পাশাপাশি

কোমল (এপ্রিল ২০১৮)

রনেন দাশ mishuk
  • ১৩
বেলা বাড়ার সাথে সাথেই সূর্যের দাপট বাড়ছে। আলতাফ মিয়ার শরীর কুলোচ্ছে না। বছর দশেক আগেও সে ছিলো বাজারের ব্যবসায়ী। খালের ভাঙনের পর এখন সে কৃষক। দশ বছরেও সে অভ্যস্ত হতে পারে নি মাঠের কাজে। সারাক্ষণ খালি পুরানো দিনের কথা মনে পড়ে। বাড়িতে ৬ সদস্যের পরিবার সামলাতে তাকে হিমশিম খেতে হয়।খুব বেশি চাষের জমি নেই। তারপরও এই জমি তাকে বছরের প্রায় ৯ মাসের চাল দেয়, ডাল দেয়, সবজি চাষ করেও সে মোটামুটি চলতে পারে। বড় ছেলে জামালও চেষ্টা করে ডিঙি নৌকার মাঝিগিরি করে বাড়িতে বাড়তি কিছুটা টাকা দিতে। ছেলেটা স্কুলে পড়ে। পড়ার নেশা আছে। ইদানিং শহরের একটা এনজিও থেকে আসা শিপন না কি নামের লোকটার সাথে অনেক রাত অব্দি ঘোরাফেরা করে। লোকটা ভালোই মনে হয়। ওকে পড়াশোনায় সাহায্যও করছে। তারপরও এখন যা দিনকাল চলছে, তাই ভয় করে। কুমড়ার চারাগুলোতে পানি দিতে হবে। করলা গাছগুলোর পরিচর্যা করতে করতে এসবই ভাবে সে। একটু দুরের জমি থেকে ছগির মিয়ার ডাকে তার ধ্যান ভাঙে। ছগির মিয়া বর্গা চাষী। নিজেরও জমি আছে। এই জমি চাষ করেই দুটো ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছে মাস ছয়েক হলো। ছেলেরা এখন টাকা পাঠায় অল্প। সঞ্চয় আর স্বপ্ন দুটো-ই বাড়ে ছগির মিয়ার।
“কি ভাই, যাইবা না? সারাদিন কাম করলে হইবো?”
“হ যামু। এই করলা গাছগুলান ঠিক কইরা দেই তারপর।”
“ধুর, শোন মিয়া, জামালরে বাইরে পাডাইয়া দাও। হ্যায়, পোলা সেয়ানা হইয়া উঠছে। অত পড়া পইড়া কি হইবো, কও? আমরার পোলা ডাক্তরও হইবো না, ইঞ্জিনিয়ারও হইবো না। খালি খালি অত পড়া না পড়াইয়া বিদেশ গিয়া দুইডা টেহা আনুক। তাইলে তুমি মিয়া আবার দোকানও করবার পারবা। চেয়ারম্যান তো কইছে তোমরারে আলাদা দোকান কইরা দিব নে।”
“আর দোকান! পোলাডার পড়ার শখ। দেহি কি অয়! ল, চল যাই।”
দুজনে একসাথেই গ্রামের রাস্তা ধরে বাড়ির দিকে পা দেয়। কয়েক বাড়ি পার হবার পরেই কান্নার আওয়াজ আসে কানে। বাড়িটি রহমত উল্ল্যাহ মাঝির বাড়ি। তার বউটা অনেকদিন ধরেই শয্যাশায়ী। হেকিম কবিরাজ কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। বোধহয় মারা গেছে। ব্যাপারটা দেখার জন্য বাড়িতে ঢোকার মুখেই দেখা হয় সুন্নত আলীর সাথে। রহমত উল্ল্যার ভাই হয়। সে জানায়- তার ভাবী মারা গেছে। কবর খোঁড়ার লোক ঠিক করতেই যাচ্ছিল সে। গ্রামের শেষ মাথায় বছর কয়েক আগে একদল বেদে আসে। তাদেরকে চেয়ারম্যান জায়গা দেয় বসত ঘর আর চাষবাসের জন্য। তারাই কয়েক বছর ধরে এলাকার কবর খুঁড়ে আসছে। সেখানেই যাচ্ছে সে। বেদের সর্দারকে শুধু জানালেই হবে। পয়সা নেয় কম। বাড়ির ভেতরে কান্না করছে রহমতের বড় মেয়ে জরিনা। মেয়েটা পোয়াতী, বাবার বাড়িতে আসছে নাইওর হিসেবে কয়েকদিন হলো। আহারে! মায়ের মাথাটা কোলে নিয়ে কান্না করছে। রহমত বাড়িতে নাই। নৌকা নিয়ে গঞ্জে গেছে গতকাল। আসবে আগামীকাল। তাই সব ব্যবস্থা করবে সুন্নত আর রহমতের বড় ছেলে ইয়াকুব। হুজুরকে ডেকে আনা হয়েছে। আশেপাশের বাড়ির মেয়েরাও এসেছে গোসলের ব্যবস্থা করানোর জন্য। মহিলাদের ব্যাপার। জানাযা হবে অনেক পরে। তাই আবার বাড়ির দিকে পা দেয় আলতাফ মিয়া। রহমতের স্ত্রী গ্রামের সম্পর্কে তার ভাবী। এই মহিলা বেশ ভালো ছিলেন। আগে তার দোকানেই বাজার করতে যেত। বিশেষ করে ঈদের কেনাকাটা তার কাপড়ের দোকানেই হতো। তখন বারবার করে জোর করতেন ঈদের দিন আসার জন্য। এছাড়া সময়ে অসময়েও আসলে খালি মুখে যেতে দিতেন না। শেষ দিকে শুনেছে বেশ কষ্ট হতো মহিলার। নিঃশ্বাস নিতে পারতেন না। রহমত প্রায়ই মুখ কালো করে থাকতেন। বউয়ের প্রতি তার ভালোবাসাও ছিলো অগাধ।
বাজারের কাছে আসতেই একটা জটলা মত দেখতে পেলেন। আবার কি হলো! গিয়ে শুনেন কলিমুদ্দিনের তিন বছরের ছেলেটা খালের পানিতে পড়ে যায় একটু আগে। তখন নৌকায় করে শিপন আর জামাল খাল পাড় হচ্ছিল। দেখেই শিপন লাফ দেয়। উদ্ধার করে ছেলেটাকে। জামালও নৌকা নিয়ে উঠতে সাহায্য করে। ভীড়টা ঠেলে এগোতেই দেখে গ্রামের ডাক্তার নেওয়াজ ছেলেটাকে মাটিতে শুইয়ে পেট থেকে পানি বের করছে। ছেলেটা অনেক পানি খেয়ে ফেলেছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। পানি বের হয়ে ছেলেটা মোটামুটি সুস্থ হলে ডাক্তার গালি দেয় কলিমুদ্দিনকে। গালি খেয়েও কলিমুদ্দিনের কষ্ট হয় না। আবেগ সামলানোর চেষ্টা করছে সে। জড়িয়ে ধরে শিপন আর জামালকে। ডাক্তারকেও ফিস দিতে চায় সে। কিন্তু ডাক্তার ফিস নেয় না। উল্টো আবার বকা দেয়।
শিপন তখনও ঘোরের মধ্যে। সাঁতারে সে ততটা ভালো না হলেও আজকে ছেলেটাকে খালের পানিতে পড়ে যেতে দেখে তখনই লাফ দেয়। অনেক কষ্ট হয় খালের স্রোতে সাঁতরে গিয়ে ছেলেটাকে তুলতে। প্রায় ডুবে মরতে বসে ছেলেটা। তুলে আনতে না আনতেই জামাল আসে নৌকা নিয়ে। খালের পাড়ে গিয়ে দেখে ডাক্তারও খবর পেয়ে এসে গেছে। ঘটনার আকষ্মিকতায় সে তখনও হাঁপাচ্ছে। সবারই প্রশংসা পায় সে। সেদিন গ্রামের মসজিদে তার নামে দোয়া হয়। আবার সন্ধ্যায় কলিমুদ্দিন দাওয়াত দেয় বাড়িতে যাওয়ার জন্য। জামাল আর সে চায়ের দাওয়াত রক্ষায় গিয়ে পিঠে আর ঘরে বানানো নাস্তায় পেট ভর্তি করে সন্ধ্যার একটু পরে ঘরের বাইরে আসে। আকাশে জ্বলতে থাকে পঞ্চমীর চাঁদ। শিপনের কাছে সব কিছুই কাছাকাছি আর পাশাপাশি বলেই মনে হয়। জামালের কাঁধে হাত রেথে শিপন সামনে এগিয়ে যায়। রাত বাড়ে, বাড়ে সম্পর্কের টানও। নিশুতি রাত গভীর কোমলতায় দু’হাত বাড়িয়ে আগলে ধরে রাখে গ্রামটাকে, গ্রামের সম্পর্কগুলোও আগলে রাখে একে অন্যকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আল মামুনুর রশিদ ভালো লাগলো। আপনার বর্ণনাভঙ্গি অসাধারণ
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী চমৎকার গল্প; শেষের দিকে খুব জমিয়েছেন। বর্ণনা চমৎকার, অনেক ভালো লাগলো। শুভকামনা....
সালসাবিলা নকি গল্পটা ভালো লেগেছে। আপনার বর্ণনাভঙ্গীও ভালো। তবে প্যারা ভাগ করে লিখলে পাঠকের পড়তে সুবিধা হতো।
সাদিক ইসলাম শুরুর সাথে শেষের যোগসূত্র স্থাপন হলে আরো ভালো লাগতো। তবে কোমল গ্রামের বর্ণনা বেশ চিত্রময়তায় ফুটে ওঠেছে। ভালো লেগেছে। শুভ কামনা ভোট রইলো। গল্পে আমন্ত্রণ।
মৌরি হক দোলা দীর্ঘ বিরতির পরে আবার ফিরে এলেন গল্প নিয়ে... অাশা করি, এখন থেকে নিয়মিত পড়তে পারব আপনার লেখা... ভালোলাগা ও শুভকামনা রইল....

১৭ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪