উত্তর মাঠের বাকি জমিটুকু তার চাই’ই চাই।তাহলেই তিনি ওখানে গড়ে তুলতে পারবেন তার বহু স্বপ্নের “খান এন্ড সন্স” ইটের ভাটা।ইটের ভাটায় প্রতিদিন হাজার হাজার ইট তৈরি হবে, আর আসবে হাজার হাজার টাকা। যতো ইট, ততো টাকা।যেভাবেই হোক,বাকি জমি টুকু না হলে, সব ভেস্তে যাবে খান সাহেবের।খান সাহেব, মানে মোহাম্মদ জমির উদ্দিন খান।তিনি সব’ই খান, তবে জমি খেতে তিনি একটু বেশি পছন্দ করেন।সামনে সকলে তাকে খান সাহেব বলে ডাকে,পিছনে বলে,জমি খান।
গ্রামের গরীব দুঃখী কেউ বিপদে পড়লে,খান সাহেব’ই তাদের একমাত্র ভরষা।এই যেমনঃ কারও অসুস্থ বৌয়ের চিকিৎসা , মেয়ের বিয়ে,বাবা-মায়ের শ্রাদ্ধ,মামলা-মোকদ্দমা-যখন’ই টাকার প্রোয়জন,খান সাহেবের না নেই।সুধু
মাত্র দলিলে টিপ-সই দিলেই চলবে।
এভাবে কাশিমপুর গ্রামের উত্তর মাঠের প্রায় সব জমি’ই তিনি গ্রাস করে ফেলেছেন।বাকি যেটুকু আছে ,তাও খাওয়ার পায়তাড়া করছেন তিনি ।অবশেষে সবুজ মাঠের উপর গড়ে তুললেন, তিনি তার স্বপ্নের সুবিশাল ইট ভাটা।দাম্ভিক খান সাহেবের ইট ভাটার চুল্লির চিমনিও যেন,তার মত দাম্ভিকতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আকাশে মাথা তুলে।
প্রতিদিন ফসলের জমি কেটে মাটি নিয়ে যাওয়া হয় ইট ভাটায়।সেখানে তাল তাল মাটি দিয়ে তৈরি হয় ইট।সেই ইট পোড়ানোর জন্য কাঠ প্রোয়োজন।বিভিন্ন ভাবে ভাটার জন্য কাঠ সংগ্রহ করেন খান সাহেব। বন জংগল উজাড় হতে থাকে আবাধে।রাস্তার দু পাশের বৃক্ষও বাদ যায়না, খান সাহেবের হাত থেকে।
ইট ভাটার কালো ধোয়া গ্রামের পরিবেশকে দূষিত করতে থাকে।স্বস্থ্যের যন্যে তা এক সময় ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়।গ্রামের বেশির ভাগ লোকই অশিক্ষিত ও দরীদ্র।কে খান সাহেবের বিরুদ্ধে কথা বলবে!কে করবে এর প্রতিবাদ। এ সময় এগিয়ে আসে, গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে সোহাগ।গ্রামের লোকদের বুঝিয়ে এক জোট করে, খান সাহেবের বিরুদ্ধে গড়ে তোলে তুমুল আন্দোলন।গ্রামের মাঝে ইট ভাটা- চলবে না, চলবে না।সবুজ প্রকৃতি ধংশ করা-চলবে না, চলবে না।তার এর নাম দেয়,‘‘সবুজ আন্দোলন”।
খান সাহেব, এতো সব কান্ড-কারখানা দেখে, স্তম্ভিত হয়ে যান।কোথায় পেলো ওরা এতো সাহস? দু-ঘা মারলেও যারা প্রতিবাদ করতো না, আজ তারা,তারই বিরুদ্ধে মিছিল করে!তার ধংশ চায়!
খান সাহেব খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, চাঁন মিয়ার ছেলে সোহাগ তাদের লিডার।রাগে তার সমস্ত শরীর কাপতে লাগলো। দাঁতে দাঁত চেপে তিনি মনে মনে বললেন,‘‘চাষার ছেলে সোহাগ,দু পাতা পড়াশুনা করে তোমার এতো বাড় বেড়েছে!হীরো সাজতে চাও,জন দরদী হতে চাও, তাই না?তোমার বাড় আমি দেখে নেব।”
খান সাহেব সেদিনই রাতের আঁধারে লোক দিয়ে ধরে আনলেন, চাঁন মিয়ার ছেলে সোহাগকে। তিনি সোহাগকে আন্দোলন থেকে সরে আসতে বললেন।বিনীময়ে সোহাগকে ভালো চাকরী দেওয়ার কথাও বললেন তিনি।সোহাগ ঘৃ্নাভরে সেই প্রস্তাব প্রত্যাক্ষান করলো।
-আমি মরে যাবো, তবু আন্দোলন থেকে এক চুলও সরে যাবো না।আবার এই গ্রামের মাঠ সবুজে ভরে উঠবে,সবুজে সবুজে সাজবে কাশিমপুর।আগামী প্রজন্ম বুক ভরে নিবে নিঃশ্বাস।এই আমার শেষ কথা।
-তাহলে, আমার শেষ কথাও তুমি শুনে নাও-মৃত্যুই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।মৃত্যুর যন্য প্রস্তুত হও।
-আমি মরে গেলেও, আমার মতো আরো শত শত সোহাগ জন্ম নেবে এই মাটিতে।তারা এই ‘সবুজের’ আন্দোলন চালিয়ে যাবে।জয় তাদের একদিন হবেই।
১৭ জানুয়ারী - ২০১২
গল্প/কবিতা:
১৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪