পলাশ বনে আবীর রঙে রঙ লাগলো,
শিমুল গুলো ফুটে উঠল তেমনি করে,
এমনি সময়ে আমরা ছিলাম একসাথে,
গা ভাসিয়ে চলছিলেম সময়ের স্রোতে ।।
জীবনের প্রত্যেকটি রঙে রাঙাছিল মন,
হারিয়ে যেতে ছিল না বাঁধা যখন তখন,
কখনো বা বনে বাঁদাড়ে, কখনো বা পাহাড়ে,
কখনো বা চায়ের কাপে, কখনো সাগরে,
স্রোতের ঢেউয়ে এমনি করেই চলছিল দিনগুলো,
দুর আকাশে উড়ছিল সেই মেঘগুলো ।।
তারপর একদিন ……..
সেদিন অনির্বাণের হাতে ছিল,
রক্ত রঙে আাঁকা পোষ্টার ।
তাতে ছিল তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ,
ছিল বাংলার জয়গান ।
মুখে তার তুবড়ি ছুটছিল কথায় কথায়,
বিক্ষুব্ধ জনতার কাছে এ যেন কোন সম্মোহন শক্তি,
আমরা শুনছিলাম, গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিল ।
কী যে হলো সালামের হৃদয়ে!
কী যেন ছুঁলো জব্বারকে!
কে যেন চাপটি মেরে জাগালো বরকতকে!
আমি শুধু শুনলাম সম্মোহিতের মত,
আমার কোন ভাবান্তর হলো না ।
ওরা ছুটল বেশ কিছুদিন কোন আকর্ষণে,
চষে বেরাল সারা বাংলাদেশের এখানে সেখানে,
আমি দেখলেই পালাতাম- ভয়ে, অস্থিরতায়,
কেন যেন কোনভাবেই পারলাম না!
শুধু একরাশ দীর্ঘশ্বাস ছিল বুক জুড়ে!
নিঃস্ব আমি ভাবতাম সেই দিনগুলো ।।
কিছুদিন পর ……
ওরা আবার ছুটল, তবে এবার মিছিলে!
আমি ছাদে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম,
কেমন করে ফুলে উঠেছিল গলার স্বর,
কেমন করে রোষান্বিত হলো ওরা!- সব, সব ।।
হঠাৎ চলল গুলি …
আমি দেখলাম ওরা পড়ে গেল ।
আমি দেখলাম, ওদের গায়ের উপর চলল বুটের ছাপ!
আমি ছুটে গেলাম ঘরে,
কাঁদলাম, কাঁদলাম আর ভাবলাম,
আমার সাহস ছিল না কেন?
১৯ বছর পর …..
এল ৭১, এল সেই পলাশের দিনগুলো,
আমি আবার হাঁটলাম পথে, ঘুরলাম পাহাড়ে
ততদিনে ওদের অস্তিত্ব আমি ভুলেছিলাম ।
সেই দুঃসহ দিনগুলো আমাকে আর কাঁদাতো না!
এল মার্চ … এল ২৫ তারিখ
আবার আমি যেন ফিরে এলাম ’৫২ তে
আবার তাদের পেলাম জনতার স্রোতে,
তবে এবার আমার সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক ।
তাই রাইফেল হাতে চললাম,
এক বুক রক্ত সাগরে ভাসলাম দীর্ঘ সময়,
আমি ছুটে চললাম যেন পৃথিবীর পথে
কত রক্ত, কত লাশ বয়ে বেড়ালাম, ফেলে এলাম ।
তারপর আবার একদিন …
বারুদের গন্ধ, গুলির আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল
সূরযের রঙে রাঙানো পতাকা হাতে এলো ।
ফিরে চললাম গাঁয়ে আবার গড়তে দিন,
ধন, ধান্যে, ফুলে ফসলে করতে নানা বর্ণে রঙীন!
অগণিত রাস্তা পার হয়ে আমি চললাম ।
৪০ বছর পর …….
এখনো আমার দেশের পথ ভাঙা,
সূরযের রঙে রাঙা পতাকা কিছুটা ফিকে,
আমি রাস্তায় চলি, ফুটপাতে থাকি, ডাস্টবিনে খাই!
সেদিনের স্বপ্নটা ?
না! না! সে তো কল্পনা, সে তো মরীচিকা,
রাস্তায় চলে পতাকা সমেত গাড়ীবহর,
সেদিনের শত্রু তাতে আরাম করে বসে!
চাকায় দলিত হয় অগণিত পাথর
আমার কাছে তা মনে হয়,
ত্রিশ লক্ষ মানুষের মাথার খুলি!
গণ কবর হতে, বধ্যভূমি হতে যেন উঠে আসা,
যেন প্রতিবাদের দ্বিতীয় সত্তায় তারা ভাস্বর!
আবার ফিরে এলো ফাল্গুন,
আবার সেই পলাশের বনে লাগলো আগুন,
আবার শিমুল ঝরল ।
আবার সেই রক্ত রাঙা পোষ্টার,
এ প্রজন্মের সালাম, জব্বার, বরকতের হাতে –
আমি আবার স্বপ্ন দেখি,
বিচার হবে –
আমার কাপুরুষতার, আমার জাতির,
অগণিত যোদ্ধার, অগণিত শহীদের – বিচার হবে ।।