সরলে গরলে

সরলতা (অক্টোবর ২০১২)

রীতা রায় মিঠু
  • ২৩
  • ৪৩
এক

ছোটবেলা থিকাই সবতেই আমারে ‘সরলি’ কইয়া ডাকতো। তয় এইডা আমার মায়ে-বাপের দেওয়া নাম না। মায়-বাপের দেওয়া নাম একখান আছিল ইস্কুলের খাতায়। ইস্কুল ছাড়নের লগে লগে আমার বালা নামডাও হারাইয়া গ্যাছে।

পাড়ার মাইনষে ক্যান যে আমারে ‘সরলি’ ডাকত, ছোট থাকতে তা বুঝি নাই। এই বেলায় আইসা বুঝতে আছি, আগে আমি আসলেই সরল সোজা আছিলাম। কাউরে মুখ ফুইট্টা কিছুই কইতে পারতাম না। এমন কি কুন অন্যায় দেখলেও না। অনেক ঠকতে অইছে আমারে, সরলতার সুযুগ লইয়া বেবাকেই আমারে ঠকাইয়া গ্যাছে, তবু কারুর বিরুদ্ধে কুন নালিশ করি নাই। তয় অখন আমি আগের মত অত সরল নাই, ঠুক্কর খাইতে খাইতে এট্টু কঠিন অইতে পারছি। বিশ দিন আগেই শশুর বাড়ি ছাইড়া মায়ের কাছে আইসা পড়ছি, এক কাপড়ে বাপের বাড়িতে আইতেই সক্কলে আশচয্যি হইয়া গেছে। কেউ বিশ্বাস করতে পারতাছেনা, তারার সরলি কেমনে এমুন গরলি অইয়া গেল।

ঘটনা খুইল্লা না কইলে বুঝাইতে পারমুনা অতীতে কেমুন টাইপের সরল আছিলাম আমি। অনেক ঘটনা অখন মনে পড়লে শইলডা রাগে জ্বলে। সরলতার একখান ঘটনা কই। আমরার বাড়ি মইমনসিং শহরে। এক ভাই, এক বইন আমরা। আমরার বাবা্র কাপড়ের ব্যবসা আছিল। সারাদিনই দোকানে পইড়া থাকত। খাওনের সময় খালি বাড়িত ডুকত। আমার বয়স তহন বারো কি তের বচ্ছর, কেলাস এইটে পড়ি। একদিন দাঁতের ব্যথায় অজ্ঞান অওনের যোগার হইছিল। গাল ফুইল্যা ফোটকার (বেলুন) লাহান অইছে। বাবায় চিন্তা করে, মা-য় চিন্তা করে এই অসুইক্কা মাইয়া লইয়া কী করন যায়। রাস্তার পারের ডিসপিন্সারীর কম্পাউন্ডার চাচার’থনে দুইডা ব্যথা কমানের টেবলেট আইন্যা খাওয়াইতেই ব্যথা কমল, কিনতু গালের ফুলা কমলনা। বাবার শইলডা এমনিতে রাগের অইলেও আমারে আবার আদর করত। দুই দিন পরেই আমারে লইয়া গেল দাঁতের ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারের নাম দিনেশ ডেন্টিস্ট। এই ডাক্তার সাহেব বাবার অনেক দিনের চিনা-জানা। নিজেরার মত কইরা বুইজ্জা লইতে অইব, ডাঙ্গর-ডোঙ্গর কইতে কী বুজাইতে চাইছি। ডাক্তারের চেম্বারে ডুইক্কা ডাক্তারের চেহারা সুরত দেইখ্যা আমার মনে বেশ শ্রদ্দা ভক্তি অইল। ডাক্তারের পরনে ধপধপা সাদা শার্ট, সাদা ফুলপেন্ট।

দাঁতের ব্যথায় কাতরাইলেও চেম্বারে যাওনের আগে বালা দেইখ্যা জামা বাইর কইরা পইরা গেছি। আমার বয়স তহন বার-তের বইল্যাই শইলে পরিবর্তন আইছে। বেশ ডাঙ্গর ডোঙ্গর দেখা যাইত। এর বেশী কিছু কওন যাইত না। নিজেরার মত কইরা বুইজ্জা লইতে অইব, ডাঙ্গর-ডোঙ্গর কইতে কী বুজাইতে চাইছি। লম্বা স্কার্ট আর লম্বা হাতের ব্লাউজ পরছিলাম। এইডাই তহনকার ফেশান আছিল। ঈদের ফেশান। নাম আছিল জুহি চাওলা ড্রেস। জুহি ‘কিয়ামত সে কিয়ামত’ সিনেমায় পরছিল। পাশের বাসার আমেনা ঈদে এই ড্রেস লইছে, আমিও লইছি। যাউক, আসল কথায় আসি। ড্রেস ভালই আছিল, কুন বেপর্দা মার্কা ড্রেস না। আমার বাপে বেপর্দা করতে দিত না।

বাবারে চেম্বারে বসাইয়া ডাক্তার আমারে তার ঘরের ভিতরে লইয়া গিয়া একটা চেয়ারে বইতে দিছে। আমিও বইসা আছি, কতক্ষনে পরেই ডাক্তার আমারে উডাইয়া লইয়া একটা বড় মেশিনের সামনে খাড়া করাইছে। আমি ত দাতের ব্যথায় অস্থির, গালের ফুলা না কমলে ইস্কুলের ফাংশানে গান গাইমু কেমনে হেই চিন্তা করতে আছিলাম। ডাক্তার যা করতে কয় তা-ই করি। হঠাত কইরাই টের পাইলাম ডাক্তার তার দুইডা হাত আমার হাতের নীচ দিয়া বেড়াইয়া ধরছে। সহজ কথায়, সে তার দুই হাত আমার বুকের মইদ্দে রাইখ্যা আমারে একবার ডাইন দিকে আরেকবার বাম দিকে ঘুরাইয়া কি যে করতে চাইতেছিল, বুঝতে পারতেছিলাম না। একবার মনেও হইছিল, দাত দেখার সাথে বুকে হাত দেওয়ার কী সম্পর্ক। আবার ভাবতেছিলাম, বুড়া মানুষ খেয়াল করে নাই, হাত দুইডা আমার বুকে রাখছে। আমিত আবার এমনিতেই সরল সুজা আছিলাম। খারাপ চিন্তা মাথায় আইয়ে নাই। কিনতু, বুইড়া মইদ্যে মইদ্যেই আমার বুকে এট্টু কইরা চাপ দিতে আরম্ভ করতেই আমার কান্দন আইতেছিল। কিছু কইতে পারিনা। ডাক্তার হয়ত আমারে খারাপ ভাবব। বুড়া মাইনষেরে কিছু ত কওনও যায়না। তার উপরে সরলি বইল্লা সরল মনে সরল চিন্তাই করতেছিলাম। সরল বইল্লাই হয়ত চীক্কইর দিতে পারি নাই, ডাক্তার সাবেরে কিছু কইতেও পারি নাই, তাই বইল্লা আমার শইল লইয়া ডাক্তার খেলা শুরু করছিল, হেইডা কি আর বুঝি নাই? আমি ডাক্তারের মুখের দিকে ঘাড় ফিরাইতেই দেখি সে মেশিনের মইদ্দে চউক দিয়া রাকছে। এইর পরেই আমি শইল মুচড়াইতে শুরু করছি, শইল মোচড়ানি শুরু করতেই সে হাত সরাইয়া নিছে। আমার তহন লজ্জায় মাথা নিচের দিকে, বুড়া ডাক্তারের দিকে আর চাইতে পারিনা। আমারে আইন্যা বাবার কাছে বসাইয়া খস খস কইরা প্রেসক্রিপশান লেইখ্যা মুখে কইল, “ দাতের গোড়ায় ইনফেকশান আছে, এখন দাত ফেলান যাইব না। অষুধ দিলাম, পাঁচ দিন পর লইয়া আসবেন। তখন দাত তুইল্লা দেবো”।

পাঁচ দিন পরে ঐ ডাক্তারের কাছে যাওনের কথা উঠতেই আমি ‘যামুনা’ কইলাম। আমার কথা শুইন্যা বাবায় মায় দুইজনেই আশ্চয্য হইয়া গেছে। মাইয়া কয় কি? চিকিৎসা কেউ আধাপথে ফেলাইয়া রাখে? বাবার এক কুদানি শুইন্যাই আমি ত্যারতেরাইয়া বাবার লগে ডাক্তারের চেম্বারে রওনা দিছি। সেইদিন আমি ডাক্তারের সামনেই কইছি, “ বাবা, আপনে আমার লগে ভিতরে চলেন। আমার ডর করে। বড় মেশিন দেইখ্যা হাত-পাও কাপে”। বুড়া ডাক্তার সাথে সাথে কইয়া উঠছে, “ আরে ডরের কিছু নাই। একটুও ব্যথা পাইবা না। ভিতরে জায়গা কম। এত মানুষ সামনে থাকলে আমার কাজে সমস্যা হইব”। ডাক্তার এই কথা কওনের লগে লগে আমার বুকের মইদ্যে কাঁপন ধরল। বাবার হাত ধইরা মিনতি করলাম, “ আপনে যদি আমার লগে না থাকেন, আমি ভিতরে যামু না। আমার দাত তুলার দরকার নাই। আপনেরে ছাড়া আমি ভিতরে ডুকমুই না”। ডাক্তার আমার বাবার লগে অনেক আগের থিকাই পরিচিত ছিল। বাবারে মুখের উপরে না করতে পারতেছেনা, আবার বাবায় ভিতরে ডুকুক, সেইটাও চাইতেছেনা। আমিই বাবার হাত ধইরা ভিতরে ডুকলাম। বাবারে একটা মাত্র চেয়ারে বইতে কইলাম। বাবায় চেয়ারে না বইসা আমারে সাহস দিতেছিল, “ কিচ্ছু ভয় নাই। ডাক্তার সাহেব অনেক ভাল। একটুও বেথা পাবিনা, টপ কইরা দাতটা তুইল্লা লইয়া আসব”।

ডাক্তার সাহেব কিনতু আমাগোর দিকে আর ফিরাও তাকাইতেছিলনা। আমারে চেয়ারে বসাইয়া তিনি ইনজেকশন রেডী করতে লাগল। আমি খেয়াল কইরা দেখলাম, ডাক্তার নতুন সুঁই লয় নাই। আরেক জনের ব্যবহার করা সুঁই ভইরা লইছে সিরিঞ্জের মইদ্দে। বিজ্ঞান ক্লাসে হরেন স্যার কইছে, একজনের ব্যবহার করা জিনিস আরেকজনের ব্যবহার করতে নাই। রক্ত বাহিত রোগ ছড়ায় যত কারনে, ইঞ্জেকশনের সুঁই হইতেছে তার মইদ্দে একটা। সব জানি, কিনতু কিছু কইতে পারতাছিলাম না। এমনিতেই বাবারে সাথে আনছি দেইখ্যা ডাক্তারের মুখ আষাইঢ়া ম্যাঘের মত হইয়া রইছে। এখন যদি বলি, সুঁই পালটায় দিতে, তাইলে ত ক্ষেইপ্পা যাইব। হয়ত কইব, দাত তুলনের দরকার নাই। এমুন হইলে বাবার মান সম্মান নষ্ট হইয়া যাইব। বাবায় আমারে বইক্কা শেষ করব। আবার যদি দাত ব্যথা শুরু হয়, তখন কি উপায় অইব। সব ই ভাবতেছিলাম, আবার হরেন স্যারের কথাও ভাবতেছিলাম। কিনতু মুখে কিছুই কইতে পারতেছিলাম না। অই পুরান সুঁই দিয়াই ডাক্তার আমারে দাতের গোড়ায় ইঞ্জেকশানটা মনে অইল যেন অনেক জোরে ফুটাইছে। প্রথমেই একখান দম বাইর করা চীক্কইর দিছি, এরপরে একদম চুপ কইরা গেছি। বুঝতে পারছি, বাবারে লগে আননে ডাক্তার এই কাজটা করছে। এখন চুপ কইরা থাকনই ভাল। দুই নাম্বার ইঞ্জেকশানও একইভাবে দিছে, কিনতু আমি শক্ত হইয়া আছিলাম। এরপরেই দাত তোলার ‘প্লাস’ লইয়া আইতেই আমার শরির কাপতে শুরু করে। বাবায় কাছে আইসা হাতটা এট্টু ধরতে যাইতেই ডাক্তার বাবারে একটা ধমক দিছে, “ সরেন তো, চেয়ারে গিয়া বসেন। এইজন্যই রুগীরে একা আনতে চাইছি। আপনাকে দেখে আপনার মেয়ে শক্ত হয়ে আছে। ঠিকমত কো-অপারেট না করলে দাঁতটা তুলতে সমস্যা হবে। আপনি বরং বাইরে গিয়ে বসেন”। আমি বাবার দিকে কাতর দৃষ্টিতে চাইতেই বাবা চেয়ারে বইসা পড়ে।

ডাক্তার প্লাস লইয়া দাতের গোড়ায় ধইরা গায়ের জোরে মনে অয় টান দিছে একখান। কোরবাণির গরুর লাহান এক আওয়াজ বাইর হইছিল আমার গলা দিয়া। আর ডাক্তারের হাতে আইসা পড়ছিল আমার দাতের ভাঙ্গা টুকরা। ইঞ্জেকশান দিয়া অপেক্ষা না কইরাই দাত ধইরা টান দিছিল। শক্ত গোড়া, ব্যথা পাইছিলাম অনেক, ব্যথার চোটে ডাক্তারের হাত ধইরা ফেলছিলাম। হেই কারনেই ডাক্তারের হাতটা নইরা গেছিল, আমার দাতটাও অর্ধেক ভাইঙ্গা গিয়া বাকী অর্ধেক মাড়ির লগেই আইটকা আছিল। দর দর কইরা রক্ত বাইর হইতে দেইখা বাবার মাথা ঘুরাইয়া গেছে। ডাক্তার তহন কইছিল, “ এইজন্যই না করছিলাম পেশেন্টের সাথে কাউরে আসতে। এই মেয়ে আমার হাত ধইরা টান মেরে প্লাস’ এর পজিশন নাড়ায় দিছে। এখন আর বাকী দাঁত তোলা যাবে না। সাত দিন পর মেয়েকে নিয়ে আবার আসবেন। তখন বাকীটুকু ঠিক করে দিব”।

বাবার লগে বাসায় ফিরা আইতেই রাইতে ধুম জ্বর আইছিল। সারা শইলে কি কাঁপানি! ভারী ভারী তিন কাথা দিয়াও শীত মানেনা। সারা রাইত মাথায় জলপট্টি দিয়া সকালে জ্বর নামাইছে। আমার বাবায় আর মায় মনে করছে বুঝি দাত ব্যথার কারনে জ্বর আইছে। কিনতু তাগরে আমি কই নাই, সারা রাইত ডরে আমার শইল কাপছে। তিনদিন পরে জ্বর কমতেই মায়েরে ডাইকা কইলাম, “আমার ভাঙ্গা দাত আর ফালানের কাম নাই। আমি আর কিনতু যামু না”। আমার মায় কিছু বুঝছিল কি না জানিনা, তয় আমারে আর কুনদিন হেই ডাক্তারের কাছে লইয়া যায় নাই।

দুই

আমারে মাইনষে যেমুন ‘সরলি’ কইয়া ডাকত, আবার ‘সুন্দরী’ কইয়াও ডাকত। আমি মইমনসিং শহরের মইদ্যে দেহনের মত সুন্দরী আছিলাম, তার উপরে সরল সুজা। মাইনষে যহন যা বুজাইত, তাই মাইন্যা লইতাম। বাপ-মায় ডরাইত, কুনদিন না জানি খারাপ মাইনষের পাল্লায় পইড়া যাই! সুন্দরী হওনের বিপদ আছে। এট্টু বড় হইতেই প্রায় প্রায় আমরার ঘরের চালে ডিল্লা পড়ত, রাইতে জানালা বন্দ কইরা গুমাইতাম। হেই বন্দ জানালায় টোক্কা পড়তে শুরু করতেই বাবায় আমারে বিয়া দেওনের লাইগ্যা উইঠ্যা পইরা লাগল। আমরার পাড়ার গনু উকিলের পোলার লগে আমার বিয়া এক্কেবারে পাক্কা কইরা তয় আমারে জানান হইছিল। আমি তহন ক্লাস টেনে পড়ি। সুন্দরী হইয়া জন্মাইয়া বিরাট দোষ করছি মনে অইল। আমরার বাড়ির আশপাশের সব বাড়ির মাইয়ারা দল বাইন্দা ইস্কুলে যাইত, আর আমি ‘সরলি’ বারিন্দায় বইসা সব দেখতাম। আষাঢ় মাসের ৩০ তারিখ, শুক্রবার ধইরা আমার বিয়ার দিন ঠিক অইছিল।

গনু উকিল খুব নামকরা লোক আছিল, তার পুলার সাথে বিয়া ঠিক হওনে বাবায় খুব খুশী। মানী লোকের লগে কুটুম্বিতা করতে পাইরা বাবায় মনে অয় আসমানে ভাসতে আছিল। গনু উকিলের পুলার স্বভাব চরিত্র কেমুন, হেই খুজ আর লয় নাই।

বিয়ার দিনে বিয়া অইয়া গেল আমার। আমিও সুন্দরী, আমার সোয়ামীও খুব সুন্দর। টকটইক্কা ফরসা গায়ের রঙ, মাথার চুল কুঁকড়া কুঁকড়া, এক্কেবারে য্যান দূগগা পূজার কাত্তিক ঠাকুরের লাহান। পরথম পরথম আমার খারাপ লাগে নাই। একটা শান্তি পাইছি, আর কেউ টিনের চালে ডিল্লা দিবনা, জানালার পাটে টোক্কা দিব না। একটা কষ্ট আছিল, ইস্কুলে যাওয়া বন্দ হইয়া গেল। মেট্রিক পরীক্ষা দেওয়া অইল না। শাশুড়ী কইছে, “বৌ মাইনষে কি জজ বেরিস্টার অইব নি”? কথাডা শুইন্যা আমার খারাপ লাগছে, মায়েরে কইতেই মায় কয়, “থাউক গা, বিয়ার পরে স্বামীর বাড়িই সব। তর তো বুদ্ধি সুদ্ধি কম, মেট্রিক পাশ দিয়াও লাভ নাই। তার চাইতে শশুর শাশুড়ীর মন যুগাইয়া চলনই বালা”।

আমি শশুর শাশুড়ীর মন জুগাইয়া চলনের সাইধ্যমত চেষ্টা করছি। শশুর সাহেব বালা মানুষ, আমারে ‘মা’ ছাড়া ডাকেইনা, কিনতু শাউড়ী অনেক রাগী। খালি ট্যাকর ট্যাকর করে। আর সোয়ামির কথা কী কমু। বিয়ার আগে শুনছি কুন অফিসে চাকরী করে, বিয়ার পরে তারে আর কুনদিন অফিসে যাইতে দেহি নাই। সারাদিনই ঘরে হুইয়া বইয়া থাকতে দেইখ্যা একদিন তারে জিগাইলাম, “তুমি অফিস যাও না ক্যান? এইভাবে বাড়িত বইয়া থাকলে চাকরী চইল্লা যাইব ত”! সে জবাব দিছে, “হ, আমি অফিস যাই, আর পাড়ার বেবাকে আইয়া ভীড় করুক আমরার বাড়িতে বউ দেহনের লাইগ্যা”! আমি কইছি, “ এইডা কেমুন কথা, বউ ত দেখতে আইবই, অহনে নতুন বউ আমি, আর কয়দিন পরেই পুরান অইয়া যামু। তহন আর কেউ আইত না”।

দুইদিন পরেই আমার সোয়ামী রাস্তার থিকা হন্ত দন্ত অইয়া ঘরে ফিরা চিল্লা চিল্লি শুরু কইরা দিছে, “অই মা, শুন, রাস্তা দিয়া আইবার সময় পাড়া্র কয়ডা পুলা আমারে পিছন থিকা টিটকারি দিতাছিল। খালি কইতাছিল, কাউয়ার মুহে কমলা, কাউয়ার মুহে কমলা’।
শাউড়ী কয়, “তরে কইছে তুই বুজলি কেমনে। তুই ত আর কাউয়ার লাহান কালা না। অন্যের কথা কইছে, তুই উলটা বুজছস”। মায়ের কথায় কান না দিয়া সে হুড়মুড় কইরা আমার ঘরে ডুইক্কা পরথমে আমার চুলের মুঠি ধইরা এক হেচকা টান দিতেই আমি উল্টাইয়া পইরা গেছি। মাথাডা গিয়া ঠুক্কর খাইছে মেহগনি খাটের শক্ত পায়ার মইদ্যে। উইঠ্যা দাড়ানের আগেই আমার পিঠের উপরে গুমুর গুমুর কয়ডা কিল পইরা সারছে। হাউ কাউ শুইন্না শাউরী দৌরাইয়া আইয়া পুলারে এক টানে সরাইয়া পরথম এক ধমক দিছে, ‘শুরু করলি কি? চাকরি বাকরি বাদ দিয়া বৌ পাহারা দেওনের কি অইছে? বৌ কি তর এক্কেবারে মুক্তাগাছার মন্ডা নি? আমি আগেই না করছিলাম, এই রূপের ছাপরা ঘরে আননের দরকার নাই। পাড়ার মইদ্দে কত ফিসফিসানি শুনছি এই মাইয়ার নামে। আমার কথা কারর বালা লাগে নাই। অখন শুরু অইছে দেও-দানোর যুদ্দ”। আমার মাথাডার মইদ্দে ঝিম ঝিম করতে আছিল, ব্যথা পাইছি, তার উপরে কয় আমার নামে পাড়ায় ফিসফিসানি আছিল। কি ফিসফিসানি আছিল আমার নামে? আমি ত কারো লগে বালা কইরা খেলনের সুযোগও পাই নাই!

এইভাবেই বিয়ার আট বচ্ছর পার অইয়া গেছে। একটা মাইয়া অইছে আমার। পাঁচ বচ্ছর বয়স। এই মাইয়া আবার বাপের জান। দেকতেও পরীর মত সুন্দর। মাঝে মাঝে ভাবতাম, বৌ সুন্দরী অওনে মা-পুতের কত কষ্ট, এখন যে তারার বাড়ীর মাইয়াডাও ফুটফুইট্টা সুন্দরী অইছে, হেইডার বেলায় দেহি কুন দোষ নাই। নিজেরার মাইয়া বইল্লা খালি ‘ আমরার সুন্দরের বংশ’ কইয়া দিমাগ করে। শশুর ছাড়া এই বাড়ির বাকি সবেই একই পদের। রসুনের কোয়া সব। দুই ননদ আমার, দুইডারই বিয়া অইয়া গেছে আমার বিয়ার আগে। একজন থাকে খুলনা, ছোটজন থাকে আমরার বাড়ীর কাছাকাছি। ছোট ননদাই সাহেব খুব রাগী মানুষ। আমার সোয়ামী আবার ছোট বইনের জামাইরে ডরাইত।

আট বছরে অনেক বার বিনা কারনেই আমার গায় হাত তুলছে আমার সোয়ামী। চুপ কইরা আছিলাম, কারুর কাছেই লজ্জার কথা কিছু কইতাম না। হের আসলে সন্দেহ রোগ হইছিল। সব সময় কইত, পাড়ার সব পুলারা আমারে দেহনের লাইগগা মজনু অইয়া ঘুরাফিরা করে। কুনখানে আমারে একলা যাইতে দিত না। মায়ের কাছেও না। হের ধারনা আছিল, মায়ের কাছে গিয়া আমি পুরান ‘নাগর’ গো লগে রঙ ঢঙ করুম। আমি সবই মাইন্না লইছি। আমার কপাল। সুন্দরী অইতে গেলাম ক্যান! লগের ঘরের কল্পনার মত কালা কুচ্ছিত অইলেই বালা আছিল। পাড়ার পুলারা জালাইত না, বিয়াও অইত না। পড়ালিখা শিখখা জজ বেরিস্টার অইতাম। অহন তো সোয়ামীর হাতে খালি মাইর খাই। তয় একজনেরে আমার পক্ষে পাইছি। ননদের জামাই আমার পক্ষে কথা কয়। দুই বাড়ী পরেই নন্দের বাসা, এই ঘরে হাউ কাউ অইলেই অগো বাড়ির থিকা সব শুনা যায়। একদিন সোয়ামী আমারে পিটাইতেছিল, নন্দাই সাহেব ছুইট্টা আইসা শালারে ধইরা দিছে দুই থাপ্পর। শালা তো থতমত খাইয়া গেছে। ছোট বইনের জামাই তার গায়ে হাত তুলছে! আর নন্দাই সাহেব তো তখন পুরা আগুন, “আপনেরে যদি আর কুনদিন তাইনের গায়ে হাত তুলতে দেখি, আমি আইসা আপনের হাত ভাইঙ্গা দিমু”। নন্দাইয়ের মুখে এই কথা শুইনা আমার মনে সাহস জমতে লাগল। আমি ত নন্দাইরে চউক্কে হারাইতে শুরু করলাম।

নন্দাই আমার চেয়ে বয়সে সাত আট বচ্ছরের বড়। কাজেই তারে ‘দাদা’ কইয়া ডাকতাম। অবরে সবরে ননদের বাসায় যাইতাম, গফ সফ কইরা আবার আইসা পড়তাম। আমার ননদেরে দেখলে এট্টুও সুখী মনে অইত না। ততদিনে আমার মইদ্যে এট্টু বুদ্ধি বিবেচনা আরম্ভ হইছে। তহন একখান ব্যাপার লক্ষ্য করতাম, নন্দাই আমার পক্ষ ধইরা কথা কইলেও নিজের বৌ রে খুব শাসনে রাখত। আমার ননদও কিনতু অনেক সুন্দরী আছিল দেখতে। আরেকটা ব্যাপারও বুঝতে পারতাম, ননদ আমারে বেশী পছন্দ করেনা। এইটাতে অবইশ্য আমি কিছু দোষ ধরতাম না।। সত্য কথাই ত, নিজের বউয়ের সাথে মেজাজ দেখাইয়া জামাই অন্যের বউরে গিয়া খাতির দেহাইলে, কোন বউয়ের বালা লাগবো? কিনতু বুঝিনা এইহানে আমার কি দোষ! ননদ ক্যান আমারে বালা পাইত না জানিনা। যেদিন নন্দাই আমার সোয়ামীরে থাপ্পর মারল, তারপরে বেশ কিছুদিন আমার কপালে মাইর জুটে নাই। শশুর-শাশুড়ীর কথা ধইরা লাভ নাই। আমরা কেউই ত আর পুলাপান না, বাচ্চা মাইয়াডার সামনেই পিটাইত আমারে, খারাপ কথা কইত। বাপের বাড়িতে আর যাই নাই, ইস্কুল ছাড়াইয়া বিয়া দিয়া দেওনে মনে অনেক দুঃখ জমা হইছিল। এমনে পড়ি মরি কইরা বিয়া দেওনের আগে পাড়ার পুলাগরে ডাক দিয়া বুঝাইয়া যদি কইত, তাইলেই হেরা আর জালাইত না। হেইডা না কইরা আমারে বিড়াল পার কইরা দিছে। অহন তো আমার বাবায়ও বাইচ্চা নাই, আমার কষ্টের কথা শুইন্যাই মনে হয় হার্ট ফেল অইয়া মইরা গেছে।

একদিন বিকালের দিকে হাটতে হাটতে ননদের বাসার দিকে গেছি। কাছে যাইতেই কানে চাপা সুরে কান্দনের আওয়াজ আসতেছিল। নন্দাইয়ের রাগী গলায় কথাও শুনা যাইতেছিল। একবার মনে অইছে, থাউক গা, বাসায় ফিরা যাই। আবার কি মনে অইতেই পাও টিপ্পা টিপ্পা তারার ঘরের জানালার ধারে গিয়া দাড়াইতেই আমার নাম শুইন্না অইহানেই পাও আটকাইয়া গেল। জানালার ফাক দিয়া উকি মারতেই দেহি, ননদে বিছানায় লম্বা অইয়া শোয়া, আর নন্দাই একখান চেয়ারে বইসা সিংহের লাহান গজরাইতেছে। ননদে কইল, “ তুমি তো সাধু পুরুষ, সারা দুইন্নার দুঃখী মহিলাগো দুঃখ দূর কইরা বেড়াও। কেউ তো জানেও না, নিজের ঘরের বৌরে পিটাও। সেদিন আমার ভাইডারে গিয়া মারলা, হেয় যে তুমার সম্পর্কে বড়, হেই কথা খিয়াল আছিল না? সুন্দরী শালা বৌয়ের লাইগা দরদ উথলাইয়া উঠছে, না”? এই কথা শেষ অইতেই আমি যেই দৃশ্য দেকলাম, আমার সারা শইল কাপতে শুরু করল। ননদের কথা শেষ না অইতেই আমার নন্দাই চেয়ার থিকা একলাফে উইঠ্যা বিছানায় শোয়া ননদের কোমড়ে গইন্না গইন্না তিনডা লাত্থি মারল”। আহারে! এইডা আমি কি দেখলাম, ননদের লাইগা আমার মনডা কাইন্দা উঠছে। মুখের মইদ্দে আচল চাপা দিয়া কুনমতে আমি ঘরে ফিরা আইছি। সারা রাইত আমি কানছি। ননদের কথা মিলাইয়া দেকলাম, সত্যই তো, যে নিজের বৌরে সম্মান করে না, হে আবার কোন সাহসে অন্যের বৌয়ের পক্ষে কথা কয়! ছিঃ ছিঃ। নিজের শইলডারে ক্ষত বিক্ষত করতে পারতাম! এই শইলডার দিকে সবাইর নজর, এই রূপের যন্ত্রনায় আমার সব গেছে।

তিন

সেদিন আমার মনডা বালা আছিল না। আমার ছুটবেলার খেলার সাথী শ্যামল, কেমনে জানি ব্রহ্মপুত্রে নৌকা ডুইব্বা মইরা গেছে। আমার ভাইয়ের পুলা মারফত খবরডা আমারে মা-য় পাঠাইছে। শ্যামলের এই মরন সংবাদ পাইয়া আমি খুব কানতে আছিলাম। এই সুযোগে মনের অনেক চাপা কষ্ট বাইর হইয়া আসতেছিল। ছুটবেলায় কত আনন্দ করছি আমরা, বিয়ার সময়ও ত ছুটই আছিলাম। বিয়ার পর থিকা আর শ্যমলরে দেখি নাই। আমার যেমুন সাধ আল্লাদ কিছুই পূরন অইল না, শ্যামলেরও নিশ্চয়ই কথা সাধ আহ্লাদ আছি্ল, কিছুই পুরাইল না। আমি ত তাও বাইচ্চা আছি, শ্যামলে ত মইরাই গেল। কান্দনের মইদ্যেই টের পাইছি আমার স্বামী ঘরে ঢুকছে। কিনতু বুঝি নাই হের মতলব। হঠাত কইরাই গায়ের মইদ্দে শলার ঝাড়ুর একখান ঝাপ্টা খাইয়া পিছন ফিরা দেহি, দুই নম্বর বারি দেওয়ার লাইগগা হে ঝাড়ু আবার উঠাইছে। আমার মাথার মইদ্দে রক্ত উইঠ্যা গেছে। এইবার আর চীক্কুর না দিয়া সোজা অইয়া দাড়াইয়া কইলাম, “ কী হইছে! আমারে মারতাছ ক্যান’? সে আমারে কয়, “চুপ থাক নডি, তর একদিন কি আমার একদিন। ডাক দে তর পিরিতের নাগর রে, হেইদিন আমার গায়ে হাত তুলছিল। আউজকা হেয় আইউক, হেরে সুদ্দা আইজ ঝাড়ু পিটা করুম। আমার লাইগগা ত কান্দছ নাই কুনদিন, কুনহানের কোন বেডা নৌকা ডুইব্বা মরছে, তার লাইগগা ঠ্যাং ছড়াইয়া কানতে বইছস”? আমি চাইয়া দেহি, আমার বাচ্চা মাইয়াডা দরজার উপরে খাড়াইয়া সব দ্যাকতে আছে। কী যে অইল কইতে পারিনা, আমার শইলে অসুরের লাহান বল ফিরা আইল। হেয় কিছু বুইজ্জা উঠনের আগেই তার হাত থিকা ঝাড়ুডা টান মাইরা লইয়াই তারে পিটাইতে শুরু করছি। মনে অয় পাগলের মতই অইয়া গেছিলাম। আন্দা গুন্দা পিটাইতাছি আর কইতাছি, “কেউর আওনের দরকার নাই। তর বইনের জামাই তর মতই চামাড়। আমার সামনে সে আর কুনদিন আসবনা। যদি আসে, তার মুখুশ খুইল্লা দিমু। তর লাইগ্যা কান্দুম ক্যান, তুই কি মানুষ? আমার ছুড বেলার খেলার সাথী মইরা গেছে, তারে লইয়াও তুই আমারে ঝাড়ু পিটা করতে আইছস! নিমুরাইদ্দা কুনহানের, তর সংসারের মুখে আমি থুক দিলাম, থুঃ থুঃ”। মাইয়াডা ডরের চোটে চীক্কুইর দিয়া টাসকি মাইরা গেছে। শাউড়ী ভিতরের ঘরের থিকা দৌড়াইয়া বাইর হইয়া আমারে এমুন মূর্তিতে দেইখ্যাই খাড়াইয়া গেছে। আমি হাতের থিকা ঝাড়ু ডিল্লা মাইরা মাটিতে ফালাইয়া এক কাপড়ে শশুরবাড়ির দরজা ছাইড়া আইছি।

কই আর যামু, বাপের বাড়ি ছাড়া ত যাওনের আর কুন জায়গাও নাই। তয় বাপের বাড়ীতে আমার স্থান কইরা দিয়া গেছে বাবায়। আমার বিয়ার দুই মাসের মাথায় বাবায় তার ভুল বুঝতে পারছিল। আস্তে আস্তে হয়ত এইডাও বুঝছিল, একদিন আমার ঐ বাড়ি ছাড়তেই অইব। সেইটা বুইঝাই সমস্ত সম্পত্তির অর্ধেকের বেশী বাবায় আমার নামে লিখা দিছিল। নিজে হাতে সেই দলিল আমারে দেখাইয়া আসছে। দলিল দেখাইয়া বাড়ি ফিরার পথে বাবায় কানছে আর কইছে, “মা রে! আমারে ক্ষমা করিস। তর অনেক ক্ষতি হইছে, বাপ হইয়া ক্যামনে চউখ বুইজ্যা আছি, সেইটা শুধু আমি জানি। কুনদিন যদি তোর বিপদ আসে, নির্ভয়ে তোর বাবার কাছে ফিরা আসবি। আমি যদি বাঁইচা না থাকি, তবুও সমস্যা নাই। সব ব্যবস্থা পাকা কইরা গেলাম। তোর শশুর সাহেবরে দিয়াই দলিল করাইছি”।

আমার শশুর সাহেব কিনতু আমারে কুনদিন জানতেও দেয় নাই, তিনিই দলিল কইরা দিছিলেন। আমি যেইদিন ঐ বাড়ি ছাইড়া আইলাম, তার পরের দিনই শশুর সাহেব আমরার বাড়িত আইসা আমারে কাছে ডাইকা মাথায় হাত দিয়া এট্টুক্ষন ঝিম মাইরা আছিল। তারপরেই পকেট থিকা দলিল বাইর কইরা আমার হাতে দিয়া কইছে, “মা, সেই ছুট্ট থাকতে তোমারে আমরার বাড়ির বউ কইরা নিছিলাম। বড় বালা মাইনষের বালা মাইয়া তুমি। তুমার সম্মান রক্ষা করার দায়িত্ব আছিল আমার, পারি নাই। কত মাইনষের সংসার জোড়া দিছি, আলগ কইরাও দিছি, আমার ওকালতি পেশা এইডা। অনেকের অভিশাপ আছিল আমার উপরে, তাই নিজের পরিবারে এই অশান্তি দেখতে আছি। তুমি আমার ‘সরলি’ মা, কত কষ্ট সহ্য করছ এত বছর, শেষ পর্যন্ত ঐ দোজখের আগুন থিকা বাইর হইতে পারছ, আমি খুশী হইছি। মাইনষে খারাপ কইব, ঘরের সক্কলে তোমারে খারাপ কইতে শুরু করছে, কিনতু আমি তোমার পক্ষে আছি। মাগো, নিজের জীবন দিয়া তো বুঝছ, দুনিয়াটা সরলে গরলে মাখামাখি হইয়া আছে। তোমার শাউড়ি বা স্বামী, কেউই মানুষ খারাপ না। তারপরেও আমার অস্বীকার করনের উপায় নাই, আমার কর্তব্যে অবহেলা আছিল, আসলে মনের ভিতরে একটু আধটু কুটিলতা আমারও ছিল, ছেলের বিপক্ষে যাইতে পারি নাই। তুমি মন পরিষ্কার মাইয়া বইলাই এতটা বছর সহ্য কইরা গেছ। বিদ্রোহ কইরা বাইর হইয়া আইসা ভালই করছ, আমরার সবতেরই একটু শিক্ষা হওনের দরকার আছিল। তবে এখনই ডিভোর্সের কথা চিন্তা কইরো না, কী করতে হইব, তা সময়ই ঠিক কইরা দিব, ভয় নাই, সব সময় আমারে পাশে পাইবা”।

চুপ কইরা শশুরের এমন দামী কথা শুইন্যাই আমার মন উথাল পাথাল শুরু হইয়া গেল। কান্দন আইসা পড়তেই আচল দিয়া চউখ ঢাইক্কা কতক্ষন কাইন্দা লইলাম। শশুররে কইলাম, “বাবা, আমারে কয়ডা দিন ভাবতে দেন। আপনেগো ‘সরলি’ এখনও সরল মনেই সব চিন্তা করে। আমার কইলজার টুকরারে থুইয়া আইছি ঐ বাড়িতে, তার কাছেই ত আমার ফিরা যাওন লাগব। মা ছাড়া বাঁচব ক্যামনে ঐটুকুনি ছোট বাচ্চা”!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাফর পাঠাণ আঞ্চলিক ভাষায় বেশ দখল দৃশ্যমাণ ।খুব খুব ভালো লাগলো তা।গল্পটিও হয়েছে বেশ ।আপনার মার মৃত্যুতে সহমর্মীতা ও শোক রইল। মোবারকবাদ রীতা রায় ।
পাঠান ভাই, আমার জন্য আপনার সহমর্মিতার স্নিগ্ধ বার্তা পেয়ে মনে খুব শান্তি পাচ্ছি। হা হা হা!! আঞ্চলিক ভাষায় দখল আছে বাস্তব জীবনে, কিনতু লেখালেখির জগতে এই প্রথম প্রচেষ্টা। পুরোপুরি সফল হতে আরও অনেক অনেকবার চেষ্টা করতে হবে। তারপরেও আপনার মত এমন গুণীজনের কাছ থেকে সমর্থণ পাওয়া--এতো ভাগ্যের ব্যাপার। গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে, আমি নিশ্চিন্তি বোধ করছি। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
মামুন ম. আজিজ অনেক ঘটনা সামাজিকতার আশপাশে ..নিরন্তর....উঠে এল সুন্দর........ভাষাটা সরল হলে পাঠকের পঠনে আরাম হতো এই আর কি..এই ভাষায় খারাপ লাগছেনা ..তবে অনভ্যাসে পড়েত পড়তে আটকে যায়.....
মামুন, তুমি বলছো গল্পটি মোটামুটি ভালই হয়েছে?????? ব্যস! হয়েইতো গেলো। পুরস্কার পেয়েই গেলাম। আর গল্পের ভাষা তো আমার চারপাশের মানুষগুলোর চলিত কথাবার্তা থেকেই সংগ্রহ করেছি, আমি নিজেও তো যখনই দেশের বাড়ীতে যাই, নিজের ফেলে আসা শৈশবের আঙিণায় গিয়ে পা ফেলি, কথা-বার্তায় চলে আসে সেই আদি অকৃত্রিম আঞ্চলিক সুর, আঞ্চলিক শব্দ। নাহলে 'সরলি'রা সহজ হতে পারেনা যে! ধন্যবাদ মামুন এমন নির্ভেজাল মন্তব্যের জন্য। আঞ্চলিক ভাষায় এটা ছিল আমার প্রথম প্রচেষ্টা।
বশির আহমেদ চমৎকার ! চমৎকার ! চমৎকার !
ধন্যবাদ! ধন্যবাদ! ধন্যবাদ! :-D
মনির মুকুল গ্রাম্য কথায় গ্রাম্য কাহিনীটি দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পটির প্রতিটি কথাই বাস্তবসম্মত। পাঠককে আকৃষ্ট করার মত যথেষ্ট রসদও আছে লেখাটির মধ্যে। চমৎকার লেখনী।
মুকুল, ভাই আপনাকেই বলি, গল্পের প্রতিটি ঘটনাই বাস্তব থেকে নেয়া, বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন পরিবারের গল্প, চরিত্রগুলো শুধু এক পরিবারেই বেঁধে দিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ এমন সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
সূর্য একটা সহজ চিত্র, সহজ চিত্র একারনেই যে প্রায় প্রতিটি ঘরেই এই দৃশ্য দেখা যায়। তবে বুনন আর চরিত্রগুলোর উপস্থাপনায় অনেক মুন্সীয়ানার পরিচয় আছে। দারুন একটা গল্প অনায়াসেই বলা যায়।
অনেক ধন্যবাদ সূর্য, এমন চমৎকার মন্তব্য পেলে মন ভাল হয়ে যায়!
এফ, আই , জুয়েল # খুবই বাস্তব সম্মত ভাল একটি গল্প -------, তবে ভাষাটা অমতন কেনো ? == আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।।
জুয়েল ভাইয়া, ময়মনসিংহ শহরের ক্লাস নাইন পাশ একটি মেয়ে, যে কিনা তার আঞ্চলিক গন্ডীর বাইরে কোথাও যায়নি, তার কথ্য ভাষায় আঞ্চলিকতা থাকাটাই স্বাভাবিক ( যদিও আমি পুরোপুরি সমর্থ হইনি) , তবে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারকারী, আপাত দৃষ্টিতে সরল সোজা, একটি মেয়ের মনেও সামাজিক বৈষম্যগুলো একসময় কতখানি বড় হয়ে দাঁড়ায়, সেটাই গল্পে আনতে চেষ্টা করেছি। এবার পারিনি, ভবিষ্যতে আরেকটু ভাল করার চেষ্টা করব। আপনার কমেন্ট পেয়ে ভালও লাগছে, খারাপও লাগছে। খারাপ কেনো লাগছে সেটাই বলি, এর আগে একমাত্র আপনিই ঘোষণা দিয়ে আমাকে ৫ নাম্বার ভোট দিতেন, এবার আর সেটা ঘটেনি। আপনিই যেখানে ভোট দিলেন না, আর কি কেউ ৫ দিবে!!!!!!! হা হা হা হা হা!! ভালো থাকুন বাকী সময়গুলো।
মোঃ আক্তারুজ্জামান অন্য রকমভাবে এবারের লেখা উপস্থাপন করেছেন| প্রায় সকলেরই পরিচিত এই অকপট উচ্চারণের ধরনটিও খুব ভালো লাগলো| অনেক অনেক ধন্যবাদ সুন্দর এই গল্পটির জন্য|
আক্তার ভাই, এমন উৎসাহদায়ী কমেন্ট পেয়ে বাতাসে ভেসে বেড়াতে ইচ্ছে করছে!!!!!
ওবাইদুল হক আবার আসলাম আরেকটু ঝালিয়ে নিতে তবে এখানে যেটা বলতে হচ্ছে গ্রাম বাংলার সরল কথা গুলো আপনি সুন্দর করে তুলে ধরেছেন । সেই জন্য আরেকবার ধন্যবাদ ।
এশরার লতিফ বেশ লাগলো, অনেক শুভ কামনা ।
তাই? গল্পটি বেশ লেগেছে তাহলে! আমিতো ভয়ে ভয়ে ছিলাম।
ভালো হয়েছে, আমার মনে হয় না আঞ্চলিক ভাষায় লেখার দক্ষতা আমি কখনো অর্জন করব, শুভেচ্ছা
ছালেক আহমদ শায়েস্থা গল্পে আঞ্চলিক ভাষা সংযুক্ত সহ বেশ ভাল লাগল।
প্রথম প্রচেষ্টা, পুরোপুরি পারিনি। অনেক ধন্যবাদ গল্পটি ভাল লেগেছে বলে।

১৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪