শাড়ীর ভাঁজে ইতিহাস

শাড়ী (সেপ্টেম্বর ২০১২)

রীতা রায় মিঠু
  • ৩৫
  • ৫৫
আগামী সপ্তাহেই রুমার বড় মেয়ের গায়ে হলুদ। আজ থেকে রুমার ছুটি শুরু হয়েছে। একটি বেসরকারী কলেজে কেমিস্ট্রির অধ্যাপিকা হিসেবে গত পনের বছর ধরে সে কর্মরত আছে। খুব বড় কিছু প্রয়োজন না হলে রুমা কলেজ থেকে ছুটি নেয়না। এবার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে তিন সপ্তাহের ছুটি নিয়েছে। আজ থেকে তা শুরু হলো।

রুমা খুব গুছানো মানুষ। অনেক আগে থেকে ছক কেটে নেয়, কখন বা কোনদিন কোন কাজটা করবে। আজকের কাজের তালিকায় রেখেছে, মেয়ের জন্য শাড়ী কাপড় গুছিয়ে রাখা, গায়ে হলুদের দিন বাকী ছেলে মেয়েরা কোন ড্রেস পড়বে, মেয়ের বাবা কী পড়বে, এমন কি রুমা নিজে কোন শাড়ীটা পড়বে তার সব কিছুই আজকে একখানা স্যুটকেসে ঢুকিয়ে রাখবে। নাহলে দেখা যাবে কাজের সময় অতি প্রয়োজনীয় সেফটি পিন বা খোঁপার কাঁটা পাওয়া যাচ্ছেনা। রুমার স্বামীর পায়জামাতেও ডুরী আজকেই পরিয়ে রাখতে হবে। নাহলে অনুষ্ঠানের দিন দেখা যাবে ডুরি নেই বলে ভদ্রলোক আর পাজামা পাঞ্জাবী পড়তেই চাইবেনা। সে তার সেই একঘেয়ে নীল শার্ট আর ঘিয়ে রঙের প্যান্ট পড়েই চালিয়ে দিতে চাইবে। পাজামা পাঞ্জাবী তার দু’চক্ষের বিষ। রুমা তাকে কোনভাবেই বুঝাতে পারেনা, প্রতিটি অনুষ্ঠানের আলাদা আলাদা ধরন থাকে। অনুষ্ঠানের ধরণ অনুযায়ী পোষাকও পড়তে হয়, নাহলে অনুষ্ঠান আয়োজনে ত্রুটি থেকে যায়। কিনতু সে এটা কোনভাবেই মানতে চায়না। এজন্যই এত আগে থেকে সব গুছিয়ে রাখে রুমা।

রুমার দুই মেয়ে এক ছেলে। মেয়ে দু’জন বড়, ছেলে সবার ছোট। বড় মেয়ে তুষ্টির বয়স আগামী জুনে তেইশ পূর্ণ হবে। তুষ্টির বয়সে রূমা এক বাচ্চার মা হয়ে গেছে। তুষ্টির জন্মের সময় রুমার বয়স ছিল ২১ বছর। ২০ বছর বয়সে রুমার বিয়ে হয়। বাবা হাই স্কুলের ইংরেজীর শিক্ষক ছিলেন। সীমিত আয়ের সংসারে রুমা ছিল একটা মাত্র মেয়ে। রুমার ভাই অবশ্য ছিল চারজন, সকলেই বয়সে রুমার ছোট। রুমার মা তাই স্বামী চাকুরী থেকে রিটায়ার করার আগেই ভালো পাত্রের সন্ধান পেয়ে মেয়ের বিয়েটা দিয়ে দিয়েছেন। রুমা বিয়ের পর অনার্স, মাস্টার্স পড়া শেষ করেছে। অনার্স তৃতীয় বর্ষে উঠার পর তুষ্টির জন্ম হয়েছে। ছোট বাচ্চা নিয়ে পড়া শেষ করতে কী যে কষ্ট করতে হয়েছে রুমাকে। সেই তুষ্টি এত বড় হয়ে গেলো কখন! ওরও বিয়ে হয়ে যাচ্ছে!

তুষ্টির শাড়ী গয়না গোছানো হয়ে যেতেই ছোট মেয়ে বৃষ্টির জন্য শাড়ী বাছতে গিয়ে পুরনো হয়ে যাওয়া কাঞ্ছিপুরম শাড়ীটার দিকে রুমার নজর গেল। হঠাৎ করেই একটু আনমনা হয়ে গেল রুমা। শাড়ীটার বয়স কম করে হলেও পঁয়তাল্লিশ বছর। রুমার জন্মের সময় রুমার মা’কে ‘সাধভক্ষন’ অনুষ্ঠানে দিয়েছিল দিদিমা। দিদিমা মারা গেছেন তাও তো একুশ বছর হয়ে গেলো। রুমার বাবা খুব সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ছিলেন। রুমার দাদু ছিলেন বিত্তশালী। রুমার মা দাদু দিদিমার প্রথম সন্তান বলেই খুব আদরের ছিলেন। দাদু চেয়েছিলেন আদরের কন্যাকে একজন সৎ, বিনয়ী ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে জামাইসহ নিজের কাছে রেখে দিতে। সৎ, পরিশ্রমী পাত্রের সন্ধান পেয়ে রুমার বাবার হাতেই মেয়েকে সঁপে দেন। কিনতু রুমার বাবা সৎ, পরিশ্রমী হলেও খুব একটা বিনয়ী ছিলেন না মনে হয়। শ্বশুরের প্রস্তাবে রাজী না হয়ে নিজেই নিজের যতটুকু সাধ্য, সেভাবেই স্বনির্ভর হয়ে সংসার করেছেন। তবে রুমার দাদু দিদিমা উৎসবে, পরবে নানা উপলক্ষে তাঁদের মেয়েকে দামী দামী উপহার দিলে সেটাতে রুমার বাবা আপত্তি করতেন না। তাঁর কথা হলো, তাঁদের মেয়েকে তাঁরা উপহার দিতেই পারেন, ওটাতে উনি মাতব্বরী করতে গেলে শ্বশুর শাশুড়ীকে অসম্মান করা হয়। তবে অন্য কোনরকম সাহায্য উনি নিতেননা।

রুমার জন্মের সময় রুমার দিদিমা মনে হয় বিয়ের সময় মেয়েকে কিছুই দিতে না পারার আক্ষেপ মিটিয়ে নিয়েছিলেন। বাচ্চা হওয়া উপলক্ষে মেয়ের জন্য উনি ব্যাঙ্গালোর, আসাম, বেনারস থেকে শাড়ী আনিয়েছিলেন। শাড়ীগুলো অনেকদিন ছিল রুমার মায়ের ট্রাঙ্কে। কিনতু মুক্তিযুদ্ধের সময় তালা দেওয়া বাসার ভেতর থেকে সব চুরী হয়ে যায়। এই কাঞ্ছিপুরম শাড়ীটা অন্য একটা ব্যাগের মধ্যে ছিল বলে লুটেরাদের নজরে পড়েনি। রুমার বিয়ের সময় রুমার মা শাড়ীটা রুমাকে উপহার দিয়েছিলেন, বিশেষ চিহ্ন হিসেবে। বলেছিলেন, শাড়ীটার ভাঁজে রুমার জন্মকথা লিখা আছে।

শাড়ীটা খুব যত্ন করেই রেখে দিয়েছে রুমা। তুষ্টি আর বৃষ্টিকে অনেকদিন দেখিয়েছে শাড়ীটা। শাড়ী দেখিয়ে তার অতীতের গল্প শুনিয়েছে মেয়ে দুটোকে। মেয়েরা আমায়ের মুখ থেকে বার বার একই গল্প শুনতে শুনতে মুখস্থই করে ফেলেছে। শাড়ীটা হাতে নিয়ে রুমা নিজের গালে একটু ছোঁয়ালো। অফ হোয়াইট জমিনে নানা রঙ বেরং এর লক্ষ বুটির শাড়ী। জমকালো ডিজাইনের পাড়। এমন শাড়ী এখন সারা ভারত, বাংলাদেশ চষে বেড়ালেও পাওয়া যাবেনা। রুমার মায়ের স্টীলের আলমারি কেনার ক্ষমতা ছিলনা বলে ট্রাঙ্কের মধ্যে ন্যাপথলিন দিয়ে রেখে দিয়েছিলেন। দামী শাড়ী আর ছিলনা উনার, সবই লুট হয়ে গেছে। ট্রাঙ্কের মধ্যে ভাঁজ করা ছিল বলেই বোধ হয় ভাঁজের মধ্যে দুই চারটা ফুটো হয়েছিল। রুমার যেদিন গায়ে হলুদ হয়, রুমা মায়ের কাছ থেকে এই শাড়ীটা চেয়ে নিয়েছিল। গায়ে হলুদের মত মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে ফুটো শাড়ী পড়তে না করেছিল সবাই, কিনতু রুমা কারো কথা শোনেনি। শাড়ীটা পড়েছিল। সারাদিনের উঠাবসায় শাড়ীটা আরও কিছু জায়গায় ফেঁসে যায়।

আজকেও শাড়ীর সেই ফেঁসে যাওয়া অংশগুলোর দিকে তাকিয়ে মুহূর্তেই রুমা সেদিনে চলে গেল। শাড়ীটা পড়ে হলুদের পাটিতে বসতেই হলুদের বাটি হাতে প্রথম এগিয়ে এলেন দিদিমা। পরণে লাল পাড়ের গরদ শাড়ী, কপালে ইয়া বড় লাল সিঁদুরের টিপ, পানের রসে রাঙা ঠোঁট, কী যে ব্যক্তিত্বময়ী চেহারা ছিল উনার, এখনও স্পষ্ট দেখা যায়। দিদিমা কাছে এসে রুমার গালে, কপালে হলুদ ছুঁইয়ে দিয়ে ওর মুখটা তুলে ধরলেন,

-তুমি সব সময় বলো, আমাকে দেখলেই তোমার নাকি রাজেন্দ্রাণীর মত লাগে। এই ফেঁসে যাওয়া শাড়ীতে তো তোমাকে স্বর্গের দেবীর মত লাগছে! আশীর্বাদ করি, রাজসুখে থেকো।

দিদিমা মা’কে খুব ভালোবাসতেন, নিজে অনেক বিত্ত বৈভবের মধ্যে কাটিয়েছেন, কিনতু মেয়েটা সারাজীবন টানাটানির সংসারে কাটিয়েছে বলে মনের ভেতর হয়তো চাপা কষ্ট ছিল। সেজন্যই রুমাকে অমন রাজসুখে থাকার আশীর্বাদ করে গেলেন। আশীর্বাদ কাজে লেগেছে। জীবনটা মোটামুটি সুখেই কাটিয়েছে রুমা। ওর স্বামী ডাক্তার, ও নিজে অধ্যাপনা করে, টাকার কষ্ট হয়নি। ছোটভাইগুলো পড়ালেখা শিখে ভালো চাকুরী করছে, শুধু দিদিমা দেখে যেতে পারেননি মেয়ের সুখ। শাড়ীটা আবার জায়গামত তুলে রেখে দিয়ে বৃষ্টির জন্য শাড়ী বাছতে লাগলো।

দুই


আগামী পরশুদিন আমার গায়ে হলুদ। দুইদিন আগেই মামনি সব গোছগাছ করে ফেলেছে। রান্না-বান্না কোথায় হবে, কতজন অতিথি আসবে, কারা কারা বাড়ীতে থাকবে তার সমস্ত হিসেব মায়ের নখের ডগায়। আমার বাবা খুবই ভালোমানুষ টাইপ, সংসারের এই সমস্ত ঝামেলার মধ্যে থাকতে চান না। আমিও বাবার মতই হয়েছি। মানুষজন, হৈ চৈ দেখলেই আমার ভয় লাগে। দিশেহারা হয়ে যাই। কাউকে নেমন্তন্ন করে খাওয়াতে গেলে সাত দিন আগে থাকতেই যদি পরিকল্পনা করতে হয়, কী কী আইটেম করা হবে, কোন বাজারে গেলে ফ্রেশ মাছ পাওয়া যাবে, তাহলেতো খুবই মুশকিলের ব্যাপার। অথচ আমার ছোটবোন বৃষ্টি আবার পেয়েছে মায়ের স্বভাব। খুব চটপটে। মায়ের সাথে ঘুরে ঘুরে বিয়ের বাজার করেছে, গয়নার দোকানে গিয়ে গয়নার অর্ডার দেয়া, ফুলের দোকানে ফুলের অর্ডার দেয়া থেকে শুরু করে সব ব্যাপারে মামনিকে বৃষ্টিই সাহায্য করছে।

গতরাতে মামনি আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে স্যুটকেসটা বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভালো করে চেক করতে বলেছেন, কোন কিছু বাদ পড়লো কিনা! মামনির হিসেবে কখনও ভুল হয়না, সবই ঠিকঠাক আছে। শুধু গায়ে হলুদের শাড়ীটা ঠিকমত মিলছেনা। যে আসাম সিল্কের শাড়ীটা মামনি আনিয়েছেন গায়ে হলুদে পড়ার জন্য, আমিতো সেটা পড়বোনা। আমি পড়বো আমার জন্মের সময় আমার দিদা মামনিকে ‘সাধভক্ষনে’ যে শাড়ীটা দিয়েছিলেন, সেটা।

আমি মামনির মুখে মামনির গায়ে হলুদের গল্প অনেকবার শুনেছি। মামনির মা, মানে আমার দিদাকে তাঁর মা কাঞ্ছিপুরম শাড়ী দিয়েছিলেন মামনির জন্ম উপলক্ষ্যে। গায়ে হলুদের সময় মামনি সেই শাড়ীটাই পড়েছিলেন। আমার মামনি খুব সুখী মানুষদের একজন। মুখে হাসি লেগেই থাকে। আমার বাবার বিরূদ্ধে আজ পর্যন্ত কোন অভিযোগ করেননি। অবশ্য কারো বিরূদ্ধেই তাঁর কোন অভিযোগ নেই। আমি যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি, সে কেমন হবে কে জানে! বুকটাতে একটু ভয় ভয় করছে। আমি এমনিতে কোন কুসংস্কারে বিশ্বাস করিনা। কিনতু কাল রাতেই হঠাৎ করে মনে হলো, মামনির মত আমিও যদি ‘গায়ে হলুদের’ দিন মায়ের শাড়ী পড়ি, যে শাড়ীটা দিদা দিয়েছিল মামনিকে, তাহলে আমার জীবনটাও সুখের হবে। মামনির মত করেই হেসে খেলে জীবন পার করতে পারবো।

অবশ্য আমার দিদা খুব দামী কোন শাড়ি দিতে পারেননি আমার জন্মের সময়। দুই খানা তাঁতের শাড়ী দিয়েছিলেন। একটা ছিল সাদা জমিনের উপর লাল ডুরে, আরেকটা ছিল সাদা জমিনের উপর আকাশে নীল ডুরে। একটা মজার ব্যাপার আছে, আমার দিদার সব শাড়ী লুট হয়ে গিয়ে একটা কাঞ্ছীপুরম অবশিষ্ট ছিল, আমার মায়েরও দুইটা শাড়ীর মধ্যে সাদা লাল ডুরে শাড়ীটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। শুধু সাদা নীল ডুরে শাড়ীটাই পড়ে আছে।
আসলে আমার জন্মের আগ মুহূর্তেও কেউ ভাবেনি, মায়ের একটি সুস্থ বাচ্চা হবে। আমি যখন মায়ের গর্ভে, কোন একটা কারনে মা’কে কড়া এন্টিবায়োটিক খেতে হয়েছিল। পরে যখন জানতে পারে, আমি মায়ের পেটে ঘুমিয়ে আছি, ডাক্তার বলেছিল আমাকে এবর্ট করিয়ে ফেলতে। মা বা বাবা, কেউ রাজী হননি, প্রথম সন্তানকে শুরুতেই এবর্ট করে ফেলতে। তাই মনে হয় আমার জন্মের আগে মায়ের কোন অনুষ্ঠানেই কোন রকম জাঁকজমক করা হয়নি। তবুও আমার দিদা তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী ঠিকই দু’খানা শাড়ী দিয়েছিলেন মামনিকে।

আমি একটু পরেই মামনির আলমারী থেকে সাদা নীল ডুরে শাড়ীটা বের করে নিয়ে আসবো। বৃষ্টিকে নিউ মার্কেটে পাঠাতে হবে খুব দামী একখানা নীল ব্লাউজ আনতে, সাথে নীল চুড়ি, নীল পাথরের মালা। ফুল হবে সাদা, নীল মিলিয়ে। মামনিকে তাক লাগিয়ে দেবো। দিদাকেও তাক লাগাবো। এমন করে সাজতে হবে যেনো সাদা নীল শাড়ীটাকে কোনভাবেই ম্যাড়ম্যাড়ে না লাগে। একটু সমস্যা হয়তো হতে পারে, অনেকেই বলবে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে লাল বা হলুদ বাদ দিয়ে সাদা নীল কেনো? অবশ্য বৃষ্টিই সেটা মেকাপ করে দিবে জানি।

তিন

রুমার মা গতরাতে এসে পৌঁছেছেন। উনার এখন ঝাড়া হাত-পা। ছেলেরা বড় হয়ে গেছে, দুই ছেলে বিয়ে করেছে, বাকী দু’জনের একজন থাকে আমেরিকা, ছোটজন থাকে লন্ডন। ছেলে বউ দুটোও খুব ভাল। ভাগ্নী বিয়েতে মামারা এসেছে চারদিন আগে, বাচ্চাদের নিয়ে মামীরা আসবে আজকে। সারা বাড়ী এখন আত্মীয়-স্বজনে গমগম করছে।

সন্ধ্যে নাগাদ তুষ্টিকে শীতল পাটীতে বসানো হলো। সারা ঘর প্রদীপ আর ফুল লতা পাতা দিয়ে সাজানো হয়েছে। মেঝেতে সাদা আলপনা, সাথে তাজা ফুলের পাপড়ি দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। সাজানোর কাজটুকু করেছে বৃষ্টি, তার কয়েক বন্ধু মিলে। তুষ্টির ভাই খুবই ছোট এসব করার জন্য, মাত্রই বারো বছর বয়স ওর। এখনও মায়ের আঁচল ধরে ঘোরে। বৃষ্টি আর ওর বান্ধবীরা হই হই করতে করতে তুষ্টিকে এনে পাটিতে বসিয়েছে।

পাটীর সামনেই হলুদের বাটী, সরষের তেলের বাটি, ধান দূর্বা, শাঁখ, মিষ্টির ডালাসহ প্রতিটি জিনিস খুব গুছিয়ে রাখা আছে। এবার একজন একজন করে সবাই তুষ্টিকে গায়ে হলুদ মেখে দিবে। প্রথমেই তুষ্টির দিদা এলেন সামনে। তুষ্টির পরনের শাড়ীর দিকে তাকিয়ে উনি একটু থতমত খেয়ে গেলেন। চেনা চেনা লাগছে শাড়ীখানা অথচ চিনতে পারছেন না। বললেন,

-কি রে তুষ্টি, এই শাড়ী কোথা থেকে নিয়ে এলি? গায়ে হলুদের দিনে হলুদ শাড়ী পড়লিনা কেনো?

-দিদা, শাড়ীটা তুমি চিনতে পারোনি?

-চিনতে পারছি, আবার পারছিও না। এমন একখানা শাড়ী তোর জন্মের সময় তোর মা’কে দিয়েছিলাম। কিনতু সে তো অনেক বছর আগের কথা। সেই শাড়ী এখনও থাকার কথা না তো, সস্তা দামের শাড়ী, এতদিনে ছিঁড়ে যাওয়ার কথা!

-ছিঁড়ে যে যায়নি, তা তো চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছ। ভাগ্যিস সস্তা দামের ছিল, তাই বেশী পাতলা ছিলনা, একটু মোটা তাঁত হওয়াতে এখনও ঠিক আছে। আমার জন্মের সময়ের শাড়ী, আমার বিয়ের সময় পড়েছি, এটাই তো দারুন আনন্দের। ভাগ্যিস মামনি শাড়ীটা যত্ন করে রেখে দিয়েছিল।

পাশ থেকে কে যেনো ফোড়ন কাটলো,

-কী জানি বাবা, এখনকার মেয়েদের ঢং, বিয়ের কাজে কেউ এমন সাদা শাড়ী পড়ে?

বৃষ্টিই জবাব দিল,

-প্রথম কথা এটা সাদা শাড়ী না, সাদার মধ্যে নীল আছে। দ্বিতীয় কথা অনুষ্ঠানের নাম ‘গায়ে হলুদ’ ‘শাড়ী হলুদ’ না। তৃতীয় কথা, দিদির খুব শখ হয়েছে তার জন্মের সময়কার শাড়ি পড়তে, কনের শখই শেষ কথা। তাই শাড়ীর রঙ নিয়ে এখন আর কেউ কোন কথা বলোনা প্লীজ। দিদা শুরু করো। ছবি তুলছি কিনতু।

দিদা হাতে হলুদ আর তেল নিয়ে তুষ্টির কপালে ছোঁয়ালেন, গালে ছোঁয়ালেন, হাতেও মেখে দিলেন। তুষ্টির মাথাটা বুকে টেনে নিয়ে আশীর্বাদ করলেন,

-মায়ের মতই পিতৃকূল, শ্বশুরকূলের মুখ উজ্জ্বল করো। আমার দেয়া মোটা শাড়ীতেও তোকে কী যে সুন্দর লাগছে! মুখের হাসি যেনো সারা জীবন ধরে রাখতে পারো, স্বামী সন্তান নিয়ে সুখী হইও।

চারদিক থেকে উলুধ্বনি শুরু হলো, বৃষ্টি এরই মধ্যে শাঁখ বাজাতে শুরু করেছে। এই বৃষ্টিটা হয়েছে মাতব্বর। সব কাজে সে আছে। এই বাড়ীতে এত জোরে শাঁখ আর কেউ বাজাতে পারেনা। তুষ্টির কেবলই মনে হচ্ছে, ‘ আমার বিয়ের কাজতো বৃষ্টি করে দিচ্ছে, ওর বিয়ের সময় শাঁখটা কে বাজাবে”!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জোহরা উম্মে হাসান অসম্ভব সুন্দর ! ভাল লাগলো খুব !
রি হোসাইন একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম .... এই সাইটে পোস্ট করা কবিতা গুলোর চেয়ে গল্প গুলো অনেক অনেক বেশি মান সম্পন্ন ...... ভালো লিখেছেন ..... চালিয়ে যান .. শুভকামনা রইলো
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
এশরার লতিফ সুন্দর.
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ এশরার! এশরার নামটি খুবই সুন্দর, কমেন্টটিও সুন্দর, হা হা হা
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
ঈশান আরেফিন একটা কথাই বলব..........আমি অভিভূত........
ভালো লাগেনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২
ঈশান, তোমার মন্তব্য পড়ে আমিও অভিভূত! একটি মাত্র শব্দ 'অভিভূত' দিয়েই তুমি অনেক কিছু বলে ফেলেছো। আমি কৃতজ্ঞ। ভালো থেকো ঈশান!
ভালো লাগেনি ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১২
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি প্রথম কথা এটা সাদা শাড়ী না, সাদার মধ্যে নীল আছে। দ্বিতীয় কথা অনুষ্ঠানের নাম ‘গায়ে হলুদ’ ‘শাড়ী হলুদ’ না। তৃতীয় কথা, দিদির খুব শখ হয়েছে তার জন্মের সময়কার শাড়ি পড়তে, কনের শখই শেষ কথা। তাই শাড়ীর রঙ নিয়ে এখন আর কেউ কোন কথা বলোনা প্লীজ। ...........kahinir angike osadharon laglo ...R...seshty agamir vabna.....khub monke khub nara dilo....তুষ্টির কেবলই মনে হচ্ছে, ‘ আমার বিয়ের কাজতো বৃষ্টি করে দিচ্ছে, ওর বিয়ের সময় শাঁখটা কে বাজাবে”!....mullyaon joggo lekha....tai........mullyaon kore gelam.....didike onek onek suvechha............
ভালো লাগেনি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২
আমার প্রিয় জ্যোতি দাদা গো, তোমার মন্তব্য পড়ে আমার খুব কান্না পাচ্ছে যে! জয়ের আনন্দ, মনের আনন্দ প্রকাশের এই একটা পথই আমার জানা, ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে কান্না! তুমি ভালো থেকো আমার দাদাভাই!
ভালো লাগেনি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২
আনিসুর রহমান মানিক অনেক sundor....
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ!
ভালো লাগেনি ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১২
রোদের ছায়া বারাবরের মতো গল্পের গাথুনি সুন্দর , অনেক ভালো লাগলো, পুরনো স্মৃতি ঘেরা শাড়ির দাম আসলে টাকার হিসাবে হয়না ।
ভালো লাগেনি ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ রোদের ছায়া, আপনার মন্তব্য পেয়ে খুব ভাল লাগলো।
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২
কায়েস খুব সুন্দর কথামালা নিয়ে সাবলীল উপস্থাপন.শাড়ী নিয়ে সার্থক গল্প বলা যায়.দারুণ লাগলো
ভালো লাগেনি ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২
কায়েসের জন্য স্পেশাল ধন্যবাদ! কেন? আমি ধরেই নিয়েছিলাম গল্পটি আর বোধ হয় কারো নজরে আসবে না। আমার ধারনা ভেঙ্গে দিয়ে কায়েস গল্পটি পড়েছেন এবং দারুন মন্তব্য করেছেন। আমি অত্যন্ত আনন্দিত, মনটা ভালো হয়ে গেলো। ভালো থাকবেন কায়েস।
ভালো লাগেনি ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২
Sisir kumar gain সুন্দর পারিবারীক কাহিনী ।খুব ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ!
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২
পারভেজ রূপক দারুণ গল্প
ভালো লাগেনি ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২
অনেক ধন্যবাদ!
ভালো লাগেনি ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

১৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪