অনির্বাণ

বাবা (জুন ২০১২)

রস্বই
  • ২৬
  • ৩৫
আস্তে আস্তে কুয়াশার পর্দা সরিয়ে মিষ্টি রোদ ঢুকে পড়েছে গ্রামজুড়ে । আলো ঝলমলে এই সকালে পুরা গ্রামটাকে নৈশব্দে ডুবিয়ে সব ছেলেমেয়েরা জড়ো হয়েছে গ্রামের শেষপ্রান্তে খেলার মাঠে । সবার মধ্যে সীমাহীন উত্তেজনা আর অবিশ্রান্ত উৎসাহ লক্ষণীয় । তার কারন বহুদিন ধরে চলে আসা প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ক্রিকেট ম্যাচে আজ মুখোমুখি হবে উত্তর পাড়া আর দক্ষিণ পাড়া । পুরো পরিবেশ জুড়ে ‘এ্যাসেজের’ উত্তেজনা ভেসে বেড়াচ্ছে । একটু পরেই খেলা শুরু হবে । খেলোয়াড়রা শেষসময়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যাস্ত । উত্তর পাড়ার নিয়মিত উইকেট রক্ষক এবং বামহাতি ওপেনিং ব্যাটসম্যান রাতুল গ্যালারীতে বসে আছে । গ্যালারী বলতে এখানে যা আছে তা হলো মাঠের একপাশ দিয়ে চলে যাওয়া উঁচু করে বাঁধানো মাটির রাস্তা । রাতুল চুপচাপ বসে আছে সেখানে সাবার মধ্যমণি হয়ে । সামনে থেকে একটা ঘাসের কচি পাতা ছিঁড়ে নিয়ে দাঁত দিয়ে কাটতে থাকে রাতুল । খেলা শুরু হয়ে গেছে । সবাই বিষ্ময় ফোটা বড় বড় চোখে সীমাহীন আগ্রহ নিয়ে খেলা দেখছে । এমন সময় ঘটলো সবচেয়ে বিষ্ময়কর ঘটনাটি ।
যে রাস্তাটার উপর দাঁড়িয়ে-বসে সবাই খেলা দেখছে তার অপর প্রান্ত হতে হেঁটে আসছে ঐ গ্রামেরই এক তরুণী । মেয়েটা মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে বেশ অন্যমনস্কভাবে হাঁটছে । সবাই অতিমাত্রায় মগ্ন হয়ে আছে খেলার প্রতিটা মুহুর্তে । মেয়েটা যখন দর্শক ভীড়ের কাছাকাছি পৌঁছালো তখন, হঠাৎ রাতুল সবার মাঝখান থেকে উঠে এসে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরলো এবং তাকে সহ রাস্তার উঁচু পাড় বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে সোজা নিচে পরে গেলো । ঘটনার আকষ্মিকতায় সবাই এতোটা আঁতকে উঠলো যে তারা হতভম্ব হয়ে পড়লো । অস্বাভাবিক অতঙ্কে মেয়েটির চিন্তাশক্তি বুঝি গুলিয়ে গেছে । সে তার মুখ থেকে কোন প্রকার শব্দই বের করতে পারেনি অনেক্ষণ । সম্বিৎ ফিরে পেতেই মেয়েটা এতো জোরে চিৎকার করে উঠলো যে খেলার সমস্ত মাঠ জুড়েই নিস্তব্ধতা নেমে এলো । ভীড়ের মধ্য থেকে কয়েকজন তড়িৎ বেগে ছুটে এসে রাতুলের বাহুবন্ধন থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে নিলো । ঔৎসুক জনতার মধ্য থেকে একজন বলে উঠলো, ‘ ঐ রাতুইল্যা, এইটা কি করলি রে তুই ?’
মুখের ভেতরের সমস্ত দাঁত সম্পূর্ণরূপে বের করে, হুবহু সিনেমার কমেডিয়ানের মতো অভিনয় করে জবাব দেয় রাতুল,
‘সিনেমার স্যুটিং করতেছি; গতকাইল টিভিতে দেখছি । শাকিব খান অপু বিশ্বাসরে এ’রম গরি ধরি গরাইতে গরাইতে গরাইতে গরাইতে ...।’
রাতুল নিজে নিজে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকে ।
সবাই আবার খেলায় মনোনিবেশ করে । মানষিক ভারসাম্য হারানোর পর পড়ার সবচে সুদর্শন, ভালো ছেলেটার এই করুণ দূর্দিনে সকলে আর কি বা বলতে পারে তাকে ।

গ্রামের মুরব্বিদের স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে যারা অবগত আছেন তাদের কাছে বিষয়টা হয়ত নতুন নয় । এদের অনেকে পথে সমবয়সী কারো সাথে দেখা হলেই তার সাথে কুশল বিনিময়ের ফাঁকে তার পুত্র কন্যার বিবিধ দোষ ত্রুটি সম্পর্কে অনেকটা সচেতন অভিভাবকের মত গুরুগম্ভীর আলোচনায় মেতে উঠেন । খেলার মাঠ থেকে ফেরার পথে এরকম একজনের সাথে আফসার উদ্দিনের দেখা হয়ে গেলো । লোকটা ইনিয়ে বিনিয়ে বলেই ফেললো কথাটা ...
‘আফসার ভাই, রাতুলের অবস্থা তো ভাল না । কখন যে কি কইরা বসে । পোলাটার জন্য মায়া হয় বলেই বলা আর কি ; না হয় আপনাকে বইলা আপনার কষ্টতো বাড়াইতে চাই না । রাতুল তো আমার ছেলের মতই । তাই বলি কি , ও’কে ঘর থেকে খুব একটা বের না হতে দেয়াই ভালা’ ।
‘আজকে আবার কিছু করছে নাকি’ ? আফসার উদ্দিনের মেজাজ খারাপের দিকে ...
‘ঐ আর কি । বশিরের মেয়েটা কোথায় যেন যাইতেছিলো ; রাতুল হঠাত তারে জড়ায়্যা ধইরা ...; বাদ দেন । একটু দেইখা রাখবেন আর কি। এখন, বলেন আপনের কি খবর ?
আফসার উদ্দিন কথার জবাব না দিয়েই মাঠের দিকে পা বাড়ায় ।
বছর খানেক আগেও রাতুল ছিল পাড়ার সবচে ভদ্র, বিনয়ী ছেলে । লেখাপড়ায় পিছিয়ে থাকা রাতুল কিন্তু খেলার মাঠে বরাবরেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী । ব্রায়ান লারা, সায়ীদ আনোয়ারের একনিষ্ট ভক্ত রাতুলের ব্যাট থেকেও বের হয়ে আসতো তাদের মতোই দৃষ্টিনন্দন সব শট । উত্তর পাড়ার সব শিশু কিশোরদের কাছে সে ছিল একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র । যে কিনা হঠাত করেই মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে সকলের হাস্যরসের পাত্র হয়ে গেলো ।
রাতুলের বাবা আফসার উদ্দিন সরকারী অফিসের একজন অধস্তন কর্মকর্তা । স্বভাবে বাদমেজাজী একরোখা স্বভাবের মানুষ তিনি । তার দুই পুত্র এবং দুই কন্যার কেউই তার খুব একটা আশেপাশে ঘেঁষতে চায়না । আর তার পত্নী শেফালী আজীবন সন্তানের বিভিন্ন অভিযোগ শুধু শুনেই গেলেন । কখনো স্বামীর সামনে গিয়ে এসব বলার সাহস হয়নি তার ।

২.
মাঠের ধারেই কয়েকজন বন্ধু বান্ধবের সাথে গল্প করছিলো রাতুল । আফসার উদ্দিন ছেলেকে দেখতে পেয়ে পাথের ধারে শক্ত কিছু একটা খুঁজতে থাকেন । সামনেই ইলেক্ট্রিকের ছোট একটা তার পড়ে ছিলো । যুতসই কিছু না পেয়ে তাই উঠিয়ে নিলেন তিনি । তারের প্রথম আঘাতটা পিঠে পড়তেই রাতুলের চামড়া ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে এলো । এরপর সবাই যা দেখলো তার কোন তুলনা হয় না । কোন পিতা তার সন্তানের উপর এতোটা প্রচন্ডতায় নিজের পেশীশক্তি প্রয়োগ করেনি কোনদিন । গ্রামের সব ছেলে মেয়েদের সামনে থেকে রাতুলকে টেনে হিঁচড়ে বাড়িতে নিয়ে এসে ঘরে তালাবন্ধ করে রেখে তারপর ক্ষান্ত হোন আফসার উদ্দিন । অনেক দূর থেকেও রাতুলের গোঙ্গানির শব্দ শুনা যায় ।

রাতুল যখন ক্লাস নাইনে উঠে তখন তার মাকে খুব করে বলেছিলো সে সাইন্স নিয়ে পড়বে না । গণিত আর বিজ্ঞানের ভাষা তার মাথায় ঢুকে না । কিন্তু কে শুনে কার কথা । আফসার উদ্দিনের কড়া আদেশ বিজ্ঞান বিভাগেই তাকে পড়তে হবে । ক্লাস নাইন থেকে এস, এস, সি পাশ করতেই রাতুলের চার বছর লেগে যায় । প্রতিবার পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে বাড়ি ফিরতেই তার জীবন হয়ে উঠতো সবচে যন্ত্রণাময় নরক । সব বন্ধুরা একে একে পাশ করে কলেজে পড়ছে, তারপরও আফসার উদ্দিন ছেলেকে বিজ্ঞানী বানানোর সংকল্প থেকে এক চুল সরে দাঁড়ায়নি । যে বছর প্রথম বারের মতো এস এস সি পরীক্ষায় ফেল করে রাতুল, সে বছর তার ডাক আসে বিভাগীয় পর্যায়ের ক্রিকেট দলে । কিন্তু কে তার বাবাকে গিয়ে বলবে সে কথা ? কে ডিঙ্গাবে এমন দুর্গম পাহাড় ? কে তার হয়ে দাঁড়াবে এমন নিষ্ঠুর থাবার মুখে ? কে শুনাবে এমন একজন চিরবধিরকে জাগরণের গান ? অতঃপর রাতুলের যাওয়া হয়নি বিভাগীয় ক্যাম্পে । কিন্তু খেলার মাঠ তাকে হ্যামিলনের বংশিবাদকের সুরের মতো প্রতিকারহীন ভাবে টেনে নিয়ে যায় । স্কুলের ব্যাগ ফেলে সে প্রায় প্রতিদিন পড়ে থাকে মাঠে । কখনো কখনো বন্ধুদের সাথে অন্য দলের হয়ে খেলতে চলে যায় বিভিন্ন গ্রামে ।
যে বছর বাংলাদেশের সমস্ত স্কুলের টেবিল-চেয়ার সব পাশ করে ফেললো সেই বছর স্কুলের চার দেয়াল থেকে মুক্তি মিললো রাতুলের । আফসার উদ্দিন তার মনের ভেতর নিভে যাওয়া প্রদীপ আবার জ্বালিয়ে দিলেন । ছেলেকে ডাক্তারী পড়ানোর ইচ্ছে বুঝি এবার পূর্ণ হবে ; এমন দুরাশার মত স্বপ্নও তিনি দেখতে লাগলেন । রাতুলকে ডেকে বললেন, কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে, সে মোতাবেক পড়ালেখা যেনো চালিয়ে যায় সে । এমন একটি দুঃসংবাদের গন্ধ রাতুল আগে থেকেই পেয়েছিলো । সমস্ত জীবনীশক্তিকে একত্রিত করে সে তার বাবা আফসার উদ্দিনের মুখোমুখি হলো, জানিয়ে দিলো সে আর সাইন্সে পড়বে না ।
আফসার উদ্দিন যেন আশ্চর্য্যের চূড়ান্ত সীমা প্রদক্ষিণ করে আসলেন । ইহকালে এমন অদ্ভুত কথা শুনবেন তিনি তা কখনোই ভাবেননি । ছেলেকে সাবধান করে দিলেন, এমন চিন্তা মাথায় আসার সাথে সাথেই যেন দশবার এস্তেগফার করে নেয় সে । নাইলে শয়তান কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় তা তিনি খুব ভালো করেই জানেন ।
কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় রাতুল যে অকৃতকার্য হবে এটাই যেন পূর্বনির্ধারিত । আফসার উদ্দিন হেন লোক নেই যার কাছে তার ছেলের ভর্তির জন্য অনুরোধ করেন নি । শত অনুনয়-বিনয়ের পরও কোন উপায় না হলে, মোটা অংকের অনুদানের মাধ্যমে তিনি তার পুত্রকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করাতে সক্ষম হোন । কিন্তু বিজ্ঞানের এই সব ভারী পড়ালেখা রাতুলের জীবনটাকে বিষিয়ে তুলতে তুলতে যে বিষনগর বানিয়ে ফেলেছে, সেটা তার জন্মান্ধ পিতা কখনোই দেখতেই পেলো না । পড়ালেখার প্রতি তার খামখেয়ালীপনা দিন দিন বাড়তেই থাকে এবং আবাধারিত ভাবে সে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনা । ফলাফল শোনার পর রাতুল তার বাবার ক্রোধান্বিত চেহারা এবং মারের প্রচণ্ডতা অনুমান করতে পেরে ভয়ে আতঙ্কে সে সেদিন আর ঘরে ফিরে না যাবার সিদ্ধান্ত নেয় । দূর গ্রামে তার এক ফুফুর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিলো ।

এখানেও রাতুলের নিষ্কৃতি নেই । বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ খবর নিতে নিতে তার বাবা আফসার উদ্দিন পরের দিন সন্ধ্যায় তার ফুফুর বাড়িতে উপস্থিত হলো । রাতুলরা যখন তাদের বাড়ি ফিরে আসে তখন অনেক রাত হয়ে গেছে । ঢুকতেই ঘরের মুখে সে তার মা এবং অন্যান্য ভাই বোনদের ভয়ার্ত চেহারা দেখে বুঝতে পারে আসন্ন বিপদের কথা । আফসার উদ্দিন একটা মোটা দড়ি আর অনেকগুলো বাঁশের কঞ্চি নিয়ে ঘরে ঢুকেন । বীভৎস কোন জানোয়ারের ছায়া ফুটে উঠেছে তার চোখে মুখে । দৌঁড়ে এসে রাতুল তার বাবার পা জড়িয়ে ধরে করুণা ভিক্ষা চাইতে থাকে । হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে একটা কথাই সে বলতে থাকে, ‘আমারে মাফ কইরা দেন আব্বা । আমারে মাফ করে দেন’ । এমন ভয়াল দর্শন একজন পাষণ্ডের কাছে রাতুলের সমস্ত অকুতি, বিরতিহীন মিনতির কোন প্রতিকার নেই । আফসার উদ্দিন দড়ি দিয়ে রাতুলের হাত পা বেঁধে তাকে মারতে লাগলেন উম্মাদের মতো । এই নির্যাতনের বর্ণনা অনির্বচনীয় । রাতুলের সমস্ত দেহের জায়গায় জায়গায় ফুলে গেছে সাপের পেটের মতো । চামড়া ছিঁড়ে রক্তে ভিজে গেছে তার শার্ট । শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি কমে গিয়ে গোঁ গোঁ শব্দে যন্ত্রণার চাপা আর্তনাদ শুনা যেতে লাগলো ।
রাতুলের এমন মুমূর্ষু অবস্থাও আফসার উদ্দিনকে শেষ পর্যন্ত দমাতে পারেনি । তিনি এর শেষটা করলেন বড় করুণ ভাবে । ঘুটঘুটে অন্ধকারে উঠানের কোনায় আমলকি গাছটার সাথে বেঁধে রাখলেন রাতুলের ক্ষত বিক্ষত শরীরটা ।

৩.
রাতুলের মা, শেফালী সারা রাত জেগে ছিলেন রাতুলের পাশে । সকালে ছেলেকে তিনি ঘরে নিয়ে গেলেন । দীর্ঘ্য রাতের পর এই প্রথম বার চোখ মেলে তাকালো রাতুল । টকটকে লাল চোখের উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি দেখে শেফালীর কলিজায় ধক করে লাগলো । কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই রাতুল বন্য কুকুরের মতো ক্ষিপ্র গতিতে কামড়ে ধরলো শেফালীর হাত । চিৎকার চেঁচামেচিতে সবাই ঘুম থেকে উঠে আসলো । আফসার উদ্দিন কোনমতে ছেলের হাত থেকে শেফালীকে ছাড়িয়ে নিলেন । রাতুলের মুখ দিয়ে তখনো হিংস্র ক্ষুধার্ত কুকুরের মতো লালা পড়তে থাকে । তার মণিবিহীন শাদা চোখের দিকে তাকালে ভয়ে গা শিউরে উঠে শেফালীর । এভাবেই রাতুলের মধ্যে অপ্রকৃতিস্থতা প্রথমবারের মতো প্রকাশ পায় ।

অনেক ডাক্তার কবিরাজ দেখানোর পর, যখন আফসার উদ্দিনের বদ্ধমূল ধারণা রাতুলের ভেতর অশরীরী বাসা বেঁধেছে, তখন বাড়িতে ওঝা-ফকিরের আনাগোনা বাড়তেই থাকলো । এদের সাথে রাতুলের ব্যবহার কিছুটা বর্ণনা না করে পারছি না ।
লম্বা চুলের ঝুঁটি কিংবা আউলা-ঝাউলা চুল, এরকম বিভিন্ন প্রকারের ওঝা-ফকির আসতো রাতুলদের বাসায় । প্রায় সবার পরনে থাকতো লম্বা লম্বা আলখাল্লা । এদেরকে পা ছুঁয়ে সালাম করার ছলে রাতুল টুপ করে ঢুকে যেতো আলখাল্লার ভেতর ; আবার কখনো টান মেরে লুঙ্গি খুলে দিতো । একদিন এক হুজুর বাবার লুঙ্গি খুলে নিয়ে চোখের পলকে নাই হয়ে গেলো রাতুল । ঘটনার আকষ্মিকতায় হুজুর এতোটাই হতবাক যে উঠে দাঁড়ানোর কথা মনেই থাকলো না তার । স্বম্বিৎ ফিরে পেতেই গম্ভীর মুখে বললেন, ‘কঠিন জিনিসে পাইছে পোলারে ; কঠিন জিনিস’ ।
জিনিস কঠিন হউক কিংবা তরল ; তাবিজ-দোয়া, তন্ত্র-মন্ত্র এর কোন সুরহা করতে পারে না । রাতুল , কিছুদিন ভালো থাকে আবার কিছুদিন বদ্ধ উম্মাদ । কিছু সময় খুব স্বাভাবিক আবার মহুর্তেই অজানা-অচেনা কারো বীভৎস রূপ নেয় । এভাবেই কাটছিলো রাতুলের জীবন, আজকে সকালে খেলার মাঠে ঘটে যাওয়া ঘটনার আগ পর্যন্ত ।

মাঠ থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে এসে রাতুলকে ঘরে বেঁধে রাখেছে আফসার উদ্দিন । রুমের ভেতর থেকে অনেকক্ষণ ধরে ক্রমাগত চলে আসা গোঁ গোঁ শব্দটি আর শুনা যাচ্ছে না । জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে আছে রাতুল । ভাবলেশশূণ্য সেই দৃষ্টির অর্থ বুঝার সাধ্য কার আছে ! কয়েকজন দিন মজুর উঠানে বসে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেড়া বানাচ্ছে । আফসার উদ্দিন সেখানে দাঁড়িয়ে সে সব তদারকি করছে । শেফালী ছেলের জন্য খাবার নিয়ে ঢুকলেন রাতুলের রুমে । রাতুল একমনে তাকিয়ে আছে উঠানে বাঁশগুলোর পাশে পড়ে থাকা দা’ টার দিকে । বেশ কয়বার রাতুল রাতুল বলে ডাকার পরও কোন সাড়া না পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন শেফালী । এমন সময়, কেউ কোন কিছু আঁচ করার আগে, বুঝে ফেলার পূর্ব মুহুর্তে, এক দৌঁড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসলো রাতুল । বাজ পাখির মতো ক্ষিপ্রতায় ছুঁ মেরে দা টা তুলে নিয়ে আফসার উদ্দিনের গায়ে পর পর বসিয়ে দিলো কয়েকটা কোপ ।

বিস্রস্তভাবে মাটিতে পড়ে আছে আফসার উদ্দিনের রক্তাক্ত দেহ । অজ্ঞান হয়ে পড়ার আগে রাতুলের নির্বিকার উদাসীন মুখেও ভয়, উৎকণ্ঠা বা অন্য কোন মানষিক বিকারের চিহ্নমাত্র চোখে পড়ে না ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সালেহ মাহমুদ কঠিন একটা গল্প। বর্ণনার কারিশমায় গল্পটি মানোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। খুব ভালো লাগলো রস্বই। ধন্যবাদ।
নিলাঞ্জনা নীল একজন সুস্থ স্বাভাবিক ছেলের কি করুন পরিনতি.:((
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ বাবা শুধু বাবা । এরপরও ব্যতিক্রম আছে, ভিন্নতা আছে ।বড়ই বিছিত্র এ পৃথিবী । ভাল লাগলো গল্প পাতন। অভিনন্দন ও শুভকামনা ভাই রম্বই।
মিলন বনিক বাবা হয়ে ছেলেকে বুজতে না পারার শেষ পরিণতিটা র্হিদয় বিদারক..কাহিনী বুনন ভালো লাগলো..শুভ কামনা জানবেন...
হাবিব রহমান চমৎকার প্রেক্ষাপটে....অন্যরকম একটা গল্প। বিকারগ্রস্থ পিতার করুণ পরিনতি। কিন্তু কত রাতুল এই ভাবে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, শুধু মাত্র সচেতনতার অভাবে।
রুহুল আমীন রাজু অনেক ভালো লাগলো গল্পটি ..................আমার' আলোয় অন্ধকার 'গল্পটি পরার আমন্ত্রণ রইলো.
রনীল বাবা সংখায় বেশির ভাগ লেখায় পড়েছি- সম্পর্কের মমত্ববোধের অংশটির উপর. এই গল্পে মুদ্রার অপর পিঠটি ও দেখা গেল... ব্যাপারটা কাকতলীয় কিনা জানিনা-চিটাগাঙে বাবার হাতে ছেলের নৃশংস ভাবে মার খাবার ঘটনা অনেক দেখেছি... এই ব্যাপারটি কি পার্টিকুলারলি চিটাগাঙে বেশি ঘটে?
কি জানি । হয়ত ; হয়ত বা সবখানে এমন অনেক বাবা-মা'ই আছেন । চোখে পড়েনি হয়ত । ব্যাপার সেটা না । একজন বাবা-মা ও আমি চায়না এমন হউক পৃথিবীর কোন কোনে । ধন্যবাদ :)
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি গল্পের মেসেজটা সব বাবার জন্য টনিকের কাজ করবে আশা করি...খুব ভালো লাগলো ....রস্বই আপনাকে ধন্যবাদ....
আমিও সেটাই আশা করি । ভাল থাকবেন । অনেক ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য :)
মোঃ আক্তারুজ্জামান আপনার লেখায় নতুনত্ব থাকে- এটা নিসন্দেহে অনেক অনেক প্রশংসার দাবী রাখে| গল্প খুব ভালো লেগেছে|
অনেক ধন্যবাদ আক্তারভাই । ভাল থাকবেন :)
প্রিয়ম আলাধা রকমের স্বাদ লাগলো আমার |
ধন্যবাদ প্রিয়ম :)

১৮ ডিসেম্বর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪