এক.
অফিসে ঢুকতে আমার ২০ মিনিট দেরি হয়েছে। দেরি হওয়ার কোন কারণ নেই। আসলে স্টাডিতে বসে একটা সাইটে ডুকে আটকে গিয়েছিলাম। ইন্টারেস্টিং সাইট। হঠাৎ আমার কমিউনিকেশন ডিভাইসটাতে সেট করা মায়াবী নারী কণ্ঠ বলে উঠল, শুভ সকাল ইমন। আমিও মিষ্টি করে বললাম, কি খবর মিরা? মিরা আমার ডিভাইসের নাম। মিরার বুদ্ধিমত্তার মাত্রা ৬। ওর সাথে আড্ডা মারা যায়, ফান করা যায় এমন কি ঝগড়াও করা যায়। মিরা আমার মোটামুটি ভাল বন্ধু। মিরা বলল, তোমার অফিসের সময় চলে যাচ্ছে। আমার ডিভাইসে সময় দেখে আমি আৎকে উঠলাম, মাই গড...। বলেই আমি ছুটলাম আমার অফিসের দিকে। আমার স্টাডির পাশেই আমার অফিস কামরা। আজ থেকে ত্রিশ বছর আগেও এই রকম চিন্তা মানুষ করতে পারতো না। কিন্তু এটাই এখন বাস্তবতা। হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সব প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল হয়ে গেছে। মানুষ বিনোদন ছাড়া কোন কিছুর জন্যই ঘর থেকে বলতে গেলে বের হয় না। বিনোদনের জন্যও মানুষকে খুব বেশী দূরে যেতে হয় না। মানুষের চলাচল খুবই সীমিত হয়ে গেছে। এখন বড় বড় রাস্তায় পণ্য সরবরাহ পরিবহন, পুলিশের গাড়ী এবং ভ্রমণ পিয়াসু মানুষের গাড়ী ছাড়া খুব একটা গাড়ীও দেখা যায় না। বিশাল বিশাল স্ট্রাকচার এখন বলতে গেলে অকেজো হয়ে পড়ে থাকে। কম উন্নত দেশ যারা এই বাবদে বড় বড় বিনিয়োগ করতে পারে নাই তারাই বুকে ফু দিয়ে বলে, যাক! বড় বাঁচা বেঁচে গেছি। অপ্রয়োজনীয় খরচ হয়নি।
আমি অফিসের দরজায় রেটিনা স্ক্যানারের কাছে দাড়াতেই একটা আলোক রশ্মি আমার মুখাবয়বের উপর থেকে নিচে নেমে গেল। তারপর নিঃশব্দে অফিস কমরার দরজা খুলে গেল। অফিসটা আমার নিজস্ব কামরা হলেও এখন নিয়োগ কর্তার এক্তিয়ারে। আমাকে এবং আমার অফিসকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই অফিসের মেইন সিস্টেম লগ আমার কাছে থাকলেও অপারেটিং সিস্টেম কোড নিয়োগকর্তা নিয়োগ পত্র দেয়ার সময় নিয়ে নিয়েছে। আমি এই প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এর সকল দায় দায়িত্ব আমার নিয়োগ কর্তার।
অফিসে ঢুকতেই দেখি, আমার ডেস্কের সামনে রিনা পারভিন বসে আছে। এটা রিনার হলোগ্রাফিক ছবি। রিনা এইচ.আর ডিপার্টমেন্টের মনস্তাত্ত্বিক ইউনিটের প্রধান। চমৎকার শারীরিক কাঠামো। যে কোন পুরুষের হৃদয় কাপিয়ে দেয়ার মত রূপবতী। এমন রূপবতী একজন সামনে থাকলে ভাল লাগার কথা। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। মনস্তাত্ত্বিক ইউনিটের উপর আমার বিতৃঞ্চা আছে। এদের কাজ কর্ম আমার কাছে খুবই অবৈজ্ঞানিক মনে হয়। কিন্তু চেহারায় আন্তরিকতা ফুটিয়ে আমি সম্বোধন করলাম,
: হ্যালো রিনা। কেমন আছ?
: হাই ইমন। আমি ভাল আছি। তোমার শরীর কি খারাপ?
: না। আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। তুমি জান মানুষ এখন ছোট খাট অসুখ বিসুখে পড়েনা।
: হ্যাঁ। জানি মানুষকে যখন থেকে প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ করতে হচ্ছে না তখন থেকে অসুখ বিসুখ অনেক কমে গেছে। কাজের কথায় আসা যাক। তোমার কাছে আমার কয়েকটা প্রশ্ন আছে, বলব?
২০ মিনিট দেরী করার ভোগান্তি। মনস্তাত্ত্বিক কাউন্সিলিং। মানুষিক রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে বলেই বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলো এই কাউন্সিলিং পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। বড়ই বিরক্তিকর পদ্ধতি। ইস্ মনটা বিতৃঞ্চায় ভরে গেল। সেই ভাব লুকিয়ে বললাম, বল কি জানতে চাও?
: পুষ্টি দপ্তর থেকে তোমার পুষ্টিকর পানীয় নিয়মিত আসে? তুমি কি সেগুলো নিয়মিত পান কর?
পুষ্টিকর পানীয় সরকারী ভাবে সকল মানুষকে দেয়া হয়। এক ধরনের নীলাভ বিস্বাদ পানীয়। এতে মানুষের শারীরিক চাহিদার সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এটি খেলে অতিরিক্ত অন্য কোন খাবার খেতে হয় না। খেতে চাইলেও পাওয়া যাবেনা। কারণ কোন খাদ্যদ্রব্য কোথাও পাওয়া যায় না। আমি বললাম, “হ্যাঁ। নিয়মিত পান করি। এই বিষয়ে কোন সমস্যা নেই”।
: পুষ্টিকর পানীয় পান করার পর তোমার কি অবসাদ তৈরি হয়?
: কি রকম?
: এই যেমন ধর, পুরো প্রক্রিয়াটি তোমার ভাল লাগছে না। অথবা বিতৃঞ্চা নিয়ে খাচ্ছ।
: এই প্রক্রিয়াটি কারোর’ই ভাল লাগেনা। কিন্তু বাঁচতে হবে এবং খেতেও হবে। এই নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই।
: তুমি সিমুলেশন নিচ্ছ ঠিক মত?
খাদ্যগ্রহণ না করলেও শারীরিক প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য মনস্তাত্ত্বিক ভাবে খাদ্য গ্রহণের সিমুলেশন নিতে হয়। একধরনের তরঙ্গ প্রবাহ সৃষ্টি করা হয় মস্তিষ্কে এতে খাদ্য গ্রহণের তৃপ্তি তৈরি হয়। সিমুলেশন না নিলে ক্ষুধা ভাব থেকেই যায়। পুষ্টি গত কোন সমস্যা না হলেও মানসিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। তাই সিমুলেশন নেয়া আইনগত বাধ্যবাধকতা। আইন মানার জন্য নয়, ক্ষুধার্ত থাকার মানসিক অশান্তি থেকে দূরে থাকার জন্য আমি নিয়মিত সিমুলেশন নেই। আমি বললাম, “হ্যাঁ নিয়মিত নেই। কোন অনিয়ম করিনা”।
: তোমাকে দেখে তাই মনে হচ্ছে। ভাল। এখন বল তোমার গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কি কোন সমস্যা হচ্ছে?
: আমার কোন গার্ল ফ্রেন্ড নেই।
: কি বল! তোমার মত এমন সুদর্শন যুবকের কোন গার্ল ফ্রেন্ড নেই?
: তোমার মত রূপবতী একজনকে পেলে হয়ত প্রস্তাব করতাম।
রিনা স্মিত হাসল। রূপবতী বলায় খুশি হয়েছে বুঝতে পারছি। রিনা বলল, তোমার কমপ্লিমেন্ট নিলাম কিন্তু তুমি আমাদের প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা ভঙ্গ করেছ। অফিসে এ ধরনের আলাপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
: তুমি কি এইটা রিপোর্ট করে দিবে নাকি? আমি জানি রিনা তা করবেনা কিন্তু ভয় পাওয়ার ভান করলাম।
রিনা হাসল। বলল, আরে না। আমি যাই। ভাল থেকো ইমন।
: বাই।
রিনা পারভিনের ছবি বাতাসে মিলিয়ে গেল। উফ্! আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। অল্পতে পার পেয়েছি মনে হল। আমার রিভলভিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলাম। সকাল নয়টায় অটোমেটিক ভাবে সকল সিস্টেম চালু হয়ে আছে। আমি এই প্রতিষ্ঠানের হিসাব ব্যবস্থাপক। ফাউল এবং যত সব যন্ত্রণামূলক কাজ। ডেডলাইন আর ডেডলাইন। এত ডেডলাইন ম্যানেজ করতে করতে অস্থির হয়ে যাই। তারপর অডিটের জ্বালাতন তো আছেই। পদে পদে অডিট। তবে ইউনিট পাই ভাল। নইলে কবে এই চাকরীর পাছায় লাথ্থি মেরে চলে যেতাম। আমি পেন্ডিং লিস্টটা ওপেন হতে বললাম। লিস্টটা ওপেন হতেই মেজাজটা আবার খারাপ হয়ে গেল। পেন্ডিং লিস্টে একটা পেমেন্ট ডেডলাইন শেষ হয়ে গেছে আঠার মিনিট আগে। আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম পেমেন্টটা দিয়ে দেয়ার জন্য। সব রকমের এপ্রুভাল নেয়া আছে। শুধু পেমেন্টটা বাকি। নাহ! আজকের দিনটা মনে হয় খারাপই যাবে। পেমেন্ট দিতে গিয়ে দেখি পার্টি পেমেন্ট একসেপ্ট করবে না। জরিমানা দাবি করে বসে আছে। সাথে সাথে যোগাযোগ করলাম পার্টির অফিসের হিসাব প্রধান রফিক ভাই এর সাথে। রফিক ভাই আমার পূর্ব পরিচিত। হৃদ্যতা পূর্ণ সম্পর্ক। রফিক ভাই কল একসেপ্ট করল। আমার হলোগ্রাফিক ছবি পৌঁছে গেল রফিক ভাই এর অফিস কক্ষে। রফিক ভাই এর অফিস কামরাটা দারুণ। চমৎকার করে সাজানো। এরকম একটা অফিসের স্বপ্ন আছে আমার। একদিন আমিও এমন একটা অফিস তৈরি করব। আমি কোন ভণিতা না করে সরাসরি বললাম, “বস, এইটা কি করলেন”?
রফিক ভাই হাসছে, “ইমন কেমন আছ”? তোমার পেমেন্ট কি আমি আটকিয়েছি নাকি? সিস্টেম আটকিয়েছে।
: আর ভাল থাকি কিভাবে। বস, একটা ব্যবস্থা করেন।
: ঠিক আছে এপ্রুভাল চাও।
: এপ্রুভাল চাইছি। আমার সিস্টেম সাথে সাথে এপ্রুভালের জন্য সকল ডকুমেন্ট তৈরি করে রফিক ভাই এর নিকট পাঠিয়ে দিল।
রফিক ভাই এপ্রুভাল ডকুমেন্ট গুলো একসেপ্ট করে নিয়ে বলল, “যাও এবার নিয়ে নিলাম। পরের বার কিন্তু আমি আর পারব না। হায়ার অথরিটির অনুমোদন লাগবে। সাবধানে থেকো।
: বস শরীর ভাল? আমার কথোপকথন তরল স্টাইলের হলেও রফিক ভাইকে আমি মোটামুটি শ্রদ্ধা করি। রফিক ভাই সেইটা বুঝতে পারে। আমাকে স্নেহও করে।
: ভাল আছি ইমন। আমি একটু ব্যস্ত হয়ে যাব, কিছু মনে করো না। তোমার সাথে পরে কথা হবে।
: কী যে বলেন বস্। আপনি তো ভয়ানক ব্যস্ত মানুষ। এমনিতেই আপনার অনেক সময় নিয়ে নিয়েছি। আমি যাই।
আমি আমার কামরায় ফিরে এলাম। আবারও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। তারপর সারাদিন নিয়মমাফিক কাজ করে দিনটা শেষ করলাম। পাঁচটা বাজতেই সিস্টেম অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেল। আমি অফিস কামরা থেকে বের হয়ে আমার স্টাডিতে ফিরে আসলাম। মিরা নিজের থেকে আমার স্টাডির প্রোফাইল পরিবর্তন করে সমুদ্র সৈকতের প্রোফাইল লোড করে রেখেছে। সমুদ্রের বাতাসের একটা আমেজ তৈরি করা আছে। আমি সমুদ্রের তীরে গিয়ে দাঁড়ালাম। বাতাসে আমার চুল উড়ছে। সূর্য নতজানু। কিছুক্ষণ পরে ডুবে যাবে। মায়াবী একটা একটা পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। সারাদিনের ক্লান্তি কেটে গেল। মিরাকে ধন্যবাদ দিলাম। মিরা বলল, “তোমার দিন আজকে ভাল যায়নি মনে হচ্ছে”।
: হ্যাঁ অনেক ঝামেলা গেছে আজকে। আমি ভার্চুয়াল বালুচরের বালুর মধ্যে বসে পড়ালাম।
: ইমন, তোমার বন্ধু সায়েম যোগাযোগ করতে চায়। তুমি কি সমর্থন কর? আমার কিন্তু তোমার এই বন্ধুটিকে একদম পছন্দ নয়।
আমি হাসলাম, কেন বলতো।
: কেমন যেন চালবাজ ধরনের।
: থাক রাগ করোনা। ওকে আসতে দাও।
সায়েম এর ছবি ভেসে উঠল। আমি ভাল করে তাকালাম সায়েমের দিকে। আসলেই ও এক রকম চালবাজ ভঙ্গি করে। সায়েম আমার সাথে কোন কথা না বলে মিরাকে জিজ্ঞাসা করল, মিরা খবর কি?
: শুভ বিকাল সায়েম।
: শুভ বিকাল মিরা।
সায়েম আমার পাশে এসে বালুর মধ্যে শুয়ে পড়ল। অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলল, “চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি”।
: কোথায় যাবি?
: নীরা ব্লকে একটা নতুন সিমুলেশন ক্যাফে হয়েছে। চালু হতে না হতেই দারুণ জমজমাট। সিমুলেশনের দামও তেমন বেশী না। কিন্তু যে একবার ক্যাফেতে গেছে। তার মুখে সারাক্ষণ এর সুনাম। প্রচণ্ড ভীর। বলিস তো আমার মটর সাইকেলটা নিয়ে আসি।
: যা নিয়ে আয়। দেখি কেমন তোর সিমুলেশন ক্যাফে।
সায়েমের একটা প্রাগ ঐতিহাসিক মটর সাইকেল আছে। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে প্রায় মোষের মত ভঁ ভঁ করে চলতে থাকে। মটর সাইকেলটা নিয়ে সায়েমের খুব গর্ব থাকলেও আমি জানি বন্ধু বান্ধব অনেকেই এটা নিয়ে হাসা হাসি করে। আমি ওর মনে কষ্ট না দেয়ার জন্য প্রশ্রয় দেই। মাঝে মাঝে ওর মটর সাইকেলের পেছনে বসে এখানে ওখানে যাই। মিরা আমাকে খুবই নরম সুরে বলল, “ইমন তুমি সায়েমের মটর সাইকেলে না চড়লে হয় না”। আমি হাসলাম। বললাম, “কি ব্যাপার মিরা, তুমি দেখি বউ এর মত আচরণ করা শুরু করলে। তুমি থাম তো”। পনের মিনিটের মাথায় আমার দরজার কাছে সায়েমের মটর সাইকেল এসে পৌঁছে গেল।
ক্যাফের ভিতর প্রবেশ করার পর। আমার কাছে পরিবেশটা কেমন যেন অস্বাভাবিক ঠেকল। প্রচুর ভীর। সবার বয়স ২০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। সবাই কেমন যেন কেমন অস্বাভাবিক আচরণ করছে। আমি সায়েমকে জিজ্ঞাস করলাম, তুই কি আগেও এখানে এসেছিস।
: হ্যাঁ। প্রতিদিনই আসি।
: আমার কাছে পরিবেশটা ভাল ঠেকছে না।
: কেন?
: সবাইকে কেমন যেন নেশাগ্রস্থ মনে হচ্ছে।
: আমাকেও নেশাগ্রস্থ মনে হচ্ছে।
সায়েমের মধ্যেও কেমন একটা পরিবর্তন হয়েছে। আগে খেয়াল করিনি। চালবাজি ভাব মনে হয়েছে। কিন্তু সায়েমকেও নেশাগ্রস্থ লাগছে এখন। আমি বললাম, হ্যাঁ তোকেও তেমন লাগছে।
: আরে ধুর! বাদ দে। একটা সিমুলেশন নিয়ে দেখ কেমন লাগে। মনে হবে এই পৃথিবীর তুই এক স্বাধীন রাজা। অপার তোর স্বাধীনতা।
: না রে আমার সিমুলেশন নিতে ইচ্ছে করছে না। তুই আমাকে নামিয়ে দিয়ে আয়। নয়তো আমি নিজেই চলে যাচ্ছি।
: কি বলছিস। বন্ধুর সাথে এতদূর এসে তাকে ফেলে চলে যাবি।
: ফেলে চলে যেতে চাইছে কে? তুই ও আমার সাথে ফিরে চল।
: সিমুলেশন না নিয়েই ফিরে যাব? তোর মাথা খারাপ হয়েছে?
: আচ্ছা ঠিক আছে তুই সিমুলেশন নে যত খুশি আমি এখানে বসছি।
: তুই নিবি না।
আমি জেদের সাথে বললাম, না। সায়েম কথা বাড়াল না, সিমুলেশন নিতে চলে গেল। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। সায়েমের কোন খবর নেই। চারিদিকে অস্বাভাবিক কোলাহল। প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। কেন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটবেই।
দুই.
মিরার কথা শোনাই মনে হয় ভাল ছিল। শুনলে আর এখন পুলিশ স্টেশনে বসে থাকতে হতো না। সামনেই বড় একটা স্ক্রিনে লাইভ নিউজ টেলে-কাস্ট হচ্ছে। বসে বসে নিউজ দেখছি। পুলিশের বিশাল এক অভিযানের বিশদ বিবরণ দেখানো হল। কিভাবে একটি সিমুলেশন ক্যাফে ড্রাগ সিমুলেশন তৈরি করে তরুণ তরুণীদের নেশাসক্ত করে ফায়দা লুটছিল তার বর্ণনা দেয়া হল। সিমুলেশন ক্যাফের মালিককে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তার সচিত্র প্রতিবেদন দেখানো হল। বিভিন্ন মনোবিজ্ঞানীর সাক্ষাতকার দেখানো হল। বসে বসে প্রতিবেদন গুলো দেখলাম। আর নিজেকে গাধা মনে হতে লাগল।
মাঝ বয়েসি ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন একজন সুপুরুষ পুলিশ অফিসার আমার সামনে এসে দাঁড়াল। আমি উঠে দাঁড়ালাম। পুলিশ অফিসার আমার কাঁধে হাত রেখে বলল, “মাই বয়, তুমি যেতে পার। তোমার ব্রেইন স্ক্যানিং এ কোন অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে বন্ধু বাছাই করার সময় সাবধান থাকবে। গুড লাক”।
সায়েম সহ সকল নেশাগ্রস্থ ছেলে মেয়েকে কারেকশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। তাদের মস্তিস্ক স্কেন করে ফরমেট করা হবে। খারাপ স্মৃতিগুলো মুছে নতুন করে স্মৃতি দেয়া হবে। খুবই বেদনাদায়ক এবং কষ্টকর একটা প্রকৃয়ার ভিতর দিয়ে তাদেরকে যেতে হবে। তারপর স্মৃতি হারানোর কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে জীবনের অবশিষ্ট সময়। আমার সাথে তার সব স্মৃতিও হয়তো সে ফিরে পাবে না। সায়েমের জন্য আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। সায়েম আসলে খুব ভাল বন্ধু তবে একটু বোকা। আমি পুলিশ স্টেশন থেকে বের হয়ে আসলাম। কোন ট্রান্সপোর্ট না নিয়ে হাটতে থাকলাম একা একা, এটাই তো স্বাধীনতা।
১৬ জানুয়ারী - ২০১২
গল্প/কবিতা:
৩২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪