অতিরিক্ত উত্তেজনা থাকলে যা হয়
সারা রাত ঘুমাতে পারিনি , চল্লিশ বছর !
কয়েক ঘণ্টা পর চল্লিশে পা দেবে বাংলাদেশ ।
আধার থাকতেই বেরিয়ে পড়লাম ঘর থেকে ।
সবাই মিলে চলে এলাম বিজয়দা'র জরাজীর্ণ ভিটায়
যেখানে এ গ্রামের একমাত্র স্মৃতিসৌধ গড়েছি আমরা ।
" এতো রাতে ওখেনে কারা রে
কিসের এতো কথা-বার্তা কচ্ছিস তোরা,আমাক একটু ক দেখি " ।
বিজয়দা'র বৃদ্ধা মায়ের গলা ভেসে এলো
রাতের পর রাত উনি জেগে থাকেন আর অপেক্ষা করেন ।
চাচী,আজ ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের দিন,তুমি কি ভুলে গিয়েছ ?
আমার এই কথা শুনে চিৎকার করে উঠলেন তিনি ।
"এ কি কচ্ছিস তুই,আমার বিজয় আয়ছে ? ঘরে ফেরেছে আমার বিজয় !
কই, তোরা সরি দারা আমাক ভালো করি দেখবের দে ।
এ কইরে আমার বিজয় কই, তোরা আমাক মিথ্যে কথা কচ্ছিস
বিজয় তো আসেনি রে বাবা ...."
কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন বিজয়দা'র মা ।
" বিজয় আসলি কি আমার এতো কষ্ট হয়রে বাবা,
এতটুকু ছাওয়াল বাপের হাত ধরি রাইফেল নিয়ে চলে গ্যালো
আমাক বললো,"দেশের মাটি আমায় ডাকছে মা,দোয়া করো জলদি আসবো "।
বিজয়দা'র মা অনবরত বিড়বিড় করে চলেছে ।
"দেশ নাকি তার মা, তাহলি আমি কিডা কও ?
আমাক যে অকূল পাথারে ভাসায়ে তুই চলি গেলি,তোর বাপটাও মরি গ্যালো ।
চল্লিশটা বছর তোর জন্যি আমি তাকায়ে রইছি
তুই আসবি আর আমি চাট্টি ভাত খাবো পেট ভরে ।
বিজয় রে এই বয়সে আর ভিক্ষা করবের পারিনে,কাল রাতেও না খেয়ে ছিলেম ।
ওরা কচ্ছে তুই আসিছিস,তুই আসলি কি আমি না খেয়ে থাকিরে বাপ
তুই আসলি কি আমি ছিরা কাপর পরে ঠাণ্ডায় কাপতে থাকিরে বিজয় ?
ওরা তারপরও কয় বিজয় আয়ছে , তুই ই ক দেখি ।
দারা সবাই অপেক্ষা কর
বিজয় আসলি পরে সব কয়ে দেবো,নালিশ করবো বিজয়ের কাছে ।
বাড়ির পিছনের ছোট যে জমিটা বরগা দিয়ে কয়টা ধান পাতেম
আমার কেউ নাই দেখে ঐ চেয়ারমেন জমিটা কারি নিলে ।
কেও আমার হয়ে একটা কথাও কলোনা বাজান ।
বিজয় তুই চলে আয় বাজান আর দেরি করিস নে,
কয় বছর আগে শুনলেম বাড়ির পাশে একটা চাপ কল বসবি
পরে ওই কল বসলো মাতবরের বাড়ি,কত মানুষ পানিও খাবের পারেনা ঠিকমত ।
তুই চলি যাবার পর জব্বর আলী আর হানাদার মিলে কত কুকর্ম করলে
সেই জব্বর আলী বলে অনেক বড় নেতা হয়ে গেছ,এ কিরম করি হলে ?
বিজয় আসলি কোন দিনও তা হবের পারতোনা ।
বিজয় আসলি পরে সখিনা আমার বাড়ির বউ হতো
বর্বর পাক হানাদার আমার সখিনাকে ধরি নিয়ে যাতে পারতোনা " ।
চিৎকার করে বুক চাপরে কাঁদছে বৃদ্ধা মাতা
" তোমরা আইছেও মালা নিয়ে,কাকে দিবে মালা তোমরা! বিজয়ের গলায় ?
কই দেখাও,দেখাও আমাক,বিজয়কে নিয়ে আস আমার সামনে
প্রাণ ভরে বিজয় দেখি ।
"কতকাল হয়ে গ্যালোরে বাবা" কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল বিজয়ের মা ।
"তুই কবে আসবিরে বিজয়,কত কথা জমায়ে রাখিছি তোর জন্যি
সুখের কথা দুক্ষের কথা , কষ্ট যন্ত্রণা আর আশার কথা
তুই চলি আয় বিজয় আর বেশি সময় নেই রে বাবা , বেশী সময় নেই ।
এই শোন তোমরা , তোমাদেরকে কিছু কথা বলতি চাই আমি
আমি জানি বিজয় আসবি, ঠিকই আসবি কিন্তু আমার বেশী দিন বাকি নাই ।
আমি মনে হয় দেখি যাতি পারবোনা তবে একটা কথা বলি রাখি,
বিজয় ফিরে আসলি পরে প্রথমেই জিজ্ঞেস করবি তার মা'র কথা ।
খবরদার,কেউ কোন কষ্টের কথা কবে না,বলবে আমি ভালো ছিলেম,অনেক ভালো ।
আর আমি চলি যাবার পর ছোটো একটা কাজ করে দিও আমার জন্যি
যেখেনেই মাটি দেওনা কেন আমাক, এই ভিটে বাড়িটা নষ্ট করবের দিওনা ।
বিজয় আসি যদি এই বাড়িটা না দেখে তালি হয়তো আবার চলে যাবের পারে ।
তোমরা সবাই জানি রাখো বিজয় এই মাটিতে একদিন আসবেই আসবে ।
আর আমার কবরের উপর কিছু একটা দিয়ে লেখি দিবে
এইখানে শুয়ে আছে বিজয়ের মা " ।
এই আনন্দের দিনেও সবকিছু কেন যেন অবাস্তব মনে হচ্ছে
ভোরের লাল আভা চারিদিকে মনে হয় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ।
বৃদ্ধ মায়ের কষ্ট আর কথা গুলোর ওজন যে এত বেশী তা কখনও বুঝতে পারানি ।
অথচ তারই সন্তান জীবন দিয়েছে আমাদের ভালো থাকার জন্য ।
নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেললাম,মাথায় শুধু এখন একটিই প্রশ্ন
চল্লিশটা বছর পেরিয়ে গেল
এখনও বিজয় এলোনা কেনো ?
২২ ডিসেম্বর - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪