এলিনা ১০০০৫

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০১২)

সোমা মজুমদার
  • ২৪
  • ৬৬
'তুমি কে?'
অদ্ভুত দর্শন জীব টাকে জিজ্ঞেস করল রুচিতা।
'আমি এলিনা ১০০০৫।'
'এটা আবার কেমন নাম?'
'আমাদের গ্রহে এমনই হয়।'
'তোমাদের গ্রহ? সেটা আবার কেমন? তুমি পৃথিবীর মানুষ নও?'
'তোমাদের গ্রহের নাম যেমন পৃথিবী, আমাদের তেমন এলিনা।'
'তুমি অন্য গ্রহের প্রানী? কি মজা কি মজা।'
রুচিতা হাততালি দিয়ে উঠল। ওকে হাততালি দিতে দেখে জীব টা বলল, 'কি হল হাততালি দিচ্ছো কেন?'
'তুমি কি পৃথিবী তে বেড়াতে এসেছ?'
'না। আমি একজন বৈজ্ঞানিক। আমি বিভিন্ন গ্রহ নিয়ে গবেষণা করছি। তোমাদের গ্রহে পাপ খুব বেড়ে গেছে। আমি এসেছি আমার গবেষণা দিয়ে সেই পাপ দূর করতে।'
'পাপ কি গো?'
'পাপ হল সেই কাজ যেটা তোমার করা উচিত নয়, অথচ তুমি কর।'
'তুমি পাপ কি করে দূর করবে? তোমার কাছে তো ঝাঁটা নেই।'
'পাপ দূর করতে ঝাঁটা লাগেনা। যাদের আমি পাপ করতে দেখব, তাদের সাথে এমন মজা করব, যাতে তারা আর পাপ না করে। যতদিন না সে পাপ, অন্যায় করা বন্ধ করে ততদিন সেই মজার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। তবেই পৃথিবী থেকে একদিন সব পাপ
দূর হয়ে যাবে। এতে খারাপ কাজও পৃথিবী থেকে দূর হবে, আর কাউকে কোন বড় রকমের শাস্তি পেতে হবেনা, অথচ যে অন্যায় করছে সে কিছু জানতেও পারবেনা।'
'কিরে উঠবিনা ঘুম থেকে? আজ ছুটি বলে কি পড়াশোনা সব বন্ধ নাকি?'
মায়ের ডাকে ঘুম ভেঙ্গে যায় ছোট্ট রুচিতার। দু হাতে চোখ ঘষতে ঘষতে সে এলিনা কে খোঁজে। কিন্তু তাকে কোথাও দেখতে পায়না। ও ঘর থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে আসে। আজ বাবার ছুটি। তাই রুচিতার খুব মজা। ও এসে বাবার পাশের চেয়ার টাতে বসে। বাবা
তখন সকালের কাগজ পড়ছিলেন। রুচিতা দেখল দেয়ালে একটা টিকটিকি একটা পোকাকে খেয়ে ফেলল। ও ভাবল শুধু কি মানুষই পাপ করে। এই প্রানী গুলো করেনা। হঠাত বাবার গলা শুনে ওর হুঁশ ফিরে এল। শুনল বাবা, মা কে বলছেন, 'মিতালী, কাগজে
একটা অদ্ভুত খবর দিয়েছে। গত এক মাস ধরে নাকি শহরে কোন খারাপ কাজ হচ্ছেনা। থানায় নাকি কোন কেস আসেনি। কোন হাসপাতালে কেউ মারা যায়নি। বড় অদ্ভুত না?'
'অদ্ভুত কেন? ভালই তো। খারাপ কাজ হোক এটা তো আমরা কেউ চাইনা। তাহলে খারাপ কাজ হচ্ছেনা বলে এত চিন্তার কি আছে?'
'না চিন্তা নয়, তবে এটা অস্বাভাবিক। ভাবনা টা তাই।'
মা, বাবার কথা শুনতে শুনতে মনে মনে হাসল রুচিতা। ওর মনে হল ও জানে ঘটনা টা। তাহলে কি ও স্বপ্ন দেখেনি কাল রাতে। তাহলে এলিনা গেল কোথায়। ও হাত মুখ ধুয়ে প্রাতঃরাশ সেরে পড়ার ঘরে এল। এসে দেখল ওর পড়ার টেবিলে এলিনা বসে আছে।
রুচিতা এলিনা কে দেখে চমকে গেল।
'একি তুমি এখানে। মা আসলে তোমায় দেখতে পাবে যে।'
'আমি জানি উনি এখন আসবেননা'
'জানো আজ বাবা কি বলছিল?'
'জানি, তোমাদের শহরে কোন খারাপ কাজ হচ্ছেনা, তাই তো?'
'তোমার বাড়ি তে কে কে আছে? তুমি যে এখানে এসেছ, তোমার বাবা মা বকেনি?'
'ধুর, আমি কি তোমার মত বাচ্চা নাকি? আমাদের ওখানে সবাই এরকম ছোট আকারেই হয়। আর আমার বাবা মা নেই।'
'আচ্ছা তুমি কি কাল আমার স্বপ্নে এসেছিলে?'
'হ্যাঁ, আমি পারলে মানুষের স্বপ্নে আসতে পারি।'
'আচ্ছা আমি যে মাঝে মাঝে ঠিকমত পড়াশোনা করিনা, সেটাও কি পাপ?'
'না, সেটা কে ঠিক পাপ বলা যায়না। সেটা কিছুটা দুষ্টুমি, আর কিছুটা হল খামখেয়ালী। আমি জানি তুমি খুব ভাল। সেদিন স্কুলে তোমার বন্ধুকে তুমি নিজের টিফিন খেতে দিয়েছিলে। কিন্তু ওর থেকে চেয়ে দেখ, ও দেবেনা। তোমার বন্ধু টা একদম ভাল নয়।'
'আমি যদি কখনো পাপ করি, তাহলে তুমি কি আমায় শাস্তি দেবে?'
'হ্যাঁ নিশ্চয়ই। তবে আমি আমার পাপোমিটার দিয়ে দেখেছি তুমি এখনো কোন পাপ করনি। তাই আমি তোমার কাছে এসেছি। আমি জানি তুমি আমার কথা কাউকে বলবেনা।'
'তোমার কথা বললে কি হবে?'
'তোমরা পৃথিবীর লোকেরা খুব খারাপ। আমায় ধরে যাদুঘরে রেখে টাকা রোজগার করবে। আমি যে পৃথিবীর এত উপকার করছি, তার জন্য কেউ কৃতজ্ঞতা দেখাবে না। তোমরা টাকা ছাড়া কিছু ভাবতেই পারনা। টাকার জন্য কত খারাপ কাজ কর। আমাদের
গ্রহে কখনো টাকার দরকার লাগেনা। আমি চাষি দের আমার আবিষ্কৃত জিনিষ দি, তারা আমাকে শস্য দেয়, তাঁতি কে দিলে সে আমাকে পোশাক বানিয়ে দেয়। তোমরা গাছ কেটে বাড়ি বানাচ্ছ। আর আমাদের গ্রহে বাড়ি বানাতেই লাগেনা। আমাদের হমত্রি গাছ
একদম বাড়ির মত দেখতে। ওটা লাগাতেই সেটা কিছুদিন পরে বাড়ির মত হয়ে যায়। তাতেই আমরা থাকি। তোমাদের পৃথিবী যেমন সূর্য্যের চারদিকে ঘোরে, তেমনই আমাদের এলিনা, ম্যাট্রিক্সের চারদিকে ঘোরে। এলিনার অবস্থান এমন যে তাতে সর্বদা আলো
থাকে। তাই আমাদের বিদ্যুৎ লাগেনা। আমাদের গ্রহে কোন দূষণ নেই। তাই একটা পোশাক ছেঁড়া অবধি নতুন পোশাক লাগেনা। আমাদের গ্রহে একটাই দেশ, একটাই ভাষা। আমরা কখনো নিজেদের মধ্যে মারামারি করিনা। আমরা পাপ করিনা, অন্যায় করিনা।
আমরা চক্রযান ব্যবহার করে যাতায়াত করি। তাতে কোন জ্বালানী লাগেনা। সেটা আমার দাদু আবিষ্কার করেছিলেন। এটা অনেকটা তোমাদের সাইকেলের মত। এটা জলে চলে। এক লিটার জল দিলে এক বছর চলে। ভিতরে নিজে জল তৈরি করতে পারে। আমি
এখন একটা ম্যাজিক পেন তৈরি করছি। ওটা সব বাচ্চাদের দেব। তবে তোমাকেও একটা দিয়ে যাব।'
রুচিতা চুপ করে এলিনার কথা শুনছে। ওর আর পড়তে ভাল লাগছেনা। ওর খুব ইচ্ছা করছে এলিনার সাথে তার গ্রহে চলে যেতে। এলিনা আরও বলতে লাগল, 'এই জগতে কোটি কোটি গ্রহ আছে, কিন্তু পৃথিবীর মত এত খারাপ গ্রহ আর দুটো নেই। এখানে
তোমরা বড় বড় স্কুল, কলেজে পড়, তাও খারাপ কাজ কর। আর আমরা কখনো স্কুলে পড়িনা। বাড়িতেই আমরা পড়াশোনা করি। তবুও তোমাদের পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা যা আবিস্কার করতে পারেনি, আমরা তা করতে পেরেছি।'
'আচ্ছা তুমি যে পাপ করে তার সাথে কি মজা কর?'
'সেদিন একটা স্কুল ঘুরতে গেছিলাম, দেখলাম একজন শিক্ষিকা ক্লাসে না গিয়ে স্টাফ রুমে বসে গল্প করছে। ওর নাকে অ্যামোনিয়া স্প্র্যে করে দিলাম। ও আর ওখানে বসে থাকতে পারলনা। তাই বাধ্য হয়ে ক্লাসে চলে গেল। সেদিন বাসে করে তোমার শহর
ঘুরছিলাম। দেখলাম একজন টিকিট না কেটে নেমে যাচ্ছিল। কন্ডাক্টর কে মিথ্যে বলল পকেটমার হয়ে গেছে। তাই বাস থেকে নামার আগে তাকে ধাক্কা মারলাম, আর তার মানিব্যাগ পড়ে টাকা পয়সা বাসে ছড়িয়ে গেল।'
'তোমায় কেউ দেখতে পেলনা?'
'না, আমি অদৃশ্য হতে পারি। দশ বছর গবেষণা করে আমি এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছি।'
'আমায় শিখিয়ে দেবে? তাহলে তুমি যখন ফিরে যাবে তখন আমি এই ভাবে সবার থেকে পাপ দূর করে দেব।'
'দেব, আমি এখনও আছি কিছুদিন, যাবার আগে তোমায় শিখিয়ে দেব।'
'কিরে পড়ার ঘরে বসে ঘুমোচ্ছিস কেন? উফ তোর খালি ঘুম। পরীক্ষা কি আমি দেব?'
ঘুম ভেঙ্গে যায় রুচিতার। ও দেখে, ও কখন পড়ার টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাহলে কি ও এলিনা কে স্বপ্নেই দেখেছে। তাহলে সকালের কাগজে যেটা বাবা পড়ল। ওটাও কি তাহলে স্বপ্ন? ও বেরিয়ে এক ছুটে চলে এল সকালের কাগজ তা পড়তে।
কাগজ টা দেখে ওর দু চোখ ঝাপসা হয়ে গেল। ও দেখল কাগজে লেখা আছে, একটা সবুজ মত জীব কে দীঘার সমুদ্রের পাড়ে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। অনেকে নাকি বলছে ওটা অন্য গ্রহের প্রানী। রুচিতা দেখল লেখার সাথে যে ছবিটা দিয়েছে ওটা এলিনার
ছবি। ওর দু চোখ ফেটে জল এল। কাঁদতে কাঁদতে রুচিতা সারা ঘর খুঁজল এলিনা কে। কোথাও পেলনা। পড়ার ঘরে এসে দেখল টেবিলে ফুলদানির নীচে একটা কাগজ। তাতে লেখা, এই কাগজে সব ফর্মুলা আছে। তুমি বড় হলে বুঝতে পারবে। কাগজ টা যত্ন করে
রেখো। কাগজের পাশে একটা সাদা পেন। তার গায়ে লেখা আছে 'ম্যাজিক পেন'।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এফ, আই , জুয়েল # সুন্দর ও মজাদার ।।
সূর্য সোমা গল্পে "দীঘা" নামটা আসায় মনে হচ্ছে তুমি পশ্চিম বাংলার মেয়ে। গল্পটা খুবই ভাল লেগেছে, এটার চিত্রায়ন হলে খুব সুন্দর একটা নাটক হতে পারে। অনেক ভাল লিখেছ, তুমি এটার সিক্যুয়াল লিখতে পারো কিন্তু
আহমেদ সাবের "পাপোমিটার যন্ত্র" - আইডিয়াটা মন্দ না। পৃথিবীতে ওটার বড় দরকার। বেশ ভাল লাগল শিক্ষণীয় গল্পটা।
অষ্টবসু ebarer lekhati bhalo hoyeche apnar, ekta moral ache galper...khub bhalo
ঐশী আপু অনেক অনেক ভাল লিখেছেন !
এশরার লতিফ বেশ গল্প, ভালো কার্টুন সিনেমা বানানো যাবে....
Azaha Sultan শিশুতোষ কল্পকাহিনী......বেশ ভাল লেখছেন......কল্পনাদৃষ্টি ভাল....
জিয়াউল হক এলিয়েন এর জন্য দুঃখ হয় ।কল্পকাহিনী তবে শিক্ষামূলক বটে।কাগজ টা যত্ন করে রাখলাম । কাগজের পাশে একটা সাদা পেন। তার গায়ে লেখা আছে 'ম্যাজিক পেন'।
মিলন বনিক অসাধারণ...আর সুন্দর কল্পনাশক্তি....খুব ভালো লাগলো...ঠিক যেন বাস্তবতা...ভালো কিছু করতে গেলেই তাকে মরতে হয়....
মোঃ সাইফুল্লাহ বাহ দূর্দান্ত একটা গল্প। ভালকে গলাটিপে মারায় আমরা সিদ্ধহস্ত।

০৯ জানুয়ারী - ২০১২ গল্প/কবিতা: ২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪