পারমিতার চিঠি

নতুন (এপ্রিল ২০১২)

রীতা রায় মিঠু
  • ১৪
  • ৪৯
প্রিয় মানসী,
আমার চিঠি পেয়ে অবাক হয়ে গেছিস নিশ্চয়ই। অবাক হওয়ারই কথা। এই ডিজিটাল যুগে কেউ আাবার চিঠি লিখে? আসলে হাতে এখন অখন্ড অবসর। ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেলে যা হয়। তোকেতো বলেইছি পুটুস চাকুরী পেয়ে গেছে, কুটুসও এই বছর ল’ পাশ করে যাবে। আর গুড্ডু, সেও তো আর ছোটটি নেই, ক্লাস এইটে পড়ছে। নিজের কাজ নিজেই করে নেয়। এখন আমাকে সাতসকালে উঠে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার জন্য তাগাদা দিতে হয়না, বিকেলে বাড়ী ফিরে ওরা কি খাবে, তা নিয়ে ভাবতে হয়না, এমনকি তোর দাদাও এখন ইচ্ছে হলেই নিজে নিজেই ঝাল মুড়ি বানিয়ে খেয়ে নেয়। এবার বুঝে দেখ, কেমন রাজসুখে আছি আমি। হায়রে! একটা সময় ছিল, একটু অবসরের জন্য কেমন হাপিত্যেশ করে মরেছি, আর এখন অবসর কাটেইনা। মাঝে মাঝে টিভি অন করে দুই একটা ভালো মুভি দেখালে দেখি। গতকাল টিভি অন করে দেখলাম কতকাল আগের দেখা মুভি ‘উইটনেস’ দেখাচ্ছে। এতোকাল পরেও মুভিটা দেখে খুব ভালো লাগলোরে!

কিরে! মনে পড়ে? দেশে থাকতে দুই বান্ধবী মিলে ‘উইটনেস’ ছবিটি দেখেছিলাম ভিসিয়ারে! “আমেরিকার ‘আমিশ’ সম্প্রদায়কে নিয়ে ছবি, খুব ভালো ছবি” বলে তোর দাদাও আমাদের সাথে ছবি দেখতে বসে গেছিলো। তুই হয়তো কিছু কিছু জানতি এমিশদের সম্পর্কে, কিনতু আমিতো জানতামইনা আমিশ নামের কোন সম্প্রদায় আছে আমেরিকা বা কানাডার মত দেশে। অমন উন্নত আলো ঝলমলে দেশেও অমন ব্যতিক্রমী জীবন, ভাবাই যায়না! কি ভালোই যে লেগেছিলো ছবিটা। ছবি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমি আহাজারি করেছিলাম, আহারে! ‘আমিশ’দের মত করে আমিও যদি কোলাহলের বাইরে আলাদা থাকতে পারতাম, সাথে সাথে তুই হই হই করে উঠেছিলি, বলেছিলি,যারা অমন কট্টরপন্থী, আধুনিকতাকে স্বীকার করেনা, তাদের মত জীবন তুই মরে গেলেও চাসনা। আমি কি আর তোর সাথে কখনও কথা বলে পেরেছি? ভয়ের চোটে চুপসে গেছিলাম। কিনতু মনের মধ্যে একটা কৌতুহল রয়েই গেছিল, কেনো এরা অমন সাদামাটা জীবনকে বেছে নিয়েছে, আধুনিক সভ্যতাকে অস্বীকার করার পেছনে কি কারন থাকতে পারে, অথবা জীবনের প্রতি এমন নির্মোহ থেকেই বা ওরা কি এমন মোক্ষ লাভ করেছে, সেটাও জানতে ইচ্ছে করতো।

গতকাল উইটনেস ছবিটি দেখার পরেই হঠাৎ করে মনে হলো, তুই হয়তো ‘আমিশ’ দের দেখা পেলে পেতেও পারিস। তোদের ওখানেতো আমেরিকান ইন্ডিয়ান থেকে শুরু করে কত বর্ণের মানুষ বাস করে। তোর কাছেই কত রকম মানুষের কত রকমের গল্প শুনেছি। কত নতুন নতুন গল্প তুই শুনিয়েছিস এ পর্যন্ত। আচ্ছা মানসী, সত্যি করে বলতো, কখনও কি কোন এমিশের দেখা পেয়েছিস? যদি কারো দেখা পেয়ে থাকিস আমাকে জানাবি। এখানটায় বড্ড বেশী মানুষ চারদিকে, চারদিকের এত কোলাহল আর ভালো লাগেনা। অন্য রকম জীবনের গল্প শুনতে চাই। আপাতত এখানেই শেষ করছি। ভালো থাকিস। তোর উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম। ওহ! ভালো কথা, কবীর ভাইকে আমার শুভেচ্ছা জানাবি। তাপসী ও মানসকে আমার ভালোবাসার সবটুকু দিবি। তোর জন্য আমার শুভকামনা।

পারমিতা

দুই.

পারমিতা,
আজকের ডাকেই চিঠিটা পেলাম। মানস কলেজ থেকে ফেরার সময় লেটার বক্স থেকে চিঠিটা এনে আমার হাতে দিয়েই টিপ্পণী কেটেছে, “মা, এখন কি আর কেউ চিঠি লিখে? একমাত্র পারমিতা মাসীই মনে হয় রবীন্দ্র যুগে পড়ে আছে!” আমিও মানসের তালে তাল মিলিয়ে বলেছি, এই পাগলী ছাড়া আর কেউ এভাবে চিঠি লিখে আমার খোঁজ নেবেনা। মানসের হাত থেকে চিঠিটা নিয়েই খুলে ফেললাম, চিঠি খুলেই আমি অবাক। তুই সত্যিই পাগল। নাহলে কবে কোনকালে ‘উইটনেস’ ছবিটি দেখেছিলাম, ভুলেও গেছি ছবির কথা, আর তুই কিনা কোথাকার কোন এমিশদের নিয়ে একটা গোটা চিঠিই লিখে ফেললি! হ্যাঁ রে, তোর এখনও মনে হয়, অমন একটা জীবন পেলে তুই খুশী হতি? আমিতো অমন করে লোকালয়ের বাইরে গিয়ে বাঁচতেই পারবোনা। তুই নিউইয়র্কের এমন ছন্দময় জীবন ভালোবাসিসনা! আর আমি এখানের এই ভ্যাতভ্যাতে জীবন ভালোবাসিনা। এক কাজ করি আয়, জায়গা পাল্টাপাল্টি করি। তোরা চলে আয় এখানে, আমরা চলে যাই নিউইয়র্কে। হা হা হা !!

হ্যাঁ, সুপার সেন্টারের ফোন সার্ভিস ডিপার্টমেন্টে বহাল তবিয়তেই আছি। এখানে থেকে নিত্য নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। কত রকমের মানুষ যে দেখা যায় এখানে! আমারতো লেখার হাত নেই তাই লিখতে পারিনা। তুইতো একসময় লিখতি, অবসর কাটেনা বলছিস, লেখালেখি শুরু করে দে, আমিই তোকে গল্পের প্লট দেবো। তবে একটা শর্ত আছে, বই যখন প্রকাশ করবি, তথ্যসূত্রে আমার নামটা যেনো থাকে। নাহলে তোর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেবো। এবার আসল কথায় আসি, দেখেছি তোর এমিশ’দেরকেও দেখেছি, তবে দূর থেকে। ওদেরকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ নেই। তবে ওদেরই কাছাকাছি সম্প্রদায়ের মেনোনাইটদের দেখি প্রতিদিনই। এমিশদের দেখবো কি করে, ওরাতো ওদের লোকালয় ছেড়ে বের হয়না, আমারতো মনে হয় পৃথিবীর কোন খবরও ওরা রাখেনা। তবে মেনোনাইটরা ওরকম না, প্রতিদিনই কেউ না কেউ বাজার করতে আসে এই সুপার সেন্টারে। তুইতো জানিস, আমি এমনিতেই প্যাঁচালী, তার উপর আমার এই ফোন সার্ভিস এরিয়াতে গ্রাহকের ভীড় লেগেই থাকে। বুঝিসইতো, ফোনের ব্যাপার! না খেয়ে থাকতে অসুবিধা নেই, কিনতু ফোন ছাড়া এক মুহূর্তও আমেরিকানরা বাঁচবেনা।

আমাদের এখানে আমেরিকান ইন্ডিয়ান যেমন আছে, তেমনি এমিশ, মর্মেন, মেনোনাইট, মেক্সিকান, ইথিওপিয়ান, ভারতীয়সহ নানা সম্প্রদায়ের মানুষজন আছে। আমিতো আগে খুব বেশী কিছু জানতামনা মেনোনাইট, মর্মেন বা এমিশদের সম্পর্কে। শুধু দেখতাম স্টোরে আসা নানা জাতের মানুষের ভেতর কিছু মানুষ দেখতে একেবারেই আলাদা, তাদের পোষাক থেকে শুরু করে চলন বলন সব কিছু আলাদা। আমেরিকার মত এমন খুল্লাম খুল্লার দেশে মেয়েগুলো আসে হাঁটুর নীচ ছাড়ানো লম্বা ঢিলেঢালা জামা পড়ে, এদের মাথার চুল কখনওই খোলা থাকেনা, সব সময় টাইট খোঁপা করে বাঁধা, খোঁপাগুলো আবার গোল নামাজী টুপীর মত লেসের ঢাকনা দিয়ে আটকানো থাকে। সেই টুপীগুলো সাদা বা কালো লেসের তৈরী হয়ে থাকে। মজার কথা কি জানিস, এই এমিশ, মেনোনাইট, মর্মেন, ওদের নিজেদের মধ্যেই কিনতু মারাত্মক শ্রেণীভেদ আছে। ছেলেদেরকে দেখে একরকম লাগলেও মেয়েগুলোকে সাদা টুপি, কালো টুপি, টুপি ছাড়া খোঁপা দিয়ে কাস্ট আলাদা করা যায়। সাদাটুপীর মেয়ের সাথে কালো টুপীর গোত্রের ছেলের বিয়ে হবেনা, যদিও ওরা দুজনেই মেনোনাইট। তেমন বিয়ে হলে খবর আছে। এমন কঠিন ওদের সমাজ ব্যবস্থা। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো ওদের সাথে কথা বলার। তা একদিন পেয়ে গেলাম সুযোগ।

সেদিন এক ভদ্রলোক আমার কাউন্টারে এসে হাজির। ভদ্রলোকের ড্রেস দেখে, মুখের দাড়ি, কথা বলার বিনয়ী ভঙ্গী দেখেই আমি বুঝেছি, এই লোক হয় এমিশ নয়তো মর্মন বা মেনোনাইট। আমি ভদ্রলোককে ফোনের ব্যাপারে সাহায্য করলাম, তারপরেই তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ তুমি কি এমিশ?’

ভদ্রলোক একটু চমকালো এমন সরাসরি প্রশ্নে। আমি তাকে বললাম, “আসলে আমি আমিশ সম্প্রদায়ের উপর তৈরী করা একটা মুভী দেখেছিলাম অনেক আগে, আমার খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল, কিনতু কখনও কাউকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়নি আমার। বই পড়েও জানা যায়, তবে সরাসরি কারো মুখ থেকে শুনতেই বেশী ভালো লাগবে বলেই তোমার কাছে জানতে চাইলাম।”
এবার ভদ্রলোক সারা মুখে হাসি ছড়িয়ে দিয়ে নিজের পরিচয় দিলো, “ আমার নাম ফিলিপ। আমি এমিশ নই, আমরা মেনোনাইট। কোন এমিশকে তুমি এখানে পাবেনা, ওরা সকলের সাথে কথাও বলেনা। তুমি আমাদের সম্পর্কে জানতে চাইছো দেখে নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি। তবে এত অল্প সময়ে একটি সম্প্রদায় সম্পর্কে কতটুকুই বা জানা যায়, বলো! আমি বরং আজকে তোমাকে সংক্ষেপে বলি, পরের উইকে আমি তোমার জন্য আমাদের সমস্ত বুকলেটসহ আরও অনেক বেশী তথ্য এনে দেবো। তাহলে তুমি আরও পরিষ্কারভাবে আমাদের কথা জানতে পারবে”।

তিন.

আমি ফিলিপের কাছে এমিশদের কথাই আগে জানতে চেয়েছি, কেনোনা মেনোনাইট পুরুষ মহিলাদের সব সময় দেখা যায় এখানে, যে কোন সময় ওদের কথা শোনা যাবে, কিনতু এমিশদের কথা জানার সুযোগতো আর সব সময় আসবেনা। সেজন্যই ফিলিপকে বলেছি এমিশদের কথাই আগে বলতে। আমার কথার পিঠে কথা সাজিয়ে সে যতটুকু বলেছে সেটাই বরং ফিলিপের বয়ানেই তোকে লিখছি।

“আমাদের সাথে এমিশদের অনেক পার্থক্যও আছে আবার কিছু কিছু মিলও আছে। এমিশরা অনেক বেশী কট্টরপন্থী, গোঁড়া। নিজেদের মত করে থাকতে পছন্দ করে। খুবই সাদামাটা ওদের জীবন, আধুনিকতাকে ওরা ঘৃণা করে। ইলেকট্রিসিটিকে মনে করে সাক্ষাত শয়তান, ওরা ইলেকট্রিসিটি ব্যবহার করেনা। ওরা টিভি দেখেনা, রেডিও শোনেনা, টেলিফোন ব্যবহার করেনা। ওরা মুভিও দেখেনা। ওদের বিশ্বাস, টিভি দেখলে বা রেডিও শুনলে বাচ্চারা শুধু নোংরামী শিখবে। ওদের কারো বাড়ীতেই বৈদ্যুতিক আলো জ্বলেনা, ফ্যান, এসি, ফ্রীজ কিছুই চলেনা। ওদের বিশ্বাস ইলেকট্রিসিটির ব্যবহারে প্রকৃতির আলো বাতাসের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাড়ীতে ওয়াটার সাপ্লাইয়ের পানির বদলে ওরা ডিপ টিউব ওয়েলের পানি ব্যবহার করে। এমিশরা মোটর গাড়ী, ট্রেন বা প্লেন, কোনটাতেই চড়েনা। ওরা চড়ে ঘোড়ায় টানা ‘বাগি’ তে। এমিশ মহিলারা খুবই পর্দানশীন, বাড়ীর ভেতরেই এদের যাবতীয় কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ থাকে। হাট বাজার করতে হলে ঘরের পুরুষেরাই কাছাকাছি ওদের নিজস্ব হাট থেকে বাজার সদাই করে আনে। মেয়েরা অন্দরের যাবতীয় কাজ করে থাকে। রান্না বান্না থেকে শুরু করে ঘর পরিষ্কার করা, ছেলেমেয়েদের পরিচর্য্যা, পুরুষদের যত্ন আত্তিসহ যাবতীয় ঘরোয়া কাজ মেয়েরাই করে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সকলের জামা কাপড়, বিছানা বালিশ ওরা ঘরেই বানায়। এমিশ মেয়েদের পোষাক হয় পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত ঢাকা। মেয়েদের মাথা ঢাকা থাকে কানঢাকা টুপীতে, যাতে করে ওদের মাথার চুল কেউ না দেখতে পারে। ছেলেরা লম্বা দাড়ি রাখে, মাথায় হ্যাট পড়ে, জামা কাপড় বলতে সাধারন প্যান্ট শার্ট পড়ে। অন্য সাধারন আমেরিকানদের মত ওরা মদ পান করেনা, সিগারেটও খায়না। কোন নেশা ভাঙের মধ্যে এরা নেই। ওরা ছবি তোলেনা। এক প্রজন্ম তার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে দুই তিন পুরুষ আগের প্রজন্মের গল্প শোনায়। কে কেমন দেখতে ছিল, তার একটা কাল্পনিক বর্ণণা দেওয়া হয়।

মেয়েরা ঘরে থাকলেও কখনও যদি আত্মীয় স্বজনের বাড়ী যেতে হয়, তাহলে তারা ঘোড়ায় টানা ‘বাগি’তে চড়ে যায়। (‘বাগি’ হচ্ছে সোজা বাংলায় ‘টাঙ্গা’)। বাগির ভেতর মহিলারা থাকে পর্দায় ঢাকা, পুরুষেরা বাগি চালায়। ওদের ছেলেমেয়েরা পাবলিক স্কুলে যায়না, ওদের নিজস্ব স্কুল আছে যেখানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়। ওদের আয়ের উৎস হলো কৃষি ও পশুপালন। কৃষি থেকে উৎপাদিত পণ্যেই ওদের সংসার জীবন চলে যায়। এমিশদের বিয়ের ব্যাপারে বলতে গেলে শুধু এটুকুই বলা যায়, নিজেদের গোত্রের বাইরে ওরা ছেলেমেয়েকে বিয়ে দেয়না। উপযুক্ত পাত্র না পেলে প্রয়োজনে মেয়েরা বা ছেলেরা সারাজীবন অবিবাহিত থেকে যায়। কেউ যদি অন্য সম্প্রদায়ের কাউকে পছন্দ করেও ফেলে, প্রথমে তাকে বাধা দেওয়া হয়, অবাধ্য হলে শাস্তি দেয়া হয়, প্রয়োজনে তাকে সমাজচ্যুত করা হয়।

জন্মনিয়ন্ত্রণে ওরা বিশ্বাস করেনা, এবরশনের প্রশ্নই আসেনা। ঈশ্বর যাকে যেভাবে পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে, তাকে সেভাবেই থাকতে হবে মৃত্যু পর্যন্ত। পুনঃবিবাহ বা ডিভোর্স, কোনোটাই নেই ওদের মধ্যে। বিবাহিত দম্পতির মধ্যে কেউ একজন যদি আরেকজনের সাথে প্রতারণা করে, তাহলে তার বিচার হয়, বিচারেই শাস্তির বিধান দেওয়া হয়। বিধবা হলে বা কুমারী থেকে গেলে বাকী জীবন ঈশ্বরের সেবায় নিয়োজিত থাকতে হয়। এভাবেই চলেছে যুগের পর যুগ। এর বেশী কিছু বলতে পারছিনা। আমি এর বেশী কিছু জানিনা”।

চার.

পারমিতা,
ফিলিপ আমাকে সেদিন আমিশ সম্পর্কে অতটুকুই বলেছিল। এবার বাকীটুকু তুই গুগল সার্চ করে জেনে নিস। সেই বিকেলে ফিলিপ চলে যাওয়ার আগে বলেছিল, পরের সপ্তাহে আবার আসবে। আমাকে অবাক করে দিয়ে পরের সপ্তাহে ফিলিপ কিনতু ঠিকই এসেছিল, মেনোনাইট সম্পর্কে সে খোলাখুলি কথা বলেছিল আমার সাথে। ফিলিপ সাথে করে বেশ কিছু লিফলেট, ছোট ছোট বই নিয়ে এসেছিলো আমাকে দেওয়ার জন্য। পড়ে দেখি সবই ধর্মের কথা। ধুস! মানব ধর্ম বড় ধর্ম, এটা জানলেই তো চলে। যাই হোক, এই চিঠির সাথে ফিলিপের দেয়া কাগজগুলোও তোকে পাঠাচ্ছি। মেনোনাইট সম্পর্কে দুই একটা মজার তথ্যও জানলাম সেদিন। পরের চিঠি লিখবো মেনোনাইটদেরকে নিয়ে, তুই তোর অখন্ড অবসরে ওদের উপর একটা বই লিখতে পারিস। একেবারে নতুন ধরণের গল্প, যা আমাদের দেশের অনেকেই জানেনা। আচ্ছা, এক কাজ কর, আপাততঃ এমিশদেরকে নিয়েই একটা ফিচার লিখে ফেল, খুবই ভালো হবে। বিনে পয়সায় অনেক গল্প শুনালাম তোকে। লিখে ফেল সবকিছু মনে থাকতে থাকতে। এতে করে তোর সময়টাও ভালো কাটবে। তোকে যত গল্প শুনিয়েছি এই পর্যন্ত, বিরাট বড় উপন্যাস লেখা হয়ে যাবে। যতটুকু জানলি, মনে হয়না এরপরে তোর আর এমিশদের মত অমন আলুনিমার্কা জীবন ভালো লাগার কথা। আরে, কোলাহলের মধ্যেইতো প্রাণের সাড়া পাওয়া যায়। নিরালায় তো একদিন সকলেই যাবো, তার আগে আয় প্রাণের আনন্দেই ভরিয়ে রাখি নিজেকে আর পাশের জনকে! ভালো থাকিস। চিঠির উত্তর দিস। দাদাকে আমার নমস্কার। গুড্ডু, কুটুস ও পুটুসকে আমার আদর জানাস। পুটুস আর কুটুস বড় হয়ে গেলো, টুক্কী বয়সে বিয়ে করে ভালোই করেছিলি, এখন কি মজা তোর! আর তোর জন্য আমার সবটুকু ভালোবাসা। কবীর, মানস ও তাপসীসহ আমরা সবাই ভালো আছি।

মানসী
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ঝরা আপনি গল্পেও ভাল
ও ঝরা, গল্পেও ভালো মানে কি? আমি আর কিসে ভালো শুনি! হাহাহাহা আমিতো তোমাদের কাছ থেকে শিখছি।
মামুন ম. আজিজ একটি নৃতত্ব জ্ঞানকে গল্পের আকারে বিবৃতদ করার ই প্রচেষ্টা ভালো লেগেছে। উইটনেস ছবিটার নায়ক বোধহয় হ্যারিসন ফোর্ড......ধন্যবাদ
মামুন কতটুকু পেরেছি জানিনা, চেষ্টা করেছি। তার চেয়েও বড় কথা আপনাকে এখানে দেখে মনে হচ্ছে বাপের বাড়ী থেকে আমার ভাই এসেছে। বিডিবাংলা থেকে আমার ভাই আজিজ এসেছে যে আমার স্ট্যাটাসে কথা দিয়েছে এখন থেকে আমার লেখা পড়ে মতামত দেয়ার চেষ্টা করবে। ভালো থাকুন আজিজ।
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ ঝলমলে গদ্য। সুন্দর একটা বলার ঢঙ আছে। আছে জীবনবোধ। অনেক অনেক ধন্যবাদ ও শুভকামনা দিদি।
জালাল ভাই, অনেক ভালো লাগছে হঠাৎ করে একসাথে এতোগুলো মন্তব্য পেয়ে। আপনার জন্যও শুভ কামনা।
শেখ একেএম জাকারিয়া হাতের লেখনি পরিপক্ক। ভাল লাগল দিদি।
জাকারিয়া, এখনই লেখনি পরিপক্ক বলবেননা, অকালপক্ক কিনা তা-ইবা কে বলবে! একটু দুষ্টামী করলাম। ভালো থাকবেন। আপনাদের মতামতের গুরুত্ব অনেক বেশী একটি সত্যিকারের ভালো লিখা তৈরীর জন্য।
অম্লান অভি প্রকাশ ভঙ্গিতে রাঙিয়ে দিতে সক্ষম, তাই রসহীন বর্ণনাও হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত............কমেন্টস্ এর পরও কিছুক্ষণ থাকতে হবে দুটো কাজ করতে
অম্লান, 'রসহীন বর্ণনা' বলার জন্য ১০০ তে দিলাম ১৫০। লেখাটি লিখার সময় আমার কত যে ভয় কাজ করেছে মনে, কিভাবে আমি গল্পটিকে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করবো, ভীষন দুশ্চিন্তা ছিল। আমার লেখগুলো এমনিতেই অনেক দীর্ঘ হয়ে যায়, তার উপর এমন এক কঠিন বিষয়। 'প্রাণবন্ত' বলার জন্য পাবে ১০০ তে ২০০। তোমার কমেন্ট আমার কাছে চির অম্লান হয়ে থাকবে। ভালো থেকো।
সূর্য প্রাত্যাহিক জীকনে ব্যবহৃত অনেক শব্দই আমরা গদ্যে লিখতে অস্বস্তি বোধ করি সেখানে আপনি (....অমন আলুনিমার্কা জীবন ....) এমন সুন্দরভাবে নিয়ে এসেছেন, বলতেই হয় গদ্যের হাত আপনার অনেক ভাল। চিঠির অবগুন্ঠনে এমিশ এবং মেনোনাইটদের নিয়ে বেশ একটা প্রবন্ধ লিখলেন দিদি। ভাল লাগা রইল...............☼
সূর্য, তোমার মন্তব্যটি পড়ে হঠাৎ খেয়াল হলো, 'আলুনিমার্কা জীবন' ---সত্যিইতো একেবারেই আটপৌরে এক শব্দ। তুমি খুব পজিটিভলি নিয়েছো শব্দটিকে, আমাকে বাধিত করেছো ভাইয়া! অনেক ধন্যবাদ।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি রীতা দি আপনার গল্প অসাধারন লাগল....আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই ...... যোগ্যতার মূল্যায়ন করলাম....৫
আমার জ্যোতিদাদাটি সত্যিই জ্যোতির্ময়!!!!
Lutful Bari Panna কি বলব দিদি। গল্পের ছলে এরকম একটা সম্প্রদায়ের কথা জানতে পারব ভাবিনি। অনেক কিছু জানলাম, শিখলাম। আর আপনার গদ্যের হাতটি সত্যিকার অর্থেই চমৎকার।
পান্না, ' আপনার গদ্যের হাত্টি সত্যিকার অর্থেই চমৎকার'--আপনার এমন কমেন্টের পরে--আমার গল্পটি সেরা পঁচিশে না গেলেও দুঃখ নেই। জীবনে এখনও কত কিছু পাওয়ার আছে, তাই ভাবছি। অনেক ধন্যবাদ পান্না।
নাসির আহমেদ কাবুল বন্ধু তুমি চিঠি খুব সুন্দর লিখতে পারো সে আমি জানি। আমি তো আমার চিঠির উত্তর পেলাম না। রাগ করবো কি একবার? ভালো থেকো প্রিয়।
বন্ধু, তোমাকে বার্তা পাঠিয়েছিলাম, আবার পাঠালাম। নাহ! রাগ করবেনা, কারন এই নেট এর ভুতুড়ে কান্ড আছে, নাহলে আমার বার্তা পেলেনা কেনো! নেট এর কারনে আমরা পরস্পর রাগারাগি করবো? এটা বোকামী হয়ে যাবেনা? ভালো থেকো।
রোদের ছায়া বুদ্ধ দেবের একটা উপন্যাস এর মিনিয়েচার যেন এই গল্পটা ...অন্য রকম তাই ভালো লাগাও অন্য রকম ....( গতকাল spelling bee নামের একটা প্রোগ্রাম এ এমিশ শব্দটি শুনলাম , আজ আজকেই ওদের নিয়ে গল্প পড়লাম )
রোদের ছায়া, গল্পটি তোমার ভালো লেগেছে, ওরে বাবা, তোমার কবিতার ভাষা এতো সুন্দর, সেই তুমি এমন প্রশংসা করলে! খুশীতে আটখানা আমি।

১৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪