এক।
হন হন করে হেটে গলিটা পার হয়ে গেলো রন। ওর চোখ দুটো ঢাকা আছে কালো রং এর আইভাইস* এ। এটি একটি ডিভাইস যা তার করোটির সাথে স্থায়ী ভাবে লাগানো আছে। মস্তিষ্কের টেম্পোরাল নামে যে হাড় রয়েছে সেটার সাথে সংযুক্ত। আইভাইস আলোর তরঙ্গকে ধারণ করে, ব্রেইনের যে নিউরন গুলো দৃষ্টি শক্তির ভূমিকায় থাকে সেগুলোর সাথে সিনক্রোনাইজ করে সিগনাল পাঠাতে থাকে। নিউরন গুলো সিগনাল গুলো নিয়ে, জন্মান্ধ রনকে দেখতে সহায়তা করে। ডিভাইসটির উপর দিকে সারিবদ্ধ ভাবে ইআরটি* লাইট লাগানো থাকে, দিনের আলোতে সেগুলোকে জ্বলতে না দেখা গেলেও রাতের বেলা জ্বলতে দেখা যায়। একেবারে বিড়ালের চোখের মত। আদতেও বিড়াল চোখের মত দিনের আলোর চাইতে রাতে ইনফ্রা রেড তরঙ্গকে ধারণ করে ডিভাইসটি ভাল কাজ করে।
রন গলির আঁধারে একটি দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পড়লো। হাতের ইশারায় আইভাইসকে বন্ধ করে নিলো, যাতে ইআরটি লাইটের আলো কেউ দেখতে না পায়। অবিশ্বাসের এই পৃথিবীতে সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে, কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। কে যেন তার পিছু নিয়েছে।
কেউ একজন দৌড়ে এসে সেই দেয়ালটার আড়ালেই লুকিয়ে পড়ল। অন্ধকারে রনকে দেখা সম্ভব নয়। নিঃশব্দে কিছুটা সরে আসল ও, যাতে তার শরীরে না লাগে। শ্রবণ আর ঘ্রাণ ইন্দ্রিয় গুলো সতর্ক হয়ে উঠেছে। জন্মান্ধ বলে, তার মগজ অন্য সব ইন্দ্রিয় গুলোকে অধিক কার্যকর করে তুলেছে। শব্দ ও ঘ্রাণ শক্তি ওর খুবই প্রখর। মানুষের শরীরের গন্ধে সে তাদের দৈহিক গড়ন সম্পর্কেও ধারনা করতে পারে। গন্ধে বুঝতে পারল, আগুন্তক একটি মেয়ে। দৌড়ানোর কারণে হাঁপাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে অনেক ভয় পেয়েছে সে। হাঁপানোর শব্দটাও যেন না হয়, তার জন্য মাঝে মাঝে নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলছে।
দু’জনই দেয়ালে লেপ্টে রইলো। তাড়া করে ফেরা সাইপস* এর দলটা গলিটাতে ডুকে পড়েছে। আধা যান্ত্রিক এই মানুষের দলটি পৃথিবীটাকে বিষাক্ত করে তুলেছে। রন যদিও এদেরকে মানুষ বলতে নারাজ। সাইপস গুলো এয়ারস্কিট* এ চেপে অসভ্য জানোয়ারের মত চিৎকার করতে করতে ছুটে আসছে। এয়ারস্কিট গুলো মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাটিয়ে বাতাসে ভেসে বেড়ায়, দেখতে অনেকটা স্কেট বোর্ডের মত। একটা বোর্ড একজনকে বহন করে। দক্ষতার সাথে এর গতির সাথে শরীরকে সমন্বয় করতে হয়, এই অসভ্য সাইপস গুলো যেটাতে দারুণ পারদর্শী।
ভয়ে দুজনই দেয়ালে আরো লেপ্টে গেল, নীলচে আলো ছড়িয়ে দলটা ওদেরকে পার হয়ে যাওয়ার সময় মেয়েটা আরেকটু ভিতরে ঢুকতে গিয়ে রনের গায়ে ধাক্কা খেল। স্বয়ংক্রিয় ভাবে আইভাইসটি চালু হয়ে ইআরটি লাইট গুলো জ্বলে উঠলো। বিদ্যুৎ বেগে রন চিৎকার দেয়ার আগেই মেয়েটির মুখ চেপে ধরতে পারলো। কানের কাছে, সিস সিস বলে আশ্বস্ত করতে করতে দ্রুত ইশারার মাধ্যমে আইভাইসটি অফ করে নিল। সাইপস দের দলটা দূরে সরে গেছে, ওদের চিৎকারের শব্দ ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। মেয়েটা ওর বাহু থেকে ছোটার জন্য ছটফট করছে, রন তার কানে আবার সিস সিস শব্দ করে বলল, কোন ভয় নেই, কোন ভয় নেই, তারপর তাকে ছেড়ে দিয়ে দুই হাত তুলে তাকে শান্ত হতে ইশারা করলো। আইভাইসটি চালু করতেই মেয়েটাকে দেখতে পেল ও। ইনফ্রা রেড তরঙ্গে যতটুকু বুঝল, আঠারো উনিশ বয়েসের তরুণী সে।
: তুমি কে? সাইপস?
ভীত কণ্ঠে মেয়েটা জানতে চাইল। ভয় পেয়ে পায়ে পায়ে পিছিয়ে যাচ্ছে, হয়তো দৌড় দেয়ার চিন্তা করছে। অন্য দলটার কথা ভেবে সাহসও পাচ্ছে না।
: না আমি সাইপস নই। প্লিজ দৌড়ীও না, ওরা নয়তো তোমাকে ধরে ফেলবে। শান্ত হও, আমি কিছু করবো না।
: তাহলে তোমার চোখে ওটা কি? তুমি অবশ্যই সাইপস।
: সাইপস হলে তোমাকে ছেড়ে দিতাম না। তুমি শান্ত হও। এটা আইভাইস। এটা ছাড়া আমি দেখতে পাইনা।
হঠাৎ দমকা বাতাসে কিছু পলিথিন, কাগজ ভুতুড়ে গলির ভেতর দিয়ে উড়ে গেল। একটা খোলা টিনের কৌটা বাতাসের তোড়ে এসে বারি খেল কোন দেয়ালে। আচমকা শব্দে ঘাবড়ে গেল মেয়েটা, ভয় পেয়ে হঠাৎ দৌড় দিল গলি ধরে, সাইপস গুলো যে দিকে গেছে তার উল্টো দিকে। নির্ঘাত বিপদে পরতে যাচ্ছে মেয়েটা...
চিন্তা করার সময় নেই, মেয়েটাকে থামাতে হবে, সাইপসদের হাতে পড়ার আগেই। বর্বর গুলোর হাতে পড়লে ওকে সাইপস বনানো হবে। কেটে কুটে সতেজ নিখুঁত, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো বাজারে বেচে দেবে, বদলে লাগানো হবে কৃত্রিম যন্ত্রপাতি। মগজে বসানো হবে একটি চিপ্। সেটাই নিয়ন্ত্রণ করবে তাকে। সাইপসদের ধর্মগুরু শাফিত্রীনের, মগজ ধোলাই মন্ত্র ক্রমাগত তাকে দানবে রূপান্তরিত করবে।
গলিটা পার হয়ে গেছে মেয়েটা, দেখা যাচ্ছে না ওকে। কোন দিকে গেছে কে জানে। দ্রুত দৌড়ে গলিটা পার হয়ে ডানে বামে তাকালো। ডান দিক থেকে এক আর্ত চিৎকার শুনতে পেল, দৌড়ে সেদিকে গিয়ে একটা মোটা খুঁটির পিছনে নিজেকে লুকিয়ে যা দেখলো, তাতে চরম হতাশ হলো সে। দশ বারটা সাইপস ঘিরে ফেলেছে মেয়েটাকে। হতাশ হয়ে সেই দিকে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই কারার নেই রনের। ওর আর্ত চিৎকারে যেন আরো মাজা পাচ্ছে বর্বর গুলো। উল্লাসে ফেটে পড়ছে। মেয়েটাকে ধরে দলটা চলে যাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে জানে রন। সাইপসদের শহর পসডেন হলো এদের গন্তব্য। সেখানে নিলামে উঠিয়ে ওর অঙ্গ বেচা কেনা করা হবে।
দুই।
এই রকম একটা সিদ্ধান্ত নেবে কখনো কল্পনায়ও ভাবেনি রন। তবে ওর চোখের আইভাইস তাকে বাড়তি সুবিধাই দিয়েছে। মাথার পেছনে নকল শাফিত্রীন চিপটি লাগানোর পর সে সহজেই পসডেন শহরে সাইপসদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলতে, ফিরতে পারছে। নিজেকে সাইপস বলে চালিয়ে নিচ্ছে। অথচ ওর গন্তব্য ছিল নিরাপদ নগরী, শানত্রেন। সব ব্যবস্থাই চূড়ান্ত ছিল। কিন্তু কেন যেন এক জোড়া ভীত চোখ তাকে এই বিভীষিকার শহরে টেনে নিয়ে এসেছে। কোন ভাবেই ভুলতে পারছেনা সেই চোখ দু’টোর নিরাপত্তা পাবার আকুতি। হয়তো রনের চোখ থাকলে আস্থা দিতে পারতো, চোখের দিকে তাকিয়ে। দৃষ্টি ছাড়াও চোখের সে এক আরেক অসীম ক্ষমতা। অন্ধ রন সেটা জানে, যেটা সহজে বোঝেনা দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন মানুষ।
বিষয়টা তার জন্য এমন সহজ ছিল না, একজন দৃষ্টিহীন কিন্তু সুস্থ মানুষ হিসাবে পসডেন তার জন্য মোটেই নিরাপদ ছিলনা। মূহুর্তেই তাকে আলাদা করতে সক্ষম হতো সাইপসেরা কিন্তু তিনা তাকে শিখিয়েছে কিভাবে বর্বর গুলোকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব। তিনাকেও এরা সাইপস বানিয়েছে কিন্তু নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। তিনার নেতৃত্বে আছে তিলে তিলে সংগঠিত হওয়া সাইপসের একটা দল। শাফিত্রীন চিপকে বিভ্রান্ত করার সহজ একটা প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সম্পূর্ণ স্বাধীন সাইপস এরা।
আইভাইসের সংরক্ষিত স্মৃতি থেকে তিনাকে দিয়েছিল মেয়েটার ছবি। তাকে খুঁজতে রনকে সহায়তা করেছিল তিনা। ওরা জেনেছে নিলামে তাকে কিনে নিয়েছে এডিয়ক নামে এক অঙ্গ ব্যবসায়ী। যতটুকু জানতে পেরেছে, এডিয়ক নৃশংস একটি সাইপস। ধর্মগুরুর প্রাণ বাঁচিয়ে রাখার নির্দেশনা থাকায় দানবটা পণ্যের প্রাণ বাঁচিয়ে চামড়া পর্যন্ত বেচে দিতে দ্বিধা করেনা।
সাইপসেরা কখনোই নির্দিষ্ট কোন ঠিকানায় থাকে না। সম্ভাব্য সব জায়গায় খুঁজে চলছে রন। যে করেই হোক ওর হাত থেকে মেয়েটাকে রক্ষা করতে হবে। আজ একটা বার এ এসেছে। মদ, নেশা দ্রব্যের স্বর্গ রাজ্য পসডেন, বার গুলো সবসময় জমজমাট নেশাখোর খদ্দের এ। কিম্ভুতকিমাকার আধা যান্ত্রিক মানুষে গিজগিজ করা, অদ্ভুত নৃশংস একটা পরিবেশ। সেগুলোকে এড়িয়ে বারে এসে দাঁড়াল। বার টেন্ডারকে একটা ড্রিংস অর্ডার করে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। নিজেকে এক অঙ্গ ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়ে মেয়েটার একটা এডিট করা হাসি মাখা মুখের ছবি দেখিয়ে বলল, শুনলাম কে যেন একে বেচতে চায়? চেন তাকে?
বার টেন্ডার ড্রিংস বানিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে, চোখের ইশারায় ঘরের কোনে একটা টেবিলে নিঃসঙ্গ বসে থাকা কদাকার একটি সাইপসকে দেখিয়ে দিল। রন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখে যাচাই করার চেষ্টা করলো। আইভাইসে জুম করে নিয়ে স্মৃতিতে রাখার ব্যবস্থা করে নিল। কদাকারটার জন্যও একটা ড্রিংস অর্ডার করল। ড্রিংস দুটো হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল টেবিলটার দিকে। ড্রিংসটা সাইপসটার সামনে রেখে একটা চেয়ার টানতে গেল। কুৎসিত ভঙ্গীতে তার দিকে তাকিয়ে নোংরা ভাবে চিৎকার করে উঠলো, কি চাই? একটু থমকে গেলেও চেয়ারটা টেনে বসলো। ড্রিংসে একটা চুমুক দিয়ে ওর দিকে এগিয়ে দেয়া ড্রিংসটা ইশারায় অফার করলো। কোন বিকার না দেখিয়ে কদাকার বলে উঠলো, ওঠো আর ভাগো এখান থেকে। ওর ব্যবহারে কোন গুরুত্ব না দিয়ে রন মেয়েটার ছবিটা এগিয়ে দিয়ে বলল, কত?
এই বস্তুটাই যে এডিয়ক নিশ্চিত হলো রন। অদ্ভুত বস্তুটার একটা চোখ যান্ত্রিক, সেইটা কিম্ভুত প্রক্রিয়ায় নড়ে উঠলো, সম্ভবত ওকে জুম করে ভাল করে যাচাই করে নিলো।
: তোমার মত ভিখিরির জন্য আমার কোন মাল নেই।
: তুমি ঠিক ধরেছো, কিন্তু ক্রেতা আমার মুনিব, মালদার পার্টি।
এডিয়ক এবার অন্যভাবে তাকালো। যান্ত্রিক চোখের বর্ধিতাংশ মিহি শব্দ করে কোঠরে চলে গেল।
এবার মনে হয় কাজ হয়েছে। কথা এগিয়ে নিলো রন,
: দেড় মিলিয়ন। মনে হয় তুমি যা চাইছো তারচে’ এটা ঢের বেশি। কিছু পার্টস তার নিজের লাগবে। কথা পছন্দ হলে আগামীকাল বিকাল চারটায় মাল নিয়ে চলে এসো। আমার মুনিব ক্যচাল একদম পছন্দ করেনা। ইচ্ছে না হলে যেও না। তবে দলবল নিয়ে ঝামেলা করতে এসো না, বিষয়টা তুমি বুঝতে পারছো?
এক টুকরো কাগজে একটা ঠিকানা লিখে উঠে দাঁড়ালো রন। কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বের হয়ে আসল, একবার পিছনে ফিরেও তাকালো না।
তিন।
পরিত্যক্ত একটি রেল স্টেশনের কম্পার্টমেন্টে বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে দাড়িয়ে আছে রন। ও নিশ্চিত এডিয়ক আসবে, এমন টোপে পা না দেয়ার কোন কারণ দেখছে না ও। দাম যা বলেছে সেটা এডিয়কের প্রত্যাশার চাইতে দ্বিগুণের কম হবে না। রনের পায়ের কাছে রাখা আছে একটা ব্রীফ কেস। ছয় সাত ফুট দূরে দাড় করানো তার ফ্লোটিংবাইক, বুলেট প্রুফ কাঁচে মোড়ানো। দুইজন বসা যায় অনায়াসে। ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে ভেসে যেতে সক্ষম। এই সব তিনা সব জোগাড় করে দিয়েছে। মেয়েটাকে নিয়ে শানত্রেনে চলে যাওয়ার মত সব ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে।
সময় যেন কাটছে না। টেনশনে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে কপালে। ৪ টা ১০ বেজে গেল কিন্তু কদাকারটার কোন হদিস নেই। টেনশন বাড়তে শুরু করলো রনের। তবে কি সাইপসটি টের পেয়ে গেল সব পরিকল্পনা? আরো পনের মিনিট ঠায় দাড়িয়ে রইলো, আশা ছেড়ে দিয়ে যখন ফিরবে ভাবছিল, তখন প্লাটফর্ম ধরে একটা ফ্লোটিংবাইক আসতে দেখলো। নড়ে চড়ে দাঁড়ালো রন। দশ ফিট দুরে থামলো এডিয়কের বাইক। বাইকের পেছনে মেয়েটা বসে আছে, একটা কাপড়ের ব্যাগে মাথা ঢেকে রেখেছে । বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালো এডিয়ক, বাজখাঁই গলায় বলল, কোথায় তোমার মুনিব?
: সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না। মাল দিয়ে, মাল নিয়ে কেটে পড়। বলে চোখের ইশারায় পাশে রাখা ব্রিফকেসটা ইশারায় দেখালো। ব্যাগটা রেখে হেটে তার বাইকটার কাছে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটাকে পাঠানোর জন্য আবার ইশারা করলো।
এক হাতে হ্যাঁচকা টান মেরে মেয়েটাকে বাইক থেকে নামালো এডিয়ক। একহাতে মেয়েটাকে ধরে রেখে কয়েক কদম এগিয়ে আসল। চেহারায় কোন প্রভাব না ফেলে মনে মনে ঈশ্বরকে ডাকতে থাকলো রন। ভুলটা করলো এডিয়ক, মেয়েটাকে রেখে ব্যাগের দিকে এগিয়ে গেল। ব্যাগটা নেয়ার জন্য ঝুঁকলও কদাকারটা। ততক্ষণে রন মেয়েটার কাছে পৌঁছে গেছে। ব্যাগটা হাতে নিয়ে সন্দেহ নিয়ে রনের দিকে তাকালো এডিয়ক, কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার যান্ত্রিক চোখটা ভেঙ্গে মাথা ভেদকরে স্নাইপারের একটা বুলেট পার হয়ে গেল। ছিটকে পড়ে যাওয়ার আগেই অসংখ্য গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল এডিয়কের কদাকার দেহ। চারপাশ থেকে লুকিয়ে থাকা সাত-আটটা সাইপস এলোপাথারি গুলি করতে করতে এগিয়ে এলো। একা আসে নি, এডিয়ক আসার কথাও নয়। এডিয়ক পড়ে যাওয়ার আগেই মেয়েটাকে টেনে বাইকের দিকে দৌড়াল রন। গুলি বৃষ্টি শুরু হতে কোন রকমে বাইকে ডুকে বুলেট প্রুফ শিল্ডটা বন্ধ করতে পারলো। কাচের মধ্যে আছড়ে পরছে গুলির ধারা। বাতাস কেটে নিমেষেই মেয়েটাকে নিয়ে সরে পরতে সমর্থ হলো রনের ফ্লোটিংবাইক। লুকিয়ে থেকে ওদেরকে কাভার করছিল তিনার দলের সদস্যরা। দলের দক্ষ স্নাইপারের শিকার হলো এডিয়ক সহ তিনটে সাইপস। বাকিরা কোন রকমে পালিয়ে বাঁচল।
চার।
ফ্লোটিং বাইক নিয়ে ছুটে চলছে নির্জন বনের ভেতর দিয়ে একে বেঁকে চলা রাস্তা ধরে। চলতে চলতে মূল রাস্তা ছেড়ে বনের গভীরে চলে যাওয়া রাস্তাটা নিল। সেখানে নির্ধারিত কটেজটাতে এসে থামলো। মেয়েটার মাথা তখনো ব্যাগটা দিয়ে ঢাকা আছে। এখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেবে ওরা। ট্রমা কাটানোর জন্য সময় দিতে হবে মেয়েটাকে। অনেক ঝড় ঝাপটা গেছে তার উপর দিয়ে। জায়গাটা আপাতত নিরাপদ। তবু সতর্কতার জন্য দ্রুত ওকে নিয়ে কটেজে ঢুকে গেল রন। দরজাটা লাগিয়ে মেয়েটার দিকে নজর দিতে পারল। কিন্তু অবাক হচ্ছে মেয়েটা এখন পর্যন্ত মাথার উপর থেকে ব্যাগটা সরায় নি বলে। ও এসে ব্যাগটা উঠাতেই চমকে উঠলো। ওর চোখ দুটোতে বাধা আছে ব্যান্ডেজ। এডিয়ক ওর চোখ বেচে দিয়েছে। এখন সে তার মতই অন্ধ।
রন তার আইভাইস ইশারায় বন্ধ করে নিল। ধাতস্থ হয়ে বলল, আমি রন তুমি?
: আলো।
আলোর চোখে এখন আর কোন আলো নেই। আলো, রন তাদের আপন অন্ধকার জগতে নিশ্চুপ বসে রইল।