ফোনটা সেই তখন থেকে বেজে চলেছে। পাশের ঘরেই সীমার শাশুড়ী বসে বসে পান চিবোচ্ছে, তবুও উঠে গিয়ে ফোনটা তুলছে না। সীমা বাথরুমে এখন আধভেজা অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে, বের হতে পারছে না। শাড়ী, পেটিকোটের অর্ধেক ভিজে গেছে, এভাবে বেডরুমে ঢুকলে শাড়ীর পানিতে মেঝের কার্পেট ভিজে যাবে। এই মন দোটানায় থাকতে থাকতেই ফোনের রিং থেমে গেলো। মনটার মধ্যে অস্বস্তি হচ্ছে, সাব্বির ফোন করলো না তো! সকালবেলা অযথা একচোট ঝগড়া করে বেরিয়েছে। বিনা কারণেই ঝগড়া, মা এলেই সাব্বিরের মধ্যে স্বামীত্ব জেগে উঠে। সব কিছুতেই পৌরুষ ফলাতে চায়। আজকে কোন কারণই ছিল না সীমার সাথে রাগারাগি করার। ছোট ছেলেটাকে সীমা একটা ধমক দিয়েছিল, এটাই দোষ হয়ে গেছে। বাচ্চার নামে রোজ রোজ স্কুল থেকে নালিশ আসে, ঘরে যদি শাসন না করা যায়, বাচ্চা তো ধীরে ধীরে বেপোরোয়া হয়ে যাবে। প্রতিদিনই নাকি রাজা ক্লাসের অন্য বাচ্চাদের মারে। রাজার বয়স বেশী না, গত মাসেই চার বছর পূর্ণ হলো। এখন থেকে একটু ডাক না দিলে, ছেলেটা বেয়াড়া হয়ে উঠবে। বিদেশ বিভুঁইয়ে এটা অনেক বড় সমস্যা।
সীমা তার স্বামীর সাথে মেলবোর্ণ এসেছে আট বছর আগে। সম্রাট আর রাজার জন্ম এদেশেই হয়েছে।যদিও ওদের বিয়ে হয়েছে অনেক আগে, পনের বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু সাব্বিরের কারণেই বাচ্চা নিতে এত দেরী হয়েছে। সাব্বির বিয়ের পরই সীমাকে বলে দিয়েছে, ফ্যামিলির বড় ছেলে সে, তাই ফ্যামিলির প্রতি তার কর্তব্য সবার আগে, এরপর বাচ্চা-কাচ্চার চিন্তা। তা কর্তব্য বেশ ভালোভাবেই করতে হচ্ছে সীমাকে। কর্তব্যে ত্রুটি হচ্ছে কিনা, সাব্বির তা মনিটর করে। এ এক অদ্ভুত কান্ড! সাব্বিরের মা বছরে দু’বার ছেলের কাছে বেড়াতে আসে, একনাগাড়ে দুই তিন মাস থেকে যায়। এত বছরে সীমার সব কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কথা। শাশুড়ীর পান-সুপারীর যোগান দেয়া, সময়মত চা দেয়া, ঠিক সময়ে খেতে দেয়া, এ সবই সীমার মুখস্ত। তারপরেও সাব্বির বড় ছেলেকে আড়ালে নিয়ে জিজ্ঞেস করে, দাদীর সাথে ওর মা ভাল ব্যবহার করে কিনা!
সাব্বিরকে বাইরে-ঘরে প্রত্যেকে খুব ভালো জানে। সে দেখতে সুপুরুষ, গান-বাজনা করে, টেবিল টেনিস খেলে, উদারভাবে সকলের সাথে মেলামেশা করে, এমন একজনকে পছন্দ না করে পারা যায়! যে কোন কালচারাল প্রোগ্রাম, বন্ধুর বাড়ীতে নেমন্তন্ন, সবখানে সাব্বিরের উপস্থিতিই ওর জনপ্রিয়তা প্রমান করে। সীমাকে অবশ্য আলাদা করে বিচার করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, সীমা খুবই চাপা স্বভাবের মেয়ে, বাইরে ঘরে গেলেও অত বেশী হৈ হল্লা করতে পারেনা।
ফোনটা আবার বাজছে। এবার দুই রিং হতেই সীমা রিসিভার তুললো,
হ্যালো, কে বলছো? ও বৌদি? কেমন আছেন? আসছেন তো সন্ধ্যেবেলা?
-ভাবী, কেমন আছেন? সাব্বির ভাই যে বললো, আপনি হঠাৎ করে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর আগেও দু’বার রিং করেছি, কেউ ধরছে না দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম।
-আমি অসুস্থ হয়ে গেছি মানে! কখন ফোন করলো সম্রাটের আব্বু?
-এই তো মিনিট পঁচিশেক আগে। আজকের নিমন্ত্রণ ক্যানসেল করে দিল। নিমন্ত্রণ ক্যানসেল করেছে বলেই বেশী ভয় পেয়েছি।
-বৌদি, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার রান্না-বান্না কমপ্লীট, বাথরুমে ছিলাম বলে ফোন ধরতে পারিনি, মাত্র গোসল করে বের হয়েছি আর আপনার ফোন এসেছে।
-ভাবী, কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি, সাব্বির ভাইয়ের সাথে ঝগড়া হয়নি তো? উনার গলার আওয়াজ একেবারেই অন্যরকম শোনা যাচ্ছিল।
এবার সীমার চোখে পানি এসে গেলো। জয়া বৌদি অতি চমৎকার একজন মানুষ, উনার কাছে সব কথাই অনায়াসে বলা যায়। কিন্তু তবুও সীমাকে ঘরের কথা বাইরের একজনের কাছে বলতে হবে কেনো? কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই। একটা কিছু বলতেই হবে, তার চেয়ে বৌদির কাছে সত্যি কথা বলে দেয়াই ভালো। হাতের উল্টোপিঠে চোখের পানি মুছে সে সত্যি কথাই বললো,
-বৌদি, আজ সকালে ওর সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছে। তবে এমন বিরাট কিছু ব্যাপার ছিল না। রাজাকে একটু বকা দিয়েছিলাম, তাইতেই সে ক্ষেপে গিয়ে যাচ্ছে তাই করে বকে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। আমিতো এত সিরিয়াস ভাবিনি, ছি ছি! কী সর্বনেশে কান্ড বলুন তো! নেমন্তন্ন ক্যানসেল করেছে, সুস্থ স্ত্রীকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে!
-ভাবী, মন খারাপ করে লাভ নেই। ভাই হয়তো আর সবাইকেই ফোন করেছে, ওরাও হয়তো ফোন করবে আপনাকে। ওদেরকে সত্যি কথা বলার দরকার নেই। বলে দিয়েন যে শরীরটা আসলেই খারাপ লাগছে।
-বৌদি, আমার খুব অপমান লাগছে। ও কেনো এটা করলো? কার সম্মান বাড়লো এটাতে? আমার জীবনটাই এভাবে কেটে যাবে।
-ভাবী, আসলে সাব্বির ভাই সবার সাথে খুব হৈ হুল্লোড় করে বেড়ালেও আপনাকে আমি অনেক বেশী পছন্দ করি। আপনি কথা কম বলেন ঠিকই, কবি মানুষ, কথা তো কমই বলবেন।
-বৌদি, আমি কবি মানুষ, এ খবর কে দিল আপনাকে?
-আমি খুব কবিতাপাগল মানুষ। ফেসবুকে যাই শুধু এর-ওর ওয়ালে ট্যাগ করা কবিতা পড়ার জন্য। ওখানেই আপনার লেখা কবিতাও পড়ি। আপনাকে বলিনি, আপনার কবিতায় কমেন্টও করি, তবে ছদ্মনামে। কবিতা পড়েই বুঝেছি, আপনি অন্যরকম, কবিরা অন্যরকম হয়। সংসারের কুটকচাল তাদের জন্য না।
-বৌদি, আপনি আমার কবিতা পড়েন ভেবেই বলছি, এবারের বইমেলায় আমার একটি বই প্রকাশিত হবে, কবিতার বই।
-সত্যি? ভাবী দারুণ সুখবর! হ্যাটস অফ ভাবী!
-বৌদি, কী যে নরক যন্ত্রণার মাঝে বেঁচে আছি আমি। কাউকে বলতে পারিনা, বই বের হবে, এটা নিয়েও সম্রাটের আব্বু অশান্তি করে। আমি কী করবো বলেন!
-অশান্তি করে কেনো? আসলে আমাদের দেশের মেয়েদের ভাগ্য এক সূতোয় বাঁধা। ভাবী, ভাইয়ের কথায় কিছু মন খারাপ করবেন না। ভাই খুশী হোক আর বেজার হোক, আপনি লিখে যাবেন।
-বৌদি, আমার ফেসবুকে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ও। ওর ধারণা, ফেসবুকে গিয়ে নাকি আমি বেশী স্মার্ট হয়ে যাচ্ছি। এখন ওর সাথে কথায় কথায় নাকি তর্ক করি।
-ও! এইজন্যই তো ইদানিং আপনাকে ফেসবুকে দেখি না। ভাবী, সাব্বির ভাইকে দেখে মনে হয় না, উনি এতো বেশী্ ডোমিনেন্ট।
-বৌদি, আমি তো স্কুলে থাকতেই কবিতা লিখতাম। তখন থেকেই আমার কবিতা ইত্তেফাকের সাহিত্য পাতায় ছাপা হতো। যখন কলেজে পড়ি, তখনতো রীতিমত তরুণ কবি হয়ে গেছি। আমার এক বন্ধু ছিল, শুভংকর। শুভংকরও কবিতা লিখতো, দু’জনেই কবিতা পাঠাতাম ইত্তেফাকে, আমার কবিতা ছাপা হয় নি, এমন কখনও হয় নি, কিন্তু শুভংকরের কবিতা মাঝে মাঝে ফসকে যেতো।
-শুভংকর কি আপনার ক্লাস ফ্রেন্ড ছিল?
-না, ও ছিল আমার চেয়ে দুই বছরের বড়। কবিতা লিখতে গিয়ে পরিচয়। খুব ভালো ছেলে, আমার খুব ভালো বন্ধু ছিল ও। কবিতার ভেতর দিয়েই আমরা নিজেদের মাঝে এক ধরণের টান টের পেতাম, তবে সেটার মধ্যে কোন খারাপ কিছুই ছিল না। কোন এক সংখ্যায় যদি শুভংকরের কবিতা ছাপা না হতো, ও আমাকে ঈর্ষা করতো আর বলতো, মেয়েদের অনেক সুবিধা। ছাইপাশ যা-ই লিখো না কেনো, পত্রিকাওয়ালারা খাতির করে ছাপিয়ে দেয়। আর আমি হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়তাম। কিন্তু হঠাৎ করেই—
-কী হলো, হঠাৎ করেই বাড়ী থেকে আপনার জন্য বিয়ের পাত্র দেখা শুরু হয়ে গেলো, তাই না?
-বৌদি, আপনার অনেক অভিজ্ঞতা, কিভাবে ধরে ফেললেন?
-ভাবী, এতো খুব সোজা। শুভংকর একজন যুবক, তার উপর অন্য ধর্মের নিশচয়ই, নাম শুনে মনে হচ্ছে, তার সাথে আপনার সহজ মেলামেশা দেখে আপনার বাড়ীর সবাই ভয় পেয়ে গেছে। ওই বয়সেই ছেলেমেয়েরা উলটাপালটা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। এই ভয়েই বাবা মায়েরা মেয়ের বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছে।
-হ্যাঁ , আমার বেলাতে তাই হয়েছিল। এমন দামী, উচ্চশিক্ষিত পাত্রের সন্ধান পাওয়া মাত্রই আমার বিয়ে ঠিক করে ফেললো। শুভংকর খুব ভালো ছেলে ছিল, বাবা ছিল না, বিধবা মা’কে নিয়ে অনেক কষ্ট করে চলতো। আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে শুনে ও খুব অবাক হয়েছিল। শুধু বলেছিল, তুমি কবিতা লেখা চালিয়ে যেও। অনেক বড় কবি হবে তুমি।
-শুভংকরের খোঁজ পেয়েছেন?
-পাব না মানে? দুই বছর আগে দেশে বেড়াতে গিয়েছিলাম, তখনই ওর সাথে দেখা হয়েছে। মস্ত বড় কবি সে, এর মধ্যেই পাঁচটি বই বের হয়েছে। খুব কাটতি তার বইয়ের। তা শুভংকরই তো আমাকে আবার কবিতা লিখতে বলেছে, সেই বলেছে, ফেসবুক একাউন্ট খুলে সেখানে কবিতা লিখে পোস্ট করতে। সেই থেকে শুরু, এবারের বই শুভংকরই বের করে দেবে।
-ভাই জানে? আপনার বইয়ের কথা?
-সবই বলেছি ওকে, আমার মনে তো কোন খারাপ কিছু নেই, তাই বলে দিয়েছি।
-ভাই কিছু বলে নি?
-নাহ! ভালো-মন্দ কিছুই বলেনি।
-ভাবী, এমন কি হতে পারে যে এ কথা শুনেই ভাই আপনার উপর এমন খড়গহস্ত হয়েছে?
-কী জানি, আমি তো খারাপ কিছু করছি না, বৌদি।
-খুব কম মানুষই পারে অপরকে ঈর্ষা না করার গুনাবলী অর্জন করতে। মানুষের সহজাত ধর্মই হছে, পরস্পরকে ঈর্ষা করা। সেই দৃষ্টিতে বলেছি।
-বৌদি, কথাটা ভেবে দেখার মত। হতেও পারে, আপনার কথাই ঠিক।
-ভাবী, আপনার মনটা আজ ভীষন খারাপ, থাক, খারাপ কথা নিয়ে নাহয় আর কিছু না বলি। তার চেয়ে কবিতার বই বের হচ্ছে, এই সুখবরটাই আমরা সেলিব্রেট করি। আগামীকাল বিকেলে আমি আসবো আপনার বাসায়, আপনাকে বাড়ী থেকে তুলে নিয়ে সোজা চলে যাব প্যাকেনহাম-এ। কফি খাওয়াবো আপনাকে। নতুন কবিকে পাঠকের তরফ থেকে অভিনন্দন জানাতে চাই।
-বৌদি, আমি এমনিতেই খুব খুশী হয়েছি। ভাগ্যিস, আজকে আমাদের ঝগড়া হয়েছিল, ও আপনাকে ফোন করে নিমন্ত্রণ ক্যানসেল করেছিল। সেজন্যই তো আপনি আমাকে ফোন করলেন। আর এভাবেই তো আপনার সাথে শেয়ার করতে পারলাম কবিতার বই বের হওয়ার খবরটা! আর কাউকে বলবেন না কিন্তু, ঠিক আছে? বই বের হলে সবাইকে সারপ্রাইজ দেবো।
-না, ভাবী, কাউকেই বলবো না। আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আর ঐ যে বললাম, আর কেউ ফোন করলে বলবেন, শরীরটা আসলেই খারাপ।
দুই
বেলা বাজে সাড়ে বারোটা। সাব্বিরের ফেরার সময় হয়েছে। সীমা খুব তাড়াহুড়ো করছিল। মাছের ঝোলটা হয়ে গেছে, ডাল গরম করতে হবে। শাশুড়ী স্যালমন মাছ খান না, উনার জন্য একটা ডিম ভাজতে হবে, ডাল আর ডিম ভাজা, নাহ! সাথে আরেকটা কিছু করে দিতে হবে। এমন কিছু করতে হবে, যেটা এ বেলাতেই শেষ করা যাবে। সন্ধ্যায় আতিক ভাইয়ের বাড়ীতে দাওয়াত আছে। ছেলে দুটোও বাড়ীতে নেই, দু’দিন আগেই চলে গেছে আতিক ভাইয়ের বাড়ী। আতিক ভাইয়ের ছেলে আদনানের সাথে ওদের খুব ভাব, একেবারে গলায় গলায় বলতে যা বুঝায়, সেরকম। রেফ্রিজারেটার খুলে একটু দেখার চেষ্টা করছিল, যদি একটা বেগুন বা টমেটো পাওয়া যায়, শাশুড়ীর জন্য ভর্তা বানিয়ে দেয়া যাবে।
ডোরবেল বাজছে মনে হয়, রেফ্রিজারেটারের দরজা বন্ধ করে সীমা এক ছুট লাগালো দরজার দিকে। সাব্বির চলে এসেছে, ও দরজার বাইরে বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে চায় না। দরজা খুলতেই দেখা গেল, সাব্বির নয়, পোস্টম্যান দাঁড়িয়ে আছে। রেজেস্ট্রি খামে চিঠি এসেছে, রিসিট সাইন করে চিঠিটি নিতে হবে। বেশ মোটা ও চওড়া খাম, হাতে নিয়ে দেখলো, সীমার নামে পাঠানো। রিসিট সই করে খামটা হাতে নিয়ে সীমা ঘরে ঢুকে গেল।
সীমার বুকটা ধুক ধুক করছে। শুভংকর পাঠিয়েছে এই পার্সেল। তার মানে, ওর কবিতাগুলোর কারেকশান হয়ে গেছে। কতদিন হয়ে গেলো, ফেসবুকে যেতে পারছে না। কোন আপডেটই পাচ্ছিলনা বলে সীমা এতদিন খুব অস্বস্তিতে ভুগছিল। মাত্র তিনদিন আগে ও শুভংকরকে একটা টেক্সট পাঠিয়েছিল, কোন উত্তর আসেনি দেখে সীমা ধরেই নিয়েছিল, ওর বইটি এ বছর বের হচ্ছে না! খুবই খারাপ লাগছিল, এমন কি শুভংকরের উপর একটু বিরক্তও হয়েছিল মনে মনে। সীমার সংসারের অবস্থা শুভংকর খুব ভাল করেই জানে, কত সমস্যার ভেতর দিয়ে যে ওকে যেতে হয়, সব জেনেও শুভংকর ওর সাথে এমন ছেলেখেলা করলো! ‘ কবিতার বই বের করবো, কবিতার বই বের করবো’ বলে স্বপ্ন দেখিয়ে এখন একেবারে চুপ হয়ে গেলো! ছেলে জাতটাই কী এমন! কথার কোন দাম নেই! এসব ভাবতে ভাবতে সীমার মনটা হতাশায় ভরে যাচ্ছিল, তার মধ্যে সাব্বিরের সাথে চলছে টানাপোড়েন। কাহাতক ভালো লাগে! এখন তো দুজনের মধ্যে কথাবার্তাও বন্ধ। সেদিন দাওয়াত ক্যানসেলের ঘটনার পর থেকে সীমা আর কথা বলে না। খুব লজ্জা লেগেছে, অপমান লেগেছে, ঘরে যা কিছু করার তাতো করছোই, মানুষকে দাওয়াত দিয়ে বিনা কারণে দাওয়াত ক্যানসেল করে মানুষের সামনে সীমাকে এমন অপদস্থ করে কী লাভ হলো!
যাক গিয়ে, খামটা হাতে পেয়ে সীমার মন থেকে যত কষ্ট, যত ব্যথা, সবই যেনো নিমিষে কোথায় মিলিয়ে গেলো। খামটি কী এখন ছিঁড়বে নাকি দুপুরে খাওয়া=দাওয়া শেষে খুলবে! নাহ! খাওয়া-দাওয়া শেষ করে খোলাই ভালো। আয়েস করে বসে বসে কবিতার কারেকশানগুলো দেখবে। ইশ! কবি পাভেল রহমানকে দিয়ে কবিতাগুলো ঠিকঠাক করানোর কথা। পাভেল রহমান যদি ঠিক করে দেয়, এর উপর আর কারো কোন মাতব্বরী চলবে না। সীমা এখনও জানেনা, কাকে দিয়ে কবিতাগুলোর কারেকশান করানো হয়েছে। খামটা পাশের কম্পিউটার টেবিলের উপর রেখে সীমা কিচেনে চলে গেলো। শাশুড়ীর জন্য বেগুন ভর্তা বানানোর কথা, ভুলে বসে আছে। সাব্বির চলে আসলেই মা-বেটা দুজনকে একসাথে খেতে দিতে হবে। ডাক্তার বলে দিয়েছে, শাশুড়ীকে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার দিতে, সীমা সেভাবেই চেষ্টা করতো, কিন্তু শাশুড়ী ছেলে না আসা পর্যন্ত না খেয়ে বসে থাকেন। প্রথম প্রথম সাব্বির অনেক অশান্তি করতো সীমার সাথে, মায়ের যত্ন ঠিকমত হচ্ছেনা বলে, সম্রাটের কাছে খোঁজ নিত, সম্রাট যখন বলেছে যে মামনি তো দাদুকে খেতে ডাকে, দাদু তোমার জন্য অপেক্ষা করে, এরপর থেকে সাব্বির এ বিষয় নিয়ে খোঁটা দেয়া বন্ধ করেছে। কত কষ্টের ভেতর দিয়ে একটা মেয়েকে যেতে হয়, কেউ কি তা জানে! শুভংকরের পাঁচটি বই বের হয়েছে, অথচ শুভংকরের চেয়েও অনেক বেশী ভালো কবিতা সীমা লিখতো। আজ শুভংকর কোথায়, আর সীমা কোথায়!
সীমার খুব কান্না পাচ্ছিল, বুকটা মুচড়ে উঠছে। আব্বার কথা মনে পড়ছে। এই একটা মাত্র মানুষ ছিল তার জীবনে, যে খুব উৎসাহ দিত কবিতা লিখায়। কিন্তু কী যে হয়ে গেলো, শুভংকরের সাথে বন্ধুত্বটা ওরা খুব খারাপভাবে নিলো কেন, সেটাই বুঝতে পারেনি সীমা। এত কম বয়সে বিয়ে দিয়ে ওর জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিল! আব্বু বেঁচে থাকলে আজ ওকে সাপোর্ট দিতে পারতো!
ডোর বেল বাজছে! এই রে! এবার সাব্বির চলে এসেছে। আজকে সাব্বিরের সাথে আর মনোমালিণ্য রাখবে না। খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেলেই সাব্বিরকে খামটা দেখাতে হবে। সাব্বির আদৌ খুশী হবে কিনা কে জানে, তবুও এই মুহূর্তে আনন্দটুকু ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য হলেও সাব্বিরকে সব বলা দরকার। এক দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই সাব্বির ঘরে ঢুকে গেলো। সাব্বির একটু যেনো চমকে গেছে সীমাকে দেখে! ব্যাপারটা সীমার নজরে এসেছে। কিন্তু এখন কোন কথা বলবে না সীমা, একেবারে সারপ্রাইজ দেবে খামটি দেখিয়ে! সাব্বির গটগট করে বেডরুমের দিকে চলে গেলো, আর সীমা শাশুড়ীর রুমের দিকে গেলো। আম্মাকে খেতে ডাকতে হবে, উনার একটু সময় লাগে উঠে আসতে। বুড়ো হলে যা হয় আর কি! শাশুড়ীকে অনেক যত্ন করে সীমা, তবুও সাব্বির খুশী হয় না। কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা কোন কিছুতেই সন্তুষ্ট হয় না। সাব্বির সেই দলের।
কড়াই থেকে মাছের ঝোলটা বাটিতে ঢালতে গিয়ে হাতে খুব বড় রকমের ছ্যাঁকা খেল সীমা। ইশ! এই এক যন্ত্রণা, প্রায় প্রায় ওর হাতে গরম ছ্যাঁকা লাগে। ফোস্কা পড়ে পড়ে ওর ফর্সা হাতের পাতায় কালচে দাগ হয়ে গেছে! একদিকে ভালোই হয়েছে, সাব্বিরের দেয়া কালশিটেগুলো সবার কাছে গরম ছ্যাঁকা বলে চালিয়ে দেয়া যায়। মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও সাব্বির ওর হাতে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়েছিল। ওর ধারণা হয়েছিল, সীমা নাকি ফেসবুকে গিয়ে কী সব ফস্টি-নস্টি করে। সাব্বিরের কোন এক বন্ধুর বৌ নাকি সাব্বিরকে বলেছে, ঘরের বৌয়ের দিকে একটু বেশী নজর দিতে। ঐ সময়টাতেই সীমা খুব ব্যস্ত ছিল কবিতা নিয়ে। সাব্বিরকে বলেছেও সেই কথা, তবুও সাব্বির মানতে চায় নি। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে জ্বলন্ত সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে বলেছিল,
-আমার সাথে ঘর করতে হলে আমার নির্দেশমত চলতে হবে, নাহলে তালাক দিয়ে দেবো। সিগারেটের ছ্যাঁকা খেয়ে সীমা এতটাই অবাক হয়েছে যে তালাকের কথায় কোন উত্তর দিতে ইচ্ছে করেনি। সেদিনই সাব্বির সীমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেট করে দিয়েছে। অবশ্য ততদিনে সীমা ওর সমস্ত কবিতার ফাইল শুভংকরকে পাঠিয়ে দিয়েছিল।
এসব কথা মনে হতেই সীমার মুখটা তেতো হয়ে গেল। মাছের ঝোলের বাটীটা খাওয়ার টেবিলে নিয়ে যাচ্ছিল, দেখে সাব্বির কম্পিউটার টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে ওর খামটা দেখছে। ওদের খাওয়ার ঘরে যেতে হলে কম্পিউটার টেবিলটাকে পাশ কাটিয়ে যেতে হয়। এই কম্পিউটার সীমা ব্যবহার করে, সাব্বিরের নিজস্ব ল্যাপটপ আছে। তবুও সাব্বির মাঝে মাঝেই সীমার টেবিল ঘাঁটাঘাঁটি করে, কোন গুপ্তধন খুঁজে বেড়ায়! সীমা সবই টের পায়, কিন্তু কিছু বলে না। কিন্তু আজকে সাব্বিরের হাতে খামটি দেখে একটু আগের তেতো হয়ে যাওয়া মুখটা আরেকটু যেনো তেতো লাগলো। ও প্ল্যান করেছিল, সাব্বিরকে সারপ্রাইজ দেবে খামটি দেখিয়ে, ওর বন্ধুর বৌয়ের কথা শুনে নিজের স্ত্রীকে অবিশ্বাস করেছিল, আজকে কবিতার সমস্ত কপি দেখালে হয়তো সাব্বিরের ভুল ভাঙ্গবে।
সাব্বির খামের উপর সীমার নাম দেখেই কৌতুহলী হয়ে উঠলো, প্রেরকের নাম দেখে চমকে গেলো। শুভংকর নামের বাস্টার্ডটা পাঠিয়েছে এই প্যাকেট। কত বড় সাহস! সীমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সাব্বির খামের মুখটা ছিঁড়ে ফেললো। এটুকু দেখেই সীমার মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। খাওয়ার ঘরে না ঢুকে মাছের ঝোলের বাটি হাতে ও সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো। সাব্বির খামটিকে হাতেই ধরে রেখেছে, সীমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কতদিন ধরে চলছে চিঠি চালাচালি?
-তোমারই তো ভালো জানার কথা! আমার নাড়ী-নক্ষত্র তো তোমার হাতেই বাঁধা আছে। তুমিই খুঁজে দেখো।
-একদম চুপ, দাঁত খুলে ফেলব অসভ্য মেয়েছেলে কোথাকার!
-মুখ সামলে কথা বলো, সভ্যতা আমাকে শিখিও না, অন্যের চিঠি খুলে পড়া কোন সভ্যতার মধ্যে পড়ে? তুমি কেনো আমার নামে আসা খাম খুললে? খামটা খোলার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছো?
-ওরে আমার সতী সাবিত্রীরে! কোথাকার কোন মালাউনের বাচ্চা আমার বাড়ীর ঠিকানায় আমার বৌকে প্রেমপত্র পাঠাবে, আর সেই প্রেমপত্র তোমার অনুমতি নিয়ে খুলতে হবে আমাকে, এতটাই ভেড়া ভেবেছো আমাকে?
-খবরদার! মুখ খারাপ করবে না। আমাকে গালি দিচ্ছো দাও, শুভংকরকে গালি গালাজ করো না। নিজেকে ছোট করো না। আমি তোমার সম্পত্তি, শুভংকর তোমার সম্পত্তি না, সে দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত কবি, তাকে গালিগালাজ করে নিজেকে আর ছোট করো না।
-বাবারে! এ যে দেখছি কবি রাজত্ব হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠিত কবি, হাহ! ভাগ্য ভাল, দেশের প্রেসিডেন্ট বলো নি! কবি! কবি রবীন্দ্রনাথ! যত্তসব, আমাকে বলো, শুভংকরের সাথে এখনও তোমার যোগাযোগ আছে কিভাবে? ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েও দেখছি প্রেম বন্ধ করতে পারছি না। আজকে তোমার হবে, দাঁড়াও হাতে-গলায় গরম ছ্যাঁকা নিয়ে সন্ধ্যার পার্টিতে যাবে। মানুষ দেখে কিছু জানতে চাইলেই আমাকে ডাকবে। আমি উত্তর দেবো।
-পারভার্টেড কোথাকার! শুভংকরের নাম নেয়ার আগে ওজু করে নিও, তাহলে গুনাহ মাফ হবে। ছি! এমন একজন মানুষকে গালাগালি করতে লজ্জা করে না? তার কী দায় পড়েছে তোমার বউয়ের সাথে প্রেম করার! সে কী অথর্ব? তোমার মত মানুষের যদি এত বান্ধবী থাকতে পারে, আর শুভংকরের মত এমন নির্লোভ, সৎ মানুষের কপালে কি একটা বউও জোটেনি ভেবেছো? ছি ছি! তোমার কথা শুনে আমার সারা শরীর ঘিন ঘিন করছে। এত ঈর্ষাও থাকে মানুষের মনে। আমার কবিতার একটা বই বের হবে, তোমাকে আমি সব বলেছি, শুভংকর নিজ দায়িত্বে কাজটুকু করে দিচ্ছে, প্রায় শেষ হয়ে এসেছে কাজ, আর তুমি বলছো এমন নোংরা কথা। আমার লেখা বই বের হলে তোমার হিংসে হবে, তাই না? দশটা মানুষ জানবে, তোমার বউয়েরও কিছু যোগ্যতা আছে, সেটা জেনে ফেললেই তোমার বিপদ, তাই না? ভাবীদের কাছ থেকে আর সহানুভূতি পাবে না, তাই না?
সীমা পাগলের মত বকে যাচ্ছিল, খেয়াল করেনি, সাব্বির খামের ভেতর থেকে কবিতার স্ক্রীপ্ট টেনে বের করে ফেলেছে। যখন সীমার খেয়াল হলো, ততক্ষণে সাব্বির একটানে স্ক্রীপ্টের গোছা ছিঁড়ে ফেলেছে। সীমা মাছের ঝোলের বাটি মেঝেতে ফেলে দিয়ে হাউ মাউ করে সাব্বিরের উপর গিয়ে পড়েছে, আর সাব্বিরের দুই হাত জাপ্টে ধরে শুধু বলে চলেছে,
-না না, ছিঁড়োনা, ছিঁড়োনা, প্লীজ, তোমার দুইটা পায়ে পড়ি! আমার কবিতাগুলো ছিঁড়ে ফেলো না, আমি অনেক কষ্ট করে লিখেছি। শুভংকরের সাথে আমার কোন খারাপ সম্পর্ক নেই, বিশ্বাস করো, কবি পাভেল রহমানকে দিয়ে আমার কবিতার কারেকশান করে শুভংকর পুরো প্যাকেট মেইল করেছে। তুমি খুঁজে দেখো, এর ভেতর কোন চিঠি ফিঠি নেই। শুভংকরের ঘরে সুন্দরী বৌ আছে, আমি ওর বন্ধু, ছেলেবেলার বন্ধু, ছিঁড়োনা , প্লীজ ছিঁড়োনা।
সাব্বিরের গায়ের জোরের সাথে সীমা পারবে কেনো! এক ঝটকায় সীমার হাত ছাড়িয়ে হাতের কাগজগুলো কুচি কুচি করে ছিঁড়ে ফেললো। সীমা বেশ কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো মেঝের দিকে। ওর সমস্ত কবিতার গায়ে মাছের ঝোল মাখামাখি হয়ে যাচ্ছে, সীমা তাকিয়ে আছে সেদিকেই। ওর চটক ভাঙ্গলো বাম গালে খুব জোর এক চড়ের আঘাতে। সীমা মুখ তুলে সাব্বিরের দিকে তাকাতেই দাঁতে দাঁত পিষে সে বললো,
-এই জন্যই তখন মুখে অমন ঝলক দেখেছিলাম, অন্য সময় মুখ পাতিলের তলার মত করে রাখো, আর আজকে মহাকবি শেকস্পীয়ারের চিঠি পেয়ে খুশীতে খলবল করছিলে, তাই না? কবি হয়েছো তুমি, কবি সুফিয়া কামাল। বাব্বা! কী ভাগ্যবান স্বামী আমি, কবি সুফিয়া কামাল আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নোবেল প্রাইজ পাবে কবিতা লিখে! কবিতা লেখা বার করছি, আজকেই উকিলের কাছে যাবো।
সীমা আর একটি কথাও বললো না। বাথরুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিল। সাব্বিরের নংরা কথার ঢেউ বাথরুমের দরজায় আছড়ে পড়ছে। এগুলো শুনতে চাইছে না সীমা, পানির ট্যাপ ফুল স্পীডে ছেড়ে দিল, এখনও শোনা যাচ্ছে নোংরা কথা, বাথটাবে নেমে শাওয়ারের চাবি খুলে দিল। এবার আর শোনা যাচ্ছে না সাব্বিরের গলা। সীমার মাথায় আগুন জ্বলছে। আগুন কোনভাবেই নিভবে না। কার কাছে নালিশ জানাবে ও, আপনার জন বলতে কেউ নেই! হঠাৎ করেই ওর চোখের সামনে আব্বুর মুখ ভেসে উঠলো। চোখের সামনে ছোটবেলা ভেসে উঠলো, দুই বেনী দুলিয়ে ছোট্ট মেয়েটি আবৃত্তি করে চলেছে,
কাঠবেড়ালী, কাঠবেড়ালী, পেয়ারা তুমি খাও------
হাতে ক্রেস্ট নিয়ে সেদিনের উদীয়মান কবি, সীমা আখতার নেমে আসছে মঞ্চ থেকে, নীচে দাঁড়ানো তার প্রতিদ্বন্দ্বী শুভংকর বোস, নীচে নামতেই সীমার হাতে এক চিমটি কেটে দিল, মুখ ভেংচে ভেংচে বলছে, ‘ মেয়ে হয়ে জন্মালে কত ভালো হতো রে! পত্রিকায় কবিতা ছাপা হতো, পুরস্কার পাওয়া যেতো, শালার ছেলে হয়ে জন্মেই সব মাঠে মারা গেলো”।
বাথরুমের দরজায় ধাক্কা পড়ছে। কে ধাক্কাচ্ছে, কেন ধাক্কাচ্ছে, আমি তো আর কবি সীমা আখতার নই, আমি মিসেস সীমা বেগম, সাব্বির খানের বউ। আহ! তবুও ধাক্কাচ্ছে। আরে! আমি আর কবিতা লিখবো না, বলেছি তো। শাওয়ারের পানিটা বেশ ঠান্ডা তো, আরাম লাগছে। দরজায় ধাক্কাধাক্কির আওয়াজ কমে এসেছে, সীমার ঘুম পাচ্ছে। কানের কাছে একটা কথা শোনা যাচ্ছে,
‘বিয়ের পরও কবিতা লেখা চালিয়ে যেয়ো। তুমি অনেক বড় কবি হবে।‘
“ আরে! কবি সীমা আখতার যে! কবিতা লেখা ছেড়েই দিলে! ছি ছি! নিজের প্রতি অবিচার করতে লজ্জা করলো না। সীমা, আবার কবিতা লেখা শুরু করো। কী ভালো কবিতা তুমি লিখতে, তুমি পুরস্কার পেতে, আর আমি আঙ্গুল চুষতাম। সেই আমি পাঁচটা বই বের করেছি, আর তুমি লবডংকা করেছো। সীমা, তুমি আবার লিখো, আমি তোমাকে সাহায্য করবো, আগামী বই মেলাতেই তোমার বই বের করবো, সবাই জানতে পারবে হারিয়ে যাওয়া কবি সীমা আখতারকে। প্লীজ, আবার লেখা শুরু করো, আবার লেখো, আবার শুরু করো-----