় হয়েছে। হয়ত আর বছর দুই পর কমলা ধরবে, য়ামি আর আসবোনা, তাই আমি দেখবোনা, কমলার ভেতর দিয়ে ঊর্মি আমাকে দেখবে।

এই বাড়ীতে আমি বেশ ক’বার এসেছি। বাড়ীর প্রতিটি আসবাব থেকে শুরু করে বারান্দায় দড়ির ঝুলনাটাকেও খুব আপন মনে হয়। বাড়ীর বাইরের দিকে ফুল-লতা-পাতা কারুকাজের লোহার রেলিং দেয়া বারান্দাটি আমার সবচেয়ে পছন্দের, এই বারান্দা থেকে দূরের পাহাড় খুব স্পষ্ট দেখা যায়। পাহাড় আমার শক্তি, পাহাড় আমার চেতনা, যখনই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকি, চোখ বন্ধ করে পাহাড়কে কাছে নিয়ে আসি। পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলতে থাকি, “পর্বতরাজ, আমার মানসিক অবসাদ দূর করার মন্ত্র বলে দাও, আমি তোমার মত মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে চাই”। এতে আমার খুব উপকার হয়, মনে বল পাই।

আমার ছোটবেলা কেটেছে চট্টগ্রামে, পাহাড় আর সমুদ্র, প্রকৃতির এই বিশাল দুই শক্তির প্রশ্রয়ে বড় হয়েছি, দূর্বলতা তো থাকবেই পাহাড়ের প্রতি। গত পনের বছর ধরে নিউইয়র্ক সিটিতে আছি, সেখানে পর্বত প্রমান সাইজের বিল্ডিং আছে, পর্বত নেই, অথচ পাহাড়ই আমার বেশী প্রিয়। দুই বছরে একবার আসি ঊর্মিদের এখানে, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াতে। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়াকে পাহাড়ী রাজ্য বললে ভুল হবেনা। চারদিকেই পাহাড়, এত ভাল লাগে! আমি এখানে সব ঋতুতেই এসেছি, একেক ঋতুতে পাহাড়গুলো একেক রূপে সাজে। সবচেয়ে ভাল লাগে ‘ফল সীজন’ এ , চারদিকে যেন রঙের আগুন লাগে, এত সুন্দর!

ঊর্মি আমার প্রাণের বন্ধু, তাই ওর বাড়ীতে যখন তখন আসা যায়। এবার অবশ্য শেষবারের মত আসা, ঊর্মিকে বলা হয়নি, দেশে ফিরে যাওয়ার আগে পাহাড়গুলোর কাছ থেকে বিদায় নিতে এসেছি। পাহাড়গুলোর প্রতেকটিকে আমি চিনি, প্রত্যেকের একটি করে নাম দিয়েছিলাম। একটির নাম ‘আরাধনা’, একটির নাম ‘বিস্ময়’, একটির নাম লাবণ্য, তিন পাহাড়ের চূড়া দেখা যায় একসাথে, ওদের নাম আনন্দমালা! ঊর্মিকে চিনিয়ে দিয়েছি, নিউইয়র্ক থেকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি, আজ বিস্ময় কেমন আছে? ওকে দেখা যাচ্ছে তো?”। ঊর্মি হাসে, বলে, তোর পাগলামী আর গেলোনা।
ঊর্মি অবশ্য পাহাড়-সমুদ্র নিয়ে মাথা ঘামায়না, ওর কাছে ভাল লাগে নিউইয়র্ক সিটি, ওখানে ওদের একখানা অ্যাপার্টমেন্ট আছে, বছরে একবার ওরা নিউইয়র্ক যায়, মাসখানেক থেকে আবার ফিরে আসে। ঊর্মি বারান্দার ঝুলনায় বসেনা, খুব মোটা হয়ে গেছে, কেউ বিশ্বাসই করবেনা কলেজে পড়ার সময় ও কী সুন্দরটাই যে ছিল! এখন শুধু গায়ের রঙটাই অবশিষ্ট আছে, ওর ধারণা ও যদি এই ঝুলনায় দুলতে শুরু করে, তাহলে কড়িবর্গা সহ ছাদ ভেঙ্গে পড়বে। এদিক থেকে আমি ভাল আছি, শরীরে মেদ জমতে দেইনি, এখনও আগের মতই ছিপছিপে আছি, তাই আমিই ঝুলনায় বসে দোল খাই আর দূরের পাহাড় দেখি।



পাহাড়ের উপর বাড়ী আমি এর আগেও দেখেছি। আমার মেজকাকা থাকতেন জলপাইগুড়িতে, হাসিমারা চা-বাগানে প্রায় চল্লিশ বছর ইলেকট্রিশিয়ানের চাকরী করেছেন। চা-বাগানের সবাই কাকাকে ‘বিজলীবাবু’ ডাকতো। চা-বাগানে বিজলীবাবু ছাড়াও আরও নানারকম বাবু ছিল। যে চা-পাতা তোলার তদারকী করতো, তাকে ‘পাতিবাবু’, জলের কল নিয়ে যার কাজ, তাকে কলবাবু, মেশিনারীজ নিয়ে যার কাজ, তাকে মেশিনবাবু, এমনই সব মজার মজার নাম ছিল সবার। অমিতের সাথে আমার বিয়ের এক বছর পর দুজনে বেড়াতে গিয়েছিলাম মেজকাকার ওখানে। আমার ‘মিষ্টি’ নামটিও রেখেছিলেন মেজকাকীমা।

কাউকে কিছু না জানিয়ে হুটহাট কাজ করে সবাইকে চমকে দিতে আমার খুব ভাল লাগে। সেবার হাসিমারা বাগানে গেছিলাম কাকাকে কোন রকম আগাম সংবাদ না জানিয়ে। কিন্তু পরে বুঝেছিলাম, অমিতকে সাথে নিয়ে অ্যাডভেঞ্চার করা ঠিক হয়নি। অমিত একেবারে মাপের ভেতর চলা মানুষ, হিসেবের বাইরে পা দেয়না। কাকার ওখানে গিয়েছিলাম কাঞ্চনজংঘা দেখবো বলে। কাকাতো বোন সম্পা চিঠিতে লিখতো, ওদের বাড়ী থেকে কাঞ্চনজংঘার চূড়া দেখা যায়। তখনতো আমার পাসপোর্ট ছিলনা, অথচ কাঞ্চনজংঘার চূড়া দেখার খুব ইচ্ছে ছিল।

অমিত অবশ্য বার বার বলেছিল কাকাকে যেন জানিয়ে দেই আমাদের যাওয়ার সংবাদ, আমি দেইনি। তার ফল ভুগতে হয়েছে আমাকে। সেদিন চা-বাগানের বাসস্টপে নামতেই সন্ধ্যে হয়ে এসেছিল, শেষ বাসও চলে গেছে। চারদিক নীরব, কোন রিক্সা বা অটো’র নাম গন্ধও নেই, একটিমাত্র চা-পানের দোকান খোলা ছিল, ওখানে গিয়ে ভুল হিন্দীতে বলেছি, সুবাস বাবু কো ডেঁরা কাঁহা হ্যায়। এমন উদ্ভট হিন্দী শুনেই ওরা বুঝে গেছে, ‘বঙ্গাল’ লোক হ্যায়! দোকানদারটিও সাথে সাথে দাঁত বের করে হাসি দিয়ে ‘আহহা! বিজলীবাবুকো কোঠীমে যানা চাহতা হ্যায়?” বলে গুমটি ঘরে বসে থাকা রিকশাওয়ালাকে হাঁক দিল, বিজলীবাবুর ভাইঝিকে যেন ঠিকঠাকমত পৌঁছে দিয়ে আসে।

রিক্সা এঁকে বেঁকে চলছিল পাহাড়ী রাস্তায়, দু’পাশে চা গাছের সারি, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিশাল বাগান। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের মাঝে মাঝেই একটি করে রেইন ট্রি, ছবির মতন দৃশ্য। আমি মুগ্ধ হয়ে চারদিক দেখছিলাম, ইচ্ছে করছিল রিকশা থেকে নেমে পড়ি, এক ছুটে চলে যাই চা-বাগানের ভেতর। ছোটবেলায় ছবির বইয়ে দেখেছি, মহিলাদের পিঠে ঝুড়ি বাঁধা, দুই হাতে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ তুলে ঝুড়িতে রাখছে। কারো বা পিঠ থেকে উঁকী দিয়ে থাকে টুক্কী বাবু, কী যে মিষ্টি ছবি।

অমিতকে বললাম ক্যামেরাটা বের করতে।‘রোককে রোককে’ বলে রিকশাওয়ালাকে রিকশা থামাতে বলতে না বলতেই কোথা থেকে যেন হুড়মুড় করে বৃষ্টি চলে এলো। বৃষ্টি তো নয়, হালকা সাদা মসলিনের পর্দা বিশ্ব চরাচর জুড়ে উড়ছিল। কী অপূর্ব দৃশ্য! এমন একটি অপরূপ দৃশ্য দেখার জন্য কতকাল অপেক্ষা করতে হয়! অথচ শরীর ভিজে যাচ্ছে বলে রিকশার ঢাকা তুলে দেয়ার জন্য অমিত ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, আমি বলেছি, অসম্ভব, রিকশার হুড তোলা যাবেনা। এই নিয়ে তর্কাতর্কি শেষ হওয়ার আগেই বৃষ্টি থেমে গেল। কোথা থেকে এলো, কোথায় চলে গেল! আমার খুব অভিমান হয়েছিল, কার উপর, জানিনা। আমার শখ-আহ্লাদ, চাওয়া-পাওয়াগুলো খুব ছোট ছোট, সে তুলনায় প্রাপ্তি-বাক্স খালি। মানুষও দেয়না, প্রকৃতিও না। রিকশাওয়ালা তো দাঁত বের করে শুধু হেসেই চলেছে। এমন সওয়ারী নিয়ে সে এর আগে কোথাও যায়নি, সন্ধ্যাবেলা মাঝে মাঝে হাতীর দল বেরিয়ে আসে, এই সময় কেউ চা-বাগানে নামতে চায়? বৃষ্টিতে এভাবে ভিজতে চায়? এতে অত মজার কী আছে?

শেষ পর্যন্ত মেজকাকার বাড়ী ঠিক মতই পৌঁছেছিলাম, সবাইকে চমকে দিতে চেয়েছিলাম, ভীষনভাবে চমকে দিয়েছিলাম। একটানা দশ দিন ছিলাম, দারুণ কেটেছে সময়। কাকার বাড়ীর দরজায় দাঁড়ালেই কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখা যেত। সব সময় মনে হতো, বেশীদূর তো নয়, যাই পায়ে হেঁটে, ছুঁয়ে আসি কাঞ্চনজঙ্ঘার পদতল। হয়ে উঠেনি, আমি একা চাইলে তো হবেনা, আমার সঙ্গীটিকেও চাইতে হবে। বোনকে বলেছিলাম, বোন তো হেসেই খুন। বলে, “দিদি, তুই কী পাগলী রে! ঐ পাহাড়তো অনেক দূর, পায়ে হেঁটে যাবি কি রে! জীপ গাড়ী করে যেতেও লাগবে পাক্কা ছয় সাত ঘন্টা। আর ওখানে গিয়ে কী করবি? পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকবি শুধু শুধু”?
আমি বলেছিলাম, “দূর, জীপ গাড়ীতে করে কে যায়! পায়ে হেঁটে যাওয়ার মজাই আলাদা, কেমন একটা গা শিরশিরানি ব্যাপার, পায়ে হেঁটে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে যাচ্ছি, ভাবতেই কী রোমাঞ্চকর মনে হয়”।
সম্পা বলে, পাহাড়ে গিয়ে তুই কী দেখবি?

বললাম, তেমন কিছু দেখবোনা, আবার অনেক কিছু দেখবো। পাহাড় কী রকম মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে, কী সাহসী দেখায়, আমার খুব উঁচুতে পৌঁছার শখ, আমি পাহাড়ের মত দৃপ্ত ভঙ্গীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই”।

দু’বোনের কথাবার্তা শুনে পাশ থেকে অমিত ফোড়ন কেটেছিল, “সম্পা, তোমার দিদিকে নিয়ে আমি আর পারিনা, কী সব একেকটা উদ্ভট ইচ্ছে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। সেদিন আসার পথে বৃষ্টিতে ভিজতে হলো তোমার দিদির কারণে। আগে থেকেই যদি জানিয়ে রাখতাম, তাহলেই তো কাকু জীপ পাঠাতে পারতো। এখন বসে বসে আমাকে হাঁচি দিতে হতোনা”।

অমিতের ঠান্ডা-সর্দির ধাত আছে, বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়লেই শুরু হয়ে যায় একটানা হাঁচি। আমার কপালটাই এমন, নাহলে এমন কিছু তো চাওয়া ছিলনা, দুজনে বৃষ্টিতে ভিজবো, কী মজা, অথচ বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে পড়লেই একজনের ঠান্ডা লেগে যায়, তাই কোনদিন অমিতকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা হলোনা। আমার আবার একা একা কিছু করতে ভাল লাগেনা। বিয়ের আগে হবু বরকে নিয়ে কত রঙিন স্বপ্ন দেখতাম, জোৎস্না রাতে বিশাল প্রান্তরে দাঁড়িয়ে জোৎস্না খাব, নাহলে বাড়ীর ছাদে শীতল পাটি বিছিয়ে সারারাত দুজনে জোৎস্নায় গা ভেজাবো, আমার বর আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকবে, আমি তার চুলে বিলি কাটবো আর গাইবো, “চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙ্গেছে, উছলে পড়ে আলো”!! অমিত ঘুমকাতুরে, রাত নয়টার পর আর জেগে থাকতে পারেনা। তাছাড়া আমার এই ইচ্ছেগুলোকে তার কাছে চরম পাগলামী মনে হয়।

বিয়ের পর একদিন খুব শখ করে বলেছিলাম, “এই চলোনা ছাদে যাই, আজ আকাশ ভরা তারা ফুটেছে, পাটি বিছিয়ে শুয়ে চলো আকাশের তারা গুণি”। অমিত আমার দিকে কেমন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল, তারপর যেন খানিকটা জোর করেই আমার সাথে ছাদে গেল, পাটিতে শুয়েই নাক ডাকতে শুরু করেছিল। দুটো ভালোবাসার কথা নয়, দুটো গল্প নয়, শুধু ঘুম। আরেকদিন বলেছিলাম, ভরা পূর্ণিমা ছিল, অমিত যায়নি, আমাকে যেতে বলেছিল, আমি অবাক হয়েছিলাম। এ কেমন রসকসহীন স্বামীরে বাবা, এমন জোৎস্নাভরা রাতে বউকে একা ছাদে যেতে বলে! অমিত খুব ভাল মানুষ, কিন্তু যেমনটি চেয়েছিলাম, তেমন নয়।





ঊর্মী আমার ছোটবেলাকার বন্ধু। ও লেখাপড়ায় দারুণ ভাল ছিল, এস এস সি তে মেয়েদের মধ্যে পঞ্চম স্থান পেয়েছিল, কিন্তু কলেজে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায়, সুন্দরী ছিল বলে ওর বাবা মা অত কম বয়সেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল। বিয়েটা ভাল হয়েছে, ওর বর তন্ময় মানুষ হিসেবেও ভাল, স্বামী হিসেবেও ভাল। স্বামী হিসেবে যে তন্ময় খুব ভাল, একথা ঊর্মিই আমাকে বলেছে। তন্ময় আমেরিকা এসেছিল এইচএসসি পাস করার পর পর। আমেরিকাতেই ও কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করে ভাল একটি চাকুরী পেয়ে গেছিল বলে তন্ময়ের বাবা-মা তখনই ছেলের বিয়ে দিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছিলেন। ঊর্মি তন্ময়ের খালাত বোন, বিয়ের পর বউ হয়ে গেছে। বোন থেকে বউ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে ঊর্মি খুব রসিকতা করতো। বলেছিল, “আচ্ছা মিষ্টি, বলতো দেখি, যে মেয়েটিকে তার ভাই ছোটবোন হিসেবে দেখেছে, যার মাথার চুল টেনে দিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে, মাত্র বারো বছর পরেই সেই মেয়েটিকে নিয়ে তার ভাই এক বিছানায় ঘুমাতে গেল কীভাবে”? বলেছি, “বা রে! কাজিনের সাথে বিয়ে তোদের সমাজে হয়, নতুন কিছু তো নয়”। ঊর্মি বলে, “আমি তোকে ধাঁধাঁ জিজ্ঞেস করেছি আর তুই দিচ্ছিস ব্যাখ্যানা। শোন, উত্তর হচ্ছে, বোন যখন বউ হয়ে যায় তখনই এটা সম্ভব হয়, তার আগে হয়না”।



বিয়ের একমাসের মধ্যেই তন্ময় ভাইয়ের সাথে ঊর্মি আমেরিকা চলে আসে, এখানে এসে ও আর পড়াশোনা করেনি, তিনটি বাচ্চার মা হয়ে দিব্বি গোলগাল গিন্নীবান্নি চেহারা বানিয়ে ফেলেছে। আমি কিন্তু ঊর্মির উল্টো ছিলাম, সাদা-মাটা চেহারা, খুব মেধাবী ছিলামনা, বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে হিসেবে খুব আদুরে ছিলাম, খুব একটা মেধাবী না হলেও ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম, লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হবো।

ঊর্মি যেবার এস এস সি’তে পঞ্চম হলো, আমি সেবার তিনটি সাবজেক্টে লেটার সহ প্রথম বিভাগ পেয়েছিলাম। শামুকের গতিতে এগোচ্ছিলাম, আমার স্বপ্ন ছিল বাংলা সাহিত্যে অনার্স-মাস্টার্স করে অধ্যাপনা করবো, একা একা দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াবো। চলে যাব কোন এক নদীর ধারে, সারাদিন বসে থাকবো নদীর কিনারে, ঢেউ গুণবো শুধু। পাহাড় আমার ছোটবেলা থেকেই প্রিয়, পাহাড়, নদী আর সমুদ্র, সব কিছুতেই বিশালত্ব, সব কিছুতেই অমিত শক্তি, ওদের কথা ভাবতাম আর মনে বল পেতাম। ঊর্মী অনেক সুন্দর ছিল, এই জন্য আমার মনের গভীরে হয়তো সূক্ষ্ম ব্যথাও ছিল। পাড়ার ছেলেরা ঊর্মীর দিকে তাকাতো, ঊর্মির দিকে চিঠি ছুঁড়ে দিত, আমি সাদা-মাটা ছিলাম বলে আমার দিকে কেউ ফিরেও তাকাতোনা।



শেষ পর্যন্ত আমার আর বাংলায় অনার্স পড়া হয়নি, বাবা বলেছেন, কেমিস্ট্রি পড়তে, কেমিস্ট্রিতেই ভর্তি হয়েছি। যখন থার্ড ইয়ারে পড়ি, নতুন লেকচারার হিসেবে অমিত আমাদের ডিপার্টমেন্টে জয়েন করে। কী করে যেন আমাকে ওর মনে ধরে গেল। অমিত খুবই মেধাবী শিক্ষক, চরিত্রবান, বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে, গ্রামে প্রচুর সম্পত্তি, আমার জন্য পাত্র হিসেবে যথেষ্ট ভাল। আমি কী এমনই একজনকে চেয়েছিলাম! অমিতকে মনে হয়েছিল দেবদূত। আমি আর আগুপিছু চিন্তা করলামনা, মত দিয়ে দিলাম। অমিতের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল। অমিতের একটি ব্যাপার আমার খুব ভাল লাগতো, সে আমার স্বাধীন চলাফেরায় বাধা দিতনা। আমাকে সে বলেছে, আমি যতদূর পড়তে চাই, ততদূরই পড়তে পারবো, সব আমার ইচ্ছের উপর ছেড়ে দিয়েছে।

বিয়ের চার দিন পরে অমিত গল্পচ্ছলে আমাকে বলেছিল, ওর এক ভাগ্নীকে ওর খুব পছন্দ হতো, পছন্দ এক সময় পাগলামীতে পৌঁছে, সে ভাগ্নীর প্রেমে পড়ে যায়, ভাগ্নীকে অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টাও করে, অমিতের কাছে চলে আসার জন্য। ভাগ্নী রাজী হয়নি, শেষে অমিতও সামাজিক বাধাকে বিবেচনায় নেয়। একসময় ভাগ্নীর বিয়ে ঠিক হয়ে যায়, বিয়ে ঠিক হওয়ার পর ভাগ্নী টের পায়, সেও অমিতের প্রতি দূর্বল। অমিতকে চিঠি দিয়েছিল, সেই চিঠি পেয়ে অমিত খুব কেঁদেছিল। অমিত যখন আমার কাছে এই গল্প করছিল, আমি তখন ভেতরে ভেতরে ভাঙ্গছিলাম, আমার কপালটা এত খারাপ কেনো? জীবনে যদিও একজন এলো, সেও পুরোপুরি এলো না।





চায়ের কাপ হাতে ঊর্মি এলো, একটি কাপ আমার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
“মিষ্টি, এবার দেখছি তোর মনটা কোথায় হারিয়ে যায়, আগেও তুই উদাসীমনা ছিলি, এবার যেন মন,শরীর সবই উদাস হয়ে গেছে। কী হয়েছে তোর?
-আমার কিছু ভাল লাগেনা রে ঊর্মি, জীবনটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
-অমিতদা’র সাথে তোর সম্পর্কটা কী আরও খারাপের দিকেই যাচ্ছে?
-নাহ! ভাল খারাপের ঊর্ধ্বে চলে গেছি আমি। সব কিছু তুচ্ছ মনে হয়। জীবনের কাছে আমার খুব বেশী কিছু চাওয়ার ছিলনা, সেটুকুই যখন পাইনি, তখন অমিতের মত এমন উচ্চ ঘরাণার মানুষের মন পাব, তা কী করে হয়?
-তোদের একটা বাচ্চা থাকলে ভাল হতো, শিশুরা সংসারে বন্ধন হিসেবে কাজ করে।
-তাই বুঝি? তাহলে তো আমেরিকায় এত ডিভোর্স হতোনা, সন্তানরাই বেঁধে রাখতো বাবা-মাকে।
-আমেরিকার কথা বাদ দে!
-কেনো, আমেরিকার কথা বাদ দেবো কেন? অমিত আমাকে শেকড় উপড়ে আমেরিকায় নিয়ে এসেছে, আমেরিকাতেই চিরস্থায়ীভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমাদের বাচ্চা নেই, দেশ থেকে একটা বাচ্চা অ্যাডপ্ট করতে চেয়েছিলাম, সেটাতেও সে রাজী নয়। নির্ঝঞ্ঝাট জীবন তার বেশী পছন্দ, তাহলে আমিইবা আমেরিকার কথা বাদ দেবো কেন? আমিও আমেরিকান মেয়েদের মত সংসার ছাড়ার কথা ভাবছি।
-মানে কী?
-আমি দেশে চলে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে তোর সাথে দেখা করতে এসেছি।
-কী যা-তা বলছিস?
-তোর কাছে শুনতে যা-তা মনে হচ্ছে, কিন্তু কথা সত্যি। আমি চলে যাচ্ছি আমার বাবা মায়ের কাছে। বাবা মায়ের সেবা করে কাটিয়ে দেবো বাকী জীবন।
-মাসীমা, মেসোমশায় যখন আর থাকবেননা।
-তখন অন্য মা-বাবাদের সেবা করবো।

-মিষ্টি, আমার শরীরের আকৃতি তো দেখছিস, চর্বি জমার আর কোন পথ খোলা নেই, চর্বিগুলো ধীরে ধীরে ব্রেইনে জমতে শুরু করেছে, ব্রেইন ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে, তাই তোর কথার মাথা-মুন্ডু ধরতে পারছিনা।

-হা হা হা!! শোন, আমি দেশে যাচ্ছি কারণ দেশ আমাকে ডাকছে, প্রবলভাবে ডাকছে। আমেরিকা আর ভালো লাগছেনা, আমি তো বাবা-মায়ের একটাই সন্তান, বাবা-মায়ের শেষ জীবনটা একটু চিন্তা করে দেখ, একেবারে একলা হয়ে গেছেন। সেদিন একবার মনে হলো, আচ্ছা, বাবার কী কখনও ইচ্ছে হয় না ইন্ডিয়া বেড়াতে যেতে? ওখানে গেলে ভাই-বোনদের সাথে দেখা হতো, হয়তো সকলে মিলে তাঁদের শৈশব ফিরে পেত!

-মাসীমা, মেসোকে ইন্ডিয়া ঘুরে আসতে বল।
-কী করে যাবে বল, একা একা কী আর অতদূর যাওয়া যায়? মজার কথা শোন, সেদিন বাবাকে জিজ্ঞেস করেছি, বাবা, তোমার জীবনের কী কী সাধ অপূর্ণ আছে? বাবা বলে, সাধ বলতে একটা শখ আগাগোড়াই ছিল, পাতাল ট্রেন চড়ার। বুঝে দ্যাখ ঊর্মী, বাবাও খুব ছোট চাওয়া নিয়ে বেঁচে আছেন। আমার কী উচিত নয় বাবার এই ছোট সাধটুকু পূরণ করা?
-অবশ্যই উচিত, তাই বলে অমিত’দাকে ছেড়ে যেতে হবে কেন?
-অমিত একজন মেয়েবন্ধু পেয়েছে, প্রায় রাতেই এখন ওর ব্যস্ততা থাকে, ল্যাবে কাজ থাকে, বাড়ী ফিরতে পারেনা, কী সেই ব্যস্ততা, এটাও কী ভেঙ্গে বলতে হবে?

-নাহ! বলতে হবেনা, আমার খুব কান্না পাচ্ছে মিষ্টি!

-দূর, কান্নার কী হলো, অমিত তার পথ খুঁজে পেয়েছে, আমিও পথ খুঁজে নেব। আমি হারবো বলে তো জন্মাইনি। পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছি, পাহাড়ের চূড়া ছোঁব বলে। ঐজন্যই আবার শেকড়ের কাছে ফিরে যাচ্ছি। এখানে অনেক বছর চাকরী করলাম, স্বপ্ন ছিল অনেক বড় হওয়ার, কতবড় হতে চেয়েছিলাম, তা তো মেপে দেখিনি, তবে রিসার্চার হিসেবে আমি অনেক উপরের দিকে পৌঁছে গেছি, থাকলে আরও উপরে উঠতাম, কিন্তু আর উপরে উঠে কী হবে! বাচ্চা-কাচ্চা নেই, টাকা পয়সা যা জমেছে, ওগুলো দিয়ে দেশে ফিরে একখানা বৃদ্ধাশ্রম খোলার ইচ্ছে আছে।

-কেমন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে সব! তুই পারবি? কোথায় বানাতে চাইছিস বৃদ্ধাশ্রম?
-বাবার সাথে কথা হয়েছে, আমাদের এত বড় বাড়ীটার অন্য কোন ভাগীদার তো নেই, কাকারা তো ইন্ডিয়াতে থাকেন, বাবা আমাদের বাড়ীটাই উইল করে দিচ্ছেন।

-মিষ্টি, কবে থেকে তোর এই পরিবর্তণ এসেছে রে! তিন বছর আগেও তো অমিত’দার সাথে বেড়িয়ে গেলি, তখনওতো তোদের এই ভাঙন আমার চোখে পড়েনি।

-হা হা হা!! তখন তোর শরীরের চর্বি মাথা পর্যন্ত উঠেনি, চোখ পর্যন্ত উঠেছিল, তন্ময় ভাই তো আঁচ করতে পেরেছিল যে আমি দেশে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছি।

-তন্ময় জানে? আমাকে বললো না কেন?

-আমিই মানা করেছিলাম। মজার কথা শোন, এখনও অমিতকে কিছুই বলিনি, গভীর রাতে ল্যাব থেকে বাড়ী ফিরে দেখবে, বাড়ী শূণ্য! হা হা হা হা!






আমার পরিকল্পনা মতই কাজ এগোচ্ছে। সামনের মাসের আট তারিখেই এমিরেটসের ফ্লাইটে উঠবো, আর ফিরে আসবোনা, অমিতকে ডিভোর্স দেবো না, এখনও মনে মনে আমি ওকে অনেক ভালোবাসি, আমাদের মনের মিল হয়নি, মনের মিল না হলে দেহের মিলনেও সুখ থাকেনা, তাই আমাকে নিয়ে অমিত সুখী হতে পারেনি।

আমার ভদকায় চুমুক দিতে ভাল লাগতোনা, প্রতিরাতে রোমান্সহীন দেহের খেলায় মাততে ইচ্ছে করতোনা, মুখে ভালোবাসার কথা নেই, দু’চারটে শরীর শিরশিরাণো কথা নেই, মেতে ওঠো আদিম খেলায়, তা কী হয় নাকি? মা হতে পারিনি, কেন পারিনি, সেটা আজও অজানা থেকে গেল। ডাক্তার দেখিয়েছিলাম, আমার কোন সমস্যা নেই, অমিতের সমস্যা আছে কিনা জানিনা, অমিতকে ডাক্তারের কাছে যেতে দেখিনি, আমিও জোর করিনি, অমিতের যদি সমস্যা থেকে থাকে, এটা জানার পর কী আর হাতী ঘোড়া হবে? হয়তো চিকিৎসা করালে ঠিক হয়ে যেতে পারতো, কিন্তু অমিত তখন নিজেকে পরাজিত ভাবতো, পরাজিত পুরুষ আমার দুই চক্ষের বিষ। অমিতকে বলেছিলাম, দেশ থেকে দুটো গরীব মায়ের বাচ্চাকে নিয়ে আসি, লালন-পালন করে বড় করে তুলি, ওরা বড় হয়ে ওদের সংসারের হাল ধরবে, ওদেরকে বলা থাকবে, ওরাও যেন অন্য দুটো গরীব বাচ্চার ভরণ-পোষনের দায়িত্ব নেয়। এসব শুনে অমিত আমাকে পাগল বলেছে।

চার বছর আগে সোহানা নামের এক জবরদস্ত সুন্দরী মেয়ের সাথে অমিতের বন্ধুত্ব হয়েছে। একই ল্যাবে মেয়েটি কাজ করে, বন্ধুত্ব থেকে আরও বেশী কিছু হয়েছে, সেদিন অমিতের ঘাড়ের কাছে লালচে কালো দাগ দেখেছিলাম, অবাক হইনি, কিছু বলিওনি, বিছানাটা আলাদা করে ফেলেছি। অমিত কী কিছু বুঝেছিল? হয়তো বুঝেছিল, হয়তো বুঝেনি।


তন্ময় ভাই গাড়ীতে বসে আছেন, আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়ে অফিস চলে যাবেন। ঊর্মিদের এই সুন্দর বাড়ীটিতে আমি আর আসবোনা। দূরের পাহাড় দেখবোনা, বারান্দার ঝুলনাতে দুলবো না, কাঁদবো না, হাসবো না, ঊর্মিদের সুখী সংসার দেখতেও আসবোনা। ঊর্মিরাই সুখী হয়, আমার মত সাদামাটা পাগলীরা সুখী হয়না, আমার মত পাগলীরা নিজের জীবন দিয়ে অন্যকে সুখী করার নিরন্তর চেষ্টা করে যায়। এবার হয়তো আমার সুখী হওয়ার পালা। আমাকে শেষ পর্যন্ত পৌঁছাতেই হবে এবং আমি তা পারবো।

ঊর্মির দুই চোখ লাল হয়ে আছে, সারারাত কেঁদেছে নিশ্চয়ই। বোকা মেয়ে, বন্ধুর জন্য কেউ এভাবে কাঁদে? ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম,
“ঊর্মি, দেশে যাওয়ার আগে আমি তোর বাড়ীতে এসে কয়েকটা দিন আনন্দে কাটিয়ে গেলাম। তুই কাঁদছিস কেনো? তুই কী চাস না যে আমি দেশে গিয়ে ভাল কিছু কাজ করি? বৃদ্ধ বয়সে মানুষ খুব অসহায় বোধ করে, প্রত্যেকটি মানুষ যার যার নিজ গোত্রীয়দের সাথে দল বেঁধে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এই দিক থেকে বৃদ্ধ বয়সটা খুবই নাজুক রে! ধর একজন বিপত্নীক অথবা একজন নিঃস্ব বিধবার কথা, সংসারে সবাই যার যার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে, বৃদ্ধ মানুষটিকে শুধু খাওয়ার সময় ডাকা হয়, বাকী সময়টা উনাদের কীভাবে কাটে বল! বসে বসে মৃত্যুর চিন্তা করে হয়তো, এটা কত কষ্টের বল, বেঁচে থেকেও সুখ নেই। আমার অনেক ইচ্ছে, আধুনিক এবং ব্যতিক্রমী স্টাইলে বৃদ্ধাশ্রমটি বানাবো, এখন অবশ্য বৃদ্ধাশ্রম বলছি, কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম শব্দটি শুনতে ভাল লাগেনা। সেবা প্রতিষ্ঠানটি তৈরী হয়ে গেলে এমন একখানি নাম দেবো যে শুনলে মনে হবে, ওখানেই শান্তি! আমি যদি আমার প্ল্যানমত কাজ শুরু করতে পারি, তাহলে দেখবি, আরও অনেকে এগিয়ে এসেছে, বৃদ্ধরাও তখন ‘বৃদ্ধাশ্রম’ শুনলেই হতাশ হবেনা, উনারা বুঝতে পারবেন, বৃদ্ধবয়সে ‘বৃদ্ধাশ্রমে’ থাকাটাই আনন্দের, সকল বৃদ্ধদের সাথে সারাটা দিন নানা গল্প, অভিজ্ঞতা বিনিময় করে কেটে যাবে। উনারা আর মৃত্যু চিন্তায় কাতর হবেননা। ভালো কথা, আমি যখন তোকে ডাকবো, এক মাসের জন্য চলে আসবি। তুই তো এস এস সি’তে ফিফথ হয়েছিলি, আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটির জন্য তুই নাম ঠিক করিস।

-আচ্ছা ঠিক আছে, তোর জন্য শুভ কামনা থাকলো, তোর মনে অনেক দুঃখ, অনেক না পাওয়ার বেদনা জমে আছে, তোর এই মহৎ ইচ্ছেটা যেন পুরোপুরি সফল হয়, এই কামনা করি। আমি অবশ্যই যাব। আর শোন, হাতী মরলেও লাখ টাকা, যতই চর্বী জমুক, ঘিলু তো কিছু রয়েই গেছে, তোর প্রতিষ্ঠানের নাম এখনই দিয়ে দিচ্ছি, নাম হবে ‘পাহাড় চূড়া’। তোর স্বপ্ন সফল হোক, পাহাড়ের পাদদেশ নয়, পাহাড়ের চূড়াতে উঠবি তুই। ভালো থাকিস।

টা টা টা ঊর্মি, ভালো কথা, আমি চলে গেলেও অমিতের খোঁজ নিস, সে তো শুধু আমার স্বামী ছিলনা, তোর অমিত’দাও বটে। আমার সাথে বনিবনা হয়নি, কিন্তু মানুষ্ হিসেবে, তোর অমিত’দা হিসেবে সে অনেক ভালো।
চোখদুটোতে একসাথে কীভাবে বালিকণা পড়লো, কেমন কুট কুট করছে, ওড়নার আঁচলে চোখ দুটো রগড়াচ্ছি, ভেজা লাগছে কেন, মনে হচ্ছে, বালির স্তর ভেদ করে উষ্ণ ধারা বের হয়ে আসছে!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আতিক সিদ্দিকী ইচ্ছা সংখায় পাহাড় চূড়া বেশ ক'বার পড়লাম ভালো লেগেছে বলেই এতবার পড়া,ভীষণ ভালো লেগেছে, প্রতিষ্ঠা কামনা করি, বিচারকদের সিদ্ধান্তটা যে যথার্থ সেটা গল্প পড়েই বোঝা গেল ,ধন্যবাদ দিদি আপনাকে-ধন্যবাদ.
ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত অনেক অভিনন্দন দিদি
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ "জীবনে যদিও একজন এলো, সেও পুরোপুরি এলো না" ...... অসাধারণ আপু। অনেক অনেক অভিনন্দন।
শাহনাজ নাসরিন মল্লিকা অনেক অভিনন্দন দিদি...
মিলন বনিক অনেক অনেক অভিনন্দন দিদি....খুব ভালো লাগছে শারদ শশীর ছোঁয়া লাগলো বলে....
মো এম রহমান (তুহিন) অনেক অনেক অনেক অভিনন্দন, দিদি... অনেক অনেক অনেক ভালো লাগছে...
রোদের ছায়া অভিনন্দন মিঠু দিদি...
তানি হক অনেক অনেক তৃপ্ত বোধ করছি দিদি ...আপনার এই গল্প পরেই আমি বলেছিলাম যে আপনি পপুরস্কার পেলে অনেক অনেক ভালো লাগবে .. খুব খুব ভালো লাগছে ... অভিনন্দন রইলো ... বার বার এমন বিজয়ী দেখি এই কামনা ... :)
ছোট বোন তানি, আমার মনে আছে তুমি এই কমেন্ট করেছিলে, আজ আমি কিছু বলতে পারছিনা, তোমাদের মাঝে ঠাঁই পেয়েছি, এটা বুঝতে পেরেই আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।
মামুন ম. আজিজ Ovinondon
আজ আমি কিছু বলতে পারছিনা, তোমাদের মাঝে ঠাঁই পেয়েছি, এটা বুঝতে পেরেই আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।

১৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

সমন্বিত স্কোর

৬.৭৮

বিচারক স্কোরঃ ৪.১৫ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.৬৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪