অবরূদ্ধ চেতন

নতুন (এপ্রিল ২০১২)

মারুফ মুস্তাফা আযাদ
  • 0
  • ২০
নারীজাতির ওপর পুরুষের রোষটা কোথায় সেটা আমি আজো ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি। এই জাতটাকে সবাই যেন “স্কেপগোট” বানিয়ে রেখছে রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতার মত- “যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা ব্যাটাই চোর”। সমস্ত দোষ শুধু তাদেরই।
পরিবারে যদি কোনো অঘটন ঘটে তবে কোনো কারণ ছাড়াই কেন যেন কূলবধুটিকেই বলির পাঁঠা বালিয়ে দেয়া হয় অবলীলাক্রমে। যেন আর সবাই একেবারে দুধে ধোয়া তুলসিপাতা।
বাংলাদেশের সমাজে এই ঘটনাটি বিরল হলেও সত্য যে কোনো নারী যদি দুর্ঘটনাক্রমে কুমারী অবস্থায় মাতৃত্বের অধিকারিনী হয় তবে তো হয়েই গেল! যে লাঞ্চনা গঞ্জনা তাকে সতে হয় পরবর্তী পর্যায়ে তা যেন একেবারে জীবদ্দশায় নরকযন্ত্রনা ভোগ করা। একটি সন্তানলাভ একজন নারীর জীবনে তার নারীত্বের পূর্ণতার পরাকাষ্ঠা বয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু এধরনের পরিস্থিতিতে এই পূর্ণতার সবটুকুই লজ্জায় পরিণত হয়। আর এটা পড়ে শুধুমাত্র নারীর ভাগেই, পুরুষটির টিকিও কেউ ছুঁতে পারেনা। তাকে সমাজের পঙ্কিলতম স্তরে নামিয়ে দেয়া হয় এক নিমেষে। কিন্তু এতে কি পুরুষের ভুমিকা অর্ধেক নয়? অনেকে হয়ত বলবেন, নারীই পুরুষকে প্ররোচিত করে চরিত্রস্খলনের নিমিত্তে, যদিও আমি তা মানতে রাজি নই। তবুও তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নিই, তাহলেও- পুরুষ যদি পতঙ্গের মত আগুন দেখলেই তাতে আত্মাহুতি দেয়ার জন্য উদ্গ্রীব না হয়ে ওঠে তবে কার সাধ্য তাকে বাধ্য করে? স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও কখনো মানুষের স্বাধীনতার মধ্যে হস্তক্ষেপ করেননা। তিনি শুধুমাত্র ভাল বা মন্দ কৃতকর্মের জন্য প্রতিদান দেন মাত্র। তার অর্থ কি এই দাঁড়ায় না যে ইচ্ছা যদি না থাকে, ভোগের জন্য যদি লালায়িত না হয় তবে কারো পক্ষেই সম্ভব নয় তাকে ভোগে বাধ্য করা। আর যদি তাই হয় তবে সমস্ত লাঞ্চনাটুকু কেন নারীর ঘাড়েই পড়বে? পুরুষ কি তার জন্য সমান দায়ী নয়? দোষ কেন নন্দিনী ঘোষের ঘাড়েই পড়বে? নন্দ ঘোষও কি সমান দোষে দুষ্ট নয়?
বিচার যদি করতেই হয় তবে উভয়েরই করতে হবে। আর তা যদি না হয় তবে একজনকেই ১০১ দোররা মারা কোনোভাবেই বিচারসিদ্ধ হবেনা। আমার বিশ্বাস এমনকি সৃষ্টিকর্তাও এ বিচার ন্যায়সংগত বলে মেনে নেবেন না।
’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে যে নারীরা তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছিল তাদেরকে দেশের সরকার বীরাঙ্গনা উপাধিতে ভূষিত করে ঠিকই, কিন্তু এমন কয়জন বীরাঙ্গনা আছে যাদেরকে সমাজ গ্রহন করেছে, এমন কতজন আছে যারা নিগৃহিত না হয়ে বরং তাদের বাবা, ভাই বা স্বমীর সংসারে ফিরে যেতে পেরেছে। এখনো পর্যন্ত কি তাদের সেই সামাজিক আস্তাকুঁড়েই পরে থাকতে হয়না? তাদের তোমরা এইভাবে উপেক্ষা কর অথচ তাদেরই ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে বুক চিতিয়ে রাস্তায় বিএমডব্লিউ হাঁকিয়ে বেড়াও। আর সেই রাস্তার ফুটপাথেই হয়ত কোনো ছিন্নবস্ত্র পরিহিতা বৃদ্ধা বীরাঙ্গনা তার শেষ দিন গুনছে। কি লজ্জা! কি লজ্জা! তোমাদের এই নির্লজ্জতায় যে তোমাদের উত্তরপুরুষের মাথা হেট হয় গেছে সে খেয়াল রাখো?
ওহে পুরুষ, তোমার কিসের এতো রূবাব? তুমি বীর্যস্খলন করে ফেলে দাও বলেই কি তোমার সাত খুন মাফ? আর সে রমনী তার হৃদয়ের সমস্ত ভালবাসা, নিজের সম্পূর্ন অস্তিত্ত্বটুকু উজাড় করে দিয়ে তোমার বীজ তার নিজ গর্ভে ধারন করল বলেই কি সে অপরাধিনী? তাকে যদি অপরাধী করতেই হয় তবে অর্ধেক দায়ভার তোমার নিতে হবে। তাকে যদি ১০১ দোররা শাস্তির বিধান দাও তাহলে সাড়ে ৫০ দোররার দাগ তোমার নিজের শরীরে বহন করতে হবে। তা যদি না কর তাহলে অন্তত আমার বিবেকের আদালতে এ মামলা পেশমাত্রেই খারিজ হয়ে যাবে।
সামাজিক বন্ধন যদি না থাকে তাহলে কি ভালোবাসার কোনো মূল্যই নেই? সামাজিক বন্ধনই কি সব আবেগ, সমস্ত মানবিকতা ও সম্পর্কের নির্ণায়ক? তোমার মা যদি তোমার বাবার বীজ নিজের সমস্ত অন্তঃকরন দিয়ে ধারন না করতেন, কোনো আবেগীয় আকর্ষণ যদি তাদের মধ্যে না থাকত, তারা যদি শুধু সামাজিক বন্ধনেই আবদ্ধ হয়ে বসে থাকতেন তবে তুমি কোথায় থাকতে? বিশাল ধরিত্রীর এই মাধুর্য উপভোগ করার মত সৌভাগ্য কি তুমি পেতে? তোমার বাবা ও মায়ের নিবিড়তম ভালোবাসাতেই তোমার জন্ম। হয় তুমি তোমার জন্মকে অস্বীকার কর, নাহয় নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার কর। এতই যদি বীর হয়ে থাক, দেখি তুমি কোন পথে এগোও। তুমি যদি সেই নারীকে নিগ্রহ কর তবে নিজের মাকে তোমার অস্বীকার করতে হবে আর যদি সেই সন্তানকে অস্বীকার কর তবে তোমার নিজ অস্তিত্ত্বকে অস্বীকার করতে হবে। আর যদি কোনোটিই তুমি করতে না চাও তবে তাদের সম্পর্কের পবিত্রতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে যেয়ো না। সমাজের স্বীকৃতি না থাকলেই সম্পর্কের কোনো পবিত্রতা থাকবেনা এটা আমি মানতে রাজি নই। পবিত্রতা অন্তঃকরনের ব্যাপার। অন্তর যদি সত্যধারন করে সেই অন্তরের পবিত্রতা নিয়ে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও কোনো প্রশ্ন তোলেন না, আর তুমি কোথাকার কোন কেউকেটা হে! পবিত্রতা যদি নাই থাকত তবে গুল কখনোই হাসিনের গুলিতে নিহত হওয়ার আগ মুহুর্তে তারই কোলে মাথা রেখে পরিতৃপ্তির হাসি হাসতে পারতনা, আর গুলের আম্মা সেই হাসিনকেই “ফরজন্দ” বলে সম্বোধন করতে পারতেননা। সুতরাং নারী আর পুরুষকে আলদা করতে যেয়ো না। তোমার নিজের অস্তিত্বই দ্বিখন্ডিত হয়ে যাবে। সবাই সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি- হোক তা পুরুষ বা নারী। শুধু মনে রেখো, তারা মানুষ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি Khub Valo Laglo Ajad Apnar Golpota...Apnake Osesh Dhonnobad.....
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ জ্যোতি ভাই। কিন্তু এটা গল্প না, এটা প্রবন্ধ।
বিষণ্ন সুমন সামজিক আবেগ সম্বলিত মেসেজধর্মী লিখা । ভালো লাগলো বেশ কিছু সত্য কথা তুলে এনেছ বলে । আশাকরছি নিয়মিত লিখে যাবে । শুভকামনা থাকলো ।
ধন্যবাদ সুমন ভাই। দোয়া করবেন, ভালো থাকবেন।
রোদের ছায়া আপনার বক্তব্যের সাথে ১০০% একমত পোষণ করছি ...কিন্তু এটাকে গল্প তো বলা যাবে না ...একটু চেষ্টা করে দেখুন না গল্পের আকারে এমন বক্তব্য তুলে ধরা যায় কিনা .........শুভকামনা থাকলো / আর পাঠক পাবেন কিভাবে ? আপনি সবার লেখা পড়ছেন তো?
আপা এটা আসলে গল্প না, প্রবন্ধ। কিন্তু প্রবন্ধের জন্য তো গল্পকবিতায় আলাদা কোন বিভাগ নেই, তাই গল্পের মধ্যেই দিতে হল। আর এই মাসে আসলে পড়ার মানসিকতাটাই ছিল না, বেশ কিছুটা সমস্যা জর্জরিত অবস্থা আর কি! যেজন্য এ মাসে লিখতেও পারিনি। দোয়া করবেন।
আহমেদ সাবের বেশ জোরালো বক্তব্য। তবে, তা শুনবে কে? এ লেখাটাতেও পাঠক নেই।
কথা সেটাই স্যার। ভালো কথা কেউই শুনতে চায়না। আমার বলার কাজ আমি বলে যাবো আর কি...
আরমান হায়দার ভাল লাগল। শুভকামনা। শুভনববর্ষ।
ধন্যবাদ আরমান ভাই। আপনাকেও শুভ নববর্ষ।
ঝরা ভালই লিখেছেন
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ 'অন্তরের পবিত্রতা নিয়ে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও কোনো প্রশ্ন তোলেন না, আর তুমি কোথাকার কোন কেউকেটা হে! ' // ---- চমৎকার নারী জাগরণমূলক একটি প্রবন্ধ। জোড়ালো সব যুক্তিগুলো ভাল লেগেছে। প্রতিটি নারীকে শক্তি অর্জন করতে হবে। হতে হবে আত্মনির্ভর। সেদিন দূরে নয় , নারী পুরুষ সমান উঁচুতে দাঁড়াবে। শুভকামনা আযাদ ভাই।

১৪ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী