ক্রাইম

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০১২)

হাবিব রহমান
  • ৪২
  • ২১
তারা দুই জনই স্ব স্ব ক্ষেত্রে অসামান্য এবং তুখোড়।

রিরান বায়োমেকানিক্স এক্সপার্ট। এ বিষয়ে তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। কিন্তু বিষয়টা তার কাছে ফাঁকা রাস্তায় হেটে যাওয়ার মতই সহজ। তবে বিষয়টা কাজে লাগানোর মত বুদ্ধি তার নেই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকলে এর মাধ্যমে হয়তো সে ভাল রুটি রুজির ব্যবস্থা করতে পারত। আর তার বন্ধু সিমন একজন ক্রিমিনাল। এমন সব ক্রাইম প্লান সে করে যা রিরান চিন্তাও করতে পারে না। বেশ কিছু অপরাধ করেও সে দিব্বি ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সব টেকনোলজির কিছু লজিক এবং ফিলোসফি থাকে। টেকনোলজির আদোপান্ত সে ভাল না বুঝলেও টেকনোলজির লজিক আর ফিলোসফি সে খুব ভাল বুঝতে পারে। রিরান সিমনের লজিক আর ফিলোসফি গুলো কাজে লাগিয়ে বায়োমেকানিক্সের এমন কিছু টেকনোলজি তৈরি করেছে যা একেবারে তাঁক লেগে যাওয়ার মত। কিন্তু টেকনোলজি গুলো মানব কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণে বেশী লাগে বলে এই গুলোর কোন বাজার মূল্য নেই। নয়তো এরা দুইজন পৃথিবীর সেরা ধনীদের মধ্যে নাম লিখিয়ে ফেলতে পারতো। তবে ধনী হওয়া মনে হচ্ছে এখন আর কঠিন হবে না। কারণ এখন যে প্রজেক্টটা নিয়ে তারা কাজ করছে তা খুবই চমকপ্রদ। যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে তবে প্রথম দানেই ম্যালা কামাই হবে।

কয়েকদিন আগের কথা। সিমন রিরানের বাসায় আসল। রিরানের বাসাটা হচ্ছে একটা ওয়ার্কশপ। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিছানা, সোফা, চেয়ার এবং ঘরের সব জায়গায় ছড়ানো ছিটানো আছে। সিমন একটা চেয়ার থেকে কিছু যন্ত্রপাতি সরিয়ে সেখানে বসল। সিমনকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। রিরান বুঝতে পারছে সিমন আসলে নতুন কোন প্রজেক্টের কথা ভাবছে। অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর সিমন বলল, আচ্ছা রিরান তুই তো বায়োমেকানিক্সে এক্সপার্ট, হলোগ্রাফিক্স কমিউনিকেশন সম্পর্কে আমাকে একটু বুঝিয়ে বলতো?

: কোন বিষয়টা?

: মনে কর তোর সাথে কেউ কমিউনিকেট করল, তাকে তো তোর এই খানে দেখা যাবে।

: হ্যাঁ দেখা যাবে। এটা আবার কি বুঝতে চাচ্ছিস? তুই তো এই টা জানিস। তুই যেমন আমার কাছে আসিস আমিও তেমন তোর কাছে পৌঁছে যাই যখন আমরা হলোগ্রাফিক কমিউনিকেশনের মাধ্যমে যোগাযোগ করি।

: না আমি টেকনোলজিটা বুঝতে চাচ্ছি। মনে কর আমি তোর কাছে আসলাম, আমিতো সশরীরে এখানে আসলাম না তাহলে যে আসল সেইটা আসলে কি?

: ও! সেইটা হল, বায়োমেট্রিক্স সিগনাল। তোর হাতে যে বায়োমেট্রিক্স রিং আছে তার মাধ্যমে তোর শরীরের সিগনাল ইলেক্ট্রনিক চ্যানেলের মাধ্যমে আমার এইখানে পৌঁছে যায়। আমার এই খানে যা কিছু আছে তাই তুই দেখতে পাবি স্পর্শ করলে তার অনুভূতিও পাবি। খুব সোজা।

: সিমন হাসল। হ্যাঁ সোজাই তো। আচ্ছা ধর তোর সিগনাল এই খানে আসছে, সেই সিগনালটাকে কোন ভাবে আটকে ফেলা যায় না।

: সিগনাল জ্যামিং তো করাই যায়। সিগনালটাকে আটকে ফেলাও মনে হয় সম্ভব। এই রকম কোন প্রোগ্রাম নেই। একটা প্রোগ্রাম বানাতে হবে।

: আবার ধর যে, তোর সিগনালটা আটকে ফেলা হল, সেই ক্ষেত্রে কমিউনিকেশন তো বিচ্ছিন্ন হবেনা, তাইনা?

: হ্যাঁ যে কোন পাশ থেকে কমিউনিকেশন অফ না করলে বিচ্ছিন্ন হবেনা। আর যার সিগনাল আটকানো হবে সেতো হ্যাক করে যাবে সেতো কমিউনিকেশন অফ করতে পারবেনা।

: যে সিগনালটাকে আটকানো হবে সেটাকে কি কন্ট্রোল করা সম্ভব?

: মনে হচ্ছে চেষ্টা করলে কন্ট্রোল করা যাবে।

: কোন সিগনালকে বাইপাস করে অন্য যায়গায় নিয়ে যাওয়া কি সম্ভব?

: কঠিন তবে অসম্ভব না।

হঠাৎ রিরান বুঝতে পারল আসলে সিমন কি ফন্দি করেছে। সবকিছু খোলাসা হয়ে গেল। সিমন আসলে কোন ধনকুবের এর সিগনাল হ্যাক করতে চাচ্ছে। সিগনালটাকে আটকে তার কাছ থেকে ইউনিট আদায় করার চমৎকার একটা ফন্দি। মনে মনে সিমনকে নমস্কার করল রিরান। সিমন আসলে সব কিছু বুঝেই তার সাথে আলাপ করল যাতে সে বিষয়টা ধরতে পারে। টেকনোলজি-কাল লজিক এবং ফিলসফিতে ওর মাথা একদম ক্লিয়ার। সিমন বলল, দোস্ত তাহলে নতুন প্রজেক্টের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। আমারা বিগ ফাইভ এর যে কোন একজন কে হ্যাক করছি।

টানা দুই মাস কাজ করে রিরান একটা প্রোগ্রাম ডিজাইন করে ফেলল। স্যাম্পল চেকিং হিসাবে সিমনের সিগনাল হ্যাক করে দেখল। সিগনাল বাইপাস করতে গিয়ে রিরানের ঘাম ঝরে গেল। বিষয়টা অনেক জটিল। অগণিত সিগনাল থেকে একটা সিগনাল বেছে বের করা অনেক কঠিন। সিগনাল বাইপাস করার জন্য প্রোগ্রামটা দাড় করাতেই বেশী সময় লেগে গেল। কিন্তু কাজটা করতে গিয়ে রিরান দারুণ আনন্দ পেল। অবশেষে সফলও হল। প্রোগ্রামটা দাড় করানোর পর যে কোন সিগনালকে সিস্টেম খুব সহজেই আলাদা করতে পারছে। সিমনের সিগনালকে বাইপাস করে রিরানের ওয়ার্কশপে ডাউন লোড করে দুইজনে অবৈধ সবুজ পানীয় খেয়ে মাতাল হয়ে মহানন্দে নাচতে থাকল। সবচেয়ে আনন্দ পেল যখন তারা বুঝতে পারল যে, তাদের এই সব অবৈধ কার্যকলাপ নিরাপত্তা বিভাগের চোখকে সহজেই ফাঁকি দিতে পারবে।

পরের সপ্তাহ দুইজনে মিলে বিগ ফাইভ এর সিগনাল ট্র্যাক করে তার একটা তালিকা করে ফেলল। এই সব সিগনাল থেকে ক্রেয়নের সিগনালটাকে তারা বেছে নিল। ক্রেয়ন পৃথিবীর দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি। প্রিটন নামে তার রোবটই এখন বাজারে সবচাইতে বেশী জনপ্রিয়। তার ল্যাব থেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মডেলের রোবট বাজারে আসছে। আর প্রডাক্ট গুলো বাজারে আসতে না আসতেই একেবারে হট কেক। কিন্তু লোকটা একটু অসাবধানী আর আড্ডাবাজ। তার অনেক বন্ধুবান্ধব। অনেকের সাথেই তার হলোগ্রাফিক কমিউনিকেশন। বিগ ফাইভের মধ্যে তার হলোগ্রাফিক কমিউনিকেশনই সবচাইতে বেশি। এখন শুধু অপেক্ষা সেই মহেন্দ্র ক্ষণের। তবে সিমন চাইছে আর একবার পুরো বিষয়টা ক্ষতিয়ে দেখতে। কোন রকম তাড়াহুড়া করতে নারাজ ও।

মঙ্গলবার। সিগনাল ডাউন লোড করার জন্য রিরানের ওয়ার্কশপটাকেই বেছে নিয়েছে সিমন। টেকনিক্যাল কোন সমস্যা হলে যাতে দ্রুত তার ব্যবস্থা নেয়া যায়। দুই জনই যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে তাদের কাজ শুরু করল। দিনের শুরুতে পুরো সিস্টেমটা আরেক বার দেখে নিল তারা। একটিভটি প্রসেস ফ্লো-চার্ট রিভিউ করে নিয়ে দায়িত্ব গুলো ভালভাবে আবার বুঝে নিল। গুরুত্বপূর্ণ টুলস এবং ইকুইপমেন্টের তালিকাটি এবং তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে আবার মাথায় নিয়ে নিল। তারপর দুইজন একটু থিতু হয়ে বসল। রিরানের ওয়ার্কশপটাকে যথেষ্ট ভদ্র চেহারা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। হাজার হোক পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ একজন অতিথি এই ঘরে পদার্পণ করতে যাচ্ছেন। রিরান তার টেবিলে রাখা অনেক গুলো মনিটরের সামনে গিয়ে বসল। সিমন রিরান কে একটা আপার ফাইভ দিয়ে বলল, দোস্ত লেট স্টার্ট। রিরান একটু টেনশনে পড়ে গেছে। কিছুটা আসস্ত হল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মনিটরের অসংখ্য ডাটার মধ্যে ডুবে গেল। সিমন বুঝতে পারেনা এই সব অগণিত ডাটার ভিতরে রিরান কি বুঝতে পারে।

সিমন উত্তেজনায় প্রায় কাঁপছে। কিন্তু তার চেহারা দেখে তা বোঝার উপায় নেই। রিরান ডুবে আছে ডাটার মধ্যে। হঠাৎ রিরান নড়েচড়ে বসল। সামনে রাখা কিবোর্ডের উপর ঝড়ের বেগে হাত চলতে থাকল। সিমন শক্ত হয়ে বসে রইল। উত্তেজনা টুকু নিয়ন্ত্রণ করে পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিল। রিরানের পেছনে বাতাসে একটা প্রতিকৃতি ঝিরঝির করে অবশেষে স্পষ্ট হয়ে উঠল। ক্রেয়নের সিগনাল ডাউন লোড হয়ে গেছে।

ক্রেয়ন বিস্মিত হয়ে চার পাশ দেখছে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা। সিমন তার হাতের কাছে রাখা কিবোর্ডে কয়েকটি বোতাম টিপে সিগনাল জ্যামিং প্রোগ্রামটা রান করে দিল। সিগনালটি হ্যাক করে গেছে। সিমন ভাল করে তাকাল ক্রেয়নের দিকে। মাঝ বয়েসি সপ্রতিভ একজন ব্যক্তি। তার ভাব ভঙ্গিতেই প্রমাণ করছে সে পৃথিবীর দ্বিতীয় ধনকুবের। ক্রেয়ন ধাতস্থ হয়ে এক নাগারে কথা বলে চলল, কি বিস্ময়কর আমি এখানে কেমন করে এলাম? তোমরা কারা? আমি তো তোমাদের সাথে কমিউনিকেট করিনি। দেখো কি ভয়ংকর সিস্টেম বাগ। আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আমি এখনই কমিউনিকেশন অফ করে দিচ্ছি। সত্যি আমি দুঃখিত। তোমরা কিছু মনে করোনা। তোমাদেরকে বিরক্ত করলাম।

সিমন গলা কেশে বলল, সরি স্যার, আসলে আমরাই আপনাকে এখানে ডাউন লোড করেছি। তাছাড়া আপনি এই কমিউনিকেশন অফ করতে পারবেন না। আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। একমাত্র আমরাই এই কমিউনিকেশন অফ করতে পারব। সত্যি বলতে কি, স্যার আমরা আপনাকে কিডন্যাপ করেছি।

: কি বলছ তোমরা? এটা কি ভাবে সম্ভব? ক্রেয়ন বিস্মিত হয়ে দুই যুবকে দেখছে। রিরান বুঝতে পারছে ক্রেয়ন কমিউনিকেশনটি অফ করার চেষ্টা করছে। সিমন বলল, স্যার আমরা বিষয়টাকে সম্ভব করেছি। আমরা চাইলে আপনার এই সিগনালের মাধ্যমে আপনার হার্ট বিট পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে পারি। তবে আমরা সেই চেষ্টা করবোনা যদি আপনি আমাদেরকে সহায়তা করেন। স্যার প্লিজ কোন অন্যরকম চিন্তা করবেন না। আমরা যা করতে বলব দয়াকরে করবেন।

: তোমরা কি চাও?

: আপনার একাউন্ট থেকে ৩০ মিলিয়ন ইউনিট আমাদের একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিন। বলেই একটা কম্পিউটার ক্রেয়নের দিকে এগিয়ে দিল সিমন।

: কি বলছ, ৩০ মিলিয়ন ইউনিট। তোমরা ত্রিশ মিলিয়নের অর্থ বোঝ? ক্রেয়ন কম্পিউটার এর ধারে না গিয়ে পাশের সোফায় গিয়ে বসল। বলল, আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি তোমরা জিনিয়াস তার চাইতে চল একটা ডিল করি।

: সরি স্যার নেগোসিয়েশনের জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই আমাদের হাতে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপনি ইউনিট ট্রান্সফার না করলে আমরা যা করতে চাইছি না তাই করতে বাধ্য হব।

: তোমরা যা করে দেখিয়েছ তার বাজার মূল্য যাচাই করা যাক, কি বল? অবশ্য এর মধ্যে আমি কোন কল্যাণকর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। এই টা কোন মার্কেটে-বল প্রোডাক্ট না। কিন্তু তোমাদের কাজে লাগিয়ে আমি ভাল কোন ব্যবসা বের করতে পারব মনে হচ্ছে। সেই ব্যবসার প্রধান দায়িত্ব তোমাদের দিলাম এবং তার আর.এন.ডি সহ মার্কেটিং এর দায়িত্ব আমার। যার মূল্য ৩০ মিলিয়নের চেয়ে কোন অংশে কম হবেনা। ভেবে দেখ। অফারটা দিয়ে দিল ক্রেয়ন। সে একজন তুখোড় ব্যবসায়ী এবং বোঝাই যাচ্ছে দূর্দান্ত সাহসী। এমন পরিস্থিতিতেও ব্যবসা সংক্রান্ত আলোচনা করে যাচ্ছে এবং ঘটনার নিয়ন্ত্রণ তার কাছে নিয়ে যেতে চাইছে। বিষয়টা চিন্তা করে ক্রেয়নের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে গেল সিমনের। রিরান নিশ্চুপ দুই জনের আলোচনা শুনছে এবং অবাক হয়ে যাচ্ছে।

এরিন ছুটে গেল তার ম্যানেজারের রুমে। এরিন হলোগ্রাফিক কমিউনিকেশনের কেরিয়ার কোম্পানি ইরিয়নে কাজ করে। কোন রকম ভণিতা না করে সরাসরি বলল, স্যার ভয়ংকর একটা ঘটনা ঘটেছে। আমার মনে হচ্ছে এখনই এর সমাধান না করতে পারলে আমরা বিশাল একটা ব্যবসা তো হারাবোই তাছাড়া কোম্পানির গুড উইল ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। ম্যানেজার নড়েচড়ে বসল। জানতে চাইল, এত উত্তেজিত হচ্ছ কেন? বিষয়টা খুলে বল।

: স্যার আপনি তো জানেন, ক্রেয়ন আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন সাবস্ক্রাইবার।

: হ্যাঁ কি হয়েছে ক্রেয়নের?

: স্যার উনি যে ডেসটিনেশনে কানেক্ট করতে চেয়েছিলেন সেখানে কানেক্টেড হন নাই। কিন্তু ওনার কানেকশন ঠিকই স্টাবলিশ হয়েছে। আমার মনে হচ্ছে উনি অন্য কোন ডেসটিনেশনে ডাউন লোড হয়ে গেছেন।

: কি বলছ আবোল তাবোল। এটা কি সম্ভব? তাছাড়া তাই যদি হয় উনিতো ইচ্ছে করলেই কানেকশন বন্ধ করে দিতে পারেন। উনি কি কমপ্লেইন করেছেন?

: স্যার এমনও তো হতে পারে তিনি কানেকশন অফ করে দিতে পারছেন না। আপনি চিন্তা করেন কানেকশন অফ না করতে পারলে উনি কিন্তু একরকমের বন্দি।

: তোমাকে আমি বহুবার বলেছি, এই সব ফিকশন না পড়ার জন্য। এই সব ছাই পাশ পড়ে পড়ে তোমার মাথাটা একদম বিগড়ে গেছে। যা কখনো সম্ভব নয় তাই নিয়ে ভাবতে থাক। যাও ডেস্কে যাও নিজের কাজ করতে থাক।

এরিন মন খারাপ করে ম্যানেজার এর রুম থেকে বের হয়ে আসল। মনে মনে একটা গালি দিল ম্যানেজারকে। এই রকম একটা সিরিয়াস বিষয়কে ম্যানেজার কোন গুরুত্বই দিল না। নিজের ডেস্কে এসে কিছুক্ষণ চুপ মেরে বসে থাকল। কিন্তু এরিনের মনের ভেতর খচখচ করতে থাকল। কেন যেন মনে হচ্ছে কোথাও কোন গোলমাল আছে। এরিন ক্রেয়নের কানেকশনটা আবার রিভিউ করার জন্য কাজ শুরু করল। ও আসলে দেখতে চায় ক্রেয়নের সিগনাল আসলে কোন ডেসটিনেশনে ডাউন লোড হয়েছে।

পাক্কা পঁয়তাল্লিশ মিনিট ক্রেয়ন এটা সেটা বলে পার করে দিল। ইউনিট ট্রান্সফারের ধার দিয়েও গেলনা। যদিও সে বুঝতে পারছে সে একটা বিশাল ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যুবক দুইটি ইচ্ছে করলে ভয়ংকর কোন ক্ষতি করে ফেলতে পারে। ক্রেয়ন পোড় খাওয়া বাস্তববাদী মানুষ। মানুষকে খুব সহজেই চিনতে পারে। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে, এই যুবকদের পক্ষে ভায়োলেন্ট কিছু করা সম্ভব না।

সিমন প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। ঝাঁঝের সাথে বলল, মিঃ ক্রেয়ন তুমি অযথাই সময় নষ্ট করছ। তোমাকে আর মাত্র ১০ মিনিট সময় দেয়া হল। এর মধ্যে ইউনিট ট্রান্সফার না হলে আমাদের আর কিছু করার থাকবে না। রিরানের দিকে তাকিয়ে সিমন বলল, রিরান গেট রেডি। আই থিংক ইটস্ টু লেট। রিরান তার কি বোর্ডের দিকে নজর দিল। শুরুতে পুরো ব্যপার টা এনজয় করলেও এখন বিষয়টা ভিন্ন খাতে মোড় নিচ্ছে বলে মনে হল। মনিটরের দিকে তাকিয়ে একটু অবাক হল। ভাল করে দেখার চেষ্টা করল। তথ্যটা ভাল ভাবে যাচাই করার বুঝতে পারল। কেউ হয়তো ক্রেয়নের কানেকশনটা নিয়ে কাজ করছে। হয়তো কানেকশনটা অফ করার চেষ্টা করছে। কানেকশনটা যাতে অফ না হয়ে যায় তার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ল রিরান। সিমন জানতে চাইল, কি হল রিরান?

: কে যেন সিগনালটা ডিস্কানেক্ট করার চেষ্টা করছে।

: কি বলছিস এই সিগনাল হ্যাক কারার বিষয়টা করো জানার কথা নয়।

: বুঝতে পারছিনা। মনে হচ্ছে আমরা সিগনালটাকে আর আটকে রাখতে পারবোনা।

দুইজনই দেখল, ক্রেয়নের সিগনালটা ঝপ করে বন্ধ হয়ে গেল। ক্রেয়নের ছবিটাও বাতাসে মিলিয়ে গেল। ধ্যাৎতুরি শালা বলেই পাশের একটা যন্ত্রে জোরসে একটা লাথ্থি মারল সিমন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারল তাদের আস্তানা পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। পুলিশ মাইকে তাদেরকে সারেন্ডার করতে বলছে। সিমন সোফায় গিয়ে ধপ করে বসে পড়ল। দুই হাত দিয়ে মুখ ঢাকল। এই ভাবে হার স্বীকার করতে হবে কল্পনাও করেনি। কি করবে বুঝতে পারছেনা রিরান। কিছুক্ষণের মাঝে পুলিশ দুইজনকে বন্দি করে নিয়ে গেল।

পুলিশ সুপারের রুমে বসে আছে সিমন আর রিরান। পুরো ঘটনটা স্টাডি করে নিয়ে সুপার নির্বাক হয়ে দুই জনকে দেখল কিছুক্ষণ। স্বগোক্তি করার মত করে বলল, মেধার কি ভীষণ অপচয়। তারপর ওদের উদ্দেশ্যে বলল, তোমাদের বিরুদ্ধে কোন চার্জ দাখিল করা হয়নি। এখন যাও এখান থেকে। আর কোনদিন যদি তোমাদের পাই মনে রেখ আমি নিজেই তোমাদের বিরুদ্ধে চার্জ দাখিল করব।

ক্রেয়ন তার সেক্রেটারিকে বলল, আজকে আমার জন্য কোন কাজ রাখবেনা।

: স্যার আপনার আজকে দুইটি গুরুত্ব পূর্ণ মিটিং আছে।

: এখনই বাতিল করে দাও।

: কিন্তু স্যার.....। ক্রেয়ন তাকে থামিয়ে দিল। বলল, যা বলছি কর। আমি আজকে তিনজন গুরুত্ব পূর্ণ মানুষের সাথে সময় কাটাতে চাই। তুমি জান তারা কারা?

: না স্যার।

: ওদের নাম, এরিন, রিরান আর সিমন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ইউশা হামিদ অনবদ্য রচনা ও কল্পনা শৈলী ! শুভ কামনা অশেষ ।
ভাবনা পড়তে পড়তে কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম !
রোজিনা রোজী এরিন, রিরান আর সিমন। ----- চরিত্র গুলো খুব সুন্দর সাজিয়েছেন । শুভেচ্ছা জানবেন ভাইয়া ।
তানজিয়া তিথি ভাইয়া অনেক ভাল লিখেছেন ! শুভেচ্ছা ।
ম্যারিনা নাসরিন সীমা কিচ্ছু কওয়ার নাই তোতা মুখ ভোতা ! প্রিয়তে যোগ করলাম !
জাফর পাঠাণ এরিন, রিরান আর সিমন /// ভাই হাবিব এদের সাথে আমাদের একটু সময় কাটানোর ব্যাবস্থা করে দিলে হয়না ? না থাক লাগবেনা ....ওদের সাথে এখানেইতো ১০ মিনিট একসাথে থাকলাম।লেখককে মোবারকবাদ ।
মোঃ আক্তারুজ্জামান সুন্দর এবং সার্থক রচনা| রচনা শৈলী ভীষণ সাবলীল এবং অনবদ্য| লেখাটা পড়তে পড়তে আমার মনে হয়েছে আপনি গোয়েন্দা কাহিনীতেও খুব সফল হবেন| ধন্যবাদ|
আজিম হোসেন আকাশ ভাল লাগল। আমার লেথা বিজ্ঞানের চেতনা কবিতাটি ভাল লাগলে ভোট প্রদান করুন ও পছন্দের তালিকায় নিন, অন্যথায় নয়।
জুনি দাস এত বড় লেখা পড়তে আমার বেশ সময় লাগে.পরে মনে হলো আমার ভালো লাগলো.সুন্দর লেখা.
মোহাঃ সাইদুল হক ভালো লাগলো গল্পটি। শুভ কামনা রইলো।

১৬ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৩২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী